বগুড়া ব্যুরো ও শাজাহানপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ মে ২০২৫, ০৯:২৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

‘প্রভাব খাটিয়ে’ হাটের ইজারা পেলেন বিএনপি নেতারা

বগুড়ার স্থানীয় একটি হাট। পুরোনো ছবি
বগুড়ার স্থানীয় একটি হাট। পুরোনো ছবি

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার হাটবাজারগুলো বাংলা ১৪৩২ সালের ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল উপজেলা প্রশাসন। তবে ১২টি হাটের কোনো দরপত্র জমা পড়েনি। এ কারণে গত ২২ এপ্রিল উপজেলা প্রশাসনের হলরুমে খাস আদায়ে এসব হাটের উন্মুক্ত ডাক অনুষ্ঠিত হয়।

এই উন্মুক্ত ডাকে অংশ নিয়েছেন শুধু স্থানীয় বিএনপি নেতারা। তারাই হাটগুলোর ইজারা পেয়েছেন। এই ডাকে অন্য কাউকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। যদিও নাছির উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী ডাকে অংশ নিয়েছিলেন; কিন্তু তাকে আওয়ামী লীগ তকমা দিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপির কিছু কর্মী।

এ সময় উপজেলা বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মীর পাশাপাশি উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারিসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, শাজাহানপুর উপজেলায় বাংলা ১৪৩২ সালের হাটবাজার ইজারায় ১২টি হাটবাজার খাস আদায়ে উন্মুক্ত ডাকের ব্যবস্থা করা হয়। গত ৩ বছরে হাটবাজার ইজারার গড় টাকার ৬ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে সম্প্রতি নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ইজারা দরপত্র আহ্বান করে উপজেলা প্রশাসন।

তবে হাটবাজারের দর বেশি হওয়ায় ১২টি হাটের কোনো দরপত্র তখন জমা হয়নি। শৃঙ্খলভাবে রাজস্ব আদায়ে খাস ডাকের সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন। এতে গত বছরের গড় তুলনায় রাজস্ব কম হয়েছে ৭৯ লাখ ৩০ হাজার ৯৯৬ টাকা।

গত বছরে হাটবাজার নিলাম থেকে পাওয়া সরকারি রাজস্বের তুলনায় এভাবে খাস আদায় ডাকে পাওয়া রাজস্ব প্রায় অর্ধেক। তবে হাটের ইজারামূল্য কমায় খাজনা কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কৃষক এবং হাটের ব্যাপারীরা।

শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরে আড়িয়া ইউনিয়নের জামুন্না হাট ইজারা থেকে সরকার পেয়েছিল ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩৫ টাকা। এবার ওই হাটের খাস আদায়ে ডাক হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

ওই ইউনিয়নের আড়িয়া বাজার থেকে গত বছর সরকার পেয়েছে ১৮ লাখ ৩১ হাজার ৪৮৭ টাকা। এবার খাস ডাকে সরকার পেয়েছে ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এই দুটি ডাক পেয়েছেন বিএনপি নেতা শাহাদত হোসেন।

একইভাবে খরনা ইউনিয়নের টেংগামাগুর হাটের গত বছর ডাক ছিল ২৩ লাখ ৯১ হাজার ৭০৮ টাকা। এবার ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকায় খাস ডাক পেয়েছেন আল আমিন বাবু। একই ইউনিয়নের খরনা হাট গত বছরে ডাক ছিল ১২ লাখ ৩৩ হাজার ২১১ টাকা। এবারে এনামুল নামের বিএনপি নেতা খাস ডাক পেয়েছেন ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকায়। খরনা ইউনিয়নের বীরগ্রাম হাট গত বছর ছিল ৯ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫ টাকা।

এবার তা খাস ডাকে বিএনপি নেতা ফারুক আহম্মেদ পেয়েছেন ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। ওই ইউনিয়নের দাড়িগাছা হাট গত বছর ছিল ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৭৭৩ টাকা। এবার সেই হাট খাস ডাকে বিএনপি নেতা শাহাদত হোসেন পেয়েছেন ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায়।

গোহাইল ইউনিয়নের আতাইল হাট গত বছর ছিল ৩১ লাখ ৪৭ হাজার ৭৯৪ টাকা। এবারে বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেন পেয়েছেন ১৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকায়। ওই ইউনিয়নের গোহাইল হাট গত বছরে ছিল ২৮ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮৩ টাকা। এবার বিএনপি নেতা আতাহার আলী পেয়েছেন ১৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকায়।

একই ইউনিয়নের রুপিহার হাট থেকে গত বছর সরকার পেয়েছে ৪ লাখ ১৪ হাজার ২৪১ টাকা। এবার ডাক ওঠে ২ লাখ ৩ হাজার টাকায়। এটিও বিএনপি নেতা শাহাদৎ হোসেন পেয়েছেন।

চোপিনগর ইউনিয়নের শাহনগর হাট গত বছরে ছিল ২ লাখ ৪১ হাজার ৬২৮ টাকা। এবার গোলাম মোস্তফা বাবু পেয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ টাকায়। একই ইউনিয়নের কামারপাড়া হাট থেকে গত বছরে ছিল ১২ লাখ ৫৯ হাজার ৭১৫ টাকা। এবারে পেয়েছেন এইচ এম শফিক, ৬ লাখ ১৫ হাজার টাকায়।

আমরুল ইউনিয়নের নগর হাট গত বছর ছিল ৬ লাখ ১২ হাজার ২৮৮ টাকা। এবারে বিএনপি নেতা সাজেদুল হক পেয়েছেন ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকায়।

তবে খাস ডাক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অনেকেই। খাস ডাকতে এসেও নিজ দলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুল নাইম এ বিষয়ে বলেন, ‘সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই হাটবাজারগুলো খাস কালেকশনের জন্য উন্মুক্ত ডাক দেওয়া হয়েছে।’

হাটবাজারের ডাকে অংশ নিতে এসে মারধরের শিকার নাছির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘আমি গোহাইল ইউনিয়নের আতাইল হাট ডাকার জন্য টাকা জমা দিয়েছিলাম। ডাক দিয়েও ছিলাম; কিন্তু সেখানে থাকা লোকজন আমাকে আওয়ামী লীগ তকমা দিয়ে মারধর করে বের করে দেয়। আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি কোনোদিন করিনি। যারা আমাকে মেরেছে, তাদের সঙ্গে আমার আগে কোনো বিরোধও নেই।’

শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহাদৎ হোসেন একাধিক হাটের ইজারা পেয়েছেন। উন্মুক্ত ডাকে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তিকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়াসহ প্রভাব খাটানোর সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

শাহাদাৎ বলেন, ‘কোনো প্রভাব খাটিয়ে নয়, সরকারি নিয়ম মেনে উন্মুক্ত ডাকে অংশ নিয়ে বৈধভাবে হাটগুলো ইজারা পেয়েছি।’

চোপীনগর ইউনিয়নের সবজি ব্যাপারী আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে বলেন, হাটের ইজারামূল্য কম হলে খাজনাও কম হওয়ার কথা। কিন্তু খাজনা যদি আগের মতোই বেশি নেওয়া হয় তাহলে পণ্যের মূল্যও বেড়ে যাবে। তাই হাটগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আলোকিত মানুষ তৈরি করছে পাহাড়গাঁও পাঠাগার

মেয়ের জামাইয়ের ছুরিকাঘাতে শাশুড়ি নিহত

ভারতের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে পাকিস্তানের হিন্দুরা

রূপগঞ্জে কারখানার গ্যাসের লাইজার বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩

‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

টানা কয়েকদিন সারা দেশে বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস 

ভারতের আগ্রাসী আচরণ আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি : পাকিস্তান

চাকরি দেওয়ার নামে পাঠানো হলো রাশিয়ার যুদ্ধে, খোঁজ নেই নাজিরের

চার বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেলো আরাকান আর্মি

দলে দলে ছাত্রদলে যোগ দিচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা

১০

শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা  নিশ্চিত করতে হবে: জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম

১১

১৭-তেই কিংবদন্তি হওয়ার পথে ইয়ামাল!

১২

রাজধানীতে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের বিশাল র‍্যালি

১৩

এআইইউবিতে লেট’স টক উইথ দ্য ইইউ অ্যাম্বাসেডর অনুষ্ঠিত

১৪

চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে দুই শিশুর মৃত্যু

১৫

রাবির রেজিস্ট্রারের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ

১৬

‘দেশ গড়ার আন্দোলনে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে’

১৭

খুনির সমর্থকরা ‘সাংবাদিক’ পরিচয় ব্যবহার বাদ দিন : মুশফিক

১৮

‘শ্রমিকদের অমানবিক জীবনের অবসান ঘটাতে দরকার ইসলামের শাসন’ 

১৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্চলাইট জ্বালিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ৩০

২০
X