আবারও ফিফটি-ফিফটি ফর্মুলায় ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রি। যৌথ প্রযোজনার সিনেমার নামে যৌথ প্রতারণা বন্ধ হয়েছিল বিএফডিসি কেন্দ্রিক ১৯ সংগঠনের আন্দোলনের মুখে। সেটি ২০১৭ সালের কথা। প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কিংবদন্তি নায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের নেতৃত্বে এ আন্দোলন সফলতা পায়। সেসময় যৌথ প্রযোজনার নীতিমালাতেও পরিবর্তন আসে। ফলে বিশেষমহল নিয়ম মেনে কাজ করতে না পারায় পিছু হটে।
সহজ ভাষায়, নীতিমালার নিয়ম অনুসারে দুই দেশের শিল্পী ও টেকনিশিয়ানদের সমান অংশগ্রহণ থাকতে হবে। তবে এটি মানতে নারাজ ছিল যৌথ প্রযোজনা ছবির প্রযোজকরা।
ইতিহাস সাক্ষী স্বাধীনতার পর থেকে অসংখ্য যৌথ প্রযোজনার ছবি ভারত, পাকিস্তানসহ উপমহাদেশের কয়েকটি দেশের সঙ্গে মিলে নির্মিত হয়েছে। ছবিগুলো দর্শকমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এতে করে বাংলাদেশের অনেক তারকা ওসব দেশেও পরিচিতি লাভ করে।
অথচ বর্তমানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অবাধে যৌথ প্রযোজনার নামে প্রচলিত আইনের ফাঁক-ফোকরে সরাসরি বিদেশি সিনেমা যৌথ চলচ্চিত্র বলে দেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন শুরু করে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার আগে ও পরে তারা নিষ্ক্রিয় থাকলেও ফের জোট বেঁধেছে। এমন অবস্থায় শুটিং হচ্ছে না দেশে, কাজ পাচ্ছে না দেশের টেকনিশিয়ানরা।
এ ব্যাপারে প্রযোজক আরশাদ আদনান কালবেলাকে বলেন, যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র হতেই পারে। তবে এর নামে যেন প্রতারণা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের শিল্পী ও কলাকুশলীরা যেন সমান অধিকার পায় সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। আইন মেনেই যেন চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে ইন্ডাস্ট্রির জন্য হুমকি হবে। করোনার পর আমার প্রযোজিত ছবি ‘প্রিয়তমা’র মাধ্যমে দর্শকরা হলমুখী হয়েছেন। নতুন অনেক প্রযোজক চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহ পাচ্ছেন। আইনের ফাঁক-ফোকরে যদি বিদেশি চলচ্চিত্রকে যৌথ প্রযোজনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সবাই বিপাকে পড়বেন। বঙ্গবন্ধুর গড়া এই বিএফডিসিতে শিল্পী ও কলাকুশলীরা বেকার হয়ে পড়বেন।
বিদেশে শুটিং প্রসঙ্গে পরিচালক বদিউল আলম খোকন বলেন, গল্পের প্রয়োজনে যদি দেশের বাইরে শুটিং করতে হয়, কেউ সেটি করতেই পারে। সেক্ষেত্রে দুই দেশের সমান টেকনিশিয়ান থাকতে হবে। আজ আমি বদিউল আলম খোকন কিংবা শাকিব খান সবাই হয়েছি এই ইন্ডাস্ট্রির টেকনিশিয়ানদের দ্বারাই। কেউ কিন্তু আমাদের অবস্থান তৈরি করে দিয়ে যায়নি। আমাদের নিজেদের আসলে কৃতজ্ঞতা নেই। দেশপ্রেম থাকতে হবে। অতীতেও আমরা অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। নীতিমালার সংশোধনও হয়েছিল। আন্দোলনের শুরু অনন্য মামুনের ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ছবির মাধ্যমে। তখন মামুন শুধু মিশা সওদাগরকে কাস্ট করে বাকি শিল্পীদের বাইরে থেকে নিয়ে ছবি রিলিজ দিয়েছিল। একটা দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি যদি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে আর কিছুই থাকে না।
চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরী বলেন, আমার আসলে যৌথ প্রযোজনার ছবি সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই। তবে দিন শেষে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে ভাবতে হবে। ভালো ছবি করলে বিশ্ব দরবারে আমাদের সংস্কৃতি পরিচিতি পাবে। ফিল্ম বড় মাধ্যম। অনেক দেশ শুধু চলচ্চিত্র দিয়ে তাদের দেশের পরিচিতি বাড়িয়েছে। তাই নিজেদের ইন্ডাস্ট্রিকে ভালোবাসা গুরুত্বপূর্ণ। দেশপ্রেম থাকলেই সেটি সম্ভব।
সূত্রের খবর, একাধিক ব্যক্তি নামে-বেনামে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীদের বঞ্চিত করে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের ওপর ভর করে ভিনদেশি প্রযোজনা সংস্থা নিজেদের সিনেমার ব্যবসা এখানে চালিয়ে যেতে চাইছে। যৌথ প্রযোজনার নামে কেউ আবার অর্থ পাচারের পাঁয়তারায় লিপ্ত। সবমিলে স্বার্থান্বেষী মহলের এমন কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে ইন্ডাস্ট্রির ওপর ‘স্লো পয়জন’ হিসেবে কাজ করবে, এতে দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংসের মুখে পড়বে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।