

বিতর্ক, তিরস্কার আর ওয়াকআউট—সব মিলিয়ে টালমাটাল পরিবেশের মধ্যেই শেষ পর্যন্ত এক ইতিহাস গড়লেন মেক্সিকোর ফাতিমা বশ। তীব্র নাটকীয়তায় ভরা মিস ইউনিভার্স ২০২৫ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত আসরে বিজয়ীর মুকুট উঠল ২৫ বছর বয়সী এই মানবিক-কর্মীর মাথায়। মাত্র কয়েকদিন আগেই লাইভ-স্ট্রিম হওয়া এক বৈঠকে থাই ডিরেক্টরের প্রকাশ্য তিরস্কারের শিকার হন তিনি, যা মুহূর্তেই ঝড় তোলে বিশ্বজুড়ে। প্রতিবাদে কয়েকজন প্রতিযোগীর ওয়াকআউট—আর ঠিক সেই ঘটনার পরই ফাতিমা হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বজোড়া ভক্তদের অন্যতম প্রিয় মুখ।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) রাতে থাইল্যান্ডে আয়োজিত মহাসমারোহে গতবারের মিস ইউনিভার্স, ডেনমার্কের ভিক্টোরিয়া ক্যায়ের থেইলভিগের হাত থেকে মুকুট গ্রহণ করেন ফাতিমা। এই প্রতিযোdoতায় রানারআপ হয়েছেন আয়োজক দেশের প্রাভিনার সিংহ। শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নেন ভেনেজুয়েলার স্টেফানি আবাসালি, ফিলিপাইনের আটিসা মানালো এবং আইভরি কোস্টের অলিভিয়া ইয়াসে।
বিশ্বব্যাপী সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা ‘সুপার বোল’ হিসেবে খ্যাত মিস ইউনিভার্সে এ বছর অংশ নেন ১২০ দেশের প্রতিনিধি। প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন নাদিন আয়ুব; তিনি সেমিফাইনালে পৌঁছালেও শীর্ষ ৩০ থেকে বিদায় নেন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন মার্কিন কৌতুকশিল্পী স্টিভ বায়ার্ন, উদ্বোধনী পরিবেশনায় ছিলেন থাই তারকা জেফ স্যাচুর।
দীর্ঘ তিন সপ্তাহের যাত্রায় প্রতিযোগীরা থাইল্যান্ডজুড়ে ঘুরে ঘুরে অংশ নেন রিহার্সাল ও নানা ইভেন্টে। বুধবার অনুষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল কস্টিউম শোকেস—যেখানে প্রতিযোগীরা নিজেদের দেশের ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলার জন্য পরিধান করেন চোখ ধাঁধানো পোশাক। মিস ইউএসএ অড্রি একার্ট হাজির হন সাইমন ভিলালবার নকশা করা চমকপ্রদ ‘বাল্ড ঈগল’ কস্টিউমে। একই দিন প্রিলিমিনারির সন্ধ্যার গাউন রাউন্ডে ভয়াবহভাবে পড়ে যান জ্যামাইকার গাব্রিয়েল হেনরি, যাকে পরে স্ট্রেচারে করে নেওয়া হয়। পরে মিস ইউনিভার্স প্রেসিডেন্ট রাউল রোচা জানান—হেনরির কোনো হাড় ভাঙেনি এবং তিনি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছেন।
এদিকে ফাইনালে প্রতিযোগীদের করা হয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ২০২৫ সালে নারীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী এবং মিস ইউনিভার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আপনি কীভাবে নারীদের জন্য নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তুলবেন? এ প্রশ্নের উত্তরে ফাতিমা বলেন, “পরিবর্তন আনতে নারীদের সাহস করে কথা বলতে হবে। কারণ সাহসী নারীরা ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করে চলেছেন। একজন নারী ও মিস ইউনিভার্স হিসেবে অন্যদের সাহায্য করতে আমি আমার কণ্ঠ ব্যবহার করব।'
আপনি যদি মিস ইউনিভার্স নির্বাচিত হন, তাহলে কীভাবে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সারা বিশ্বের মেয়েদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়ন করবেন? এ বিষয়ে ফাতিমা বলেন, 'তোমার মূল্য নিয়ে কখনো কাউকে সন্দেহ করতে দিও না। কারণ তুমি সবকিছুর যোগ্য, তুমি শক্তিশালী, তোমার কণ্ঠ শোনা প্রয়োজন।'
বিতর্ক আর নাটকীয়তা পেরিয়ে ফাতিমা বশের এই অভিষেক জয় এবার নতুন এক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে মিস ইউনিভার্স মুকুট জেতার পাশাপাশি ফাতিমা কি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার ভুবনে নতুন এক পরিবর্তনের বার্তাও রেখে গেলেন?
মন্তব্য করুন