বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় উৎসবমুখর পরিবেশে শুক্রবার (২৭ জুন) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অনুষ্ঠিত হলো শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব-২০২৫। উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রাজধানীতে এই উৎসবে শামিল হন হাজারো মানুষ। আয়োজনের পুরোভাগে ছিল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ-ইসকন বাংলাদেশ।
রথযাত্রাটি রাজধানীর স্বামীবাগের ইসকন আশ্রম থেকে বের হয়ে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। এতে ঢাকাসহ আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে আসা ভক্তরা অংশ নেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মহাধুমধামে পালিত হলো এ উৎসব। সাত দিন পর আগামী ৫ জুলাই ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে ইসকন মন্দিরে আসবে উল্টোরথ। এর মধ্য দিয়ে এই উৎসব সমাপ্ত হবে।
এর আগে সকালে ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমে অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শুভ রথযাত্রা মহোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) গোকুল ভি কে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, রথযাত্রা উৎসবের গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে এবং এটি সমাজকে ভক্তি, ঐক্য ও সহমর্মিতার চিরন্তন মূল্যবোধে একত্রিত করে। বৈষ্ণব ধর্মীয় ঐতিহ্যে শেকড় গেঁথে থাকা এই উৎসব ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার দীর্ঘকালীন সাংস্কৃতিক বন্ধনের এক উজ্জ্বল প্রতীক। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক শুধু সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; আমরা যুগ যুগ ধরে ইতিহাস, সাহিত্য, সঙ্গীত ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের সৌহার্দ্য ভাগ করে চলেছি।
তিনি আরও বলেন, রথযাত্রা কেবল একটি উৎসব নয়, এটি এক মহত্তম ঈশ্বরভক্তির প্রকাশ। এই দিনে ভগবান জগন্নাথ, যিনি কৃষ্ণের এক অবতার, তাঁর মন্দির থেকে বের হয়ে ভক্তদের সঙ্গে মিলিত হন। আজকের এই উদযাপন প্রমাণ করে যে, এমন উৎসবগুলি কীভাবে সমাজে মিলন, ভালোবাসা, শান্তি, ঐক্য ও আনন্দের বার্তা ছড়িয়ে দেয় এবং চিরায়ত মূল্যবোধকে জাগ্রত রাখে।
ইসকন বাংলাদেশের প্রশংসা করে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের এই কূটনীতিক বলেন, এমন মহান আয়োজনের জন্য ইসকন বাংলাদেশকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই, যা তারা নিষ্ঠা ও মমতায় পরিচালনা করছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ প্রচার ও আধ্যাত্মিক সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে ইসকন বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অহিংসা, বিনয়, সহানুভূতি, সততা ও নৈতিকতা- ইসকনের এই মূল্যবোধসমূহ আজকের বিশ্বে অত্যন্ত জরুরি। এ গুণাবলি একটি ন্যায়ভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে সহায়তা করে এই প্রজন্ম ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।
গোকুল ভি কে বলেন, এই বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসকন মন্দিরে রথযাত্রা উদযাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। ভাবতেই ভালো লাগে, যখন ১৯৬৭ সালে অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে রথযাত্রা উদযাপন করেন; তখন কেউ ভাবেনি এই উৎসব একদিন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় হিন্দু উৎসবে পরিণত হবে। আজ নিউইয়র্ক থেকে নাইরোবি, ঢাকা থেকে ডারবানের অলিগলি-সবখানেই রথযাত্রা মানুষকে একত্রিত করে বিশ্বাস, আনন্দ ও ঐক্যের বন্ধনে।
তিনি বলেন, প্রার্থনা করি- ভগবান জগন্নাথ যেন আমাদের সবাইকে সুস্থতা, সুখ ও আধ্যাত্মিক উন্নতির আশীর্বাদ দেন। রথযাত্রার এই উৎসব বছরের পর বছর বেঁচে থাকুক এবং তার বার্তা ছড়িয়ে পড়ুক ঈশ্বরভক্তি, ভালোবাসা ও বৈশ্বিক ভ্রাতৃত্বের। আসুন, আমরা একসঙ্গে মিলে গড়ি এমন একটি সমাজ, যা গঠিত হবে পারস্পরিক বোঝাপড়া, শান্তি ও সম্প্রীতির ভিত্তিতে।
চট্টগ্রামে বর্ণাঢ্য রথযাত্রা : চট্টগ্রামে হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বীর অংশগ্রহণে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকাল ৩টা থেকে রথযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। কেন্দ্রীয় রথযাত্রা কমিটির উদ্যোগে নগরীর নন্দনকাননে তুলসীধাম ও শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির (ইসকন মন্দির) এবং প্রবর্তক মোড়ে ইসকনের আরেক মন্দির থেকে রথযাত্রা বের হয়। এর আগে দুপুরে তুলসীধাম থেকে বেলুন উড়িয়ে এবং রথের রশি টেনে শুভসূচনা করা হয় রথযাত্রার। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার রাজীব রঞ্জন ও অধ্যাপক জিনবোধি ভিক্ষু। তুলসীধামের মোহন্ত ও ঋষিধাম অধিপতি শ্রীমৎ দেবদীপ পুরী মহারাজের পৌরহিত্যে ধর্মীয় আচার সম্পন্ন হয়।
সিলেটে রথযাত্রায় মাতলেন হাজারো ভক্ত : সিলেটে উৎসবমুখর পরিবেশে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা মহোৎসব শুরু হয়েছে। গতকাল নগরের রিকাবীবাজার রথযাত্রা প্রাঙ্গণে সিলেটের ২৫টি মন্দির ও আখড়ার অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয় শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব, বলদেব ও সুভদ্রা মহারাণীর রথযাত্রা। মহোৎসবকে কেন্দ্র করে সিলেটে ৯ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালন করা হবে।
নগরীর ইসকন যুগলটিলা মন্দিরে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসবে উদ্বোধনী আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। ইসকন বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ও ইসকন যুগলটিলা সিলেটের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ভক্তি অদ্বৈত নবদ্বীপ স্বামী মহারাজের সভাপতিত্বে র্যালির উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- মহানগর বিএনপির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু, ভারতের সহকারী হাইকমিশনার টি হ্যান্ড সিং, শাবিপ্রবি অধ্যাপক নিলাদ্রী শেখর রায়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দেবামৃত নিতাই দাস।
খুলনায় রথযাত্রায় পুণ্যার্থীদের ঢল : বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আনন্দমুখর পরিবেশে খুলনায় রথযাত্রা মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকাল তিনটায় দৌলতপুর পাবলা বণিকপাড়া গাছতলা সর্বজনীন পূজা মন্দিরে এ রথযাত্রার উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বকুল বলেন, ধর্মীয় ভেদাভেদে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। পরে ভক্তরা পাবলা বণিকপাড়া গাছতলা পূজা মন্দির থেকে রথ টেনে নিয়ে যান পাবলা মধ্যপাড়া মন্দিরে।
গাজীপুরে মাণিক্য মাধবের রথযাত্রা : গাজীপুরে ভাওয়াল রাজাদের দ্বারা প্রচলিত প্রায় দুইশ বছরের প্রাচীন শ্রীশ্রী মাণিক্য মাধবের রথযাত্রা ও রথমেলা শুরু হয়েছে। সকালে জেলা শহরের রথখোলায় রথটানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রথযাত্রা শুরু হয়। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব আমিন আল পারভেজ। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আহম্মদ হোসেন ভুইয়া।
সুনামগঞ্জে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত : শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষে সুনামগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বিকেল ৪টায় শহরের জগন্নাথ জিউর মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে শহরের মধ্যবাজার, পশ্চিমবাজার, ট্রাফিক পয়েন্ট, দূর্গাবাড়ি হয়ে নতুনপাড়া এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রাটি আয়োজন করে শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর মন্দির পরিচালনা কমিটি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল। শোভাযাত্রায় আরও উপস্থিত ছিলেন- সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম নুরুল, শেরেনুর আলী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল বণিক, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিমান কান্তি রায়, মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় তালুকদার বিজু, চন্দন কুমার রায় প্রমুখ। সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিবুল হাসান দিলু, জেলা যুবদলের সহসভাপতি সুজন মাহমুদ, হিন্দু কমিউনিটি নেতা অরুণ চন্দ্র দে ও জ্যোতিময় দাস চপল।
লক্ষ্মীপুরে রথযাত্রা মহোৎসব : লক্ষ্মীপুরে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে রথযাত্রা মহোৎসব। বিকেলে শহরের শ্যাম সুন্দর জিউর আখড়া ও শ্রীশ্রী পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দির থেকে রথসহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার আকতার হোসেন, লক্ষ্মীপুর পৌর প্রশাসক জসিম উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সম্রাট খীসা, পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দিরের অধ্যক্ষ সখাবেশ বলরাম গোপাল দাস ব্রক্ষ্মচারী, লক্ষ্মীপুর শহর জামায়াতের আমির আবুল ফারাহ নিশান, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শংকর মজুমদার, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মানিক সাহা, কেন্দ্রীয় যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বর্ণাঢ্য র্যালিতে রথযাত্রা : বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা আর আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রথযাত্রা র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেলে ইসকন এর আয়োজনে জেলা শহরের মধ্যপাড়া শ্রীশ্রী রাধামাধব জিউর মন্দির থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান-প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় মন্দির শ্রী শ্রী আনন্দময়ী কালিবাড়ীতে এসে শেষ হয়। র্যালিতে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
বাগেরহাটে রথযাত্রা উৎসব : বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুরের লাউপালায় রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে ১৫ দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলা শুরু হয়েছে। দুপুরে লাউপালায় শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রার শুভ উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক মোহন লাল হালদার, সদস্যসচিব বাবুল হালদার বিপ্লব, যাত্রাপুর রথযাত্রা মন্দির কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাবুল সরদারসহ স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
যাত্রাপুর রথ মন্দির কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাবুল সরদার বলেন, চারশ বছরের ঐতিহ্য এ মন্দিরে রথযাত্রা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এখানে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা না, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও অংশগ্রহণ করেছেন। ভক্তদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে আমি সত্যিই আনন্দিত।
দিনাজপুরে রথযাত্রা মহোৎসব : দিনাজপুরে রথযাত্রা মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুর সোয়া ২টার দিকে শহরের গণেশতলাস্থ রায়সাহেববাড়ী রথখোলা মন্দির প্রাঙ্গণ, বিকেলে সোয়া ৩টার দিকে শহরের গুঞ্জাবাড়ী শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির এবং দুপুর ২টায় উত্তর বালুবাড়ী শ্রীশ্রী মশান কালি মন্দির থেকে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা শুরু হয়। এছাড়া দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির, ফুলবাড়ীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে রথযাত্রা জাঁকজমকভাবে পালিত হয়েছে।
সিরাজদিখানে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত : মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেলে দানিয়াপাড়া শ্রীশ্রী মদনমোহন রাধারানী জিউর মন্দিরে সিরাজদিখান পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে শ্রীশ্রী হরেকৃষ্ণ নামহট্ট সংঘের সহযোগিতায় আয়োজিত রথযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিনা আক্তার। রথযাত্রার শুভ উদ্বোধন করেন সিরাজদিখান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বারি।
ভক্তরা বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে দানিয়াপাড়া শ্রী শ্রী মদনমোহন রাধারানী জিউর মন্দির হতে সুসজ্জিত রথ টেনে উপজেলার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিরাজদিখান থানা রোডের সন্তোষপাড়া গৌর নিতাই মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। পরে জগন্নাথ দেবকে সন্তোষপাড়া গৌর-নিতাই মন্দিরে স্থাপন হয়।
বর্ণিল আয়োজনে সরিষাবাড়ীতে রথযাত্রা : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব মন্দির কমিটির আয়োজনে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনির মাধ্যমে এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু ও শেষ হয়। শোভাযাত্রাটি মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শিমলা বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। অনুষ্ঠানে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব মন্দিরের সভাপতি সুনীল কুমার সাহাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নলডাঙ্গায় পিতলের রথযাত্রা : নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় উপমহাদেশের একমাত্র সর্ববৃহৎ ও প্রাচীনতম পিতলের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল থেকে মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে ভক্তরা উপজেলার মাধনগরের মদনমোহন মন্দির থেকে দেড়শ বছরের পুরোনো পিতলের রথ রশি দিয়ে টেনে যাত্রা শুরু করেন। ৯ দিন পরে এখান থেকেই উল্টা রথে ফিরবেন শ্রী শ্রী জগন্নাথ। রথযাত্রায় মদনমোহন মন্দিরের সভাপতি পিন্টু অধিকারী, নলডাঙ্গা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট উদয় ভট্টাচার্য প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
ঈশ্বরদীতে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত : নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরদীতে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেলে ঈশ্বরদী শহরের কর্মকারপাড়ায় মাতৃ মন্দিরে রথযাত্রার উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাস ও ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার। রথযাত্রাটি কর্মকারপাড়া মাতৃ মন্দির থেকে শুরু হয়ে প্রদক্ষিণ শেষে মেইন রোডের প্রয়াত নরেশ চন্দ্র রায়ের বাড়িতে গিয়ে শেষ হয়।
রথযাত্রায় মাতৃ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি কমল কর্মকার, সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল রায়, মিলন কর্মকার, মৌবাড়ি ও ঠাকুরবাড়ি মন্দির কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার কুন্ডু, সাধারণ সম্পাদক রাজেশ সরাফসহ সহস্রাধিক ভক্ত উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া যশোরের চৌগাছা এবং নীলফামারীর ডিমলায় রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আর্কাইভ 
| ২৮ জুন ২০২৫ 
