কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বিয়ামে আগুন

নথি পোড়াতে গিয়ে অফিস সহায়ক ও গাড়িচালক নিজেরাই মারা যান

গ্রেপ্তার জাহিদুল ইসলাম এবং মো. আশরাফুল। ছবি : সংগৃহীত
গ্রেপ্তার জাহিদুল ইসলাম এবং মো. আশরাফুল। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের একটি অফিস কক্ষে আগুন লাগাতে গিয়ে অফিস সহায়ক ও গাড়িচালক নিজেরাই মারা যান।

ঘটনার ৫ মাস পর এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন ইউনিট (এসআইঅ্যান্ডও)। এ বিষয়ে ৩ মাস ধরে তদন্ত করছিল সংস্থাটি।

‎সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর কল্যাণপুরে পিবিআই উত্তর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) ‎‎এ হত্যা মামলার আসামি চিহ্নিত ও পরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে কুড়িগ্রাম ও ঢাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তাররা হলেন- মূল পরিকল্পনাকারী বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম (৩৮) এবং তার ভাড়াটে সহযোগী মো. আশরাফুল ইসলাম (৩৬)।

ঘটনার বিবরণ জানিয়ে পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান বলেন, ‘গত ২৭ জুলাই রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বিয়াম ভবনে ৫০৪ নম্বর কক্ষে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ৫০৪ নম্বর কক্ষে রক্ষিত সমিতির দলিলপত্র, নামজারি সংক্রান্ত কাগজপত্র, ব্যাংক হিসাব, চেক বই, জমি ক্রয় সংক্রান্ত ৪টি চুক্তিপত্র, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র, কক্ষের এসিসহ অন্যান্য মালামাল পুড়ে ভস্মীভূত, চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় অফিস সহায়ক মো. আব্দুল মালেক ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং সমিতির সেক্রেটারির গাড়িচালক মো. ফারুক গুরুতর আহত হলে তাকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারও মৃত্যু হয়।’

পিবিআইয়ের তথ্যমতে, এ ঘটনায় বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। থানা-পুলিশ দুই মাস তদন্তের পর গত ৬ মে মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।

পিবিআই জানায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে মাথায় মাঙ্কি ক্যাপ, মুখে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও স্যান্ডেল পরিহিত অবস্থায় ৩০-৩৫ বছর বয়সী এক যুবক বিয়াম ভবন মাঠের পশ্চিম দিক থেকে এসে সিঁড়ি দিয়ে ভবনের পঞ্চম তলায় চলে যান এবং সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দেন। ‎

‎পিবিআইয়ের টিম এআইয়ের মাধ্যমে আসামির ছবি শনাক্ত করে। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি মো. আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল অপরাধ স্বীকার করেন।

আশরাফুলের দেওয়া তথ্যমতে, ঘটনার মূল হোতা বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আশরাফুল পিবিআইকে জানান, বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম জাহিদুল ইসলাম তার পূর্ব পরিচিত এবং এলাকার ভাই। জাহিদুল ইসলাম তাকে গত বছরের ৫ আগস্টের দু-তিন মাস আগে ঢাকায় এনে মগবাজার থ্রি-স্টার হোটেলে একটানা ৫-৬ মাস রাখেন। জাহিদুল ইসলামের সূত্র ধরে তিনি প্রায়ই বিয়াম প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতেন এবং ওই অফিসের কয়েকজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। সমিতির মূল নথিপত্র স্থায়ীভাবে ধ্বংসের লক্ষ্যে বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম জাহিদুল ইসলাম আসামি আশরাফুল, অফিস সহায়ক আ. মালেক ও গাড়িচালক ফারুক মিলে পরিকল্পনা করেন।

পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ‘পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ শেষে তাদের ১০-১২ লাখ টাকা দেওয়ার মৌখিক চুক্তি করে। একদিন জাহিদ আশরাফুলকে কিছু টাকা দিয়ে বিয়ামের পঞ্চম তলার সিসি ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন। জাহিদের দেওয়া টাকায় আশরাফুল মাস্ক, মাঙ্কি ক্যাপ, হ্যান্ড গ্লাভস ও ফুল স্লিভ শার্ট কেনেন।’

আব্দুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার দিন আশরাফুল ক্যাপ, মাস্ক এবং হ্যান্ডগ্লাভস পরে বিয়াম ভবনের পঞ্চম তলায় উঠে ক্যামেরা বন্ধ করে দেন। ক্যামেরা বন্ধ করার পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অফিস সহায়ক মালেক ও ড্রাইভার ফারুক চতুর্থ তলার ৫০৪ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করেন। তখন আশরাফুল দরজার পাশে সিঁড়ির কোনায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। ৫০৪ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে গাড়িচালক মালেক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।’

আব্দুর রহমান আরও বলেন, ‘আশরাফুল পঞ্চম তলা থেকে তৃতীয় তলায় নামতেই বিকট বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থলেই অফিস সহায়ক মালেক মারা যান। জাহিদ গাড়ি নিয়ে আশরাফুলের সহযোগিতায় গুরুতর আহত অবস্থায় ড্রাইভার ফারুককে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ড্রাইভার ফারুক মারা গেলে জাহিদ আশরাফুলকে ডেকে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিতে বলেন। জাহিদের কথামতো পরদিন রংপুর চলে যান তিনি। এই কাজে আশরাফুলকে ১০-১২ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও জাহিদ এখন পর্যন্ত তাকে ৬-৭ লাখ টাকা দিয়েছেন।’

পিবিআই আরও জানায়, ‎‎শনিবার (২৬ জুলাই) বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার জাহিদুল ইসলাম এবং মো. আশরাফুলকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফরিদা পারভীনের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে

১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন : প্রেস সচিব

ভোট গণনাকালীন শিক্ষিকার মৃত্যু নিয়ে জামায়াত আমিরের বার্তা

লেবুর সঙ্গে ভুলেও খাবেন না যে ৪ খাবার

ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত কারিশমা

ঠাকুরগাঁওয়ে ভুয়া বিল প্রকল্পে টাকা আত্মসাৎ

ওয়াশিং মেশিন নিয়ে তর্ক করায় যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় ব্যক্তির শিরশ্ছেদ 

শনিবার বাংলাদেশে আসছেন আম্পায়ার সাইমন টাফেল

জাকসুর ১৪ হলের ভোট গণনা শেষ, ফলের সময় জানা গেল

কোরিয়ান এক কেজি লবণের দাম ৩০ হাজার টাকা! কী আছে এতে

১০

খেলাধুলা থেকে ইসরায়েলিদের বাদ দিতে বললেন স্পেনের মন্ত্রী

১১

নিউজিল্যান্ডের ক্যাফে থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল কোহলি-আনুশকাকে!

১২

মাকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন একমাত্র ছেলে, বুকে ছুরি বসালেন বাবা

১৩

জাকসু নির্বাচন / দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষিকার মৃত্যু নিয়ে যে অভিযোগ করলেন শিবিরের ভিপি প্রার্থী

১৪

কাভার্ডভ্যানের নিচে প্রাইভেটকার, বাবা-মেয়ে নিহত

১৫

এক দিনে কতটুকু চিনি খেলে শরীরের ক্ষতি হয় না? জেনে নিন

১৬

ওটিটির সেরা ৫ কোর্টরুম সিনেমা

১৭

বাংলাদেশের খেলায় মন ভরেনি সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটারের

১৮

জমি কেনার সুবিধা উন্মোচন করল সৌদি আরব, আবেদনের শেষ তারিখ যেদিন  

১৯

মা-মেয়ে হত্যা, অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো কবিরাজের ‘ভয়ংকর’ তথ্য

২০
X