এস এম ইকবাল হোসাইন, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‎আগাম টমেটো চাষ এখন কৃষকের গলার কাঁটা ‎

‎আগাম টমেটো চাষে ক্ষতিগ্রস্ত সীতাকুণ্ড উপজেলার গুলিয়াখালীর কৃষক আলতাফ হোসেন। ছবি : কালবেলা
‎আগাম টমেটো চাষে ক্ষতিগ্রস্ত সীতাকুণ্ড উপজেলার গুলিয়াখালীর কৃষক আলতাফ হোসেন। ছবি : কালবেলা

মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন পেশায় একজন কৃষক। কৃষিতে চলে তার জীবনসংগ্রাম। গত বছর এমন দিনে উপজেলার গুলিয়াখালি এলাকায় ৩২ শতক কৃষিজমিতে সর্জন পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষ করে তিন লাখ টাকা বিক্রি করেছিলেন। এ বছরও অধিক লাভের আশায় সেই জমিসহ আরও বেশি জায়গায় আগাম টমেটো চাষ করেছে। সে আশা যেন এখন গলার কাঁটা।

হঠাৎ আগাম ধ্বসা (আরলি ব্লাইট) রোগে আক্রান্ত হয়ে জ্বলসে গেছে পুরো ক্ষেত। রোগ দমনে কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যয় করতে করতে ঋণের দারস্ত হলেন আলতাফ হোসেন। এখন একদিকে সংসারের চাপ আরেক দিকে ঋণের বোঝা। এ যেন উভয় সংকট।

কৃষক আলতাব হোসেন জানান, আগাম টমেটো ক্ষেতে একই রোগে ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর ও মুরাদপুর ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষক। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দাবি, কৃষকরা চাষে কৃষি নীতিমালা না মানার কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। একই জমিতে প্রতিবছর একই ধরনের ফসল রোপণ করলে এই ক্ষতি হয়। তাছাড়া কৃষকরা ফসলি জমিতে রোগ দেখা দিলে নিজের ধারণাতেই বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করে। যার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালীন সময়ে আগাম টমেটো ক্ষেতে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। এই সময় কৃষকদের সচেতন থাকতে হবে।

কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মোট ১৫০ হেক্টর আগাম টমেটো চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে শুধু সৈয়দপুর ও মুরাদপুর ইউনিয়নে প্রায় ১৩০ হেক্টর জমিতে আগাম টমেটো চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২০ হেক্টর আগাম টমেটো ক্ষেত টমেটো তুলবে এমন অবস্থায় আরলি ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়ে পুড়ে গেছে পুরো ক্ষেত। গত বছর চাহিদা, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কয়েক বছর ধরে শীতকালীন হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার ‘আরলি ব্লাইট’ রোগ লাভের আশায় থাকা কৃষকের চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ ফেলেছে।

‎সরজমিনে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর আগাম টমেটো চাষে যথেষ্ট লাভবান হয়েছে কৃষকরা। কিন্তু এই বছর আরলি ব্লাইট রোগা আক্রান্ত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত বছর এমন দিনে টমেটো প্রতি কেজি পাইকারি দরে বিক্রি হয়েছিল ৫০-৬০ টাকা। কিন্তু এ বছর পাইকার দরে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এ ছাড়া সীতাকুণ্ডের আগাম টমেটো পাইকাররা প্রান্তিক কৃষক থেকে কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাজারজাত করে। যার ফলে কৃষকরা ভালো মূল্য পায়।

‎কৃষকরা জানায়, আগাম টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে শ্রমিক থেকে বাঁশের কঞ্চি সবকিছু দাম বেশি। তাই ‎একটি সমতল কৃষি জমিকে আগাম টমেটো চাষের জন্য রূপান্তর করতে হলে প্রতি শতকে খরচ হয় ৭-৮ হাজার টাকা। আবার আগাম টমেটো চাষের রূপান্তরিত হওয়া ক্ষেতে পরবর্তী বছরে চাষ করলে প্রতি শতকে খরচ হয় ৪-৫ হাজার টাকা। সে তুলনায় এবার আগাম টমেটো চাষে ১২০ হেক্টর জমিতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি টাকার মতো।

তারা আরও বলেন, এ রোগ টমেটো ক্ষেতে দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একদিন এই নুয়ে পড়ে টমেটো গাছ। এরপর বিভিন্ন স্থানে কালো দাগ হয়ে গাছে আসা ফল (টমেটো) ঝরে পড়ছে। পর্যায়ক্রমে পুরো ক্ষেতের টমেটো গাছ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। একের পর এক কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করেও রোগ দমন করা যাচ্ছে না। এতে একরের পর এক জমির টমেটো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

‎সৈয়দপুর ইউনিয়নের কৃষক শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি এক একর জায়গাজুড়ে আগাম টমেটো চাষ করেছি। আরলি ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়ে পুরো ক্ষেত পুড়ে গেছে। আগাম টমেটো কাজ করতে গিয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়েছি। সংসার ও ঋণের বোঝা নিয়ে অনেকটা কষ্ট আছি। আর কয়েকদিন পরই টমেটো তুলতে পারতাম। এখন না খেয়ে থাকলেও ঋণের কিস্তি দিতেই হবে। এটা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তায় আছি।’

‎মাসুদ নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘আমিও এক একরের মতো আগাম টমেটো চাষ করেছি। কিন্তু রোগে সব ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি এখন বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।’

‎মুরাদপুর ইউনিয়নের ভাটেরখীন এলাকার কামরুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘সীতাকুণ্ড উপজেলার মধ্যে কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ স্যার আসার পর থেকেই ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এবার হঠাৎ আরলি ব্লাইট রোগা আক্রান্ত হয়ে সৈয়দপুর ও মুরাদপুর ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’

এ বিষয়ে ‎সীতাকুন্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিব উল্লাহ কালবেলাকে বলেন, টমেটো হলো শীতকালীন সবজি। আগাম টমেটো চাষের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। এবার গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি ও অতিরিক্ত তাপমাত্রা হওয়ার কারণে আগাম টমেটো চাষেদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চারার ক্ষেত্রে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে উৎপাদন করতে হবে। এ ছাড়া এই বছর যে জমিতে টমেটো চাষ করবে সেই জমিতে আগামী বছর অন্য ফসল চাষ করবে। ফসলে রোগ দেখার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি কার্যালয়ে শরণাপন্ন হতে হবে। নিজেদের মনগড়া কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।‎

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশে দলে উপেক্ষিত আরহাম ডাক পেলেন অস্ট্রেলিয়া দলে

রোমানিয়ার ভিসা আবেদন নিয়ে বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর

হঠাৎ রেলক্রসিংয়ে ব্যারিকেড, দ্রুত সমাধান চান স্থানীয়রা

মধ্যযুগীয় কায়দায় যুবককে হত্যা

শুরু হচ্ছে ‘MyNumberMyStory’ ক্যাম্পেইন

রাজনৈতিক মিম-সংস্কৃতি, জনমতের যুদ্ধক্ষেত্র 

নির্বাচনে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান ঢাকা ডিসির

গুগল ক্রোমে অটোফিল এখন আরও সহজ

ভিড়ের মাঝেও আলাদা ‘স্পর্শিয়া’

যুদ্ধবিমানে রাডার লক, চীনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করল জাপান

১০

জামায়াত আমির / নির্বাচন এলে যারা তসবিহ নিয়ে ঘোরে তারাই ধর্ম ব্যবসা করে

১১

রাজধানীতে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, সন্দেহ গৃহকর্মীকে

১২

নতুন রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ

১৩

পথেই থেমে গেল নৌবাহিনী সদস্যের জীবন

১৪

দাফনের ২ মাস পর কবর থেকে প্রবাসীর লাশ উত্তোলন

১৫

একটি দল ধর্মের নামে ট্যাবলেট বিক্রি করছে : সালাউদ্দিন

১৬

মঞ্চে নেচে বিতর্কে নেহা

১৭

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আবুল কালাম আজাদের নতুন বই ‘নির্বিকার নৃশংসতা’

১৮

গ্ল্যামারের খোলস ভেঙে অভিনয়েই এখন যার মনোযোগ

১৯

পরোক্ষ ধূমপান শিশুদের জন্য কতটা ভয়াবহ জানাচ্ছে গবেষণা

২০
X