

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সংগঠনকে আরও সুসংগঠিত করতে বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনছে বিএনপি। এতে নতুন উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে সিলেট বিএনপিতে। ফেরত আসা নেতাদের নানা কর্মসূচিতে সিলেটে জমে উঠছে দলের রাজনীতি। ফেরত আসা নেতারাও নিজেদের শক্তি জানান দিচ্ছেন সমাবেশ-শোডাউন করে। এর মধ্য দিয়ে এতদিন সিলেট বিএনপির রাজনীতিতে যে স্থবিরতা ছিল, তা অনেকটাই কেটে গেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
২০২৩ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের ৪৩ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। একইভাবে দলের নির্দেশ অমান্য করে সিলেটের চার জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন শতাধিক নেতা। বহিষ্কারের পর থেকেই তারা ছিলেন অনেকটা নিষ্ক্রিয়। দলের কর্মকাণ্ড থেকে ছিলেন দূরে। এ অবস্থায় সিলেট বিএনপিতে অনেকটা বিভক্তি ফুটে ওঠে।
স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, বহিষ্কৃত এই নেতাদের প্রত্যাবর্তন দলকে আরও সক্রিয় করবে। বিশেষ করে সিলেটের প্রায় প্রতিটি আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এই নেতারা ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারেন। তাদের মতে, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন কারণে সংগঠনের ভেতরে বিভক্তি তৈরি হয়েছিল। বহিষ্কৃতদের প্রত্যাবর্তন সেই ভাঙন অনেকটাই পূরণ করবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সিদ্ধান্ত না মানায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে যেসব নেতাকে সংগঠন ছেড়ে যেতে হয়েছিল বা বহিষ্কৃত করা হয়েছিল, তাদের অনেকেই পুনর্বিবেচনায় দলে ফিরতে পেরেছেন। এতে জেলা ও মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটে নতুন করে প্রাণ ফিরে এসেছে। দলে ফেরত আসা নেতারা বলেছেন, বিএনপি এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়, ব্যক্তিগত মতভেদ ভুলে সংগঠনকে শক্তিশালী করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম কালবেলাকে বলেন, ‘আমি সব সময় বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, এখনো আছি।’ দল থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করায় স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া বলেন, ‘দল আমাদের ওপর যে আস্থা দেখিয়েছে, তা মহামূল্যবান। এ আস্থা অটুট রাখতে চলতি সপ্তাহে দেশে এসে মাঠে আরও সক্রিয় হবে।’
বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নাজমুল ইসলাম রুহেল বলেন, ‘বহিষ্কার হওয়ার পরও দলের সঙ্গে ছিলাম, কাজ করেছি। এখন দল আমাকে মূল্যায়ন করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে। এজন্য দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
গত ২৬ নভেম্বর সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসেইনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে বিএনপি। ওইদিন সিলেট জেলার ১৯ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া ১০ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে মহানগরীর ৪৩ নেতাকর্মীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এতে উল্লসিত নেতাদের কেউ কেউ সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ‘শুকরিয়া’ লিখে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে নগরীতে শোডাউন করেন নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম। একইভাবে ১৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পরদিনই নিজ বাড়িতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পরদিন তার নেতৃত্বে নগরীতে ‘কৃতজ্ঞতা’ মিছিল বের করা হয়।
এ সময় তার হাতে ফুল দিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলে যোগদান করেন ৮১ জন। এ ছাড়া বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর আরও অনেকেই নিজ নিজ এলাকায় সভা-সমাবেশ করে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছেন।
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘মহানগর বিএনপি থেকে বিভিন্ন কারণে চারজনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পাশাপাশি নির্বাচন করায় আরও অঙ্গ সংগঠের অনেককেই বহিষ্কার করা হয়। তাদের প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন সময় দলের নির্দেশনা না মানায় সিলেট জেলার প্রায় ৩০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দল যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিক সদস্য পদ দিয়েছে। তবে তাদের স্বপদে বহাল করা হয়নি। কয়েকজনের আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে। গুরুতর অভিযোগ না থাকলে সবাইকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী কালবেলাকে বলেন, ‘বহিষ্কারের বিভিন্ন ক্যাটাগরি ছিল। যারা নির্বাচন করে বহিষ্কার হয়েছেন, তাদের বিভিন্ন শর্তে প্রাথমিক সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে। আর যারা বিতর্কিত কাজ করে বহিষ্কার হয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে দল আরও যাচাই-বাছাই করছে।’
মন্তব্য করুন