রাজধানীর পল্লবীতে সন্তানের সামনে প্রকাশ্যে সাহিনুদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়ালসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেছে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল রোববার পল্লবী থানার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এ সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশের পরিদর্শক মনির হোসেন। আগামী ১২ অক্টোবর মামলাটির শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন তাহের, সুপন বেপারী, মুরাদ, টিটি শেখ ওরফে টিটু, গোলাম কিবরিয়া খান, ইব্রাহিম সুমন ওরফে বাওয়া সুমন, শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, রকি তালুকদার ওরফে রকি, নুর মোহাম্মদ হাসান মোতাইত, ইকবাল হোসেন ওরফে ইতবাল নুর, শরিফ, তৌরিকুল ইসলাম ওরফে ইমন, তুহিন মিয়া, হারুন অর রশীদ ওরফে হারুন ও প্রতীক আহম্মেদ সজীব।
সম্পূরক চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, মোবাইল ফোনে ভিকটিম সাহিনুদ্দিনকে ইটের টাকা নেওয়ার জন্য বাসার সামনে আসতে বলেন আসামি সুমন বেপারী। সাহিন তার ছেলে মাশরাফিকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসেন। এরপর মাশরাফিকে কোলে নিয়ে তাকে চিপস খাওয়ার জন্য ১০ টাকা দেন সুমন। তারপর সুমন কথা বলতে বলতে ভিকটিম সাহিনের কাঁধে হাত রেখে অন্য আসামিদের ইশারা করেন। আসামি তুহিন ও ইমন এসে সাহিনের বাঁ পায়ে কোপ দেন। সাহিন মোটরসাইকেল থেকে মাটিতে পড়ে যান। তিনি দ্রুত উঠে বাড়ির গ্যারেজের ভেতর ঢুকে পড়েন। সেখানে সাহিনের হাতে, পায়ে ও বুকে কোপ দেন আসামিরা। এরপর সাহিন গ্যারেজের ভেতর থেকে বের হয়ে আসেন। তখন আসামিরা সাহিনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন।
সাহিনের হাত-পা কেটে ফেলার জন্য আসামি আউয়াল আসামি সজীবের মাধ্যমে পোলাপানের খরচ বাবদ সুমন বেপারীকে ২০ হাজার টাকা দেন। আসামি সুমন ও টিটু অফিসে সাহিনুদ্দিনকে মারার জন্য আলোচনা করেন। তখন টিটু আসামি সুমনকে ইটের টাকা নেওয়ার কথা বলে ডাকার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৬ মে সকালে আসামি সুমন বেপারী এ কাজ করার জন্য লোকজন ঠিক করেন।
হত্যাকাণ্ডের পর ওই রাতেই নিহতের মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে পল্লবী থানায় সাবেক এমপি আউয়ালসহ ২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে আকলিমা বেগম বলেন, ২০২১ সালের ১৬ মে বিকেল ৪টার দিকে সুমন ও টিটু নামে দুই যুবক সাহিনুদ্দিনকে জমির বিরোধ মেটানোর কথা জানিয়ে ফোন করে ডেকে নেন। সাহিন মোটরসাইকেলে পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কের ৪০ নম্বর বাসার সামনে গেলে সুমন ও টিটুসহ ১৪ থেকে ১৫ জন মিলে তাকে টেনেহিঁচড়ে ওই বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে যান। এ সময় সাহিনের ৬ বছরের ছেলে মাশরাফি গেটের বাইরে ছিল। গ্যারেজে নিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন তারা। এরপর তাকে ওই গ্যারেজ থেকে বের করে ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে ফের কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যান। পরে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ মামলায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এমএ আউয়ালসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার হোসেন। ২০২২ সালের ১২ মে আদালত সাহিনের মা আকলিমার নারাজির আবেদন গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মন্তব্য করুন