সালাহউদ্দিন সালমান, সিরাজদীখান (মুন্সীগঞ্জ)
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১১:৪০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ফুল হয়ে ফোটে খাদ্য-অর্থের অভাব মেটাচ্ছে শাপলা

বিক্রির জন্য শাপলা সংগ্রহ করা হয়। ছবি : কালবেলা
বিক্রির জন্য শাপলা সংগ্রহ করা হয়। ছবি : কালবেলা

একসময় বাংলাদেশের পরিচয়ের একরূপ ছিল নদীমাতৃক দেশ হিসেবে। আর নদীনালা, হাওর-বাঁওড়ের বুকে মধ্যমণি ছিল জাতীয় ফুল শাপলা, শালুক ও পদ্ম ফুল। এখনো খালবিল, নদীর সেই রূপ চোখে পড়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে। তবে বর্ষা মৌসুমে ফোটা শাপলা এখন আর শুধু সৌন্দর্যের মধ্যেই নেই, হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার অংশ।

সিরাজদীখান উপজেলায় প্রায় হাজারটা পরিবার শাপলা সংগ্রহ ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত। ভোরের আলো ফুটতেই নৌকা নিয়ে ইছামতী, চর নিমতলা বিলে ভাসতে ভাসতে তারা শাপলা সংগ্রহ করেন দুপুর পর্যন্ত। তারপর বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। এ পেশায় কোনো পুঁজির দরকার হয় না, শুধু পরিশ্রম আর কিছুটা ধৈর্যের প্রয়োজন পড়ে। এজন্য বয়স্ক থেকে তরুণ, এমনকি কিশোররাও শাপলা সংগ্রহে যুক্ত হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, শুধু শাপলা বিক্রির মাধ্যমে সিরাজদীখানে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা লেনদেন হয়। বর্ষায় কৃষিজমি তলিয়ে গেলে যে পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তা অনেকটাই পুষিয়ে দেয় শাপলা ফুল।

কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ শুভ্র কালবেলাকে বলেন, ‘শাপলা পুষ্টিগুণসম্পন্ন একটি নিরাপদ সবজি। এতে কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের ব্যবহার নেই।’

বর্তমানে সিরাজদীখানের শাপলা শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হচ্ছে। এর জন্য উপজেলার রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ ও তালতলা বাজারে গড়ে উঠেছে শাপলার পাইকারি ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র। এখান থেকে প্রতিদিন ট্রাকভর্তি শাপলা ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে যায়।

লতব্দী ইউনিয়নের চর নিমতলা বিলের শাপলা সংগ্রহকারী মো. মাজাহার জানান, একজন সংগ্রহকারী দিনে যে পরিমাণ শাপলা সংগ্রহ করেন, তাতে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ আঁটি (গুচ্ছ) হয়। সেগুলো পাইকাররা এসে তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে যায়। এতে কমপক্ষে হাজার টাকা আয় হয়। কৃষিকাজের পাশাপাশি এ আয় দিয়ে অনায়াসে তাদের সংসারের খরচ মিটে যায়।

ইছামতী নদী থেকে শাপলা তোলা জসিম হোসেন জানান, তিনি ১১ বছর ধরে মৌসুমে শাপলা সংগ্রহ করছেন। এখন দিনে ১ হাজার থেকে ১৫শ টাকার শাপলা বিক্রি করতে পারেন তিনি। কৃষিকাজের ফাঁকে এটা তাদের বাড়তি উপার্জনের উৎস।

বাজারে শাপলার পাইকারি ব্যবসায়ী মল্লিক বাবু। তার হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার আঁটি শাপলা কেনেন তিনি। সংগ্রহকারীর কাছ থেকে প্রতি আঁটি ২০ টাকায় কেনেন তিনি। শ্রমিক, আড়ত, পরিবহন ও অন্যান্য খরচ যোগ করে হলে ব্যয় দাঁড়ায় ২৭ থেকে ২৮ টাকা। এগুলো ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে বিক্রি হয় প্রতি আঁটি ৩৫ থেকে ৩৭ টাকায়।

শুধু বর্ষায় নয়, সারা বছর বাণিজ্যিকভাবে শাপলা উৎপাদনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সৌদিতে ঝড়-বৃষ্টি, বন্যার সতর্কবার্তা

রাতে শুরু হচ্ছে দারাজ ১২.১২-গ্র্যান্ড ইয়ার অ্যান্ড সেল

জয়ার হাতে লাল আপেল, ক্যাপশনে রহস্য

মিরসরাইয়ে জুলাই যোদ্ধা নিহত

আর্জেন্টিনার জালে এক হালি গোল দিয়ে জিতল ভারত

চুরি ধরে ফেলায় মা-মেয়েকে হত্যা : ডিএমপি

এই নির্বাচনের লড়াই, সবচেয়ে কঠিন লড়াই : মির্জা ফখরুল

রাজশাহীতে জামায়াত কর্মীকে হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ

বেতন কমছে ক্রিকেটারদের, বাড়বে কেবল একজনের!

মিয়ানমারে হাসপাতালে বিমান হামলা, নিহত ৩১

১০

চাঁদাবাজদের কারণে দেশের মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত হচ্ছে না : জামায়াত আমির

১১

ফারিন খানের গ্ল্যামারাস লুক দেখে ভক্তদের চোখ কপালে

১২

শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট

১৩

গর্তটির গভীরতা ১৫০ থেকে ২০০ ফুট, ফায়ার সার্ভিস পৌঁছেছে মাত্র ৪০ ফুট

১৪

বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালক এবাদুল করিম আর নেই

১৫

কবর থেকে থেকে ভেসে আসছিল রিংটোন

১৬

সিলেটে পরপর দুইবার ভূমিকম্প, জানা গেল উৎপত্তিস্থল

১৭

রম্যা নয়, রজনীকান্তের প্রথম পছন্দ ছিলেন ঐশ্বরিয়া 

১৮

ভোট দিতে প্রবাসী নিবন্ধন ৩ লাখ ৭ হাজার ছাড়াল

১৯

লাতিন বাংলা সুপার কাপ / স্থগিত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচ, যা বললেন আয়োজকরা

২০
X