গাইবান্ধায় শ্বশুরবাড়ি বিক্রি করে পালিয়েছেন জামাই। শ্বশুর-শাশুড়ি ও ছোট শ্যালিকার সরলতার সুযোগে তাদের অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কেনা ওই ভিটা একাই নিজের নামে দলিল করে বিক্রি করেছেন তিনি। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে জামাই নাজমুলের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শাশুড়ি।
জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উত্তর বামনজল দোলাপাড়ার মৃত অমির উদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে জাফর (৬৫)। চার মেয়ের এই বাবা ২০ বছর ধরে করেছেন কুলির কাজ। তিন মেয়ের বিয়ে ভালোভাবে দিলেও বিপত্তি বাধে ছোট মেয়ের বিয়ের সময়। বিয়েতে টাকা লাগায় ছোট্ট ওই বাড়ির ভিটার ৫ শতাংশ জমি অন্যের কাছে বিক্রি করেন তিনি।
কিন্তু যাতায়াতের পথ না থাকায় আবার সেই জমি বিক্রি করতে চান ওই ক্রেতা। বাড়ির ভেতরে হওয়ায় ওই জমি আর হাতছাড়া করতে চাননি জাফর। তাই সাড়ে ৪ লাখ টাকা জোগাড় করতে না পেরে সঙ্গে নেন বড় জামাই নাজমুল ও আরেক মেয়ে এসমোতারাকে। জাফর ধারদেনা করে দেন ১ লাখ এবং মেয়ে এসমোতারা দেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। দলিল হওয়ার কথা ছিল জাফর, জামাই নাজমুল এবং মেয়ে এসমোতারার নামে।
নিজে পড়ালেখা জানেন না বলে জামাইকে পাঠিয়েছিলেন দলিল করতে। কিন্তু তিনি নিজের নামেই করে নেন সেই দলিল। বিষয়টি জানার পর মেনে নিয়েছিলেন জাফর ও তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। জামাই নাজমুল ওই ৫ শতক জমি বিক্রি করতে চাইলে গত মার্চের স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠকে তা কিনতে সময় চান জাফর। একই সালিশে দূর হয় শ্বশুর-জামাইয়ের মধ্যে মনোমালিন্যও। কিন্তু সম্প্রতি অন্যত্র সেই জমি বিক্রি করে দেন নাজমুল।
ভুক্তভোগী জাফর বলেন, আমার কোনো ছেলে নেই, চারটি মেয়ে। ভেবেছিলাম বড় জামাই আমাকে বাবার মতো সম্মান করবে; কিন্তু সে আমার নামে দলিল না করে তার নিজের নামে নিয়ে প্রতারণা করেছে।
শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম বলেন, ছোট মেয়ের বিয়ের সময় বাড়িভিটার ৫ শতক জমি বিক্রি করি। পরে সেই জমি সে আবার বিক্রি করতে চাইলে আমরা কষ্ট করে টাকা দিয়ে কিনি। বড় জামাইকে তার শ্বশুরের নামে দলিল করতে বলি। কিন্তু তা না করে সে নিজের নামে দলিল করে নেয়। এখন সেই বাড়ি আমাকে না বলে অন্যের নিকট বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা এখন কোথায় যাব, কী করব?
তবে শ্বশুর-শাশুড়ির অভিযোগ অস্বীকার করে নাজমুল মিয়া বলেন, আমি তাদের দেখাশোনা করতাম। সাড়ে ৫ বছর থাকতে দিয়েছি। আমার ভবিষ্যৎ আছে, ছেলে-মেয়ে আছে। তাই ওই জমি বিক্রি করে আমি আমার এলাকায় ৩ শতক জমি কিনেছি।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাকিম আজাদ কালবেলাকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে যদি প্রতারণার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন