ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। বাছাই পর্ব পেরিয়ে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে মেয়েদের এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে। দেশের ফুটবলের ইতিহাসেই লেখা হয়ে গেল এক অনন্য কীর্তি। বুধবার বিকেলে ইয়াঙ্গুনে ঋতুপর্ণা চাকমার জোড়া গোলে শক্তিশালী ও স্বাগতিক মিয়ানমারকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ (২-১)। সেই জয়েই মূলত এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার খুব কাছাকাছি চলে যায় বাংলাদেশ। আর একই গ্রুপের আরেক ম্যাচে বাহরাইন ২-২ গোলে ড্র করে তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে। ম্যাচটা ড্র হওয়ায় এক ম্যাচ হাতে রেখেই এশিয়ান কাপের মূল মঞ্চে খেলা নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। নারী ফুটবল দলের এই অবিস্মরণীয় সাফল্যে সারা দেশের মানুষের মতো কালবেলা পরিবারও আনন্দিত। আমরা নারী ফুটবল দলের সব সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানাই। ২০২৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় চূড়ান্ত পর্ব কাজ করবে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব হিসেবেও। নারী এশিয়ান কাপে ভালো করলে বিশ্বকাপের টিকিটও মিলতে পারে ঋতুপর্ণাদের।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ২০২৬ সালের এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নেওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার নারী ফুটবল দলের উদ্দেশে এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেছেন, এই অর্জন শুধু নারী ফুটবলের নয়, বরং গোটা জাতির জন্য গর্বের। এটি আমাদের সম্ভাবনা, প্রতিভা ও অদম্য চেতনার একটি অনন্য উদাহরণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ সাফল্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বাড়াবে।
এশিয়ান কাপের মূল পর্বে এর আগে শুধু একবার খেলেছে বাংলাদেশের পুরুষ দল। সেটি ছিল ১৯৮০ সালে কুয়েতে। তারপর আর পারেননি ছেলেরা। মেয়েরা তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই পারলেন। দুবারের সাফজয়ীরা পারলেন নতুন অধ্যায় লিখতে। মেয়েদের হাত ধরে দেশের ফুটবল সাক্ষী হলো বড় এক সাফল্যের।
২০২৬ এএফসি নারী এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় র্যাঙ্কিংয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে। বুধবার সেই ধারাবাহিকতায় আরও বড় চমক, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৫৫ নম্বরে থাকা এবং আগের ৯ ম্যাচে অপরাজিত মিয়ানমারকে চমকে দিয়ে দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ, যারা র্যাঙ্কিংয়ে ১২৮তম অবস্থানে। ২০১৮ সালে ইয়াঙ্গুনেই অলিম্পিক বাছাইয়ে ৫-০ গোলে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল মিয়ানমার। সেখানেই সাত বছর পর ঘটল নাটকীয় ঘটনা। ইতিহাস বদলের গল্প লিখলেন বাংলাদেশের মেয়েরা।
২০২৬ সালের ১ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, গোল্ড কোস্ট ও পার্থের মোট পাঁচটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে এই নারী এশিয়ান কাপ। এই এশিয়ান কাপ ২০২৭ নারী বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৭ সালের নারী বিশ্বকাপ ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে এশিয়া থেকে সরাসরি ছয়টি দল এবং আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফ খেলে আরও দুটি দল সুযোগ পেতে পারে। এশিয়ান কাপের সেমিফাইনালে ওঠা চারটি দল সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পাবে। কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাওয়া চারটি দল দুটি প্লে-ইন ম্যাচে মুখোমুখি হবে, যেখানে জয়ী দুটি দল বিশ্বকাপের টিকিট পাবে। হেরে যাওয়া দুটি দল আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফে অংশ নেবে। আমাদের প্রত্যাশা, এই বিশাল সুযোগ কাজে লাগাতে আমাদের মেয়েরা বিশ্বমঞ্চে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেবেন।
মন্তব্য করুন