আমাদের সমাজে ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার-আচরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা ধরনের কুসংস্কার ও ভুল ব্যাখ্যা। এর মধ্যে একটি ব্যাপক প্রচলিত ধারণা হলো, কবরের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করা নাকি গোনাহ, কেউ কেউ এটাকে অমঙ্গলজনক বলেও মনে করেন। অনেকেই ভাবেন, কারো কবরের দিকে ইশারা করলে তা মৃতব্যক্তির প্রতি অবমাননার শামিল বা তা বিপদের আলামত। আবার কেউ কেউ তো ভাবেন, কবরের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করলে আঙুল পঁচে যায়। অথচ এসব ধারণার পেছনে স্পষ্ট কোনো শরয়ি দলিল নেই, বরং এগুলো পুরোপুরি কুসংস্কারনির্ভর এবং শরিয়তের শিক্ষা থেকে বিচ্যুত।
এ বিষয়ে কালবেলার সঙ্গে শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি জানিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী কৌড়িয়া মাদ্রাসার প্রধান মুফতি ও মুহাদ্দিস মাওলানা হেলাল আসহাব কাসেমি। তার আলোচনা তুলে ধরেছেন আবু তালহা রায়হান—
কবরের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করা একটি স্বাভাবিক বিষয়
মুফতি আসহাব কাসেমি বলেন, জীবিত মানুষের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করা যেমন জায়েয আছে, মৃত মানুষের কবরের দিকেও ইশারা করা জায়েজ আছে। এতে কোনো অমঙ্গল হওয়ার কারণ নেই। কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসে এধরনের কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। সুতরাং এমন ভুল ধারণা পরিহার করতে হবে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল (বিশ্বাস পোষণ) করবে, যে বিষয়ে আমার অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।’ (মুসলিম : ১৭১৮)
কাফির সম্প্রদায় সালিহ (আ.) ও ঈমানদার সঙ্গীদের অশুভ লক্ষণ বলে মনে করত। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা বলল, তোমাকে ও তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদের আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি। সালিহ বললেন, তোমাদের শুভাশুভ আল্লাহর এখতিয়ারে, বস্তুত তোমরা এমন এক সম্প্রদায়, যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।’ (সুরা নমল : ৪৭)
অন্য একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আপনার মঙ্গল ছাড়া আর কোনো মঙ্গল নেই, আপনার পক্ষ থেকে সাব্যস্ত দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কোনো দুর্ভাগ্য হতে পারে না এবং আপনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। (মুসনাদে আহমদ : ৭০৪৫)
আসহাব কাসেমি বলেন, উল্লিখিত আয়াত ও হাদিস প্রমাণ করে, মঙ্গল-অমঙ্গল কেবল আল্লাহ তায়ালাইর হাতে। তাই ইসলামে কোনো কুসংস্কারের স্থান নেই। অতএব যারা মনে করেন কবের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করা যাবে না, তাদের ধারণা ভুল।
কবর জিয়ারত করা সুন্নত
জামিয়া কৌড়িয়ার প্রধান মুফতি বলেন, আখিরাতের স্মরণের মাধ্যমে পার্থিব জীবনের অনিশ্চয়তার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আর আখিরাতের স্মরণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো কবর জিয়ারত করা। এতে অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়। এজন্য কবর জিয়ারত একটি উত্তম আমল এবং সুন্নতও বটে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কবর জিয়ারত কর, কেননা তা তোমাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।’ (মুসলিম : ৯৭৬)
জিয়ারতের মুস্তাহাব সময়
কোনো নিয়ম না বেঁধে পুরুষদের জন্য কবর জিয়ারত করা জায়েজ। যে কোনো দিন যে কোনো সময়ে কবর জিয়ারত করা যায়। তবে প্রতি শুক্রবার না পারলে বৃহস্পতিবার বা শনিবার বা সোমবার জিয়ারত করার জন্য যাওয়া মুস্তাহাব। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৪২)
এ তিনদিনের মধ্যে শুক্রবারে যাওয়াই ভালো। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’( তাবারানি : ৬১১৪)
জিয়ারতের সুন্নত পদ্ধতি
প্রথমে মৃতকে উদ্দেশ্য করে সালাম প্রদান করা। অতঃপর দরুদ শরিফ পাঠ এবং কোরআন মাজিদ থেকে তিলাওয়াত করা। বিশেষ করে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইয়াসিন, সুরা মুলক, সুরা ইখলাস, সুরা তাকাসুর ইত্যাদি সুরা পড়া। তারপর হাত না উঠিয়ে মৃতদের জন্য ইসালে সওয়াব করা। তবে হাত উঠাতে চাইলে জিয়ারত শেষে কিবলামুখী হয়ে কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা যাবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৪২-২৪৩)
মন্তব্য করুন