কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ের এই উত্তেজনায় উভয় দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনাও জোরদার করেছে। বিশেষ করে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ক্রমাগত গোলাগুলির ঘটনার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ভারত যদি পাকিস্তানে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান চালায়, তবে পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে দ্বিধা করবে না।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এমন হুমকির পর ইসলামাবাদের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। যদি সত্যিই পাকিস্তান এগুলো ব্যবহার করে তাহলে কী হবে এ নিয়ে চলছে আলোচনা। এছাড়া দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র কোথায় আছে তা-ও আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস’ (FAS) জানিয়েছিল, পাকিস্তানের কাছে তখন প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। অপরদিকে ভারতের কাছে সে সময় ছিল আনুমানিক ১৮০টি অস্ত্র। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পাকিস্তান প্রতি বছর ১৪ থেকে ২৭টি নতুন পারমাণবিক অস্ত্র তার ভাণ্ডারে সংযুক্ত করছে বলে ধারণা করা হয়।
FAS-এর তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্রগুলো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গোপনে সংরক্ষণ করে থাকে, যাতে একযোগে সব অস্ত্র ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকি না থাকে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটির নাম জানা গেছে, যেগুলোতে পারমাণবিক অস্ত্র মজুত থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
১. মাশরুর বিমান ঘাঁটি : এটি করাচির নিকটে অবস্থিত এবং পাকিস্তান বিমানবাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। এখান থেকে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম মিরাজ-টু এবং মিরাজ-থ্রি যুদ্ধবিমান পরিচালিত হয়।
২. সর্গোধা (Sargodha) ঘাঁটি : পাঞ্জাব প্রদেশের এই ঘাঁটি পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডের অধীনে পরিচালিত হয়। এখানে পারমাণবিক ও কৌশলগত অস্ত্র সংরক্ষণ ও ব্যবহার সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলে মনে করা হয়।
৩. কামরা (Kamra) বিমান ঘাঁটি : এটি পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান বিমান নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র। এখানেও পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান মোতায়েনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
৪. গজনি ও খুশাব ঘাঁটি : কিছু উপগ্রহচিত্র ও বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পাকিস্তান এই অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য গোপন ভূগর্ভস্থ বাংকার নির্মাণ করেছে।
অস্ত্র বহনের মাধ্যম : পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে, যেমন :
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র : হাতফ সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র (Hatf I থেকে Hatf VII পর্যন্ত) পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। এর মধ্যে শাহীন-১ ও শাহীন-২ সর্বাধিক শক্তিশালী।
যুদ্ধবিমান : মিরাজ-III ও মিরাজ-V বিমান পারমাণবিক অস্ত্র বহনে ব্যবহৃত হয়। অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমান চীন এবং পাকিস্তান যৌথভাবে নির্মাণ করেছে এবং এখন পাকিস্তান নিজেই এটি উৎপাদন করে থাকে।
ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার অস্ত্র : ভারতীয় সামরিক আগ্রাসন মোকাবিলায় স্বল্প পাল্লার ট্যাকটিক্যাল অস্ত্র তৈরি করেছে পাকিস্তান, যার মধ্যে রয়েছে NASR (Hatf-IX) ক্ষেপণাস্ত্র।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা এখনো মূলত সামরিক বাহিনীর অধীনে রয়েছে এবং বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ সীমিত। ফলে সংকটকালে হঠাৎ প্রতিক্রিয়াশীল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যকলাপ পাকিস্তানে এখনো একটি বড় হুমকি, যার কারণে পারমাণবিক অস্ত্রের নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ আছে।
মন্তব্য করুন