বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিরা কারবালার ভয়াবহতাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক দোয়া মাহফিল ও দুস্থ, অসহায় মানুষদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাঈদ খোকন বলেন, কারবালার প্রান্তরে যখন হযরত ইমাম হোসেনকে হত্যা করা হয়, তখনো নারী এবং শিশুদের হত্যা করা হয়নি। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল, চার বছরের শিশু সুকান্ত বাবুসহ নারীদেরও রেহাই দেয়নি ঘাতকেরা।
তিনি বলেন, মুজিব মানেই মুক্তি, মুজিব মানেই স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বনেতা, বঞ্চিত মানুষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতামুক্ত বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যতদিন বাংলা ও বাঙালি থাকবে, ততদিন কোটি বাঙালির হৃদয়ে থাকবে বঙ্গবন্ধুর নাম।
আগস্ট বাঙালি জাতির কাছে বেদনাদায়ক একটি মাস উল্লেখ করে সাঈদ খোকন বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসে নির্মমতার এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বুলেটের আঘাতে স্তব্ধ করে দেওয়া হয় বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মুক্তি সংগ্রামের দ্ব্যর্থহীন বজ্রকণ্ঠ।
তিনি বলেন, দেশের বাইরে অবস্থান করায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ঘাতকেরা ওইদিন শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকেই সপরিবারে হত্যা করেনি, হত্যা করেছিল বাঙালি জাতির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অগ্রযাত্রা, সমৃদ্ধি ও সুন্দর আগামীর স্বপ্ন। স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাত্র ৩ বছর ৭ মাসের মাথায় দেশি ও বিদেশি চক্রান্তের মাধ্যমে ঘাতকরা বাঙালি জাতির কপালে কলঙ্কের তিলক পরিয়ে দেয়।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বেনিফিশিয়ারি হিসেবে চিহ্নিত একটি মহল এখনো দেশ এবং জাতির এই ক্রান্তিকালে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আজও তারা অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের দুঃস্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার-বানোয়াট তথ্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তবে সব বাধা-বিপত্তি জয় করে শেখ হাসিনা আজ বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে এক মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে পুরান ঢাকার ধোলাইখাল, মুশরিখোলা দরবার শরীফ ও চাঁনখারপুর এলাকাসহ নয়াবাজার, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, লালবাগ, কোতোয়ালি, ওয়ারী থানাস্থ বিভিন্ন ওয়ার্ড ও এলাকাসমুহে অসহায় ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করেন সাঈদ খোকন। এ সময় স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দিনটি পালনে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন সন্ধ্যায় নাজিরাবাজারস্থ নিজ কার্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম রাতে শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের অন্য সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
মন্তব্য করুন