জুলাই আন্দোলনে পৃথক দুই হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহ, জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে বিএনপির করা শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (১৮ আগস্ট) ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মনিরুল ইসলাম তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। আনিসুল হককে দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার এসআই আবুল ফারেজ জুয়েল।
এদিকে হেলালুদ্দীন আহমেদকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক সৈয়দ সাজেদুর রহমান।
এর আগে, আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানির দিন সোমবার ধার্য করেন। এদিন শুনানিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামসুদ্দোহা সুমন।
শাওন হত্যা মামলার বিবরণী থেকে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে রাজধানীর ইডেন কলেজের সামনে দিয়ে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মোহাম্মদ শাওন সিকদার। এ ঘটনায় গত ২১ জানুয়ারি লালবাগ থানায় শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনকে আসামি করে আত্মীয় পরিচয়ে মামলা করেন ইকবাল মজুমদার তৌহিদ।
আশরাফুলকে হত্যাচেষ্টা মামলার বিবরণী থেকে, জুলাই আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই লালবাগ থানাধীন আজিমপুর সরকারি কলোনির ভেতর আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হন আশরাফুল। এ ঘটনায় গত ২৫ মে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আশরাফুল।
হেলালুদ্দীনের মামলার বিবরণী থেকে, গত ২২ জুন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব ‘পালন না করে’ উল্টো ‘ভয়-ভীতি দেখিয়ে’ জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে মামলা করে বিএনপি। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান এ মামলার বাদী, যিনি একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর মামলায় দণ্ডবিধির ১২৪ (ক)/ ৪২০/৪০৬ ধারায় অভিযোগ সংযুক্ত করার আবেদন করা হয়।
মামলায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ মামলার আসামি। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজির আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়েছে মামলায়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওই তিন নির্বাচনে 'গায়েবি মামলা, অপহরণ, গুম খুন ও নির্যাতনের’ ভয় দেখিয়ে, বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘গণগ্রেপ্তার’ করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে থাকা সত্ত্বেও সংবিধান লঙ্ঘন, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, সরকারি কর্মচারী হয়েও অবৈধভাবে ভোটে হস্তক্ষেপ, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটের কাজ সম্পূর্ণ করা ও জনগণের ভোট না পেলেও সংসদ সদস্য হিসেবে মিথ্যাভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ঘটনার সাক্ষী সব ভোটকেন্দ্র এলাকার ভোটাররা এবং ভোটারদের মধ্যে যারা ভোট প্রদান করতে বঞ্চিত হয়েছেন তারাসহ ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে অনেক সৎ প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, স্থানীয় লোকজনসহ অন্যরা ঘটনার সাক্ষী হবে। এ ছাড়া ব্যালট পেপারে যে সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃতভাবে তারা ভোট দিয়েছে কি না, সে বিষয়ে উল্লেখিত ঘটনার সঠিক রহস্য তদন্তে সত্য উদ্ঘাটিত হবে।
মন্তব্য করুন