নাইকো দুর্নীতি মামলায় কানাডা অ্যান্ড রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের সদস্য কেবিন দুগ্গান ও লয়েড শোয়েপ সাক্ষ্য দিয়েছেন। গতকাল সোমবার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় জেলখানায় অবস্থিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দিতে তারা এ মামলার আসামি খালেদা জিয়া সম্পর্কে কোনো কিছু বলেননি। তবে নাইকো দুর্নীতির বিষয়ে তারা জবানবন্দি দেন।
এ বিষয়ে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘দুই সাক্ষী তাদের জবানবন্দিতে তারেক রহমান ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের কথা বলেছেন। তারা যৌথভাবে দুর্নীতি করতে সহযোগিতা করেছেন। তবে সাক্ষীরা খালেদা জিয়া সম্পর্কে কিছু বলেনি।’
খালেদা জিয়ার আইনজীবী জিয়া উদ্দিন জিয়া বলেন, ‘দুই কানাডিয়ান পুলিশ তাদের সাক্ষীরা এ মামলার অভিযোগের বিষয়ে খালেদা জিয়া সম্পর্কে কিছু বলেনি। এজন্য আমরা তাদের জেরা করিনি।’
জবানবন্দিতে লয়েড শোয়েপ বলেন, কানাডার তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি নাইকোতে তৎকালীন সরকারের কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতি করতে ইন্ধন জোগায়। আমরা এ দুর্নীতির বিষয়ে জানতে পারি গণমাধ্যমে সংবাদ দেখে। নাইকোর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার দায়ে নাইকো রিসোর্সেস কানাডায় দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্তও হয়েছে।
জবানবন্দিতে কেভিন দুগ্গান বলেন, ২০০৫ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রী একেএম মোশারফ হোসেনকে নাইকো রিসোর্স লিমিটেড ঘুষ হিসেবে একটি গাড়ি দেয়। ওই সংবাদের ভিত্তিতে কানাডার আলবার্তার ক্যালগরির আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন ইউনিট তদন্ত শুরু করে।
বিষয়টি কানাডার আদালতে উত্থাপিত হলে ২০১১ সালে নাইকো রিসোর্স লিমিটেড দোষ স্বীকার করে। নাইকোকে ৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়। কানাডার পুলিশের দুর্নীতি দমন ইউনিট তিন বছর তদন্ত করে জানতে পারে নাইকো রিসোর্সের কাছ থেকে বাংলাদেশের কোম্পানি স্ট্রেটাস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের মালিক কাসেম শরীফ ২ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার নেন। সেলিম ভূঁইয়ার নির্দেশে কাসেম শরীফ সেখান থেকে ২০ হাজার ইউএস ডলার ফজলে সিদ্দিক নামে একজনকে পাঠান। জামাল শামসি নামে একজনকে ৫৭ হাজার ইউএস ডলার পাঠান। পরে আরও ১ লাখ ৩৩ হাজার ইউএস ডলার জামাল শামসিকে পাঠানো হয়। তারা সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অ্যাকাউন্টে এ টাকা পাঠান। গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও সেলিম ভূঁইয়া কাসেম শরীফের কোম্পানির পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। তবে শর্ত থাকে কাসেম শরীফ গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের অনুমতি ছাড়া বা তার কথার বাইরে কারও সঙ্গে এ বিষয়ে কথাবার্তা বলতে পারবেন না। তাহলে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তার ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এদিন খালেদার পক্ষে তার আইনজীবী হাজিরা দেন। অন্য আসামিরা আদালতে উপস্থিতি হন। তাদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। বিচারক দুই সাক্ষী কেবিন দুগ্গান ও লয়েড শোয়েপের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর শোয়েপের জেরা শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। অন্য সাক্ষী কেবিন দুগ্গানের জেরা শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার আদালত নতুন দিন ধার্য করেছেন। এ মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলমের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেন।