চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাটল ট্রেনের সমস্যা দীর্ঘদিনের। এর সমাধান চাইলে প্রতিবারই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমনকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের সাম্প্রতিক ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর ফের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন উপাচার্য।
গত শুক্রবার চবি উপাচার্যের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, শাটলের ব্যাপারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে। কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি রেলমন্ত্রী আমাদের গত বছর বলেছিলেন, ট্রেন দেবেন। আমরা পাইনি।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানাল ভিন্ন কথা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কথা অনুযায়ী ট্রেন পরিচালনা করি। তারাই বলবে, আমরা কীভাবে শাটল পরিচালনা করব। তাদের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পারস্পরিক দোষারোপের বলি হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন গড়ে ১৪ বার আসা-যাওয়া করা দুটি শাটল ট্রেনে রয়েছে ৯টি করে বগি, যা প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য অপর্যাপ্ত। তার ওপর বেশিরভাগ বগিতে নেই লাইট, ফ্যান। নেই টয়লেটের ব্যবস্থা। ফলে শিক্ষার্থীরা তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার শঙ্কার পাশাপাশি ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়। রাতে অন্ধকার বগিগুলোয় ঘটে ছিনতাই ও নারী নিপীড়নের মতো ঘটনা।
করোনার পর অজানা কারণে বন্ধ হয়ে গেছে নিয়মিত চলা দুই ডেমু ট্রেন। এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডেমুর ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে। ঠিক করলে আবার চলবে। তা ছাড়া লাইট-ফ্যানের সমস্যা আমাদের জানালে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করে দেব।
সাধারণত শাটলের শিডিউলের সঙ্গে মিল রেখেই বেশিরভাগ বিভাগে প্রতিদিন ক্লাসের সময় নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসেবে সকাল সাড়ে ৭টা বা ৮টার ট্রেনে গেলেই করা যায় সব ক্লাস। পরের ট্রেনটি সকাল সাড়ে ১০টায়। এ ট্রেনে ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে বেজে যায় দুপুর ১২টা। তাই প্রায় সব শিক্ষার্থীর ভরসা সকাল সাড়ে ৭টা ও ৮টার শাটল। আবার বেশিরভাগ বিভাগের ক্লাস শেষ হয় দুপুর ১টা থেকে ২টার দিকে। তখন দেড়টা ও আড়াইটার ট্রেনে থাকে বিশাল চাপ। তিল ধারণেরও জায়গা থাকে না। ফলে শাটলের ৬০ থেকে ৭০ জন ধারণক্ষমতার বগিতে যাতায়াত করছে ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থী। কেউ কেউ কোনো রকমে একটু পা রাখার মতো জায়গা করে নেন। আবার অনেকে দরজায় ঝুলে বা ছাদে যাতায়াত করেন।
জাহাঙ্গীর আলম কালবেলাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের (প্রক্টর) সঙ্গে কয়েকমাস আগে আমাদের মিটিং হয়েছিল। সেখানে কথা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু ভাড়া দেয়, সেহেতু তারাই শাটল পরিচালনার উপায় ঠিক করে দেবে। কত ট্রেন ও কোচ যাবে, তারাই ঠিক করবে; কিন্তু এরপর তারা আমাদের এ-সংক্রান্ত নতুন কোনো চিঠি দেননি।
এদিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মন্তব্য অস্বীকার করেন চবি প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদার। কালবেলাকে তিনি বলেন, শাটলের সমস্যা সমাধানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আমরা বহুবার চিঠি দিয়েছি। তারা সাড়া দেয়নি। রেলওয়েকে কতবার চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা রেজিস্ট্রারকে ফোন করলেই জানতে
পারবেন। এ বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার কে এম নূর আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
২০১৯ সালের ২৪ জুলাই চবিতে এসে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের দুর্ভোগের কথা শুনে ১৫ থেকে ১৬ বগিবিশিষ্ট একটি নতুন ট্রেন চালুর আশ্বাস দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এর চার বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া ৩৩তম সিনেট অধিবেশনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার নতুন ট্রেন
সম্পর্কে বলেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। ক্যাম্পাস খুললেই শিক্ষার্থীরা দুটি নতুন শাটল ট্রেন পাবেন। এর দুই বছর গড়িয়ে গেলেও নতুন ট্রেনের দেখা পাননি শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্য করুন