ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৭:১৪ পিএম
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৩:৪৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা কোটাবিরোধীদের

শাহবাগে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের অবস্থান। ছবি : কালবেলা
শাহবাগে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের অবস্থান। ছবি : কালবেলা

সরকারি চাকরিতে বেতন কাঠামোর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে (আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির) মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহালে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। তারা নিজেদেস এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

শনিবার (৬ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে জমায়েত হয়ে এখান থেকে সোয়া ৩টায় মিছিল বের করেন।

মিছিলটি হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, জগন্নাথ হলের মোড়, বকশিবাজার, বুয়েট, পলাশী, আজিমপুর, ইডেন কলেজ, নীলক্ষেত ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে পৌনে ৫টায় শাহবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অবস্থান কর্মসূচি শেষে এই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী এই ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামীকাল বিকাল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, সাইন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীসহ ঢাকার প্রতিটি পয়েন্ট অবরোধ করা হবে। এসব পয়েন্টে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা নেমে আসবেন এবং বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি সফল করবেন। আর ঢাকার বাইরে যেসব শিক্ষার্থীরা আছেন আপনারা জেলায় জেলায় মহাসড়কগুলো অবরোধ করবেন।

তিনি বলেন, সরকার মনে করেছে আমরা দুই-তিনদিন রাস্তা অবরোধ করে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে যাব। সরকারের এই ধারণা যে ভুল সেটি আমাদের প্রমাণ করে দিতে হবে। আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি প্রয়োজনে আমরা হরতাল দিতে বাধ্য হবো।

নাহিদ বলেন, কোর্ট এবং ছাত্রসমাজকে মুখোমুখি করে সরকার কেন দায়িত্বহীন ভূমিকা পালন করছে? নির্বাহী বিভাগ এর দায় এড়াতে পারে না। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী যেখানে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল- কোটা থাকবে না, সেই কোটা এখন কেন ফিরে এলো এর জবাব চাই।

তিনি আরও বলেন, শুধু প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতেই নয় তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও কোটার বৈষম্য দূর করতে হবে। আমাদের এই আন্দোলন শুধু প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির কোটার জন্য নয়, সব গ্রেডের কোটা বাতিল করতে হবে। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনার সন্তানও কিন্তু চাকরি পাবে না যদি কোটা থাকে। আপনাকেও নেমে আসতে হবে। অভিভাবক এবং শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা শাহবাগ এসে আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করুন।

ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দিয়ে নাহিদ বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলন একদিন বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু আমাদের আন্দোলন বন্ধ হবে না। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না

লাইব্রেরি খোলার ব্যাপারে নাহিদ বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনেক আগে থেকেই বলে আসছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এবং সায়েন্স লাইব্রেরি খুলে দেওয়ার জন্য। আপনারা যদি দ্রুত সেটি খুলে না দিন তাহলে আমরা নিজ দায়িত্বে সেটি খুলে নিব।

কর্মসূচি ঘোষণার আগে বৈষম্যবিরোধী এই ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এতদিন পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করে এসেছে। কিন্তু আজকে পুলিশের একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী আমাদের ভুয়া বলে সম্বোধন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলেছে। আমার দিকে তেড়ে এসেছে।

তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে আমাদের যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে সেটি উপেক্ষা করে সুবিধাবাদী কোনো গোষ্ঠী যদি কোনো ফায়দা লোটার চেষ্টা করে তাহলে আমরা তাদের হাত গুঁড়িয়ে দিব। আমাদের দিকে যেই পুলিশ আঙুল তুলে তেড়ে এসেছিল সাবধান করে দিচ্ছি সেই আঙুল নামিয়ে ফেলুন। অন্যথায় বাংলার ছাত্রসমাজ এর জবাব দিবে।

হাসনাত বলেন, আজকে আমাদের শাহবাগ ব্লকেড হয়েছে। আগামীকাল থেকে বাংলাদেশ ব্লকেড শুরু হবে। আজকের মতো কালকেও যদি আমাদের বোনেরা আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে যায় কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

আন্দোলনকারীরা বলেন, কোটা বৈষম্য নিরসন এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে চার দফা দাবি জানাই। সেগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: কোটা বিরোধী আন্দোলন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীর পাশে ছাত্রদল নেতা জিয়া 

মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার আমিনুল হকের

স্কুলভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

মানব পাচার রোধে একসঙ্গে কাজ করবে আইওএম ও এইচসিআই

ফের প্রেমে মজেছেন জেসিকা আলবা

কীভাবে বাবাকে হত্যা করেছেন ছেলে, উঠে এলো রোমহর্ষক বর্ণনা

থাইরয়েড থাকলেও পেটের চর্বি কমবে যেসব সহজ উপায়ে

দিল্লি বিস্ফোরণ / বন্ধ লাল কেল্লা, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কতা

দেশে তাপমাত্রা নেমেছে ১৪ ডিগ্রিতে, রাতে যত কমবে

সাভারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা আকাশ গ্রেপ্তার

১০

‘মেসি নয়, ২০২৬ বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা রোনালদোর বেশি’

১১

টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

১২

বলাকা কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন

১৩

ছাত্রদলের ১৯ নেতাকর্মী বহিষ্কার

১৪

মস্তিষ্ক ছাড়াই চলল ২০ বছর, ‘অলৌকিক’ ঘটনা বলছেন চিকিৎসকরা

১৫

মুন্সীগঞ্জে অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান

১৬

আইবিএস সিস্টেমে সরকারি চাকরিজীবীদের আয়কর কর্তনের নির্দেশ

১৭

স্টার্লিংয়ের ফিফটিতে প্রথম সেশন আয়ারল্যান্ডের

১৮

যুবলীগ নেতা বিল্লাল আটক

১৯

বিপিএল: একাদশে তিন না চার বিদেশি, সিদ্ধান্ত জানাল বিসিবি

২০
X