ভোরবেলা রাজধানীর মগবাজার এলাকায় মামাতো বোনের বাসা থেকে বের হয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন আব্দুল্লাহ। বাসা থেকে বের হয়ে গ্রিনওয়ে গলিতে পৌঁছানো মাত্রই এক বাইকে তিনজন আরোহী এসে তার গতিরোধ করে। হেলমেট পরিহিত তিন আরোহীর দুজন নামে বাইক থেকে। এরপর চাপাতি হাতে তাকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। এক পর্যায়ে তার কলার ধরে একটি বাড়ির গেটের কাছে নিয়ে যায়। তখন তার ঘাড়ে থাকা ব্যাগটি নিয়ে নেয় একজন। অপরজন তার মানিব্যাগ ও মোবাইলফোনটি নিয়ে নেয়। এরপর আব্দুল্লাহ এসে বাইকের সামনের চাকা জড়িয়ে ধরে আকুতি জানিয়ে কিছু একটা বলতে দেখে যায়। তখনও সেই দুর্বৃত্তরা কোনো কথা না বলে আবার চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করতে উদ্যত হয় এবং এক পর্যায়ে সব নিয়ে চলে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব আব্দুল্লাহ তখন চলে যাওয়া বাইকের দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলেন।
লোমহর্ষক এ ঘটনাটি গত ১৯ মের হলেও সম্প্রতি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
সে ঘটনার ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ কালবেলাকে বলেন, কোনো কথা না বলেই ওরা এসে চাপাতি ঘুরিয়ে আমার ব্যাগ, ব্যাগে থাকা চৌদ্দ হাজার টাকা, আমার মানিব্যাগ ও মোবাইলফোন নিয়ে গেল। আমি অনেক অনুরোধ করেছিলাম অন্তত ব্যাগটা যেন আমাকে দিয়ে যায়। কোনো কাজ হয়নি। কথা না বলে শুধু তারা চাপাতি দিয়ে কোপ দিতে চেয়েছে। পাঁচটা কোপ আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে লেগেছে। না কাটলেও জখম হয়েছে অনেক। আমার ব্যাগে অফিসের কিছু টাকাসহ আমার পরীক্ষা ও কলেজের ফির জন্য মোট চৌদ্দ হাজার টাকা ছিল। এজন্য আমি শেষ মুহূর্তে তাদের বাইকের চাকা আটকে ধরে অনুরোধ করেছিলাম, যেন আমার ব্যাগটা অন্তত দিয়ে যায়। তারা কোনো অনুরোধই শোনেনি। আমার কথার জবাবে তারা চাপাতি চালিয়েছে।
ঘটনার পর পরই আব্দুল্লাহ অভিযোগ জানাতে যান সংশ্লিষ্ট হাতিরঝিল থানায়। তবে সেদিন থানা-পুলিশ মামলা না নিয়ে তাকে হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, সকাল পাঁচটার ঘটনা এটি। ঘটনার পরপরই স্থানীয়দের পরামর্শে আমি হাতিরঝিল থানায় গিয়েছিলাম মামলা বা অভিযোগ দিতে। তবে থানা থেকে আমার অভিযোগ না নিয়ে হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট নিয়ে আসতে বলে। আমি স্থানীয় মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে যাই। সেখান থেকে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে যেতে বলে। আমার শরীর তখন অনেক দুর্বল থাকায় আমি আর কোথাও যাইনি। মামলাও করিনি।
তবে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গত রোববার রাতে আব্দুল্লাহর মামাতো বোনের স্বামী হাতিরঝিল থানায় অভিযোগ করার পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) আরও অনেক পুলিশ তার সঙ্গে দেখা করেছেন। মামলা নিয়েছেন বলেন জানান এই ভুক্তভোগী। মামলা না নিয়ে আব্দুল্লাহকে হয়রানি করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাজুর কাছে।
তিনি বলেন, এরকম কোনো বিষয় আমার নলেজে নেই। এরকম তো হওয়ার কথা না। পরবর্তীতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, এই ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। আমরা নানাভাবে বিষয়টি তদন্ত করছি। অপরাধীদের প্রায় শনাক্ত করা গেছে। আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের আইনের আওতায় আনা যাবে।
জানা গেছে, আব্দুল্লাহ উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করছে। এর পাশাপাশি পল্টনে একটি চাকরি করে। তার পড়াশোনার ফি বাবদ কিছু টাকা মামাতো বোনের বাসায় জমা রেখেছিল। গত ১৯ মে ভোরে তার বোনের বাসা থেকে টাকাগুলো নিয়ে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে রওনা দিয়েছিল।
মন্তব্য করুন