‘শরীফ থেকে শরীফার গল্প’ বাদ দেওয়ার সুপারিশে এইচআরএফবি’র প্রতিবাদ
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা অধ্যায়ে ‘শরীফ থেকে শরীফার গল্প’ শীর্ষক লেখাটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি। এ সুপারিশ প্রত্যাখ্যানের প্রতিবাদ জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। একইসঙ্গে সুপারিশ আমলে না নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুনভাবে নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব-মুক্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার (২০ মে) হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের দেওয়া এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, বৈচিত্র্যতা আছে বলেই বহুস্তরিত সামাজিক সৌহার্দ্য বিদ্যমান। এই সৌহার্দ্য বজায় রাখতে বৈচিত্র্যতাকে সম্মান করতে হবে। এজন্য এই বৈচিত্র্যতাকে জানা-বোঝা জরুরি। বাংলাদেশ সংবিধানে লিঙ্গ-বর্ণ, ধর্ম বা যে কোনো বৈষম্যের ঊর্ধ্বে সবার সমতা ও সমঅধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। সেই বিবেচনায় সামাজিক বৈচিত্র্যতাকে জানার অন্যতম প্রাথমিক উদ্যোগ ছিল এই ‘শরীফ থেকে শরীফার গল্প’। এ ধরনের সুপারিশ গ্রহণ করা হলে তা হবে মূলত একটি প্রতিক্রিয়াশীল স্বার্থের দ্বন্দ্বে দুষ্ট গোষ্ঠীর সংবিধান পরিপন্থি অযৌক্তিক দাবির কাছে মাথা নত করা। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নতুন শিক্ষাক্রমে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক একটি পাঠ রয়েছে। যা সরকার কর্তৃক হিজড়া সম্প্রদায়ের আইনগত স্বীকৃতির ধারাবাহিকতায় একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। অথচ এ গল্পটি নিয়ে একটি সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বিতর্কের সূত্রপাত করা হয়। এ গল্প সংবলিত বইয়ের পাতা প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলা হয়। ওই সময় তাদের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নানা ঘৃণাত্মক, চরম বৈষম্যমূলক ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য ছড়ানো হয়। এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদসমূহ যথাক্রমে ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ২৮ (ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য) এর সুস্পষ্ট লংঘন। বিবৃতিতে বলা হয়, এ কমিটি নিয়ে শুরু থেকেই নানা সংশয় ছিল। কমিটির এ সুপারিশ প্রমাণ করছে নিরপেক্ষ পর্যালোচনা ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় স্বার্থের দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে থেকে কমিটি কাজ করেনি। এ ছাড়াও সাংবিধানিক অঙ্গীকার ও এদেশের স্বাধীনতার মূল চেতনা, সব নাগরিকের সমান অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এ কমিটি দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।   হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) মনে করে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সব জনগণের সমান অধিকারসহ মৌলিক মানবাধিকার, বৈচিত্র্যতার প্রতি সম্মান, বৈষম্যহীনতা ও সমতা, সহিষ্ণুতা, সহবস্থান  প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে সচেতন ও সংবেদনশীল করে তোলার জন্য এমন বিষয়ভিত্তিক কনটেন্ট পাঠ্যপুস্তকে থাকা জরুরি ও অপরিহার্য। এর মাধ্যমে বাল্যকাল থেকেই শিশু-কিশোররা একজন সচেতন ও সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ কাজ করবে। একটি সমতা ও মানবাধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য এমন শিক্ষা কারিকুলাম প্রয়োজন। এইচআরএফবি’র অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে- ১. বাংলাদেশের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা এবং মানবাধিকার মূলনীতি ও এমনকি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যতা না থাকায় এ সুপারিশ বিবেচনায় না নিয়ে বাতিল করা। ২. অনতিবিলম্বে এ কমিটি ভেঙে বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ এবং সংবিধান সম্মত সব নাগরিকের সমান অধিকার, সমতা, ন্যায্যতা ও বৈচিত্র্যতার প্রতি সত্যিকার শ্রদ্ধাশীল এবং সংবেদনশীল ব্যক্তি, নারী, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ- এমন ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা। ৩. ‘শরীফ থেকে শরীফার গল্প’ বাদ না দিয়ে ভুল বা অসঙ্গতি থাকলে নতুন কমিটির মাধ্যমে সংশোধন করে, আরও যুগোপযোগী করে পুনঃপ্রকাশ করা।
৩ ঘণ্টা আগে

এখানে না এলে এই ভালোবাসা অনুভব করা হতো না
অভিনেত্রী তারিন জাহান। চার দশকের বেশি সময় ধরে দেশের ইন্ডাস্ট্রিতে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি। গত বছর হৃদি হকের ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক তার। এ বছরের ২৬ এপ্রিল ‘এটা আমাদের গল্প’ সিনেমা দিয়ে কলকাতায় অভিষেক হয় তার। মানসী সিনহার পরিচালনায় সিনেমায় বাংলাদেশের মেয়ে ‘মিসেস বসু’ চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তারিন। কলকাতা থেকে মোবাইল ফোনে সিনেমার সফলতা ও কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন এ অভিনেত্রী। লিখেছেন মহিউদ্দীন মাহি কালবেলা: টালিগঞ্জে ‘এটা আমাদের গল্প’ সিনেমা দিয়ে অভিষেক হয়ে গেল আপনার। সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কেমন উপভোগ করছেন? তারিন: এটি আসলেই চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা, পাশাপাশি আমার জন্য আবেগের। এমন ভালোবাসা সত্যি আমাকে অভিভূত করছে। এ সিনেমার শুটিং শুরু হয় কভিডের আগে। এমন একটি গল্পে নির্মাতা মানসীদি আমাকে তার প্রথম সিনেমায় কাস্ট করেছেন। এজন্য আমি আসলেই গর্বিত ও আনন্দিত। এখন দর্শকের ভালোবাসায় তা দ্বিগুণ বেড়েছে। কালবেলা: পরপর দুটি সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হচ্ছেন। যার দুটিই নারী নির্মাতার সিনেমা। বিষয়টি কেমন লাগছে? তারিন: এটি আসলেই গর্বের বিষয়। বলতে গেলে আমি সত্যিই ভাগ্যবান। মজার বিষয় হলো, তাদের দুজনেরই প্রথম সিনেমায় আমি অভিনয় করেছি। দুটি কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আমি একটি কথাই বলতে চাই—মেয়েরা এখন আর পিছিয়ে নেই। তারাও যে দক্ষ, তার প্রমাণই এ দুটি সিনেমা। কারণ হৃদির সিনেমাটি আমি যখন প্রথম করি এবং বড় পর্দায় সেটি যখন মুক্তি পায়, সবার প্রশংসায় আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম। ভালো লাগছিল; সরকারি অনুদানের সিনেমা নিয়ে দর্শকের এমন চাহিদা আসলেই প্রশংসার। কারণ এর আগে সরকারি অনুদানের সিনেমা মানেই দর্শকের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ছিল নিয়মিত ঘটনা। এ সিনেমাটি সেই প্রথা ভেঙে দেশ ও দেশের বাইরে প্রশংসিত হচ্ছে। এরপর মানসীদির ‘এটা আমাদের গল্প’ মুক্তি পেল, যা কলকাতায় দর্শক চাহিদায় এখন রয়েছে সবার ওপরে। অনেক হলো মালিক সিনেমাটি নেওয়ার জন্য নিয়মিত যোগাযোগ করছে বলেও জেনেছি। সবকিছু মিলিয়ে দুর্দান্ত লাগছে। কালবেলা: এ সিনেমাটি নির্বাচনের কারণ কী? তারিন: অবশ্যই এর গল্প। কারণ আমার কাছে যখন গল্পটি আসে তখনো আমি জানতাম না, সিনেমায় কারা অভিনয় করছেন। আমি শুধু গল্প ও চরিত্র দেখেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর জানলাম সিনেমার কাস্টিং আরও দুর্দান্ত হয়েছে। কালবেলা: বর্তমানে কলকাতায় আছেন, সেখানে নিয়মিত হল ভিজিট করছেন, যার ছবি আমরা আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি। এই অভিজ্ঞতা জানতে চাই... তারিন: এরই মধ্যে আমাদের সিনেমার শো বেড়েছে। এ সপ্তাহে কলকাতায় আরও ১০টি শো বেড়েছে। তাই এখানে নিয়মিতই আমি হল ভিজিটে যাই। যেই অভিজ্ঞতা আমার অভিনয় জীবনের স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ এ গরমে দর্শক যেভাবে সিনেমাটি দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন, তা আসলেই আনন্দের। এর মধ্যে দুটি অভিজ্ঞতার কথা বলি; আমাদের এ সিনেমা দেখতে চেন্নাই থেকে বিমানে করে দর্শক এসেছেন কলকাতায়। যার সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার পর তার অনুভূতি শুনে আমি ইমোশনাল হয়ে পড়ি। এরপর আমাদের স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ের আগে জানতে পারি সেখানে বৃদ্ধাশ্রম থেকে ৫০ জন নারী এসেছেন আমাদের ছবি দেখতে। যারা শো শেষ হওয়ার পর অশ্রু মুছতে-মুছতে বের হয়েছেন। এ মুহূর্তগুলোই একজন শিল্পীর জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা। এর চেয়ে বেশি আর কী চাই একজন শিল্পীর। এখানে এসে আমার হৃদয় জুড়িয়ে গেছে। কালবেলা: আপনার কাছে কোনো কাজে যুক্ত হওয়ার প্রধান কারণ কী? তারিন: আমি যে কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে সেটির গল্প দেখি। কোন চরিত্রে অভিনয় করছি সেটি নিয়ে আমার কখনোই চাহিদা ছিল না। মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের চেয়ে গল্পটাই আমার কাছে বেশি প্রাধান্য পায়। কালবেলা: হলে দর্শক আসছে না। এমন একটি অভিযোগ অনেক দিন ধরেই ঢাকাই সিনেমায় করা হচ্ছে। এর সঙ্গে কি আপনি একমত? তারিন: নাহ। আমিও কখনোই এ অভিযোগের সঙ্গে একমত নই। দর্শকের ঘাড়ে দোষ দেওয়ার আগে আমি একটা কথা বলতে চাই—ভালো গল্প পেলে অবশ্যই হলে দর্শক যাবে। যেটির প্রমাণ বেশ কিছু সিনেমা এরই মধ্যে দিয়েছে। আমি যদি আমার দুটি সিনেমার কথা বলি, তাহলে এ দুটি সিনেমাই তার প্রমাণ। কালবেলা: কলকাতায় নতুন সিনেমার অফার আসছে? তারিন: হ্যাঁ, নতুন কিছু সিনেমায় কাজের অফার পাচ্ছি। কথা হচ্ছে। সেগুলো কনফার্ম হলেই সবাইকে জানানো হবে। কালবেলা: বুম্বাদার (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে আপনার ছবি দেখলাম। তার সঙ্গে কি কথোপকথন হয়েছে? তারিন: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় দুই বাংলার কিংবদন্তি। তাকে চেনেন না এমন সিনেমাপ্রেমী নেই বললেই চলে। তিনি নিজে থেকে আমাদের সিনেমাটি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং আমার অভিনয় নিয়ে কথা বলেছেন। সবকিছুর খোঁজখবর নিয়েছেন। কালবেলা: শেষ প্রশ্ন—কলকাতার দর্শক কি তারিনকে চিনতে পেরেছেন? তারিন: তারা আমাকে আগে থেকেই চিনতেন। কারণ পশ্চিম বাংলায় আমাদের দেশের নাটকের অসংখ্য ভক্ত রয়েছে। যারা নিয়মিত বাংলাদেশের নাটক দেখেন। তাদের মধ্যে একজনের আমার সঙ্গে দেখাও হয়েছে। এক নারী তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন সিনেমা দেখতে। তিনি আমার নাটক আগে দেখেছেন, তাই সিনেমাটি দেখতে এসেছেন। এমন অসংখ্য দর্শকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে এখানে না এলে এমন ভালোবাসা বুঝতাম না।
১৮ মে, ২০২৪

পাঠ্যবই থেকে শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই থেকে আলোচিত শরীফ-শরীফার গল্প বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে কমিটির সদস্যরা গল্পে ব্যবহৃত ১৯টি শব্দ ‘ইসলাম ধর্ম’ ও ‘বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা’র সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মত দিয়েছেন। তার পরিবর্তে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নিয়ে মানবিক গল্প পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত করার সুপারিশ করেছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষজ্ঞ কমিটির এক সদস্য কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির ওই গল্পের ১৯টি শব্দ নিয়ে কমিটির কয়েক সদস্য আপত্তি তুলেছেন। আবার ওই শব্দগুলো বাদ দিলে গল্পই থাকে না। সেজন্য গল্পটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর পরিবর্তে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকারের বিষয়ে সচেতন করতে মানবিক গল্প সংযুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কমিটির কেউই সরাসরি গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি। কমিটির প্রধান ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুর রশীদ কালবেলাকে বলেন, আমরা প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখানে কী সুপারিশ করা হয়েছে, তা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রশীদ বলেন, প্রতিবেদনে কী কী সুপারিশ করা হয়েছে, তা মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। সুপারিশের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার কালবেলাকে বলেন, আমরা শরীফার গল্পের লাইন বাই লাইন পড়েছি। সেখানে কী কী অসংগতি রয়েছে, সেগুলো দেখেছি। এরপর সেখানে কী কী সংশোধনী আনা যায়, তা সুপারিশ করেছি। সরকার এখন বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে, এটুকু জানি। তবে প্রতিবেদনে কী আছে, তা আমার জানা নেই। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের যে নির্দেশনা দেওয়া হবে, আমরা শুধু তা বাস্তবায়ন করব। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নতুন শিক্ষাক্রমের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা অধ্যায়ের ‘শরিফার গল্প’ নামের গল্পটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এরপর ২৫ জানুয়ারি বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঁচ সদস্যে এ কমিটিতে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুর রশীদকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক অধ্যাপক আবদুল হালিম এবং ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ।
১৭ মে, ২০২৪

‘শরীফ থেকে শরীফার’ গল্প বাদ দিতে সুপারিশ
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই থেকে আলোচিত শরীফার গল্প বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে কমিটির সদস্যরা গল্পে ব্যবহৃত ১৯টি শব্দ ‘ইসলাম ধর্ম’ ও ‘বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার’ সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মত দিয়েছেন। তার পরিবর্তে হিজড়া জনগোষ্ঠীদের নিয়ে মানবিক গল্প পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত করার সুপারিশ করেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাতে বিশেষজ্ঞ কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির ওই গল্পের ১৯টি শব্দ নিয়ে কমিটির কয়েকজন সদস্য আপত্তি তুলেছেন। আবার ওই শব্দগুলো বাদ দিলে গল্পই থাকে না। সেজন্য গল্পটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এর পরিবর্তে হিজড়াদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন করতে মানবিক গল্প সংযুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কমিটির কেউই সরাসরি গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি। কমিটির প্রধান ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদ কালবেলাকে বলেন, আমরা প্রতিবেদন তৈরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখানে কি সুপারিশ করা হয়েছে, তা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন।  জানতে চাইলে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রশীদ কালবেলাকে বলেন, ‘প্রতিবেদনে কী কী সুপারিশ করা হয়েছে তা মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। সুপারিশের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।  এ বিষয়ে জানতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি কল কেটে দেন।   তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার কালবেলাকে বলেন, আমরা শরীফার গল্পের লাইন বাই লাইন পড়েছি। সেখানে কী কী অসংগতি রয়েছে, সেগুলো দেখেছি। এরপর সেখানে কী কী সংশোধনী আনা যায় তা সুপারিশ করেছি। সরকার এখন বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।  এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে, এটুকু জানি। কিন্তু প্রতিবেদনে কী আছে তা আমার জানা নেই। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের যে নির্দেশনা দেওয়া হবে, আমরা শুধু তা বাস্তবায়ন করব।  বিষয়টি সম্পর্কে জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।  নতুন শিক্ষাক্রমের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা অধ্যায়ের ‘শরিফার গল্প’ নামের গল্পটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে গত ২৫ জানুয়ারি বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঁচ সদস্যে এই কমিটিতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুর রশীদকে আহ্বায়ক করা হয়ে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক অধ্যাপক আবদুল হালিম এবং ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ।      
১৬ মে, ২০২৪

প্রীতির পুরোনো প্রেমের গল্প
বলিউডের মিষ্টি হাসির অধিকারী জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা। ক্যারিয়ারে অসংখ্য হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। লাস্যময়ী হাসি এবং নিজের অভিনয় গুণে খুব অল্প সময়েই দর্শকের মনে জায়গা করে নেন এই অভিনেত্রী। তবে এখন আর পর্দায় নিয়মিত নন তিনি। ব্যস্ত আছেন ব্যবসা ও পরিবার নিয়ে। এর মধ্যেই সামনে এলো তার পুরোনো প্রেমের গল্প। অভিনেত্রী ও মডেল সুচিত্রা পিল্লাই সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানালেন তার স্বামী লার্স কেজেল্ডসেনের সঙ্গে প্রেম ছিল প্রীতির। খবর : কুইমুই ঘটনা ২০০১ সালের রোমান্টিক, কমেডি ধাঁচের সিনেমা দিল চাতাহের সময়কার। এ সিনেমায় কাজ করতে যেয়ে প্রীতির প্রেম হয় অভিনেতা লার্স কেজেল্ডসেনের সঙ্গে। এরপর এ অভিনেতাকে ২০০৫ সালে বিয়ে করেন অভিনেত্রী সুচিত্রা পিল্লাই। এতদিন পর নিজের স্বামীর সাবেক প্রেমিকা নিয়ে মুখ খুললেন তিনি। সুচিত্রা বলনে, ‘প্রীতি জিনতা এবং আমি কখনোই বন্ধু ছিলাম না। আমাদের একজন কমন বন্ধুর কারণে পরিচিত ছিলাম। তবে হ্যাঁ, তার সঙ্গে আমার স্বামী লার্স কেজেল্ডসেনের একসময় প্রেম ছিল। কিন্তু আমার সঙ্গে লার্সের দেখা হওয়ার আগেই তাদের সম্পর্ক ব্রেকআপ হয়ে যায়। যার কারণ কখনোই আমি ছিলাম না।’ বিষয়টি ভারতীয় সাংবাদিক সিদ্ধার্থ খান্নার একটি ইন্টারভিউতে এসে পরিষ্কার করেন এই অভিনেত্রী। বিরতি কাটিয়ে ফের বড় পর্দায় ফিরছেন প্রীতি জিনতা। আমির খানের প্রযোজনায় ‘লাহোর ১৯৪৭’ শিরোনামের সিনেমায় সানি দেওলের বিপরীতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন তিনি। আইপিএলের পরে শুরু হবে শুটিং।
১৪ মে, ২০২৪

মা দিবসে এক ফিলিস্তিনি মায়ের সংগ্রামের গল্প
বিশ্ব মা দিবস আজ। সারাবিশ্বে যখন এ দিবসটি ঘটা করে পালন করা হচ্ছে ঠিক তখনই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ফিলিস্তিনি মায়েরা। সন্তান হারানোর শঙ্কা প্রতি মুহূর্তেই তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। গাজার হাসপাতাল ও চিকিৎসাব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়ায় ভয়াবহ দুর্দশায় দিনানিপাত করছেন।  রাওয়ান্দ মুশতাহা নামের এক ফিলিস্তিনি মায়ের দুর্দশার গল্প তুলে এনেছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি।  তিনি গাজার পূর্বাঞ্চলের শহর শেজাইয়ার বাসিন্দা। তার অন্তঃসত্ত্বাকালীন গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরু হয়। তখন প্রাণভয়ে তিনি দক্ষিণ গাজায় পালিয়ে যান। যখন তার প্রসব বেদনার সময় হয় তখন তিনি খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ভর্তি হন।  মুশতাহা বলেন, হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে তেমন কোনো নার্স ছিল না। চিকিৎসকও হাতেগোনা কয়েকজন ছিলেন। এছাড়া ওষুধে চলছিল চরম হাহাকার। অপারেশনের সময় সাধারণ অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়ার কথা ছিল। তবে চিকিৎসাসামগ্রী সংকটের কারণে সেটি দেওয়া যায়নি। ফলে আংশিক অ্যানেসথেশিয়া দিয়েই তার সিজার করা হয়। একে একে তিনটি সন্তান জন্ম দেন তিনি।  তিনি বলেন, আমি হাসপাতালের বেডে শুয়েই শুনলাম আমার শাশুড়ি, দুই বোন এবং স্বামীর পরিবারের অন্তত ৫০ জন ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন।   আনাদোলু জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় মুশতাহার বাড়িও ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে তার আর কোনো ঠিকানা নেই। এমনকি স্বামী বেঁচে আছে কিনা তাও তখনো তার জানা নেই। চারদিকে এমন অনিশ্চতার মাঝে তার চিন্তা কেবল সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখা। মৃত দাদি আর খালাদের নামে সন্তানদের নাম রাখেন তিনি।  এরপর আরও ভয়াবহ জীবন শুরু হয় মুশতাহার। কেননা ইসরায়েলি বাহিনী এবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলেও হামলা শুরু করেছে। তিন নবজাতককে নিয়ে কোথায় যাবেন এমন স্বপ্নে যখন তিনি বিভোর তখন তার স্বামী তার খোঁজে খান ইউনিসে চলে আসেন। স্বামীকে ফিরে পেয়ে বাঁধভাঙ্গা কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কেননা ইসরায়েলি হামলায় স্বামী মারা গেছেন বলেই ভেবেছিলেন তিনি। ফলে স্বপ্নেও ভাবেননি যে তিনি স্বামীকে ফিরে পাবেন।  মুশতাহা জানান, স্বামী আর সন্তানদের নিয়ে তিনি দেইর আল বালাহ শহরে পালিয়ে যান। সেখানে একটি তাঁবুতে আশ্রয় নেন তারা। কিন্তু চারদিকে খাবারের হাহাকার। নিজেরা কি খাবেন আর সন্তানদের কি খাওয়াবেন তা নিয়ে শুরু হয় আরেক সংগ্রাম।  ফিলিস্তিনি মা জানান, এখানে খাবার নেই, পানিও নেই। নিজের খেতে পাই না বলে বাচ্চারাও ঠিকঠাক দুধ পায় না। বাজার থেকে দুধ কিনে খাওয়াবেন এমন অবস্থাও নেই। তাঁবুতে রাতের বেলা ভয়ানক ঠান্ডা আর দিনের বেলা প্রচণ্ড গরম। এতে করে বাচ্চারা প্রতিদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি জানান, আমি মনে হয় ওদের বাঁচাতে পারব না।  মুশতাহা এখনো  জানেন না যে, আদৌ তিনি নিজের জন্মভিটায় ফিরে যেতে পারবেন কি না। তার মতো লাখ লাখ ফিলিস্তিনি মা কঠিন দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউয়ের তথ্যমতে, গাজায় অন্তত এক লাখ ৫৫ হাজার অন্তঃসত্ত্বা পানিশূন্যতায় ভুগছেন।   
১২ মে, ২০২৪

কৃতির নতুন গল্প
বলিউডের ব্যস্ত অভিনেত্রী কৃতি শ্যানন। ভিন্ন ভিন্ন গল্পে নিজেকে বিভিন্ন চরিত্রে এরই মধ্যে উপস্থাপন করেছেন এই গ্ল্যামার নায়িকা। এবার নতুন আরেকটি সিনেমায় নাম লিখেয়েছেন তিনি। সিনেমার শিরোনাম দু পাতি। এটি পরিচালনা করবেন শশাঙ্ক চতুর্বেদী। এর গল্প লিখেছেন কণিকা ধিলোন। খবর : ফিল্মি বিট সিনেমার কাজ এখনো শুরু হয়নি। শুটিং জুলাইতে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। গল্পের প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করবেন অভিনেত্রী কাজল ও কৃতি শ্যানন। নিজের নতুন সিনেমা নিয়ে কৃতি বলেন, ‘দর্শক এরই মধ্যে আমাকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে দেখেছেন। তবে এ সিনেমায় আমি যে চরিত্রে অভিনয় করছি, সে চরিত্রে আগে কখনো দেখেনি। সম্পূর্ণ নতুন একটি চরিত্রে আমি এবার পর্দায় হাজির হবো।’ এটি বড় পর্দায় নয় মুক্তি পাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে। তবে মুক্তির তারিখ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। কৃতিকে সবশেষ দেখা গিয়েছিল তেরি বাতো ম্যায় অ্যায়সা উঝা জিয়া সিনেমায়। শাহিদ কাপুরের বিপরীতে প্রথমবার অভিনয় করেন তিনি। সিনেমাটি বক্স অফিসেও ব্যাপক সাড়া ফেলে। এ ছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে এক ডজন সিনেমা।
১২ মে, ২০২৪

গজারিয়া গণহত্যা / এক বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিশোধের গল্প
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। রমনা রেসকোর্স ময়দানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে বক্তব্য অনুপ্রাণিত করেছিল দেশের মানুষকে। ব্যতিক্রম ঘটেনি আব্দুল খালেক আলোর সঙ্গেও। অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তিনিও। শেষ পর্যন্ত সেই বক্তব্য আব্দুল খালেককে যুদ্ধের মাঠে ডেকে নিয়েছিল। ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের নামে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার পর স্বাধীনতার সংগ্রামে যোগ দিতে নিজ গ্রামে গিয়ে লড়াইয়ের জন্য স্থানীয়দের জড়ো করতে শুরু করেন তিনি। মার্চ মাসের শেষের দিকে গ্রামে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক। সে সময় তার ডাকে সারা দিয়েছিলেন অনেকেই। যুদ্ধক্ষেত্রে অপারেশনের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি।  এ সময় তিনি ‘আলোর দিশারী’ নামে একটি স্কুল গড়ে তোলেন এবং  ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করেন। যেখানে লড়াইয়ে যোগ দিতে ইচ্ছুক এমন ২০০ জনেরও বেশি যুবক ও বয়স্ক লোক জড়ো হয়েছিলেন।  এই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে উৎসাহ দেওয়া। এ ছাড়া অস্ত্র সম্পর্কেও প্রাথমিক তথ্য শেখানো হয়েছিল। গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার ওয়ালী উল্লাহ জমাদ্দার ছিলেন তাদের প্রধান প্রশিক্ষক।  আলোর সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন এবং বড় ভাই আব্দুর রউফ (যিনি তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন)। তাদের সঙ্গে মে মাসের প্রথম দিকেই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে তাদের ওপর হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হামলা হয়। গজারিয়ার তৎকালীন শান্তি কমিটির সদস্য খোকা চৌধুরী এবং এলাকার চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহফুজুল্লাহ তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে রিপোর্ট করেছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ৯ মে গজারিয়ায় হামলা চালানো হয়েছিল। সেদিন সকাল ৬টার মধ্যেই সোনালি মার্কেট এলাকায় রাস্তার ওপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ছাত্র-কৃষক, মুক্তিযোদ্ধাসহ ১১০ জনকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত আক্রান্ত গ্রামগুলোকে থেকে খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয় মোট ৩৬০ জনকে। কাফনের কাপড়ের অভাবে কলাপাতা আর পুরোনো কাপড় পেঁচিয়ে নিহত স্বজনদের ১০টি গণকবরে দাফন করেছিলেন গ্রামবাসী। তবে পাকিস্তানি বাহিনী ওই দিন শুধু নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। সমানতালে ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ গ্রামবাসীদের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করেছিল।  তবে তাদের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক আলো এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘আলোর দিশারী স্কুল’। ওই এলাকার রাজাকার কালু মিয়া পাকিস্তানি বাহিনীকে সরাসরি স্কুলে নিয়ে গিয়েছিল। হামলায় গজারিয়া, নয়ানগর এবং গোসাইরচর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই এলাকাগুলোর প্রতিটি বাড়িতেই সেদিন অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু শান্তি কমিটির সদস্যদের কোনো ক্ষতি হয়নি। যখন সামরিক বাহিনী তাদের ওপর হামলা চালায়, গ্রামবাসী আবদুল খালেকের কাছে জানতে চেয়েছিল তারা কোথায় লুকাবে। পাকিস্তানি সেনারা সাঁতার কাটতে পারে না বলে তাদের নিকটবর্তী নদীর চরে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু বিপদের মুখে আব্দুল খালেক ভুলে গিয়েছিলেন হানাদার বাহিনীরা স্পিডবোটে এসেছে। আবদুল খালেকের সেই পরামর্শ মতে নদীর চরে যান গ্রামবাসীরা। যার ফলে সেই চরে থাকা পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে অনেক গ্রামবাসী প্রাণ হারায়। শুধু গ্রামবাসী না, ওই দিন প্রাণ হারান তার ছোট ভাই মোয়াজ্জেমসহ তার পাঁচ চাচাতো ভাই ও চাচা।  চরে গিয়ে পাক বাহিনী যখন নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছিল, তখন হতবাক হয়ে যান আব্দুল খালেক। তবে তাৎক্ষণিক একটি পরিকল্পনা তাকে আশার সঞ্চার করে। তিনি দৌড়ে যান গ্রামেরই অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্যের বাড়িতে। আব্দুল খালেক তাকে বলেন, ‘আপনার বন্দুকটি আমাকে দেন। আমি শুধু একটি গুলি করতে চাই, শত্রুপক্ষকে জানাতে চাই আমরা এদিকে অবস্থান করছি এবং গুলি চালাচ্ছি’। এই পরিকল্পনার কারণ ছিল অন্তত একটি গুলি করতে পারলেও পাকিস্তানিরা গুলির শব্দের উৎসের দিকে মনোযোগ দেবে। এতে অন্তত আধা ঘণ্টা সময় পেতেন গ্রামবাসীরা। যে সময়ের মধ্যে তারা নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু সেদিন ওই ব্যক্তি বন্দুকটি দেননি। নিরুপায় হয়ে খালের পানির কচুরিপানার নিচে আত্মগোপন করেন আব্দুল খালেক।  এ ঘটনার পরে সবাই সন্দেহ করেছিল আবদুল খালেককে। সবাই শুধু ফলাফল দেখেছিল, কিন্তু আব্দুল খালেকের পরামর্শের পেছনের যুক্তি-বিবেচনা সেদিন কেউ করেনি। সেদিন তার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কেউ দেখতে আসেনি।  এ ঘটনায় সব থেকে বেশি ব্যথিত হয়েছিলেন আব্দুল খালেক। এ বিষয়ে আব্দুল খালেক আলো বলেন, ‘একজন নেতা কখন মারা যায় জানেন? যখন তার লোকরাই তাকে এবং তার সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ করে। আমি খুব অসহায় বোধ করতাম কিন্তু তাদের অনুভূতি বুঝতে পারতাম তাই চুপ করে থাকতাম।’ এ সময় আমার মা একটি কথাই বললেন, ‘বাবারে তুই যুদ্ধে চলে যা। যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে হবে। প্রয়োজন হলে আমিও যুদ্ধে যাব।’ যুদ্ধ এবং প্রতিশোধ আব্দুল খালেক আশাহত হয়েছিলেন বটে, হয়েছিলেন নিরাশও। তবে ঘটনা এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। কারণ মানসিকভাবে ভীষণ দৃঢ় ছিলেন তিনি। ঘটনার দুদিন পরেই বড় ভাই রউফকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে যান তিনি। জুনের মাঝামাঝি ভারতের আগরতলায় পৌঁছান তিনি। মেজর হায়দারের নেতৃত্বে সেক্টর ২-এ যোগদানের আগে মেলাঘর ক্যাম্পে এবং পরে তোফাজল হোসেনের অধীনে হাতিমারায় প্রশিক্ষণ শুরু করেন তিনি। পরে গজারিয়ার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নিয়োগ করা হয় আবদুল খালেককে। ১৩ আগস্ট তিনি নিজ গ্রামে ফিরে আসেন, প্রতিশোধের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে । আবদুল খালেক বলেন, ১৪ আগস্ট ছিল পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস, তাই আমি গ্রেনেড দিয়ে গেরিলা হামলা চালিয়ে তাদের উদযাপন নষ্ট করার পরিকল্পনা করেছিলাম। তার ভাষ্য, ‘পাকিস্তানিরা আমাদের গ্রামের অনেক পুরুষ, আমার ভাই, আমার চাচা ও আত্মীয়কে হত্যা করেছে। তারা অন্তত আটজন নারী ও শিশুকে ধর্ষণ করেছে। এমনকি মসজিদের ভেতরও তারা এটা (ধর্ষণ) করেছে।’ যেহেতু আমাদের গ্রামটি নদী তীরবর্তী ছিল, তাই গেরিলারা পাকিস্তানিদের ওপর ভালোভাবে হামলা করতে পেরেছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিক একের পর এক আক্রমণ অব্যাহত রাখি।’ ‘এরইমধ্যে নভেম্বরের শেষ দিকে শান্তি কমিটির সদস্য খোকা চৌধুরীকে ধরতে সক্ষম হন মুক্তিযোদ্ধারা। তারপ্রতি সবাই এতটাই ক্ষুব্ধ ছিল যে তাকে ৮৩ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল,’ বলেন আবদুল খালেক। শান্তি কমিটির অন্যান্য সদস্য ছিলেন- শামসুদ্দিন, শ্যাম চৌধুরী, গফুর চৌধুরী এবং সৈয়দ মাহফুজুল্লাহ। খোকা চৌধুরীকে হত্যার পর তাদেরকে আর এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং সেই থেকেই তারা এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। ১৪ আগস্টের পরেও ক্রমাগত ছোট ছোট গেরিলা দলে ভাগ হয়ে হানাদারদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখেন মুক্তিযোদ্ধারা। তবে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের ওপর কঠিন আঘাত হানা হয়। মরণপণ যুদ্ধের পর সেদিন বিকেলে ৬০ জনেরও বেশি সেনা সদস্য মেঘনা নদীর পাশে তৎকালীন গজারিয়া থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।  আরও অর্জন রয়েছে আবদুল খালেকের। তিনি জানিয়েছেন, মুক্ত গজারিয়ায় প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন তিনি। যার ফলে শুধু মুক্তিযোদ্ধারাই নয়, স্থানীয়রাও তাকে অভ্যর্থনা জানাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গর্বিত হাসি হেসে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘আমি তখন বুঝতে পারি গজারিয়ার জন্য আমি স্বাধীনতা পেয়েছি, আমার স্বপ্ন পূরণ করেছি এবং আমার সম্মানও ফিরে পেয়েছি।’
০৯ মে, ২০২৪

ড. সজল চৌধুরীর নিবন্ধ / একটি ভবিষ্যৎ স্মার্ট গ্রামের গল্প
ধরে নেওয়া যাক আজ থেকে দশ বছর পরের একটি গ্রামের গল্প এটি। যে গল্পটির নাম ‘একটি ভবিষ্যৎ স্মার্ট গ্রামের গল্প’! যে গ্রামে সব মানুষের সঙ্গে সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তির মেলবন্ধনের মাধ্যমে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। গ্রামটি প্রযুক্তির ব্যবহার করে জনগণের জীবন এবং জীবিকার মান নতুন পর্যায়ে উপস্থিত হয়েছে সবার কাছে। সব সদস্য তাদের জীবনের বিভিন্ন দিক স্থানীয় টেকনোলজিকে ব্যবহার করে উন্নতি করতে পারে। এ স্মার্ট গ্রামের সব সদস্যের একটি করে ডিজিটাল প্রোফাইল আছে যেখানে তারা তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আর্থিক অবস্থাসহ জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য সমন্বয় করতে পারে। তারা তাদের স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে গ্রাম এবং নিজেদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতে পারে। এই স্মার্ট গ্রামে খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে সংরক্ষণের জন্য এমন কিছু স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা জৈব কৃষি এবং পরিবেশ নিশ্চিত করবে। উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত এ গ্রামের সবাই শহরের সঙ্গে প্রয়োজনে একটি ডিজিটাল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদন এবং পরিবেশনার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে। এ গ্রামের মাধ্যমে গ্রামীণ অবস্থানে নিজস্ব সক্ষমতা বিকাশ করতে এবং তাদের পরিবেশের উন্নতির জন্য প্রযুক্তির উপযোগী একটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে গ্রাম পরিষদ, সরকার এবং প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সম্পর্ক রয়েছে। গ্রামের প্রত্যেকটি স্কুলে শিক্ষার্থীরা যেন শহরের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পায়, এজন্য এখানে এমন ভার্চুয়াল এনভারমেন্ট তৈরি করা হয়েছে যেন শহরের কিংবা দেশ-বিদেশের বিখ্যাত শিক্ষকরাও ভার্চুয়াল এনভায়রনমেন্টের মাধ্যমে গ্রামের একটি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে ছাত্রছাত্রীদের সামনে তাদের শিক্ষা পরিবেশন করবে। স্কুল এবং হাসপাতালে ইন্টারনেট ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থী এবং রোগীরা পরামর্শ ও পরিচিতি পান। গ্রামটিতে প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় তথ্য সহজেই অ্যাকসেস করা যায়। এখানে বিভিন্ন সেবা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। স্মার্ট গ্রামে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে গ্রামের মানুষের জীবন সহজ এবং সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। এ গ্রামে জনগণের সঙ্গে ইন্টারেকটিভ যোগাযোগমাধ্যমের সমন্বয় করা হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা এর আগে ইন্টারনেটের অভাবে হয়তোবা অসন্তুষ্ট ছিলেন কিন্তু বর্তমানে তারা সবাই প্রয়োজনের ভিত্তিতে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে জীবনযাপনের ও প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত হতে পেরেছে। তার একটি উদাহরণ হলো সাহায্যকারী রোবট। এ রোবটগুলো গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে এবং তাদের প্রতিদিনের কাজে সাহায্য করতে পারে। এখানে কখনো বিদ্যুৎ যায় না। কারণ এ স্মার্ট গ্রামটির প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ এখানে উৎপন্ন হয়। এ ক্ষেত্রে তারা সৌরশক্তিকেও ব্যবহার করেছে। শুধু তাই নয়, নিজ গৃহে নয়—এ গ্রামে যে গভীর ও অগভীর জলাশয়গুলো আছে সেই জলাশয়ের ওপরও সৌরশক্তি উৎপাদনের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। এমনকি এ গ্রামের প্রত্যেকটি ঘরে স্মার্ট মিটার রয়েছে। যার মাধ্যমে তারা ঘরবাড়িতে কতটুকু বিদ্যুতের প্রয়োজন, কতটুকু বিদ্যুৎ মজুত রয়েছে এবং সৌরশক্তিকে কীভাবে দিনের বিভিন্ন সময় আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়, পরিবেশের তারতম্য অনুসারে সেগুলোর অ্যাপ্লিকেশন এবং দিকনির্দেশনা রয়েছে। যার মাধ্যমে তারা খুব সহজেই শুধু নিজের ঘরের জন্য নয়, পুরো গ্রামের জন্য বিদ্যুৎ সঞ্চয় করতে পারে। গ্রামটির খামারগুলোতে এমন কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে খামারগুলোর অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সেখানকার পশুপাখির চাহিদা অনুযায়ী আপনাআপনিই পরিবর্তিত হয়। গ্রামটির প্রতিটি স্থাপনায় যেন গ্রামের নিজস্ব কৃষ্টি এবং কালচারের ছাপ রয়েছে। প্রতিটি স্থাপনা তৈরির উপকরণগুলো গ্রামটির নিজস্ব চিত্র বহন করবে। বৈচিত্র্যের দিক থেকে প্রত্যেকটি স্থাপনায় আধুনিকতার ছায়া রয়েছে। গ্রামটির মধ্যে সাধারণরা পায়ে হাঁটার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে দৈনন্দিন জীবনের সব চাহিদা পূরণ করতে পারে যেমন—চিকিৎসাসেবা, শিক্ষাসেবা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি। এমন অনেক অসাধারণ গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেই স্মার্ট গ্রামটিতে যার আরও গল্প হয়তো পরে করা যাবে। এবার একটু বর্তমানে ফিরে আসি। আমরা আজ যে স্মার্ট গ্রাম উন্নয়নের কথা বলছি সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন আজ থেকে বহু বছর আগে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তানাকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে যমুনা বহুমুখী সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু) নির্মাণের স্বপ্নের কথা প্রথম সূচনা করেন, যা শুধু যাতায়াতের জন্য নয়, নদীর দুই প্রান্তের গ্রামগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মেলবন্ধনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গ্রাম ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের জন্য তিনি প্রাথমিকভাবে ৫০০ ডাক্তারকে গ্রামে নিয়োগ করেছিলেন যেন শহর আর গ্রামের স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য নিরসন হয়। এমনকি দেশের পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা এবং ধারণ ও সমৃদ্ধির জন্য তিনি গঠন করেছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আমরা সত্যি আশান্বিত হই প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশের গ্রামগুলোর উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। স্মার্ট গ্রাম উন্নয়নকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিবেচনা করছেন। বঙ্গবন্ধুর ১৯৭২ সালের জুন মাসের এক ভাষণে বলেছিলেন দেশের প্রত্যেকটি মানুষ যেন খেতে পারে, আশ্রয় পাবে…। বলেছিলেন প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবনের অধিকারী হবে। আর এটি ছিল তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রধান লক্ষ্য। তার বিভিন্ন বক্তৃতায় উঠে আসে গ্রামের পরিবেশ, কৃষি, প্রকৃতি, আর সেইসঙ্গে কৃষকের কথা। নিজস্ব সংস্কৃতি, স্থাপত্য ও পরিকল্পনাকে বুঝতে হলে প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনার সমন্বয় এবং সেগুলোকে সঠিক পন্থায় অনুধাবন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বক্তৃতার মধ্যে এভাবেই বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনে তার মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি সর্বস্তরের বৃক্ষরোপণের ডাক দিয়েছিলেন, উপকূলীয় বনায়ন করেছিলেন, বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন প্রণয়ন করেছিলেন, জলাভূমি রক্ষার রূপরেখা প্রণয়ন করে বহুমুখী কর্মকাণ্ড করেছিলেন, যা ছিল সুস্থ সমাজ এবং পরিবেশবান্ধব সমাজব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যখন রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের সর্বত্রই তখন ছিল ধ্বংসলীলা। বাঙালির খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, কৃষির উৎপাদন এমনকি পুনর্বাসনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে তিনি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন এবং দেশের সার্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে দুর্ভিক্ষকে প্রতিহত করেছিলেন। প্রাথমিক সংকটগুলোকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। কলকারখানার উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো সম্ভব, পুনর্বাসনের ব্যবস্থাপনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কেমন রূপ ধারণ করবে এসব বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ চিন্তা ও বিশ্লেষণ তার কর্মধারার মধ্যে বিশদভাবে ছিল। তিনি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। যার লক্ষ্যগুলো ছিল মূলত দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান, আর্থিক উন্নয়ন, পণ্যের চাহিদা, কৃষির প্রাতিষ্ঠানিক এবং প্রযুক্তিগত কাঠামোতে সমসাময়িক রূপান্তর ইত্যাদি। এমনকি তার ভাবনার মধ্যে ছিল দেশের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং কৃষিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। সেইসঙ্গে আরেকটি বিষয় ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা হলো শ্রমশক্তির শহরমুখী অভিবাসন বন্ধ করা, যা বর্তমানে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের শহরগুলোকে নিয়ে ভাবছি। বর্তমানে আমরা শহর ও গ্রামের টেকসই উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। বিভিন্ন সভা-সেমিনার করছি। লেখালেখি করছি। নতুন পরিকল্পনা করছি। নতুনভাবে নগর এবং শহরের প্রস্তাবনা করছি। সেতু, ভবন, কারখানা এককথায় নগরায়ণ শিল্পায়ন এবং উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের কথা ভাবছি। কিন্তু যে বিষয়টিকে এখানে গুরুত্বারোপ করছি সেটি হলো আমাদের এই স্মার্ট-টেকসই উন্নয়নের ধরন কেমন হবে কিংবা গ্রাম-নগরায়ণ-শিল্পায়ন কেমন হবে সেসব বিষয় যদি বঙ্গবন্ধুর দর্শন থেকে আরও নিবিড়ভাবে নেওয়া যেত গবেষণার মাধ্যমে তাহলে হয়তো টেকসই উন্নয়নের আরও একটি ধাপ স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা এগিয়ে নিতে পারতাম। তাদের ভাবনা এবং চিন্তার জায়গাগুলোকে আরও স্পষ্টভাবে স্থাপত্য, প্রকৌশল আর নগরায়ণের দিক থেকে বিশদভাবে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কোনো পরিকল্পনা করা সম্ভব হলে হয়তো দেশের চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের জন্য বিরাট একটি প্রাপ্তি হতো। কী তার নগরায়ণ, গ্রামোন্নয়নের অথবা শিল্পায়নের ভাবনা? এ সম্পর্কে আরও বিশদ পরিকল্পিত গবেষণার প্রয়োজন অবশ্যই। এজন্য প্রয়োজন একটি স্বতন্ত্র জাতীয় ‘বঙ্গবন্ধু গ্রাম ও নগর উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র’ কিংবা প্রতিষ্ঠান, যেখানে শুধু বাস্তবায়িত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ। লেখক: স্থপতি, শিক্ষক ও স্থাপত্য পরিবেশবিষয়ক গবেষক
০২ এপ্রিল, ২০২৪
X