আতাউর রহমান
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৮ এএম
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সাবেক ওসি শাহ আলমের পলায়ন নিয়ে অনেক প্রশ্ন

এএসআইর পর ওসিও ক্লোজড
সাবেক ওসি শাহ আলমের পলায়ন নিয়ে অনেক প্রশ্ন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিশু জাবির ইব্রাহীম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম দায়িত্বরত পুলিশের গাফিলতিতে পালানোর সুযোগ পান। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে নেওয়ার প্রস্তুতির সময়ে তিনি বাথরুমে যাওয়ার বায়না ধরেন। থানা কম্পাউন্ডের ভেতর দক্ষিণ দিকের বাথরুমে গেলেও তার সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষী ছিল না; শিশু হত্যার আসামি হলেও তার হাতেও হাতকড়া ছিল না। ওই অবস্থায় তিনি বাথরুমের পাশের বিকল্প গেট দিয়ে অনায়াসে পালিয়ে যান। থানা সংশ্লিষ্ট সূত্রে মিলেছে এসব তথ্য।

পুলিশ সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তারের পর গত বুধবার রাত ১২টার দিকে সাবেক ওসি শাহ আলমকে উত্তরা পূর্ব থানায় আনা হয়। ওই রাতে তাকে থানা হাজতে না রেখে ওসির কক্ষে থাকতে দেওয়া হয়। সেখানেও তার হাতে হাতকড়া ছিল না। রাতে তাকে বাইরের খাবার সরবরাহ করা হয়। সেখানে তিনি ‘জামাই আদরে’ ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি পালিয়ে যান।

ওই সূত্রটি জানায়, বুধবার রাতে শাহ আলমকে থানায় আনার পর তিনি অস্বস্তি ও অসুস্থতার কথা জানান। তখন তাকে হাজতখানায় না নিয়ে ওসির কক্ষে বিশ্রাম করতে সুযোগ দেওয়া হয়।

এদিকে পালিয়ে যাওয়ার এক দিন পর গতকাল শুক্রবার ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পুলিশ। তার বিষয়ে দেশের সব থানা, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তার অবস্থান শনাক্তে যৌথ বাহিনীর অভিযানও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলার কারণে উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মহিববুল্লাহকে গতকাল দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এর আগে থানার এএসআই সাজ্জাদ হোসেনকে সাসপেন্ড করা হয়।

উত্তরা পূর্ব থানা সূত্র জানায়, শিশু জাবির ইব্রাহীম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাবেক ওসি মো. শাহ আলমকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে আদালতে হাজির করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তাকে আদালতে নিতে থানার একটি ডাবল কেবিন পিকআপও প্রস্তুত করা হয়। তখন তিনি থানায় অপারেশনস বিভাগের পরিদর্শকের কক্ষে বসা ছিলেন। তাকে এএসআই সাজ্জাদ হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন কনস্টেবল গাড়িতে তুলতে যান। ওই সময়ে শাহ আলম বাথরুমে যাওয়ার বায়না ধরেন। তখন তাকে একাই থানা কম্পাউন্ডের ভেতরে থাকা বাথরুমে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। যদিও গাড়িতে তোলার আগে বা পরে তার হাতকড়া ছিল না।

পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘক্ষণ পরও শাহ আলম ফিরে না আসায় দুই কনস্টেবল বাথরুমে গিয়ে দেখতে পান বাথরুমের দরজা খোলা থাকলেও সাবেক ওসি শাহ আলম নেই। এর পরই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। পরে দেখা যায়, থানা কম্পাউন্ডের দক্ষিণ দিকে বিকল্প গেটটি খোলা রয়েছে। ওই গেট দিয়েই পালিয়ে যান শাহ আলম। ঘটনার সময়ে থানার ওসি, পরিদর্শক (তদন্ত), পরিদর্শকসহ (অপারেশনস) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থানাতেই ছিলেন।

ওই থানায় দায়িত্ব পালন করা সাবেক এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, সাধারণত বিকল্প গেটটি রাতে পুরোপুরি বন্ধ থাকে। দিনেও ছোট গেটটি মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকে। ওসি শাহ আলমের পলায়নের দিন সেটি খোলা থাকায় তার পালিয়ে যাওয়া সহজ হয়।

উত্তরা পূর্ব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ মিয়া কালবেলাকে বলেন, ঘটনার সময় ওসিসহ তারা যার যার কক্ষে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ওই আসামিকে আদালতে নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন এএসআই সাজ্জাদ হোসেন। তার কাছেই সাবেক ওসি শাহ আলম বাথরুমে যাওয়ার বায়না ধরেন। কিন্তু দায়িত্বরত কর্মকর্তা নিয়ম মেনে বাথরুমে নিলে ওই ঘটনা ঘটার সুযোগ হতো না। তিনি বলেন, থানা থেকে ওই আসামির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় নতুন একটি মামলা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান বলেন, পালিয়ে যাওয়া ওই আসামিকে ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলার কারণে উত্তরা পূর্ব থানার ওসিকে ক্লোজড করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পালিয়ে যাওয়া ওসি শাহ আলম ২০০৭ ব্যাচের। গত বছরের ২ আগস্ট তাকে উত্তরা-পূর্ব থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশের বড় ধরনের বদলির মধ্যে তাকেও ওসির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে কুষ্টিয়ায় পুলিশের ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত বুধবার তাকে সেখান থেকেই জাবির ইব্রাহীম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে ঢাকায় আনা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরের পর বাবা-মায়ের সঙ্গে বিজয় উল্লাস করতে উত্তরার জসীম উদ্দীন এলাকায় আসে ৬ বছরের শিশু জাবির ইব্রাহীম। ওই সময়ও পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ চলছিল। পুলিশের গুলির মুখে তখন বাবার হাত ধরে রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছিল ছোট্ট শিশুটি। তখন উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সে রাস্তায় পড়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দক্ষিণখান থানার পশ্চিম মোল্লারটেক এলাকার বাসিন্দা জাবির উত্তরায় কেসি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের নার্সারি শ্রেণির ছাত্র ছিল।

ওই শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ২ সেপ্টেম্বর উত্তরা-পূর্ব থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়। ওই মামলার এজাহারভুক্ত ১৭ নম্বর আসামি থানার তৎকালীন ওসি শাহ আলম।

পুলিশ জানায়, ওই মামলাটি ছাড়াও শাহ আলম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় আরও কয়েকটি মামলার আসামি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পরিত্যক্ত পৌর কমিউনিটি সেন্টারে ফের মিলল মরদেহ

লোকবল নেবে আরএফএল

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

রাকসু নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠানে ভিপি প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতি

দুটি ছাড়া ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনাঘাঁটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে

১২ অক্টোবর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

স্ত্রীর মৃত্যুর ৫ ঘণ্টা পর মারা গেলেন স্বামীও

ইফাদ গ্রুপের গৌরবময় ৪০ বছর উদ্‌যাপন, সমৃদ্ধির পথে একসাথে

রোববার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১২ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১০

জুতা পরে জানাজার নামাজ পড়া কি জায়েজ?

১১

প্রতিদিনের সাধারণ যে অভ্যাসেই কমে যাচ্ছে আপনার মোবাইলের আয়ু

১২

যে গ্রামে বসবাস করলেই মিলবে ২৭ লাখ টাকা!

১৩

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তুমুল সংঘর্ষ

১৪

‘শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের শহীদ পরিবারকে সহযোগিতা করবে সরকার’

১৫

অসুস্থ বিএনপি নেতা ডা. রফিকের খোঁজ নিতে বাসায় জোনায়েদ সাকি

১৬

আফগানদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে বাংলাদেশের সিরিজ হার

১৭

যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল ম্যাচ শেষে এলোপাতাড়ি গুলি, নিহত ৪

১৮

চট্টগ্রামে কনসার্টে গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১

১৯

চিহ্নিত ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠানের ওপর দেওয়া উচিত নয় : বিএনপি

২০
X