শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বিবিএসের জরিপ

সরকারি সেবায় ঘুষ-দুর্নীতির শিকার ৩২ শতাংশ নাগরিক

সিটিজেন পারসেপশন সার্ভের (সিপিএস) প্রতিবেদন প্রকাশকালে অতিথিরা। ছবি : কালবেলা
সিটিজেন পারসেপশন সার্ভের (সিপিএস) প্রতিবেদন প্রকাশকালে অতিথিরা। ছবি : কালবেলা

সরকারি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতাদের এক তৃতীয়াংশ নাগরিক ঘুষ-দুর্নীতি শিকার হচ্ছেন। গত ১ বছরে যে সকল নাগরিক সরকারি সেবা গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ নাগরিক ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। সেবা নিতে ঘুষ-দুর্নীতির শিকার নাগরিকদের মধ্যে পুরুষ ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং নারী ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ। সর্বাধিক ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হওয়া সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিআরটিএ।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত সিটিজেন পারসেপশন সার্ভেতে (সিপিএস) এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এ জরিপটি বিবিএস ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সময়ে দেশব্যাপী ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস)’ পরিচালনা করে। ৬৪ জেলার ১ হাজার ৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসএল) থেকে ৪৫ হাজার ৮৬৮টি থানায় ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী মোট ৮ লাখ ৩১হাজার ৮০৭জন নারী-পুরুষ উত্তরদাতার সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্য বিষয়ক এসডিজি ১৬ এর ছয়টি সূচকের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। জরিপের প্রশ্নপত্র জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত এ জরিপ থেকে এসডিজি ১৬ এর ৬টি সূচকের তথ্য পাওয়া যাবে।

জরিপে সরকারি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতি বিষয়ে দেখা যায় যে, গত ১ বছরে যে সকল নাগরিক সরকারি সেবা গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ নাগরিক ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন মর্মে রিপোর্ট করেছেন, যেখানে পুরুষ ৩৮ দশমিক ৬২শতাংশ এবং নারী ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ।

সর্বাধিক ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হওয়া সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিআরটিএ। এই প্রতিষ্ঠানের সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ নাগরিক, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৬১ দশমিক ৯৪ শতাংশ নাগরিক আর পাসপোর্ট অফিসে ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ নাগরিক সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

জরিপে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, গত ১ বছরে দেশের ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ জনগণ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। নারীদের মধ্যে এই হার কিছুটা বেশি যা ১৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের মধ্যে তা ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলে বৈষম্যের হার (২২ দশমিক ০১ শতাংশ) গ্রামাঞ্চলের (১৮ দশমিক ০৭ শতাংশ) তুলনায় বেশি। এক্ষেত্রে আর্থসামাজিক অবস্থা (৬ দশমিক ৮২ শতাংশ) এবং লিঙ্গভেদে (৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ) বৈষম্য হয়রানির হার সর্বাধিক। নিজের পরিবারের মধ্যে (৪৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ), গণপরিবহন/উন্মুক্ত স্থানে (৩১ দশমিক ৩০ শতাংশ) এবং কর্মস্থলে (২৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ) বৈষম্য/হয়রানির ঘটনা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। এরমধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভুক্তভোগী এসব ঘটনার বিষয়ে রিপোর্ট করেছেন।

নিরাপত্তা বিষয়ে জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। তবে, পুরুষদের (৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ) তুলনায় নারীরা (৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ) কম নিরাপদ বোধ করেন। শহরাঞ্চলের নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ (৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ) গ্রামীণ এলাকার নাগরিকদের তুলনায় কিছুটা কম (৮৫ দশমিক ৩০ শতাংশ) পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া সন্ধ্যার পর নিজ বাড়িতে নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধের হার ৯২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ ও ৯০ দশমিক ০৫ শতাংশ।

রাজনৈতিক প্রভাব বিষয়ের ক্ষেত্রে ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন যে, তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে পারেন। এক্ষেত্রে শহর (২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ) ও গ্রাম (২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ) এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য না থাকলেও, লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য রয়েছে যা পুরুষের ক্ষেত্রে ৩১ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং নারীর ক্ষেত্রে ২৩ দশমিক ০২ শতাংশ। অনুরূপভাবে ২১ দশমিক ১৯ শতাংশ নাগরিক মনে করেন যে, তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন মর্মে মত প্রকাশ করেন। এই হার নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ ও ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক গত ১ বছরের মধ্যে অন্তত ১ বার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা গ্রহণ করেছেন। সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ নাগরিকের মতে উক্ত স্বাস্থ্যসেবা সহজে প্রাপ্তিযোগ্য এবং স্বাস্থ্যসেবার খরচ সামর্থ্যের মধ্যে ছিল মর্মে ৮৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ নাগরিক মত প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মান, সেবাগ্রহীতার সাথে আচরণ এবং ডাক্তার/স্বাস্থ্যকর্মীদের সময় দেওয়ার বিষয়ে সেবা গ্রহণকারীদের সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬৫ দশমিক ০৭ শতাংশ, ৬৩ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।

শিক্ষা ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ নাগরিকের কমপক্ষে একটি শিশু সরকারি প্রাথমিক/মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। এরমধ্যে, ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ নাগরিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহজে প্রবেশযোগ্য (যে কোনো ধরনের যানবাহনে বা পায়ে হেঁটে ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যায়) ও ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ নাগরিক রিপোর্ট করেন যে শিক্ষাব্যয় সামর্থ্যের মধ্যে ছিল, যেখানে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ ও ৮০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অপরদিকে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান মানসম্মত ছিল মর্মে যথাক্রমে ৬৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ ও ৭১ দশমিক ৮৬ শতাংশ নাগরিক মত প্রকাশ করেন।

অন্যান্য সরকারি সেবার (পরিচয়পত্র/নাগরিক নিবন্ধন) ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৮ দশমিক ১২ শতাংশ সেবার প্রাপ্যতা ও ৮৬ দশমিক ২৮ শতাংশ সেবাপ্রাপ্তি ব্যয় সামর্থ্যের মধ্যে ছিল মর্মে উল্লেখ করেন। অপরদিকে, কার্যকর সেবাদান প্রক্রিয়া, সম-আচরণ, সময়মতো সেবাদানে সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬২ দশমিক ৬০ শতাংশ, ৫৬ দশমিক ২৬ শতাংশ ও ৫১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

গত দুই বছরে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিবাদ বা বিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ নাগরিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক (যেমন: আদালত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক (যেমন: কমিউনিটি নেতা, আইনজীবী ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৫ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসর

ইসরায়েলের চ্যানেল ১৪ খালি করতে বলল ইরান

ধর্ষণ মামলা দেওয়া ইডেন ছাত্রীকে কারাগারে বিয়ে করলেন গায়ক নোবেল

নেতানিয়াহু ভুল, তার যুদ্ধে আমরা জড়াব না : বার্নি স্যান্ডার্স

ইরানের একাধিক ওয়ারহেডযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্রে হতভম্ব ইসরায়েল

ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল ছাত্রদল নেতার

জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলায় বেরোবি শিক্ষক গ্রেপ্তার

আরবদের যে ‘কলঙ্ক’ ঘোচাল ইরান

ঋণখেলাপির এলসি জালিয়াতি তিন ব্যাংক কর্মকর্তা জড়িত

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যান্ডেজ করছেন বাবুর্চি

১০

চলাচলের রাস্তায় দেয়াল তুললেন এনসিপি নেতা

১১

মন্ত্রণালয়কে ডিসির চিঠি, ইলিশের দাম নির্ধারণ নিয়ে যা ভাবছেন অংশীজনরা

১২

আধুনিক বর্জ্য পরিশোধন কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি : চসিক মেয়র

১৩

বগুড়ায় মাদক কারবারি ৩ পুলিশ রিমান্ডে

১৪

চাঁদপুরে ২০ হাজার আবাসিক গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ

১৫

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে পৌঁছতে কতক্ষণ সময় লাগে?

১৬

ইরানের পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিল মুসলিম ব্রাদারহুড

১৭

ইরানে হামলার অনুমতি দিইনি : ট্রাম্প

১৮

ফিনটেক শিল্পে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নিয়ে যবিপ্রবিতে জাতীয় কনফারেন্স

১৯

আলেকজান্ডারও ইরানিদের পরাজিত করতে পারেনি : শি জিনপিং

২০
X