ঝিনাইদহের শৈলকুপার সারুটিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত ভাটবাড়িয়া নামের এক গ্রামে সামাজিক সহিংসতায় একাত্তরের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। প্রতিপক্ষের তাণ্ডবলীলায় প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ির বসতভিটায় খুঁটি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। প্রায় ৫০টি পরিবার বসতভিটা ছেড়ে মানবতের জীবনযাপন করছিল।
গণমাধ্যমের খবর দেখতে পেয়ে মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে বিশিষ্ট সমাজসেবক, মানবতাপ্রেমী মানুষ আলহাজ নজরুল ইসলাম দুলাল ছুটে যান ভাটবাড়িয়া গ্রামে।
গরিবের আর্তনাদ, আহাজারি শুনে এক মুহূর্তও দেরি করলেন না তিনি। বুকে টেনে নেন অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে।
শৈলকুপাতে তিনি শুধু রাজনীতিবিদ না, মানবতার মানুষ ও সমাজসেবক হয়ে জীবনের সব সময় অসহায়দের পাশে থেকে নজির সৃষ্টি করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নজরুল ইসলাম দুলাল সম্প্রতি ৫০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে টিন, টিউবওয়েল, আর্থিক সহযোগিতা করে নতুন ঘর নির্মাণ করে দেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম দুলাল জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে জেলার- শৈলকুপার মানুষের জন্য মানবতার কাজ করছি। সব মানুষকেই আমার ভালোবাসার মানুষ মনে করি। তাদের সেবা করার জন্যই আমার জন্ম হয়েছে। আমি রাজনীতি করি, মানুষের বিপদে-আপদে সবসময় পাশে থাকার জন্য।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে খবর দেখতে পেয়ে এলাকায় ছুটে গিয়ে অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের নতুন করে জীবনযাপনের ব্যবস্থা করেছি। আমি শান্তির জন্য, মানুষের জন্য সব সময় নিয়োজিত থাকব।
তিনি আরও বলেন, এলাকার যেসব মানুষ বিপদে পড়ে আমার কাছে আসবে আমি তারই পাশে দাঁড়াব। মানবতা ও সেবা করাই আমার মূল লক্ষ্য। তবে সামাজিক সহিংসতা চাই না, আমার মতো সকলেরই নিজ নিজ জায়গা থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালে কৃতজ্ঞ থাকব।
ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ অন্যত্র চলে গেছেন। আবার আশ্রয়ণ প্রকল্পে উঠেছে অনেকে। এমনকি পরিবার-পরিজন নিয়ে গত কোরবানির ঈদও করার ভাগ্য জোটেনি অনেকের। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার নিজ বসত ভিটাতে ওঠার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছিল।
তবে কী কারণে প্রতিপক্ষের তাণ্ডবলীলাতে গত দেড় বছর ধরে এতগুলো পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করেছে তা সরেজমিনে গেলে ক্ষতিগ্রস্তরা মুখ খুলতে শুরু করেন।
এ বিষয়ে গ্রামবাসীরা কালবেলাকে জানান, ভাটবাড়িয়া গ্রামে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার বসবাস করেন। গত ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অশান্ত হয়ে ওঠে এ ইউনিয়ন। বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন ও প্রতিপক্ষ জুলফিকার কায়সার টিপু গ্রুপের মধ্যে নির্বাচনী ও আধিপত্য নিয়ে সহিংসতায় ১১ দিনের ব্যবধানে প্রাণ হারান জসিম উদ্দিন, হারান শেখ ও অখিল। এ ঘটনার জেরে ভাটবাড়িয়া গ্রামে চলে মধ্যযুগীয় কায়দায় তাণ্ডবলীলা।
হামলায় নিহত তিনজনই ছিল মাহমুদুল হাসান মামুন গ্রুপের সমর্থক। পরে সহিংসতা আরও নিষ্ঠুর রূপ নেয়। একপর্যায়ে ভাটবাড়িয়া গ্রামের জুলফিকার কায়সার টিপু গ্রুপের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
এমন তাণ্ডবলীলার পর প্রায় অর্ধশত পরিবার পথে পথে দিন কাটাচ্ছিল। এবারও ঈদ তাদের কপালে জুটেনি। হামলাকারীরা ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর-বাড়ির খুঁটি ও ভিটার মাটি ছাড়া তেমন কিছুই রেখে যায়নি- এমন অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত কুদ্দুস, ইন্তা ও সোহেল।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কোয়াদ হোসেন জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান মামুনের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়েছে। গ্রামের নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, টিন, ইটের দেয়াল পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে। এ ঘটনার আমরা কোনো বিচার পাইনি।
তারা আরও জানান, বিচারাধীন মামলার আসামি চাঁদ আলী, কুদ্দুস-ইদ্রিসসহ অনেকেরই একই অবস্থা। তাদের কারও মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। অনেকের কাছেই আর্থিক সাহায্য চাইলেও কেউ পাশে না দাঁড়ালেও তাদের কষ্টের কথা শুনতে পেয়ে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নজরুল ইসলাম দুলাল ছুটে আসেন। তাদের বৃষ্টির পানির হাত থেকে রক্ষা করে নতুন করে ঘর তৈরি করে সবার স্বপ্নপূরণ করেন।
এ বিষয়ে আরও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের বাসিন্দা বাবু হোসেন ও মুরাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সামাজিক সহিংসতায় দিনের পর দিন এর বাড়ি, ওর বাড়ি থেকে কোনো রকমে দুটো ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে ছিলাম। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এমনকি সংসদ সদস্যও পাশে দাঁড়ায়নি।
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দুলাল পাশে দাঁড়ানোর কারণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সামাজিক নেতা জুলফিকার কায়সার টিপু জানান, যে তাণ্ডবনীলা ভাটবাড়িয়া গ্রামে চলেছে তা ১৯৭১ সালকেও হার মানিয়েছে। প্রতিপক্ষ মামুন গ্রুপের লোকজন এ হামলা চালিয়ে অর্ধশত পরিবারকে পথে বসিয়েছে।
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি বিশিষ্ট সমাজ সেবক নজরুল ইসলাম দুলালের মাধ্যমে ঘরবাড়ি ছাড়া মানুষজন ঘরে ফিরিয়ে এসেছেন। তবে জড়িতদের শান্তিও চেয়েছেন।
আর বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মাহামুদুল হাসান মামুন সামাজিক সহিংসতার কারণে হত্যার ঘটনায় তার লোকজনের হাতে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, ঘরবাড়ি যাদের উজাড় হয়েছে তাদের কয়েকজনের টিন দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।
তবে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা করার আবেদন জানান তিনি।
এ বিষয়ে থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, সহিংসতায় প্রাণ হারানোর পর সামাজিক ঘটনার জেরে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক, পুলিশ এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। সেই সঙ্গে মানবতার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এদিকে জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম জানান, সামাজিক সহিংসতায় যেসব পরিবার ঈদ করতে পারেননি। সেসব ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্যে করা হবে।
নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেড ও দৈনিক কালবেলা পত্রিকার মাধ্যমে এ সহযোগিতা প্রদান করেন।
মন্তব্য করুন