যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আয়োজিত মর্যাদাপূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রাম (আইভিএলপি) সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন তরুণ পরিবেশ ও গণতান্ত্রিক অধিকারকর্মী সোহানুর রহমান। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ নেতৃত্ব ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ পান। তার এই অংশগ্রহণ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে জনগণভিত্তিক কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করেছে। ২০২৪ সালে জাতিসংঘের জেনেভা সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ইয়ং অ্যাক্টিভিস্ট সামিটে তিনি সম্মানিত হন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মিশন সহআয়োজক ছিল।
তিন সপ্তাহব্যাপী আইভিএলপি এই পেশাগত এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামটি ১৭ মে থেকে ৭ জুন ২০২৫ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়। ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুব ও কমিউনিটি সম্পৃক্ততা’ শিরোনামে আয়োজিত এই এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ১০টি দেশের তরুণ ও উদীয়মান নেতারা। প্রোগ্রামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে, উচ্চপর্যায়ের সংলাপের মধ্য দিয়ে প্রোগ্রাম শুরু হয়। এরপর অংশগ্রহণকারীরা উত্তর ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের রাজধানী র্যালি ও শার্লট, নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের আলবুকার্কি এবং ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের সিয়াটল শহর সফর করে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ, মাঠ পরিদর্শন এবং সহযোগিতামূলক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। এই ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও অংশগ্রহণ দেশের তরুণ নেতৃত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা গ্লোবাল লেভেলে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করে এবং বৈশ্বিক সামাজিক ন্যায়বিচার আন্দোলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের প্রসার ঘটায়।
ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রাম হলো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ফ্ল্যাগশিপ পেশাগত বিনিময় কর্মসূচি ১৯৪০ সালে চালু হয়। এটি বিশ্বের তরুণ ও উদীয়মান নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রে পরিদর্শনে এনে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও নেতৃত্ব উন্নয়নে কাজ করে আসছে। এ পর্যন্ত ২ লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক নেতা এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন, যাদের অনেকেই পরবর্তীতে রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, নোবেল বিজয়ী ও সামাজিক নেতায় পরিণত হয়েছেন। এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করা যায় না; অংশগ্রহণকারীদের মনোনয়ন করে সংশ্লিষ্ট দেশের মার্কিন দূতাবাস তাদের নেতৃত্ব, প্রভাব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে।
প্রোগ্রামের সময় সোহানুর বাংলাদেশে তরুণ নেতৃত্বাধীন নাগরিক আন্দোলনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে, পুরুষদের পরিবেশগত ন্যায়বিচার কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে ইকো-মেন উদ্যোগ, ওয়াই জাস্ট ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ রূপান্তরকে জনপ্রিয়তা দেওয়া। অপরদিকে, তিনি মার্কিন তরুণদের অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্ব, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জলবায়ু অধিকার ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে পরিচালিত যুব উন্নয়ন কর্মসূচি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা অর্জন করেন।
ইয়ুথনেট গ্লোবাল’র নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান মার্কিন নীতিনির্ধারক, নাগরিক সমাজের নেতা ও যুব সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি সংলাপে যুক্ত হয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। এই অর্জন সম্পর্কে সোহানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের পক্ষ থেকে বৈশ্বিক পরিসরে কথা বলা আমার জন্য গর্বের বিষয়। এই সফরের মাধ্যমে আমি নতুন নেতৃত্ব বিকাশের কৌশল ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, যা দেশে ফিরে এসে বাস্তবায়নে কাজ করব। তরুণ নেতৃত্বই জলবায়ু সংকট, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে পারে, এ বিশ্বাস আমার আরও দৃঢ় হয়েছে।
২৮ বছর বয়সী সোহানুর রহমান বাংলাদেশের অন্যতম প্রখ্যাত তরুণ সমাজকর্মী ও জলবায়ু নীতি বিশ্লেষক। ৫০টিরও বেশি জেলায় পরিবেশ সুরক্ষা জলবায়ু সুবিচার, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। তার নেতৃত্বে ইয়ুথনেট গ্লোবাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করতে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সফল হয়েছে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির পক্ষে নীতি প্রভাবিত করেছে। সংগঠনটি তরুণদের নিয়ে জলাভূমি পুনরুদ্ধার, অভিযোজনমূলক কর্মসূচি ও জাতীয় নীতিনির্ধারণে প্রান্তিক কণ্ঠস্বরের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছে।
সোহানুর রহমান আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি অংশ নিয়েছেন লন্ডনে ২০১৮ সালের কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলন, ফ্রান্সের প্যারিসে ২০২৩ সালের নিউ গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল প্যাক্ট সামিট এবং ২০২৫ সালের নিউট্রিশন ফর গ্রোথ সামিটে। জলবায়ু কূটনীতির বিভিন্ন সম্মেলনে যেমন কপ২৬, কপ২৭, কপ২৮ ও আজারবাইজানের বাকুতে কপ২৯ সম্মেলনে তিনি সরকারি যুব প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়াও, জার্মানির বন শহরে তিনি এসবি৬০ জলবায়ু আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
মন্তব্য করুন