অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে যাচ্ছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বুধবার তিনি কর্ণফুলী নদীর ওপর বোয়ালখালী, পটিয়া উপজেলাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠীর বহুল প্রতীক্ষিত কালুরঘাট রেল-সড়ক সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করবেন। তবে ফলকে নিজের নাম রাখতে চান না প্রধান উপদেষ্টা। তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্থাপনকারীর নাম ছাড়াই ফলক তৈরি করেছে।
জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার ব্যস্ততা সফরসূচির কারণে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীণ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। আমাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কালুরঘাট সেতুর মূল প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৭০০ মিটার রেল কাম রোড ব্রিজ নির্মাণ, ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ, ২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার সড়ক ভায়াডাক্ট, ৪ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার বাঁধ, ১১ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ। সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরীকে। রেল ভবন সূত্র জানায়, কালুরঘাট নতুন সেতুর অর্থায়ন করছে দক্ষিণ কোরিয়া। প্রকল্পের ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকার মধ্যে ৭ হাজার ১২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএফ)। অবশিষ্ট ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি
৬২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশ সরকার। ভূমি অধিগ্রহণ সরকারি অর্থায়নে হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের খবরে উৎসবের বন্যা বইছে দক্ষিণ চট্টগ্রামে। জানা গেছে, সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরদিন ‘আনন্দ মিছিল’-এর আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বোয়ালখালীর সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ ও বোয়ালখালী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে এ আনন্দ মিছিল বের হবে। মিছিলটি কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে পূর্ব প্রান্তে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে।
বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ কালবেলাকে বলেন, বর্তমান কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে একপাশ বন্ধ রেখে অন্য পাশ চালু করা হয়। এতে মানুষজনকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। রেল আসা-যাওয়ার সময়ও অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়। অন্যদিকে, ভারী যানবাহন যাতায়াতের ক্ষেত্রে ফেরির সাহায্য নিতে হয়। এমন সময়ে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের খবরে উপজেলার বাসিন্দারা আশাবাদী যে, অবশেষে তাদের দুর্ভোগ লাঘব হতে চলেছে।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসূচি অনুসারে, তিনি সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে এনসিটি-৫ প্রাঙ্গণে এক সভায় যোগ দেবেন। তারপর তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আসবেন। সেখানে তিনি কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করবেন। প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের দলিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবেন। এরপর দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশে সার্কিট হাউস ত্যাগ করবেন।
মন্তব্য করুন