গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচির আগে ও পরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এক সময় সমাবেশস্থল ও আশপাশ এলাকা ‘রণক্ষেত্রে’ পরিণত হয়। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ।
বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে হান্নান মাসউদ লেখেন, ‘এর জন্যে তোদের চরম মূল্য দিতে হবে, এই গভর্নমেন্টকেও। একটা জেলায় জাতীয় নেতাদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, তারা করবে নির্বাচন! আগে দেশ নিয়ন্ত্রণ করেন।’
এর আগে বেলা পৌনে ২টার দিকে ২০০-৩০০ লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিপির সমাবেশস্থলে যায়। সে সময় মঞ্চের আশপাশে থাকা পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে দ্রুত আদালত চত্বরে ঢুকে পড়েন। একই সময়ে মঞ্চে ও মঞ্চের সামনে থাকা এনসিপির নেতাকর্মীরাও দৌড়ে সরে যান। যারা হামলা চালান, তারা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে জানান এনসিপির নেতাকর্মীরা।
ওই সময় হামলাকারীরা মঞ্চের চেয়ার ভাঙচুর করেন, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। একপর্যায়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে যান। এনসিপির নেতাকর্মী ও পুলিশ এক হয়ে ধাওয়া দিলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। পরে এনসিপি সেখানে সমাবেশ শুরু করে। কিন্তু সমাবেশ শেষে আবারও হামলা চালায় হামলাকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
এদিকে পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মী ও এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাকে লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানানো হয়, আজ গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তরুণদের বিপ্লবী আন্দোলনের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার অধিকার হরণ করা হয়েছে, যা গভীর উদ্বেগজনক এবং মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমান। এনসিপি নেতাকর্মী, পুলিশ সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা নৃশংস হামলার শিকার হয়েছেন; তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় অনেককে মারধর করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই নিন্দনীয় হামলা নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই হামলায় দায়ীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে কঠোরভাবে জবাবদিহির মুখোমুখি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের ওপর এমন বর্বর সহিংসতার কোনো জায়গা থাকতে পারে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা সেনাবাহিনী ও পুলিশের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি হুমকি ও ভয়ভীতির মধ্যেও যারা সাহসিকতা ও অটল মনোভাব নিয়ে পদযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন, সেই শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। এই বর্বরতার সঙ্গে জড়িতদের বিচার অবশ্যই নিশ্চিত করা হবে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। অবশ্যই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি জুলাইয়ের শুরু থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে এনসিপি। মাসব্যাপী এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ গোপালগঞ্জে পদযাত্রা ছিল দলটির।
মন্তব্য করুন