৫ আগস্ট সরকার পতনের আগেই নিজের আত্মীয়স্বজনদের বিশেষ বার্তা দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এক আত্মীয় সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনদের। তাদের একজন জানিয়েছেন, দেশ ত্যাগ করতে না পারলে এখন তাকে জেলে থাকতে হতো।
তিনি জানান, বিদেশে অবস্থানরত ওই ব্যক্তি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের একজন প্রভাবশালী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি শেখ হাসিনার দাদা শেখ লুৎফুর রহমানের পক্ষের একজন আত্মীয়।
সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ আগস্ট কারফিউ চলাকালেই মোবাইল ফোনে নির্দেশনা পেয়ে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেশ ত্যাগ করেন এবং অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় নেন।
ওই আত্মীয় জানান, শেখ হাসিনা শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেন। তাদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠান তিনি। যাতে লেখা ছিল ‘নো ওয়ান স্টে হিয়ার’। এই বার্তার অর্থ বুঝতে কারও সময় লাগেনি- এটি ছিল দেশ ত্যাগের চূড়ান্ত নির্দেশ।
সূত্র আরও জানায়, আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বা অন্য কারও প্রতি এমন বার্তা পাঠাননি শেখ হাসিনা। আত্মীয়দের নিরাপদে বিদেশে পৌঁছানো নিশ্চিত হওয়ার পর ৫ আগস্ট তিনি ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারত চলে যান। পরে শেখ রেহানা লন্ডন চলে যান।
ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। হত্যা, গুম, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মতো গুরুতর অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় সাবেক সরকারের বহু প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য বর্তমানে কারাগারে আছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাও গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের অনেকেই সরকার পতনের আগেই দেশ ত্যাগ করে বিভিন্ন দেশে- যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া স্বজনদের একটি বড় অংশ ভারতে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেবল একজনের গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি হলেন সেরনিয়াবাত মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ। তিনি সাবেক চিফ হুইপ ও শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর পুত্র। ২০২৪ সালের অক্টোবরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু পরিবারের ওই সদস্য জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট বিকেলে শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন যে তার সরকার আর টিকবে না। ওই সময় তিনি পরিবারের কয়েকজন সিনিয়র সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এবং বলেন, ‘পরিস্থিতি অনুকূলে নেই। সুরক্ষার জন্য সবাইকে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে ওই বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেন।
তথ্যসূত্র : খবরের কাগজ
মন্তব্য করুন