বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ সকালে আমেরিকানদের গালি দেয়, বিকেলে ফুলের তোড়া নিয়ে হাজির হয়। আবার যখন তার পরের দিন তারা বুঝে যায়, আমেরিকানরা তাদের গণতন্ত্রবিরোধী, মানবতাবিরোধী, ভোট চুরির বিরোধী। আবার তারা তাদের গালি দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমেরিকার রাষ্ট্রদূত আওয়ামী লীগের অফিসে গেছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা রাষ্ট্রদূতকে ফুলের তোড়া নিয়ে, ৩২টি দাঁত দেখিয়ে, কি খুশি। একটি দেশের রাষ্ট্রদূত গেছে, এভাবে ফুলের তোড়া দিয়ে, হাসিখুশি, মনে হয় জীবনে আর দেখেনি। বিএনপি অফিসে কত রাষ্ট্রদূত গেছে কোনোদিন দেখছেন ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়াতে।’
আরও পড়ুন : একদফার আন্দোলন জোরদার করবে গণতন্ত্র মঞ্চ
শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকেলে কাজীর দেউরী নুর আহম্মেদ সড়কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নাকি বিদেশিদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাতে দেয়। আপনারা ফুলের তোড়া নিয়ে ওখানে কি গলাতে গিয়েছিলেন। আবার বের হয়ে এসে সুখবর দিচ্ছেন, রাষ্ট্রদূত এটা বলেনি, ওটা বলেনি। কি আনন্দ। তাহলে কে নাক গলাল। ফুলের তোড়া নিয়ে নাক গলাতে হয়, এই হচ্ছে আপনাদের দূরবস্থা।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে কিছু করতে পারেননি, তাই জুবাইদা রহমানের পেছনে লেগেছেন। এখন কী অপেক্ষায় শুধু জাইমা রহমান। এবার জাইমা রহমানকে নিয়ে সরকার কী উঠেপড়ে লাগবে? বাংলাদেশের মানুষ তাদের অনুপস্থিতিতে আপনার বিদায়ের ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই সরকার জনগণের কাছে পরাজিত হয়ে বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা করছে। এসব যারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের লড়াইকে বন্ধ করার চেষ্টা করছে, আগামী দিনগুলোতে আপনাদের জন্য কঠিন সময় আসছে। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, আপনাকে যেতে হবে। আপনি থাকতে পারবেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি একটি অংশকে ব্যবহার করে থাকতে পারবেন না। ঢাকায় ২৮ জুলাই ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ সমাবেশ করে একটি বার্তা দিয়েছে শেখ হাসিনা বিদায় হও।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে মনে করেছিলেন ক্ষমতায় অব্যাহতভাবে আবার থাকবেন। তারপর তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে মনে করেছিলেন আপনাদের কাজ হয়ে গেছে। তারপরও আপনাদের সন্দেহ কাটছে না। আপনাদের ভয় কাটছে না। আপনাদের ভেতরে কম্পন শুরু হয়ে গেছে। খালেদা জিয়াকে জেলে দিয়েছেন, তারেক রহমাকে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। এখন ভয় পাচ্ছেন জোবাইদা রহমান যদি বাংলাদেশে আসে আপনাদের কী অবস্থা হবে। তারেক রহমান জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার পতনের যে ডাক দিয়েছে সেটাই যথার্থ।
আমীর খসরু বলেন, ‘ওই আওয়ামী নেতাকর্মী ও আওয়ামী পুলিশ বাহিনীর একটি অংশ, সরকারি একটি অংশ এবং কিছু বিচারককে নিয়ে টিকে থাকার যে চেষ্টা করছেন তা আর হবে না। আপনার সঙ্গে বাংলাদেশের কেউ নেই। জনগণ নেই। বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষ আপনার সঙ্গে নেই। বিশ্বের বিবেক আপনার সঙ্গে নেই। যারা লুটপাট ও হালুয়া রুটির ভাগ নিয়েছেন তারা কিছুটা লাফালাফি করছেন। হালুয়া রুটি যারা খেয়েছে তারা আরও খাওয়ার জন্য লাফালাফি করছে। এদের সংখ্যা বাংলাদেশের মানুষের এক শতাংশও হবে না। এই এক শতাংশ নিয়ে আপনি ৯৯ শতাংশ জনগণের বিরুদ্ধে টিকে থাকবেন? কীভাবে আপনি ভাবছেন এই কথাটি।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, জুবাইদা রহমান ও জাইমা রহমান এদের পথ রুখে দাঁড়াবার কোনো শক্তি বাংলাদেশে কারও নেই। বিচার বিভাগের নেই, আওয়ামী লীগের নেই। আপনারা এসব রায় দিয়ে আওয়ামী লীগের যদি কিছু একটাও যদি থেকে থাকে সেটাও ধ্বংস করে দিয়েছেন। এরা যে রাজনৈতিক দল নয়, এরা যে জনগণের ওপর নির্ভরশীল নয়, এরা জনগণের ওপর বিশ্বাস করে না। এরা নির্ভরশীল বিচার বিভাগের ওপর, আইনশৃঙ্খলার কিছু লোকের ওপর আর কিছু লুটেরা ব্যবসায়ীর ওপর।
আমীর খসরু বলেন, আপনারা কীভাবে যাবেন ঠিক করেন। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে যাবেন, নাকি জনগণ আপনাদের বিতাড়িত করবে। আমরা কাউকে বিতাড়িত করার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করি। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের ভোটের নির্বাচিত সংসদ ও নির্বাচন। এই কাজটাতে বিএনপি বিশ্বাস করে।
মন্তব্য করুন