শেখ মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হাসিনা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল বলেছেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ।
শনিবার (১৬ জুলাই) ‘২০১৮-২০২৪’ কোটা সংস্কার থেকে রাষ্ট্র সংস্কার শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদ শেরপুর জেলা শাখা। জেলার একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গণঅধিকার পরিষদ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এতে এ কথা বলেন তিনি।
আবু হানিফ বলেন, আজকের এই শিরোনামটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ১৮ সালে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিলাম। ২৪ সালে সেই কোটা ফেরত আনার চেষ্টা করলে আবার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই আন্দোলন হাসিনার পতন নিশ্চিত করে। আমরা গত ৭ বছর হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এই দেশের তরুণদের সংগঠিত করেছি, সেই তরুণরাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে গত ১৫ বছর দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, গুম-খুনসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা আওয়ামী লীগ করে নেই। ৭২-এর পর শেখ মুজিব বাংলাদেশে বাকশাল কায়েম করেছিল। শেখ মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হাসিনা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল বাংলাদেশে। জনগণ সেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিল। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর কাউকে ফ্যাসিবাদ হতে দেওয়া হবে না।
গণঅধিকার পরিষদের এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল। শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নয়, বিগত ১৫ বছরে দেশে গুম-খুন করেছিল আওয়ামী লীগ। প্রশাসনকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চেয়েছিল। জুলাই আন্দোলনেও মানুষকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। জনগণের আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা।
তিনি বলেন, যে আওয়ামী লীগ দেশে গণহত্যা চালিয়েছিল তাদের বিচারের আগে কোনোভাবে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ফেরাতে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। বিচারের আগে আওয়ামীলীগ কোনোভাবে নির্বাচন করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শেরপুর জেলার আগের চলচিত্র পরিবর্তন হয়নি। এখানে আওয়ামী লীগ রাজত্ব করত, এখন অন্য একটি দল রাজত্ব করে। আগে এই এলাকার সীমান্তে অবৈধ চুরি-চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিল আওয়ামী লীগ, এখনো প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক কিছু নেতাকর্মী এসবের সঙ্গে জড়িত। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরও শেরপুরের সামীন্ত এলাকায় অবৈধ চোরাচালানের ব্যবসা বন্ধ হয়নি।
আবু হানিফ বলেন, শেরপুরের গারো পাহাড়ে অবৈধ পাথর এবং বালু উত্তোলন করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সেখানে দেখা গেছে সব দলের ঐক্য হয়েছে, মিলমিশে সবাই ভাগবাটোয়ারা করছে, প্রশাসন কিছুই বলছে না। আওয়ামী লীগের আমলের দখলদারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি চলমান রয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে শুধু হাতের। আওয়ামী লীগের অবৈধভাবে আয়ের পথ এখনো বন্ধ হয়নি। বরং একটি রাজনৈতিক দল সে আয়ের উৎসের দেখভাল করছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরও এসব কোনোভাবে মেনে নেওয়া যাওয়া না। গণঅধিকার পরিষদ চাঁদাবাজ, দখলবাজমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধান আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মনজুর মোরশেদ মামুন বলেন, ২০১৮ কোটা সংস্কার আন্দোলনই এ দেশের তরুণদের উজ্জীবিত করে। যখন আওয়ামী লীগের পতনের আশা বড় বড় রাজনৈতিক দল ও নেতারা ছেড়ে দিয়েছিল, তখন গণঅধিকার পরিষদ আওয়ামী লীগ ও হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশের রক্তচক্ষু ও বুলেট উপেক্ষা করে হাসিনা পতন আন্দোলনের দাবানল জ্বালান। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার হাসিনার পতন ঘটে। যেই ২০১৮ কোটা সংস্কারই ২০২৪ জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত করেছে সে ইতিহাসকে জুলাই ঘোষণাপত্রে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণঅধিকার পরিষদ শেরপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক আরিফ আহমেদ। সদস্যসচিব শামসুজ্জামান শিবলুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন- গণঅধিকার পরিষদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম, জেলা গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম সোহাগ, কাজী হায়াৎ, মনিরুজ্জামান মনির, অ্যাডভোকেট এনামুল, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সহসভাপতি দূর্জয় হাসান, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি কামরুজ্জামান সরকার, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি ওয়াজকুরুনি প্রমুখ।
মন্তব্য করুন