সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে গিয়ে কুমিরের আক্রমণে নিহত জেলে সুব্রত মণ্ডলের (৩২) মরদেহ প্রায় ৭ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, বিকেল ৪টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল খাল পার হওয়ায় সময় কুমির কামড়ে টেনে নিয়ে যায় ওই জেলেকে।
নিহত সুব্রত মণ্ডল খুলনার দাকোপ উপজেলার ঢাংমারী এলাকার কুমুদ মণ্ডলের ছেলে। তিনি সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে সুব্রত মণ্ডল ঢাংমারী স্টেশন থেকে রাজস্ব জমা দিয়ে পাস সংগ্রহ করে মাছ ধরতে সুন্দরবনে প্রবেশ করেন। ফেরার পথে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি সাঁতরে করমজল খাল পার হচ্ছিলেন। এ সময় একটি কুমির তাকে ধরে টেনে নিয়ে যায়। সঙ্গে থাকা অন্য জেলেরা চেষ্টা করেও তাকে উদ্ধার করতে পারেননি। ঘটনার পর বন বিভাগের লোকজন ও স্থানীয় গ্রামবাসী করমজল খালে তল্লাশি চালান।
সুব্রতর সঙ্গে মঙ্গলবার একসঙ্গে বনে যাওয়া জুয়েল সরদার, জয় সরকার ও স্বপন বিশ্বাস জানান, সুব্রত মণ্ডল দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে মাছ, প্রধানত কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
এদিকে সুব্রত কুমিরের হামলায় নিখোঁজের পর ফেসবুক পোস্টে সুন্দরবন জলদস্যু মুক্তকরণে বিশেষ অবদান রাখা সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম লেখেন, কাঁকড়া ধরে ফিরছিলেন সুব্রতরা। পথে বড় খাল বলতে করমজল। এখানে কুমির আছে। মাঝে মাঝেই আক্রমণ করে। গত বছর মারা গেল মোশাররফ। তাই সবাই বেশ সতর্ক। পাঁচজনের কাঁকড়া শিকারির দল। সবাই পার হয়ে গেলেন। সুব্রত ছোটখাটো মানুষ। উঠার সময় পানিতে একটু খাবি খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। এক মুহূর্ত। দুই পা একসাথে কামড়ে ধরল বিশাল এক কুমির।
সাথে সাথে সুব্রতর হাত ধরে ফেললো সহযাত্রীরা। শুরু হলো টানাটানি। চারজন মিলে প্রায় তিন মিনিট চেষ্টা করল। কিন্তু পানির নিচে থাকা কুমিরের শক্তির কাছে পরাস্ত হলো। সুব্রতকে নিয়ে গেল সুন্দরবনের কুমির। ওরা চেষ্টা করছে। মিনিট ১৫ পানির নিচে কুমির। তারপর সুব্রতকে মুখে নিয়ে ভেসে উঠল সে। বিশাল কুমিরটির মুখে যেন ছোট্ট একটা শিকার। অনেকক্ষণ ভেসে বেড়াল। সহযাত্রীরা অনুসরণ করছে। সুযোগ পেলেই করবে পাল্টা আক্রমণ। এর মধ্যে ট্রলার নিয়ে আসলেন বনরক্ষীরা। শিকার মুখে নিয়ে ডুব দিল কুমির। আর ভাসল না। সন্ধ্যা হলো। গ্রামের মানুষ আসলো করমজল খালে। কিন্তু অন্ধকারে কীভাবে উদ্ধার করবে সুব্রতকে? যদি বড় নদীতে চলে যায়! যদি শিকার নিয়ে অন্য কোনো খালে ঢুকে পড়ে?’
তিনি আরও লেখেন, একজন বলল, বড় কুমিরটি পশুর নদী দিয়ে ঢাংমারীর দিকে গেছে। টর্চের আলোয় তারা দেখেছে, কুমিরের মুখে সুব্রত নাই। তার মানে খালেই আছে সুব্রত। সাহসী কয়েকজন পানিতে নামল। ভাটা থাকতে থাকতে খুঁজে বের করতে হবে সহযাত্রীর মরদেহ। এ ছাড়া বাড়ি ফেরার উপায় নাই। অনেকক্ষণ চেষ্টা পর ঢাংমারীর আলম খুঁজে পেল সুব্রত মণ্ডলকে। রক্তাক্ত ছোট্ট মরদেহটি নিয়ে সবাই ছুটল বাড়ির দিকে।
সবশেষে সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম উল্লেখ করেছেন, ওদিকে স্ত্রী আর স্বজনরা অপেক্ষা করছে। আসছে ঘরের মানুষটির মৃতদেহ। অনেক কাজ সামনে। সৎকার করতে হবে। তারপর অসম্ভব এক জীবন। পরিবারটি চলত সুব্রতর একার রোজগারে। সুব্রত ছিলেন সুন্দরবনের একজন বনজীবী।
মন্তব্য করুন