দেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক সেবন করে। প্রায় ৮ কোটি মানুষ পরোক্ষভাবে ধূমপানের ক্ষতির শিকার হয়। তবে অসংক্রামক রোগ ও অকাল মৃত্যু প্রতিরোধে এবং স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন নিশ্চিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী ও বাস্তবায়ন অপরিহার্য।
২০৪০ সালের মধ্যে সরকার তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিলেও তামাক আইন সম্পর্কে বেশিরভাগ লোকই জানেন না। আইন প্রয়োগের বিষয়ে উদাসীনতা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে সচেতনতা তৈরিসহ রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা মানস এর আয়োজনে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী সভায় সভাপতিত্ব ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, দেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক সেবন করে। প্রায় ৮ কোটি মানুষ পরোক্ষভাবে ধূমপানের ক্ষতির শিকার হয়। ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ হলো তামাক সেবন যা স্বাস্থ্য খাতে চাপ বৃদ্ধি করছে। তামাকের কারণে পরিবেশ-জীববৈচিত্র, কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন হুমকিতে রয়েছে। প্রবন্ধে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত, ই- সিগারেট ইত্যাদি আমদানি, বিপণন, ব্যবহার নিষিদ্ধসহ আরও বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য সংশোধনী প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দেশে মাদকের সহজলভ্যতার পেছনে ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার অন্যতম বড় কারণ। সুতরাং তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন শক্তিশালী ও বাস্তবায়ন, ট্যাক্স বৃদ্ধি, সিএসআর নিষিদ্ধসহ বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে। তামাকবিরোধী কাজে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। গণমাধ্যমের কাজ হলো সত্য তুলে ধরা। তামাক ও ধূমপানের প্রকৃত সত্য গণমাধ্যমে তুলে ধরে মানুষকে সচেতন করতে হবে। এতে তারা প্রভাবিত হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, উন্নত দেশগুলোতে তামাক ক্রমান্বয়ে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও তামাকের ব্যবসা বাড়ানো হচ্ছে। দেশের অনেক আইন প্রণেতা তামাক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং তাদের লবিং রয়েছে। ফলে তামাক নিয়ন্ত্রণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। তামাক নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন। একইসঙ্গে গণমাধ্যমকে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, ১৮ বছরের নিচে কারো কাছে তামাকজাত পণ্য বিক্রি করা যাবে না এটা আমরা কতজন জানি। অনেকেই জানি না। আইন প্রয়োগ করবে যারা তাদেরও অনেকে জানেন না। আমাদের এসব বিষয়ে আরও সচেতন করতে হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক নির্মূলের যে কমিটমেন্ট সেটা আর ১৭ বছর সময় আছে। আমাদের এখনই রাষ্ট্র ও প্রশাসনের দিক থেকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ভাইটাল স্ট্রাটেজিস’র পরামর্শক ফাহিমুল ইসলাম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার পাশাপাশি আইনি কাঠামো শক্তিশালী এবং তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ জরুরি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে।
মন্তব্য করুন