কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

বিআইপিডির কোটি টাকা পরিশোধ করছে না ফার ইস্ট ফাইন্যান্স

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে বিআইপিডির সংবাদ সম্মেলন। ছবি : কালবেলা
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে বিআইপিডির সংবাদ সম্মেলন। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইপিডি)-এর মেয়াদোত্তীর্ণ এফডিআরর ১ কোটি ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ফেরত দিচ্ছে না ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এমনকি আমানতের ওপর পাওনা মুনাফাও দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থমন্ত্রণালয়, এনবিআর– এমনকি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বরাবর একাধিকবার চিঠি দিয়েও কোনো সমাধান পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেছে বিআইপিডি।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিআইপিডির চেয়ারম্যান মো. এহসান খসরু, পরিচালক কাজী মো. মোরতুজা আলী, জেনারেল সেক্রেটারি এ কে এম এহসানুল হক।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইপিডি) কোম্পানি আইনের অধীনে নিবন্ধিত একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি, যা বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যথা ব্যাংক, বিমা ও পুঁজিবাজারে কর্মরত পেশাজীবীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্রিয় বয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিআইপিডি'র চেয়ারম্যান এহসান খসরু লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিআইপিডি ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে সর্বমোট ১ কোটি ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ছয়টি এফডিআর অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। সবকটি এফডিআর ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তাসত্ত্বেও ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড বিআইপিডির কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি। এমনকি লভ্যাংশও দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, এ যাবত ৫৬টি পত্র দেওয়া স্বত্বেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমন কি ২০২০ সালের পরে কোনো পত্রের জবাবও দেয়নি। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের শরণাপন্ন হয় বিআইপিডি। বিআইপিডি’র চেয়ারম্যান বলেন, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের বিষয়টি নিয়ে বিআইপিডি ২০১৯ সালের ১১ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর সর্বপ্রথম পত্র দেয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল পত্র পাঠানো হয়। এ যাবত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর এবং ফিন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ বরাবর ৩৬টি পত্র ও ইমেইল পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। জবাব না দেওয়ার কোনো কারণ আছে কি না আমরা তাও জানতে পারিনি।

তিনি বলেন, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর এবং ২০২৩ সালের ২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড কর্তৃক বিআইপিডির অর্থ পরিশোধ না করার বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়। এই চিঠি দেওয়ার পরে ৮ মাস পার হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বা আমাদেরকে অবহিত করেনি।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি সরাসরি সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিএফআইএম’র ডিরেক্টর মো. আমির উদ্দিন বলেন, কোম্পানি ম্যাটার নং-২৪৩/২০২০ এর প্রেক্ষিতে আদালতের ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারির আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে রক্ষিত বিআইপিডির আমানত অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

বিআইপিডি’র চেয়ারম্যান বলেন, এ বক্তব্য আদৌ যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নয়। উক্ত মামলাটি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং পিএফআই প্রোপারটিজ লিমিটেডের মধ্যে সংগঠিত হয়েছে। এই মামলার সঙ্গে বিআইপিডি কোনোভাবে জড়িত নয়। আদালতের আদেশে বিআইপিডির হিসাব ফ্রিজ করার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিষ্কার করে বলার পরেও এ যাবত বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বা আমাদের কোনো জবাব দেয়নি।

তিনি জানান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ২০২২ সালের ২৩ মার্চ ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে বিআইপিডির প্রাপ্য অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়। এই নির্দেশনাও অমান্য করেছে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

মহাপরিচালক মোরতুজা আলী বলেন, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের অন্যায় ও অযৌক্তিক কর্মকাণ্ডের ফলে বিআইপিডির মতো একটি সম্ভাবনাময় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। আমাদের প্রায় ১ কোটি ০৮ লাখ টাকার ছয় মাস মেয়াদি আমানত ছিল। প্রথম দিকে সেই আমানতের মুনাফা দেওয়া হলেও ২০১৮ সাল থেকে আর দিচ্ছে না, এছাড়া পুনরায় রিনিউও করা হচ্ছে না। মর্তুজা আলী আরও বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড কর্তৃক বিআইপিডির অর্থ পরিশোধ না করার বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পত্র প্রদান করা হয়। তবুও বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের মার্চ শেষে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪০ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ রয়েছে ৮৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মোট ঋণের ৯৪.২৫ শতাংশ খেলাপি। এছাড়া, ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ হালনাগাদকৃত কোয়ার্টারলি ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টসে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শুভ্রতার প্রতীক মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার আট মিনারবিশিষ্ট নান্দনিক মসজিদ

হাসপাতাল নয়, যেন তেলাপোকার বসতঘর

বঙ্গবন্ধু কন্যাকে নৌকাখচিত চেয়ার উপহার দিতে চান হিরু কারিগর

যবিপ্রবিতে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ফল

‘রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা প‌রিচালনার তহ‌বি‌ল অপর্যাপ্ত’

প্রার্থীর আজব কাণ্ড, মোটরসাইকেল গাছে ঝুলিয়ে প্রচার

উপজেলা নির্বাচন / ভোটের মাঠে মা-ছেলে-নাতি মুখোমুখি

চবিতে ‘ম্যাটেরিয়ালস, এনার্জি এন্ড এনভায়রনমেন্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত

২৫-এ বিয়ে না করলেই শাস্তি!

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: ‘বি’ ইউনিটে পাবিপ্রবিতে উপস্থিতি ৮৪.২১ শতাংশ

১০

কিম জং উনের হেরেমের গোপন কাহিনি প্রকাশ্যে

১১

অভিষিক্ত তামিমের অর্ধশতকে টাইগারদের সহজ জয়

১২

উল্কা গেমসের কর ফাঁকি / এনবিআরের অভিযান নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যাখ্যা 

১৩

আ.লীগ নেতারা নিজেদের ভেতরকার অস্থিরতা আড়াল করতে চাচ্ছে : প্রিন্স

১৪

রোহিতদের হটিয়ে টেস্টের এক নম্বর দল এখন অস্ট্রেলিয়া 

১৫

ইসরায়েলগামী জাহাজের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি ইয়েমেনিদের

১৬

নারী ক্রেতাকে শ্লীলতাহানি চেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ীর কারাদণ্ড

১৭

মৎস্য খামারের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ফসলি জমির মাটি লুট

১৮

‘গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী এডিবি’

১৯

তীব্র খরার মধ্যেই দেশে বন্যা সতর্কতা

২০
*/ ?>
X