দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ঘরচাপায় এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গাছাপালা উপড়ে যাওয়া ছাড়াও লন্ডভন্ড হয়েছে ২ শতাধিক ঘরবাড়ি। ক্ষতি হয়েছে ফসলের। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ঘূর্ণিঝড়ে (টর্নেডো) আঘাতে অন্তত ২০টি টিনশেড ঘর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লাল মিয়া পাড়া গ্রামের মেরাতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশকিছু গাছ উপড়ে যায় ও ভেঙে পড়ে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চৌধুরী বাদল জানান, সকাল থেকেই ভারি ও মাঝারি আকারে বৃষ্টিপাত হয়। দুপুরে হঠাৎ করে
মেরাতলী মাঠের দিক থেকে প্রচণ্ড বেগে একটি টর্নেডো ধেয়ে আসে। মুহূর্তেই এলাকার অন্তত ২০টি টিনশেড ঘরে আঘাত করে।
ইউএনও মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। শিগগিরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
ভাঙ্গা (ফরিদপুর): কয়েক মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে (টর্নেডো) দুই ইউনিয়নের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের ছোট হামিরদী গ্রাম এবং আজিমনগর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ছোট হামিরদী গ্রামে ঘরের মধ্যে চাপা পড়ে ঝর্ণা বেগম (২০) নামে এক গৃহবধূ ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুণ্ডলী পাকিয়ে কয়েক মিনিটের ঝড়ে গাছপালা, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। নিহত গৃহবধূর স্বামীর নাম শাহাবুদ্দিন শেখ। ঝড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গাছপালারও ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কয়েক মিনিটের ঝড়ে পুরো এলাকাটি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। অন্যদিকে উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের পাতরাইল, পুকুরপাড়, কর্নিকান্দাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে বাড়িঘর ও পাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙ্গা হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়ে সড়কের পুলিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর): দুটি ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। উপড়ে পড়েছে কমপক্ষে ৩ শতাধিক গাছ। খুঁটি উপড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। খোলা আকাশের নিচে ও আশপাশের এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকেই অবস্থান নিয়েছেন। ঝড়ে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা সদর ইউনিয়ন ও টগরবন্ধ ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের নাম, পরিচয় ও তালিকা পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ধেয়ে আসা টর্নেডো স্বল্পসময় স্থায়ী ছিল। তাতেই উপজেলার সদর ইউনিয়ন বিদ্যাধর, ব্রাহ্মণ-জাটিগ্রাম, বেজিডাঙ্গা ও টগরবন্ধ ইউনিয়নের মালা, কৃষ্ণপুর-টগরবান, তিতুরকান্দি গ্রামের কাঁচাপাকা বাড়িঘর, গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফসলি জমিও নষ্ট হয়েছে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বেগম বলেন, খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হয়েছে। টগরবন্ধ ইউনিয়নে তিনটি গ্রামের ৬০ থেকে ৭০টি কাঁচাপাকা বাড়িঘর ও কয়েকশ গাছপালা ভেঙে পড়ে।
ফরিদপুরের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আলফাডাঙ্গা সাব জোনাল অফিসের এজিএম ফাহিম হাসান বলেন, আলফাডাঙ্গার পুরো উপজেলা নয়। বয়ে যাওয়া ঝড়ে দুটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের তিনটি খুঁটি ভেঙে পড়ে গেছে। আরও অনেক আঁকাবাঁকা হয়ে পড়েছে। আমাদের অফিসের লোকজন কাজ করছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, অনেকেই ঘরবাড়ি ছাড়া খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের নিরাপদ স্থান ও আশপাশের এলাকায় অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা
করা হবে।