

আতশবাজির আলো, উচ্চ শব্দের গান আর রাতজুড়ে উচ্ছ্বাসে যখন শহরগুলো নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত, তখন প্রশ্ন ওঠে—একজন মুমিন এই রাত কীভাবে কাটাবেন? সময়ের স্রোতে ভেসে গিয়ে অনুকরণ আর উন্মাদনায় মেতে ওঠা, নাকি আত্মসংযম ও ইবাদতের মাধ্যমে নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলা?
ইংরেজি নববর্ষকে ঘিরে বাংলাদেশেও ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উদযাপনের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এই রাত বিনোদনের নয়; বরং আত্মসমালোচনা, তওবা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই বছরের সূচনালগ্নেই পুরো বছরের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা একজন সচেতন মানুষ এবং একজন মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব।
ফুক্বাহায়ে কেরাম বলছেন, মুসলিমের জন্য ইংরেজি নববর্ষ পালন কোনো কল্যাণকর বিষয় নয়। বিশেষ করে খ্রিষ্টানদের অনুকরণে গড়ে ওঠা নতুন বছর বরণের পদ্ধতি মুসলমানদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির অংশ নয়; বরং তা স্পষ্ট অপসংস্কৃতি। ইংরেজি বছরের শুরুতে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ পালন করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। এ রাতে বর্ষবরণের নামে যেসব অনৈতিক ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে তরুণ সমাজ জড়িয়ে পড়ে, তা ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ এবং শরিয়তের সীমা লঙ্ঘন।
এ ধরনের বিশৃঙ্খল সংস্কৃতি থেকে বিরত থাকতে কোরআন ও হাদিসে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের অনুসরণ করবে, কখনো তার সেই আমল গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ৮৫)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির আচার-আচরণ ও কৃষ্টি-কালচার অনুসরণ করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত বিবেচিত হবে।’(সুনানে আবু দাউদ : ২৭৩২)
কোরআনের অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির জন্য আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান ও সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’(সুরা মায়িদা : ৪৮)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘যদি তুমি খারাপ কাজ করে খারাপ মনে করো এবং ভালো কাজ করে ভালো লাগে—তাহলে তুমি মুমিন। কিন্তু যদি খারাপ কাজ করে ভালো লাগে আর ভালো কাজ করে খারাপ লাগে—তাহলে তুমি মুমিন হতে পার না।’ (সহিহ মুসলিম : ১৯২৭)
তাহলে নতুন বছরের প্রথম রাত কীভাবে কাটাবেন?
একজন ইমানদারের জন্য প্রতিটি দিন ও রাতই মূল্যবান। তাই বছরের প্রথম রাত উত্তাল উদযাপন বা গুনাহে কাটানো নয়; বরং কোরআন ও হাদিসের নির্দেশিত পথে কাটানোই একজন মুমিনের জন্য উত্তম।
এ রাতে একজন মুসলিম যেভাবে সময় কাটাতে পারেন—
বিগত বছরের গোনাহের জন্য আল্লাহর কাছে আন্তরিক তওবা করা, আত্মসমালোচনার মাধ্যমে আগামী বছরের কল্যাণ কামনা করা।
সিজদাবনত হয়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা—তওবা, ইস্তেগফার, দোয়া-দরুদ, নফল নামাজসহ নেক আমলে নিজেকে নিয়োজিত রাখা।
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা এবং নতুন বছরকে দ্বীনি ও নৈতিকভাবে সুন্দর করার প্রতিজ্ঞা করা।
লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ
মুহতামিম, জামিয়াতুল কোরআন, ঢাকা
মন্তব্য করুন