‘যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও প্রশংসা অর্জন করেছে’
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার আজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও প্রশংসা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু সরকার একাত্তরের গণহত্যাকারী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু পঁচাত্তরের পর অবৈধ সামরিক সরকার এ বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক দালালদের দলগুলোকে রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে এবং শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ও কার্যকর করে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার আজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও প্রশংসা অর্জন করেছে। শনিবার (১৮ মে) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক সমাজ গড়ে তুলুন- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৮ম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সক্রিয় উপদেষ্টা ছিলাম। আমার বুকের মধ্যে লালিত স্বাধীনতার চেতনা থেকে কখনো বিচ্যুত হতে পারব না ।    তিনি আরও বলেন, নির্মূল কমিটির ৮ম জাতীয় সম্মেলনে আমি অনেক প্রতিভাবান তরুণ মুখ দেখতে পাচ্ছি। তরুণদের প্রতি আমি আহ্বান জানাব, আপনারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ুন, বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও আদর্শ সম্পর্কে জানুন। আপনাদের মননে, বোধে, জীবনাচরণে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে লালন করুন। ডিজিটাল মাধ্যমকে আপনারা ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করুন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর দর্শন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার বোধকে আপনারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিন। বিশ্বের কাছে তুলে ধরুন বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সহনশীল ও মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আগামী দিনগুলোতেও ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সরকারের সহযোগিতা প্রদানের জন্য সংস্থাটি কাজ করছে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যে দাবি তুলেছিল, আমাদের রাষ্ট্রপতি তার নেতৃত্বে কমিশন গঠন করেছিলেন। নির্মূল কমিটি সে তদন্তে সহযোগিতা করেছিল। অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রপতিকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন শহীদ সন্তান শমী কায়সার ও আসিফ মুনীর। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন শহীদ সন্তান অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী।
১৭ ঘণ্টা আগে

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. বায়েজিদ সরোয়ারের নিবন্ধ / অশান্ত বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযান নিয়ে কিছু কথা
বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত অপরূপ এক ভূখণ্ড। জেলাটির পূর্বদিকে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৫টি পাহাড় শৃঙ্গ অবস্থিত। বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্গম এই অঞ্চলে বাস করে সবচেয়ে প্রান্তিক ও অনগ্রসর কয়েকটি ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠী। শান্তিচুক্তির (১৯৯৭) পর এই অঞ্চলের পাহাড়, হ্রদ, ঝরনা, অরণ্য, নদী পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু অক্টোবর-২০২২ এর পর থেকে সৌন্দর্যের লীলা ভূমি ও সম্প্রীতির বান্দরবানের বাতাসে এখন বারুদের গন্ধ। ‘কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ বা কেএনএফ ও এর সামরিক শাখা ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (কেএনএ)-এর কিছু বিপথগামী তরুণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও এর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় সবুজ পাহাড়ে আবার প্রবাহিত হচ্ছে হিংসার ঝরনাধারা।  দীর্ঘদিন ধরে রুমা উপজেলায় অবস্থিত ক্রেওক্রাডাং বাংলাদেশের উচ্চতম শৃঙ্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। দুঃখজনক হলো, এই ক্রেওক্রাডাংসহ বেশ কিছু উঁচু ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে বৈশাখের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মাঝেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীকে যৌথ অভিযান পরিচালনা করতে হচ্ছে। এই লেখায় মূলত বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানের কিছু বিষয়ে আলোকপাত করব।    কেএনএফের উত্থানের ফলে ২০২২ সাল থেকে বান্দরবান অশান্ত হয়ে ওঠে। তবে ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হলে পরিস্থিতি আপাত দৃষ্টিতে শান্ত ছিল। কিন্তু গত ২-৫ এপ্রিল ২০২৪ সময়কালে, কেএনএফের বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিশেষত ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ, অস্ত্র লুট ও থানায় গুলি বর্ষণ ইত্যাদি ফলে বান্দরবান এলাকার পরিস্থিতি একেবারে পাল্টে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে সংঘাতময় পরিস্থিতি। একই সঙ্গে পাহাড়ে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু দুর্বলতা ও দায়িত্বের শৈথিল্য আলোচনায় এসেছে। কেএনএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ব্যাপক প্রচার পেলেও এসবের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কাছে কেনএনএফ নতুন করে সন্ত্রাস ও আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। খোদ বম সম্প্রদায়ের মধ্যেও তাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়।  কেএনএফ এর বিরুদ্ধে পাহাড়ে ৩য় যৌথ অভিযান গত ৭ এপ্রিল থেকে বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে সেনাবাহিনীর সার্বিক নেতৃত্ব ও সমন্বয়ে কেএনএফের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনী এই অভিযানে অংশ নিয়েছে। উল্লেখ্য, গত দুই বছরে এটি কেএনএফের বিরুদ্ধে পরিচালিত ৩য় অভিযান। কেএনএফের বিরুদ্ধে নতুনভাবে গড়ে ওঠা ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়া’ নামে একটি উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এই পটভূমিতে ৯ অক্টোবর, ২০২২ থেকে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব বান্দরবানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। পরে সেনাবাহিনীর ওপর কেএনএফের আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের মে-জুন মাসে সেনাবাহিনী তথা নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছিল। সেই সময়ে রুমা অঞ্চলে কেএনএফের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ও আস্তানা ধ্বংসের সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছিল।  পাহাড়ে অদ্ভুত যুদ্ধ  দীর্ঘদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশনে’ (সিআইও) নিয়োজিত থাকায় বান্দরবানের বর্তমান অভিযানিক পরিবেশ পরিস্থিতি, বিশেষত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চ্যালেঞ্জগুলো উপলব্ধি, অনুমান করতে পারি। ‘কাউন্টার ইন্সারজেন্সি’ অদ্ভুত একটা যুদ্ধ। প্রচলিত যুদ্ধ সাধারণত বিদেশি আক্রমণের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। কিন্তু নিজ দেশের একটি এলাকার কিছু মানুষ বা জনগোষ্ঠী অস্ত্র তুলে নিয়ে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করলে (বিদ্রোহ/ইন্সারজেন্সি) তাদের দমনের জন্য ‘কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশন’ (সিআইও) বা ‘প্রতি-বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম’ পরিচালনা করা হয়। এই যুদ্ধের মূলমন্ত্র হলো- ‘জনগণের হৃদয় ও মন জয়’। শান্তিবাহিনীর ইমারজেন্সি (বিদ্রোহ) দমন বা মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা নিরাপত্তা বাহিনী ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল (শান্তিচুক্তির স্বাক্ষর) পর্যন্ত ‘সিআইও’ পরিচালনা করেছে। শান্তি চুক্তির পর (ইন্সারজেন্সি উত্তর পরিবেশে) পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছে। কিন্তু কেএনএফের সাম্প্রতিক সশস্ত্র কর্মকাণ্ড বান্দরবানের পূর্বাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রায় ‘সিআইও’-এর ভূমিকায় কাজ করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।  চলমান অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়। শান্তিচুক্তির পূর্বে পার্বত্য অঞ্চলে একটি কার্যকর অভিযানিক কাঠামো ছিল। বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায়, আগের মতো না হলেও একটি ‘ফাংশনাল কাঠামো’ তৈরি করা প্রয়োজন।  বাংলাদেশে বেশ কয়েক সপ্তাহব্যাপী অসহনীয় দাবদাহ চলছিল। বৈশাখের সেই প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে বান্দরবানের উঁচু দুর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সৈনিকরা বিপথগামী কেএনএফের তরুণদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছিল। যা এখনও চলমান। কেএনএফের হঠকারিতায় সীমান্তবর্তী উঁচু পাহাড়ের এক সময়ের শান্ত জনপদ যেমন ক্রেওক্রাডং, রামজুতাং, সিলোপিপাড়া, থিনদলপে, বাকলাই পাড়া, টেবিল হিল, সাইজাম পাড়া, রেমাক্রি প্রাংসা... এখন প্রায় অনাকাঙ্ক্ষিত রণাঙ্গনের অংশ।  চ্যালেঞ্জগুলো পাহাড়ের মতো উঁচু অভিযানরত সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সবচেয়ে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হলো : এলাকার সাধারণ গ্রামবাসী থেকে কেএনএফের সন্ত্রাসী/অস্ত্রধারীদের পৃথক করা ও সুনির্দিষ্টরূপে চিহ্নিত করা। এই ধরনের যুদ্ধে ইন্সারজেন্টরা (এখানে কেএনএফ) জনগণের মধ্যে মিশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে থাকে। তাদের পৃথক করা খুব কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে মাও সেতুং স্মর্তব্য : ‘মাছ যেমন পানিতে বিচরণ করে বেঁচে থাকে, গেরিলারাও জনগণের মাঝে বিচরণ করে তেমনি টিকে থাকে।’  ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ জনের মতো (মূলত বম জনগোষ্ঠীর) সন্দেহভাজন কেএনএফ সদস্য/ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীকে খুব ঠান্ডা মাথায়, ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে। এর জন্য পেশাদারত্বপূর্ণ মনোভাবের প্রয়োজন। কেএনএফের কয়েকজন নারী সদস্যকে অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শান্তিবাহিনীতে কোনো নারী সদস্য ছিল না। পাহাড়ের সংঘাতে এটি নতুন বাস্তবতা। নারীদের বিষয়গুলো বিশেষ সতর্কতা ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখা প্রয়োজন। কেএনএফের অস্ত্রধারীদের যেমন শাস্তি দিতে হবে, তেমনি নিরাপরাধ ব্যক্তিদের রক্ষা করতে হবে। চলমান অভিযানে নিরীহ কেউ যেন হেনস্তা না হয়। এই ধরনের পরিবেশে শত্রুতাবশত ভুল তথ্য দিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিকে ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও কিন্তু ঘটতে পারে। এটি নিছক অস্ত্র উদ্ধার অভিযান নয়। এটি বিশেষায়িত যুদ্ধ কৌশল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ ধরনের কৌশলে প্রশিক্ষণ ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে।  পাহাড়ে যত নতুন বাস্তবতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের রাজনৈতিক ও যুদ্ধের বাস্তবতা বদলে গেছে। সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীকে সেই বাস্তবতা মাথায় রেখেই কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। পাহাড়ে যাতায়াত ব্যবস্থা, মিডিয়ার বিস্তার, মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা, নতুন অস্ত্র ও প্রযুক্তি, নারী ইস্যু, পাহাড়ের মানুষের মনস্তত্ত্ব, নিরাপত্তা বাহিনীর মনস্তত্ত্ব ও সমানুপাতিক শক্তির ব্যবহার ইত্যাদি ফ্যাক্টর বিবেচনা করা দরকার। অভিযানিক ক্ষেত্রে এসবের প্রতিফলনও প্রয়োজন।  বম সম্প্রদায়ের ক্ষোভ দুঃখ ও কষ্টের সন্ধানে আটককৃত সন্দেহভাজন কেএনএফ সদস্যদের অপরাধের সঙ্গে সঙ্গে তাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার মোটিভেশন, বা উদ্বুদ্ধকরণ এর বিষয়টি জানা জরুরি। সংখ্যালঘু বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ, দুঃখ কষ্টের কথা সংখ্যাগরিষ্ঠরা অনেক সময় বুঝতেই পারে না।  বড়াদম ক্যাম্পটি রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ/লেকের একদম পাড়েই অবস্থিত ছিল। চারদিকে পাহাড় ও হ্রদের কি অপরূপ দৃশ্যাবলি। একদিকে অরণ্য শোভিত রামের পাহাড়, সীতার পাহাড়। অন্যদিকে কালা পাহাড়, বিলাইছড়ি পাহাড়, ফুরোমন পাহাড়...। তখন আমি (১৯৮৫) একজন তরুণ সেকেন্ড লেফটেন্ট্যান্ট। অবসর সময়ে মাঝেমধ্যে কাপ্তাই হ্রদে স্পিড বোটে বেড়াতাম। বয়সের কারণে তখন বুঝিনি, এই কাপ্তাই হ্রদের জলে হাজার হাজার বাঁধভাসি মানুষের চোখের জল মিশে আছে।  বম সম্প্রদায়ের (জনসংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার) মানুষের ক্ষোভ ও দুঃখের বিষয়গুলো জানা জরুরি। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এভাবে অস্ত্র তোলার মতো কী কী সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কারণ/মোটিভেশন রয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা ও বোঝা দরকার। বিদেশের কোনো শক্তি তাদের মদদ দিচ্ছে কি না এবং তারা অজান্তে কারও ‘প্রক্সি’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তাও গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।  সংঘাত বড় নয় তবুও সতর্কতা  বর্তমান কনফ্লিক্ট বা সংঘাতটি খুব বড় নয়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি/শান্তিবাহিনী অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত সামরিক- রাজনৈতিক দল ছিল। বাংলাদেশ তখন (১৯৭৬) মাত্র চার বছরের একটি শিশু রাষ্ট্র। সেই অস্থির সময়ে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি শক্তিশালী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের ধাক্কা সামাল দিয়েছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা নিরাপত্তা বাহিনী অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে সেই আন্দোলন মোকাবিলা করেছে। একজন তরুণ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে এই নিবন্ধকার শান্তিবাহিনী- সংগঠিত ইন্সারজেন্সি (বিদ্রোহের) প্রায় বসন্তকালে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে ঘটনাগুলো দেখেছেন। বিশেষত ২ টি কারণে, মূলত বম জনগোষ্ঠী ভিত্তিক কেএনএফের এই আন্দোলন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার: খ্রিস্টান ধর্ম ও জো জাতীয়তাবাদ।  কেএনএফের আন্দোলনে ‘খ্রিস্টান’ ধর্মের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। বমসহ কুকি-চিনের ৬টি সম্প্রদায়ের অধিকাংশই ‘খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী’। কেএনএফ এই বিষয়টি ইস্যু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের (বিশেষত পশ্চিমা জগৎ) দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবে। ইতোপূর্বে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত কেএনএফ সদস্যদের ‘খ্রিস্টান’ বলে প্রচারণা চালানো হয়েছে। কুকি-চিন-মিজো সমাজের ছোট একটি অংশ নিজেদের ‘বেনে মেনাশে’ নামে ইহুদি ঐতিহ্যের হারিয়ে যাওয়া একটি গোত্র হিসেবে মনে করে।  কেএনএফের বর্তমান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। কেএনএফের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হিসেবে প্রচারণা করার জন্য দেশে ও বিদেশে অনেক কুচক্রীমহল হয়ত উদগ্রীব। এটাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয়া উচিত না। বর্তমানে এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বসহ ‘‘কুপল্যান্ড প্ল্যান’’ ও ‘‘বৃহত্তর খ্রিষ্টান রাষ্ট্র’’-আলোচনায় আছে। মাউন্ট ভিক্টোরিয়ায় ফুটেছে অপরূপ রডোডেনড্রন ফুল:  কুকি, চিন ও মিজোরা নিজেদের একই এথনিসিটি, একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মানুষ বলে মনে করে। নৃতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা ওই জাতি গোষ্ঠীগুলোকে একত্রে ‘জো’ বলে অভিহিত করে থাকেন। এই নৃ-তাত্বিক সংযোগ ও মিলের জন্য মনিপুর, মিজোরাম ও চিন রাজ্যের ঘটনা প্রবাহ পার্বত্য চট্টগ্রামকে প্রভাবিত করতে পারে। জো’দের পারস্পরিক বন্ধনকে বিবেচনায় রাখা দরকার। কেএনএফ এর আকস্মিক উত্থানের পেছনে কেএনএফের দূর দূরান্তে থাকা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর অনুপ্রেরণা ও সহানুভূতি কতখানি আছে, তা জানা জরুরি।। আঞ্চলিক বাস্তবতা বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। পার্বত্য চট্টগ্রামে পার্শ্ববর্তী চিন, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মনিপুর, রাজ্যের রাজনৈতিক ঘটনাবলি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে জো জাতীয়তাবাদের ঢেউ ও চঞ্চলতা বোঝা প্রয়োজন।  ২০২২ এর জানুয়ারিতে চিন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চিনের এথনিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময়ে বাংলাদেশে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে একটি পত্রিকায় লিখেছিলাম ‘‘মাউন্ট ভিক্টোরিয়ার পার্কে এখন অপরূপ রডোডেনড্রন ফুল ফোটার সময়। কিন্তু এই সময়ে চিন পুড়ছে হিংসার আগুনে। এ আগুন এখন সীমান্তের এপারে থানচি, রুমা, মোদক জনপদের গায়ে লাগারও উপক্রম” (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২১ জানুয়ারি ২০২২)। মিজোরাম, চিন ও কাচিন রাজ্যের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণের কথা কেএনএফ স্বীকার ও প্রচার করেছে। বিষয়গুলো নিশ্চিত করা দরকার।   পাহাড়ের ওপারে পৃথিবীতে... কেএনএফের বিরুদ্ধে পরিচালিত যৌথ অভিযানের সময়, বিশেষত ২০২২ এর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বান্দরবান জেলা থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কয়েকশো ব্যক্তি (অধিকাংশ বম সম্প্রদায়ের) পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। পরবর্তীতে কেউ কেউ ফেরত এসেছে। আবার নতুন করেও কিছু ব্যক্তি ওপারে গেছে- এমন আলোচনা আছে। উল্লেখ্য, নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান ও গ্রেফতারের অজুহাতে কেএনএফ- নেতৃত্ব বম সম্প্রদায়ের মানুষকে সীমান্তের ওপারে বা গ্রাঁম ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করতে পারে। অতীতে নেতৃস্থানীয় কিছু ব্যক্তি ও আঞ্চলিক দলের প্ররোচনায় এমন দুঃখজনক ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কয়েকবার ঘটেছে। বম অধ্যুষিত অনেক গ্রামের মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। তারা কেএনএফ এর প্রচারণা ও হুমকিরও শিকার হতে পারে। এ বিষয়ে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা প্রয়োজন।  বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: কেএনএফের মিডিয়া (গণমাধ্যম) ও প্রযুক্তির ব্যবহার। পাহাড়ে কেএনএফই প্রথম আঞ্চলিক দল, যারা সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল। পরবর্তীতে তারা সোশাল মিডিয়ায় ঘোষণার মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীকে আক্রমণ করেছে। কেএনএফ সরকারের বিরুদ্ধে এক ধরনের “তথ্য যুদ্ধ” বা “ইনফরমেশন ওয়ার” চালিয়ে যাচ্ছে। কেএনএফ মিডিয়া ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে পারে। এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া এতই ব্যাপ্ত যে, কোন এলাকায় একটি ক্ষুদ্র ঘটনা ঘটলেও তা তৎক্ষণাৎ বিশ্বের নজঁরে চলে আসে।  পাহাড়ে গোয়েন্দা সংবাদ:  এই ধরনের অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত ২-৫ এপ্রিলে সংঘটিত ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ, অস্ত্র লুট ও থানায় গুলি বর্ষণের ঘটনায় পাহাড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রমকে দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কেএনএফের কতগুলো বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে হবে— আন্দোলনের মোটিভেশন, অর্থের সরবরাহ, রিক্রুটমেন্ট, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, গোলাবারুদের উৎস, প্রযুক্তি আইইডি সংক্রান্ত তথ্য, নেতৃত্ব ও বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ।  এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের প্রয়োজন পরিকল্পিত বহুমুখী কৌশল। পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা কিন্তু রাজনৈতিক। এর সামরিক সমাধান কাম্য নয়। তবে বর্তমানে কেএনএফ এর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যে স্তরে পৌঁছেছে, তা দমনের জন্য সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আশা করি, পেশাদারিত্ব, উপযুক্ত রণকৌশল, অস্ত্র সরঞ্জামাদি, সমানুপাতিক শক্তির প্রয়োগ, একই সঙ্গে স্মার্ট, তেজোদীপ্ত ও মানবিক বোধ সম্বলিত অভিযানের মাধ্যমে বান্দরবানে শান্তি ফিরে আসবে।  সংঘাত নয়, তৈরি হোক সম্প্রীতির সুবর্ণ সেতু:  অচিরেই বন্ধ হোক এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভ্রাতৃ-যুদ্ধ। এখানে ‘আমরা’, ‘অন্যরা’ বলে কিছু নেই। সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে শান্তির পথে ফিরে আসুক “কেএনএফ” ও  এর সামরিক শাখা “কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি” (কেএনএ) এর তরুণরা। বারুদ মাখা রণাঙ্গন নয়, কেএনএফ নেতৃবৃন্দ গণতান্ত্রিক উপায়ে কথা বলুক, আলোচনার টেবিলে। সংঘাত নয় পাহাড়ে তৈরি হোক সম্প্রীতির সুবর্ণ সেতু। বাড়ুক পারস্পরিক আস্থা। পার্বত্য চট্টগ্রামে বমসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক আকাঙ্ক্ষা বোঝা ও সম্মান করার প্রচেষ্টা টেকসই শান্তি নিশ্চিত করতে পারে।    সবাইকে নিয়ে আমরা হাঁটবো শান্ত পাহাড়ে:  পাহাড়ের প্রান্তিক মানুষদের আন্তরিকভাবে কাছে টানতে হবে। রাষ্ট্রকে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতেই হবে। কুকি-চিন গোষ্ঠীর প্রকৃত সমস্যার কথা আমাদের অবশ্যই জানতে ও শুনতে হবে। এর বাস্তবিক সমাধানও প্রয়োজন। এদিকে শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বাস্তবায়নের বাঁধাগুলো ও বিতর্কিত হয়ে যাওয়া ইস্যু ও অনুচ্ছেদগুলো নির্মোহভাবে দেখা দরকার। তবে এর গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবিক সমাধানও দ্রুত করা প্রয়োজন। শান্তিচুক্তির (১৯৯৭) পর অর্থাৎ পাহাড়ে সংঘাত-পরবর্তী পরিস্থিতির ব্যবস্থাপনা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা প্রয়োজন। বিলম্ব হলেও এক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক উদ্যোগ স্বাগত জানানো উচিত।   একই সঙ্গে পাহাড়ের নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয় তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। কেএনএফ ছাড়াও পাহাড়ে আরো ৪/৫ টি সশস্ত্র আঞ্চলিক দল/গ্রুপ/গোষ্ঠী রয়েছে। এই আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলো বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ-সংঘাত ও আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে একের পর এক আত্মঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে থাকে। এইসব বিষয়েও সরকারের নজঁর দেয়া প্রয়োজন।    বহুত্ববাদ, সম্প্রীতি ও সহনশীলতাই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা  বাংলাদেশের আত্মা। উদার বাংলাদেশের বিপুল বৈচিত্র্যকে মধ্যেই আমাদের সকল সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠি ও জনজাতির সুরভিত ফুল ফুটবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সবাইকে সমমর্যাদায় অভিষিক্ত করেই আমরা একত্রে হাঁটবো শান্ত সবুজ পাহাড়ে।  মো. বায়েজিদ সরোয়ার: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, গবেষক  
১১ মে, ২০২৪

চলমান তাপ দুর্যোগে আমাদের করণীয়
প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাসকারী বাসিন্দা হিসেবে মানুষ তাদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে। এই প্রক্রিয়ার সফল বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় জলবায়ু, বৃষ্টিপাতের ধরণ এবং পানির গুণমান সম্পর্কে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু, পরিবেশ সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, ইত্যাদি থেকে বাঁচার জন্য পরিবেশকে ভালোভাবে জানতে হয়। এই জ্ঞান প্রাকৃতিক বাস্তুশাস্র সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়ায়, যার ফলে বিভিন্ন দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব হয়।  আজকে আমরা কথা বলবো বর্তমানে বাংলাদেশসহ এর প্রতিবেশী দেশে সংঘটিত তাপ তরঙ্গ (Heat Wave) নিয়ে এবং এর সাথে নগর অঞ্চলে অতি উন্নত পরিকল্পনার ফলে সৃষ্ট তাপ দ্বীপ (Heat Island) এই দুটি বিষয় নিয়ে।  প্রথমেই বলে রাখা ভালো, হিট ওয়েভ ও হিট আইল্যান্ড দুটিই কোনো জায়গা বা অঞ্চলের তাপ বৃদ্ধির কারণ কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি বিষয়। তাপ তরঙ্গ (Heat Wave) অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রার বর্ধিত সময়কাল হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা সাধারণত কয়েক দিন থেকে সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। জলবায়ু পরিবর্তন, এল নিনোসহ বিভিন্ন কারণকে  তাপ তরঙ্গ সংঘঠিত হওয়ার জন্য দায়ী করা হয়।  বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের (CO2) উচ্চতর ঘনত্ব তাপপ্রবাহ তৈরিতে  সহযোগিতা করে। যখন CO2 বায়ুমণ্ডলে তৈরি হয়, তখন শীতকালে যেমন আমরা কম্বল দিয়ে শরীরকে গরম করি ভিতরে গরম আটকে ঠিক সেইভাবে এটি কম্বলের মতো পৃথিবীর তাপকে আটকে ফেলে, যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এগুলি প্রায়ই উচ্চ আর্দ্রতার সাথে থাকে, যা পরিবেশকে তাপ এবং আর্দ্রতার একটি বিপজ্জনক সংমিশ্রণের দিকে পরিচালিত করে। এর ফলে পরিবেশে বসবাসকারীরা অস্বস্তি, ক্লান্তি, এমনকি হিটস্ট্রোকেরও শিকার হতে পারে। তাপ তরঙ্গ বিশ্বের যে কোনো জায়গায় ঘটতে পারে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তা আরও ঘন ঘন এবং গুরুতর হয়ে উঠেছে। তাপ তরঙ্গের নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেদের এবং আমাদের সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা এবং সচেতন থাকা অতি গুরুত্বপূর্ণ।  অন্যদিকে, তাপ দ্বীপ এমন একটি ঘটনা যা নগর এলাকায় বেশি ঘটে, যেখানে মানুষের কার্যকলাপ এবং অবকাঠামোর কারণে পার্শ্ববর্তী গ্রামীণ এলাকার তুলনায় তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। এটি ভবন, রাস্তা এবং অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতিতে ঘটে যা তাপ শোষণ করে এবং ধরে রাখে, সেই সাথে গাছপালার অভাবের কারণেও ঘটে। তাপ দ্বীপ অন্যান্য কারণের মধ্যে মানুষের স্বাস্থ্য, শক্তি খরচ এবং বায়ু মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাপ দ্বীপ নগরের একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা এবং এর মোকাবিলার জন্য নগর পরিকল্পনা, সবুজ অবকাঠামো এবং পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণসহ এহেন কৌশলগুলোর সমন্বয় প্রয়োজন৷ এই সমস্যা দীর্ঘ সময়ের জন্য চলতে পারে, বিশেষ করে গ্রীষ্মের মাসগুলোতে যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে। নগরের তাপ দ্বীপ এলাকা এবং গ্রামীণ এলাকার মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য কয়েক ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে, যা নগর এলাকার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পরিবেশগত সমস্যার তৈরি করে।  আর তাপ তরঙ্গের কথা বললে, এটি ঘটে যখন গরম বাতাস উচ্চ-চাপ তৈরি হওয়ার কারণে মাটির কাছাকাছি আটকে যায়, যার ফলে কয়েক দিন বা সপ্তাহের জন্য অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়। জলবায়ু পরিবর্তন এই ঘটনাগুলোকে ব্যাপক করে তোলে, তাদের আরও ঘন ঘন সংঘটিত হতে সহায়তা করে। তাপ তরঙ্গ বিস্তীর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে যা হতে পারে শহর ও গ্রামীণ উভয় এলাকাকে ঘিরে। আবহাওয়ার এই বৈশিষ্ট উচ্চ তাপমাত্রার দ্বারা চিহ্নিত করা হয় যা বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছানোর সম্ভাবনা থাকে এবং এই ধরনের ঘটনাগুলি প্রায়ই স্থির বায়ুর ভরের সাথে মিলে যায় যার ফলে বায়ুর গুণমান খারাপ হতে পারে।  আবার তাপ দ্বীপের (Heat Island) ঝুঁকির কথা বলতে গেলে, তাপ দ্বীপ তাপ-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলতে, শীতল করার জন্য শক্তি খরচ বাড়াতে, বায়ুর গুণমানকে হ্রাস করার এবং বায়ু দূষণকারী উচ্চতর নির্গমনের জন্য দায়ী। তাপ দ্বীপ মানুষের কার্যকলাপের ফলাফল যা পৃথিবীর পৃষ্ঠের প্রাকৃতিক শক্তির ভারসাম্যকে পরিবর্তন করে। শহরগুলোর দ্রুত নগরায়ণ এবং সম্প্রসারণ তাপ দ্বীপের ঘটনাকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে, যা পরিবেশগত এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলোর একটি পরিসরের দিকে পরিচালিত করে। আমরা যদি ঢাকা শহরের কথা চিন্তা করি, তাহলে ঢাকাকে অস্বাভাবিকভাবে সম্প্রসারণের ফলে এর আশপাশের গ্রাম্য অঞ্চলগুলোও এখন নগরের অংশ হয়ে উঠেছে এবং তাপ দ্বীপের প্রভাবে তাপমাত্রা বেড়ে বসবাস অনুপযোগী হয়ে উঠছে। তাই, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব নগর উন্নয়নের জন্য কার্যকর প্রশমন এবং অভিযোজন কৌশল বিকাশের জন্য এবং তাপ দ্বীপের নেতিবাচক প্রভাবগুলো কমাতে তাপ দ্বীপের কারণ ও প্রভাব বুঝে প্রকৃত পরিবেশবিদ দ্বারা পরিবেশ পরিকল্পনা করা অপরিহার্য। একই ভাবে তাপ তরঙ্গের ঝুঁকি নিয়ে বলতে গেলে, তাপ তরঙ্গ মানব স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী, এবং অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য। তাপ-সম্পর্কিত অসুস্থতা, তাপের চাপ, এমনকি প্রাণহানিও এই উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ঘটে যেতে পারে। উপরন্তু, এই ধরনের ঘটনাগুলো অবকাঠামোর ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং কৃষি ও বাস্তুতন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে যা একটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই মানুষ ও পরিবেশ উভয়ের ওপর তাপ তরঙ্গের প্রভাব কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এখানে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তাপ দ্বীপ থেকে বাঁচার জন্য যা যা করা যাবে, তাপ তরঙ্গর জন্য তার সবগুলো কিন্তু কাজে আসবে না। নিম্নে তাপ তরঙ্গের হাত থেকে নিজেকে, নিজ বাসভবনকে ও আশপাশের পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য করণীয় সম্পর্তে কিছু পরামর্শ প্রদান করা হলো : •    প্রচুর পানি এবং তরল পান করুন, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন কারণ এর ফলে আরও ডিহাইড্রেশন হতে পারে। •    ঘরের ভেতরে তুলনামূলক ঠান্ডা স্থানে থাকুন। যদি আপনাকে বাইরে যেতেই হয় তবে ছায়ায় থাকুন এবং আপনার সাথে ছাতা ও খাবার পানি নিন। •    আপনার পরিবারের সদস্যদের ওপর লক্ষ্য রাখুন বিশেষ করে শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ, গর্ভবতী এবং অসুস্থ বেক্তিদের যারা তাপ তরঙ্গের সময় দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। •    আপনার যদি পোষা প্রাণী থাকে তবে নিশ্চিত করুন যে তারা প্রচুর পানি পান করছে কি না এবং এদের ছায়া যুক্ত স্থানে রাখার চেষ্টা করুন। •    যদি আপনার বাড়ি ঠান্ডা রাখা সম্ভব না হয় এবং এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করার সামর্থ্য না থাকে তাহলে দিনের ২-৩ ঘণ্টা ঠান্ডা জায়গায় কাটান (যেমন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাবলিক বিল্ডিং) •    দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। •    যদি আপনি পারেন কঠোর শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন। আপনি যদি কঠোর কার্যকলাপ করতে চান তবে দিনের সবচেয়ে শীতল অংশে এটি করুন, যা সাধারণত ভোর থেকে সকাল ৯টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়।  •    নিয়মিত গোসল করুন ঠান্ডা পানি দিয়ে। আপনার বাসাবাড়ি ঠান্ডা রাখার জন্য যা যা করবেন : •    তাপ তরঙ্গের সময়, আপনার থাকার জায়গাকে ঠান্ডা রাখার প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। রাত ৮টা, ১০টা, ১টা ও ভোর ৬টার পরে তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাপ তরঙ্গের সময় ঘরের তাপমাত্রা দিনে ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে ২৫-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা উচিত।  •    রাতে এবং ভোরে যখন বাইরের তাপমাত্রা কম থাকে, তখন আপনার বাড়ির সমস্ত জানালা খুলে দিন যেন বাহিরের ঠান্ডা বাতাস এসে ঘরের আবদ্ধ গরম বাতাসকে বের করে দিতে পারে এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে পারে।  •    দিনের বেলা জানালা বন্ধ রাখুন এবং জানলার পর্দা টেনে দিন, বিশেষ করে যেই জানলাগুলো সরাসরি সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। এতে করে সূর্যের কিরণ সরাসরি ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং ঘর ঠান্ডা থাকবে।  •    কৃত্রিম আলো এবং যতটা সম্ভব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলো বন্ধ রাখা উচিত যেগুলো থেকে তাপ নির্গমন হয়। কারণ এইগুলো ঘরের অভন্তরীণ তাপমাত্রা বাড়াতে সহযোগিতা করে।  •    যাদের ঘর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত না তারা ঘরের বাতাস ঠান্ডা করতে ভেজা তোয়ালে ঝুলিয়ে রাখুন, যাতে ঘরের ভেতরের বাতাসের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। •    যদি আপনার বাসস্থান শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে দরজা এবং জানালা বন্ধ করুন এবং কোনোভাবেই ২৬-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের তাপমাত্রা নামাবেন না। এতে করে সাস্থ ঝুঁকি কমবে। •    নতুন ভবন বানানোর সময় যথাযত পেশাজীবীদের সহায়তা গ্রহণ করুন এবং পরিবেশবান্ধব ভবন বানাতে চেষ্টা করুন। পরিশেষে এইটুকুই বলবো, তাপ দ্বীপ বা তাপ তরঙ্গ কোনোটাই মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীকুলের জন্য সুখকর নয়। আমরা আমাদের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে এমন কিছু করবো না যেন আমাদের কাজগুলো তাপ দ্বীপ বা তাপ তরঙ্গের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সার্বিয়ান বিজ্ঞানী মিলুতিন মিলানকোভিচ এর থিওরি থেকে আমরা জানতে পারি, জলবায়ু পরিবর্তন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা এবং মানুষের তৈরি পরিবেশ দূষণও কিছুটা পৃথিবী উত্তপ্ত হতে সহযোগিতা করে। আমরা যদি আমাদের সব কর্মকাণ্ড পরিবেশবান্ধবভাবে করি তাহলে কিন্তু আমরা আমাদের এই পরিবেশকে ও পরিবেশের অবক্ষয়কে ঠেকাতে পারব এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি বাসযোগ্য, সুন্দর, সহনীয় পরিবেশ উপহার দিতে পারবো যা আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে আমাদের দায়ীত্ব।  আসুন আমরা সবাই শপথ করি, গাছ কাটবো না বরং লাগাবো যত পারি তত, পুকুর, ডোবা, খাল, বিল, নদী ইত্যাদি ভরাট করবোনা বরং তাদের বাঁচিয়ে রাখবো পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এবং মাটি, পানি ও বাতাসকে দূষিত করে এমন সব কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখব নিজেকে।  মো. মাহামুদুর রহমান পাপন : পলিসি এনালিস্ট, স্থপতি, ও পরিবেশবিদ; প্রধান স্থপতি, ইকো ডিজাইন কন্সাল্ট্যান্টস বাংলাদেশ (EDCBE) 
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

চলমান আন্দোলন অনেকাংশে সফল হয়েছে: গয়েশ্বর
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, চলমান আন্দোলন ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। আর আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান। এই আন্দোলন এরই মধ্যে অনেকাংশে সফল হয়েছে। জনগণ ৭ জানুয়ারির একতরফা ভোট বর্জন করে সরকারকে না বলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলও একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে আখ্যায়িত করেছে। চলমান আন্দোলনের মুষলবৃষ্টিতে ভেসে যাবে এই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। গতকাল রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জিয়া মঞ্চ আয়োজিত এক গণইফতারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজউল্লাহ ইকবালের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিনের সঞ্চালনায় এতে জিয়া মঞ্চের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
০৮ এপ্রিল, ২০২৪

দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন চরমোনাই পীর
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিষবাষ্প ছড়িয়ে গোলযোগ বাধানোর চক্রান্ত শুরু হয়েছে। হিজাবধারী শিক্ষার্থীদের হিজাব খুলতে বাধ্য করা এবং ভাইভাতে হিজাব না খুললে ভাইভা না নেওয়া, ঢাবিতে কোরআন শিক্ষা ক্লাস নিয়ে ষড়যন্ত্র এবং ইফতার মাহফিলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা, রোজাদার শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা এ সবই ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। সোমবার (১৮ মার্চ) বরিশালের চরমোনাই মাদ্রাসায় ১৫ দিনব্যাপী বিশেষ তালিম তারবিয়াতের ৭ম দিনের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ছাড়াও দলের নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম, চরমোনাই ইউপি চেয়ারম্যান মুফতী জিয়াউল করীমসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। মুফতি রেজাউল করিম বলেন, ইসলামের বিধিবিধান নিয়ে দেশময় সিন্ডিকেটভিত্তিক অপপ্রচার চলছে। যা বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। কালজয়ী আদর্শ ইসলাম নিয়ে বিগত দিনেও গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত হয়েছে, এখনও হচ্ছে। কিন্তু তাদের মূল টার্গেট ইসলাম কেনো? ইসলাম ধর্ম, পর্দা, হিজাব, নামাজ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।  তিনি বলেন, কারা এভাবে সম্প্রীতি বিনষ্টে মাঠে নেমেছে, এগুলো পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। মাহে রমজানে কারা দেশকে উত্তপ্ত করতে চাচ্ছে। সরকারকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। ইসলামের বিধান হিজাব নিয়ে, ইসলাম নিয়ে অবমাননা করলে তাদেরও বিচার হবে না কেনো? চরমোনাই পীর আরও বলেন, রমজান মাস ইবাদত বন্দেগী করে নিজেকে গড়ে তোলার মাস। কাজেই সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ছেড়ে নিজেকে গড়ে তুলতে না পারলে মাহে রমজান আমাদের জীবনে কোনো উপকার আসবে না। তিনি রোজার মাসের সম্মানে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে রাখা এবং ভয়াবহ গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান ও জনদুর্ভোগ নিরসনে কাজ করার আহ্বান জানান।
১৮ মার্চ, ২০২৪

চলমান আন্দোলনে বিজয় হবেই : ডা. ডোনার
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী মামলা-হামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগামী দিনেও রাজপথ থেকে কর্মসূচি সফল করার মধ্য দিয়ে বর্তমান অবৈধ সরকারের পতন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরিক হবেন। চলমান আন্দোলনে আমাদের বিজয় হবে, ইনশাল্লাহ। শনিবার (১৬ মার্চ) সকালে রাজনৈতিক সব মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভের পর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন তিনি। দলের নেতাকর্মীরা তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। উপস্থিত নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার এসব কথা বলেন। নয়াপল্টন কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র এই নেতাকে ঘিরে স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তুলেন নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীরা ফুলের মালা দিতে চাইলে ডা. ডোনার গ্রহণ করেননি। তার অনুসারীরা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তিনি আর ফুলের মালা নেন না।   বিএনপির অফিসে বেশকিছু সময় ছিলেন ডা. ডোনার। তাকে কার্যালয়ে স্বাগত জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. পারভেজ রেজা কাকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন, যুবদলের গোলাম মাওলা শাহীন, ঢাকা উত্তর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক জসিম সিকদার রানাসহ বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।  উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড  হওয়ার পর রাজধানীর পল্টন, রমনা এবং বনানী থানায় ডা. ডোনারের নামে মোট ৯টি মামলা দেওয়া হয়। সবকটি মামলায় গত ১৩ মার্চ বুধবার তিনি হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নেন।
১৬ মার্চ, ২০২৪

নতুন মন্ত্রিপরিষদ: দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কর্মদিবসে যা বললেন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা / চলমান প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করা হবে
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, চলমান প্রকল্পগুলো গুণগতমান বজায় রেখে দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। এ ছাড়া সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নতুন প্রকল্প নেওয়া হবে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়ার পর গতকাল রোববার সকালে সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। গতকাল সকালে সচিবালয়ে পৌঁছালে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সিনিয়র সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগমসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে ফুলেল সংবর্ধনা দেন। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে পরিকল্পনা নির্ধারণ করেছেন, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে যে ধরনের কর্মপরিকল্পনা দরকার, তা করা হবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে টানা দ্বিতীয়বার স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে আস্থায় রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি। এরপর স্থানীয় সরকার বিভাগের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন তিনি। স্বাগত বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে, টানা দ্বিতীয় মেয়াদে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসেবে মো. তাজুল ইসলামকে পেয়েছি। বিগত সময়ের মতো ভবিষ্যতেও তিনি তার সুদৃঢ় নেতৃত্ব দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন।
১৫ জানুয়ারি, ২০২৪

চলমান শীত কয়দিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস
দেশের চলমান ঠান্ডা পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন বিরাজ করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই সময় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তাছাড়া আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টির আভাসও রয়েছে। রোববার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এ ছাড়াও ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারির আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এই সময় সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দেশের অনেক জায়গায় দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। এই সময়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। রোববার আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে বলা হয়েছে, রাজশাহী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গায় থেকে প্রশমিত হতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামীকাল সোমবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকায় সূর্যোদয় ভোর ৬টা ৪৪ মিনিটে এবং সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৫টা ৩২ মিনিটে। রোববার দেশে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বোচ্চ ছিল টেকনাফে ২৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১৪ জানুয়ারি, ২০২৪

চলমান শৈত্যপ্রবাহে নিকলীতে ভোগান্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষ
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও দেখা মেলেনি সূর্যের বইছে শৈত্যপ্রবাহ। কষ্ট করতে হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষদের। ঠান্ডাজনিত ও শ্বাসকষ্টসহ রোগে আক্রান্ত হয়ে ডে-কেয়ার ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা নিতে আসছেন অনেক রোগী। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকালে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলীতে দেশের সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বৃহস্পতিবারও নিকলীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। নিকলী উপজেলার কারপাশা ইউনিয়নের কৃষক সোলায়মান জানান, এ বছর শীত অনেক বেশি। যার কারণে জমিতে কাজ করতে যাওয়া যাচ্ছে না। হাওরে কাজ করতে গেলে বাতাসে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। জ্বর, সর্দি ও কাশি লেগেই থাকে। দিনমজুর খাইরুল ইসলাম বলেন, আমরা হাওড় এলাকার মানুষ দিন আনি দিন খায়। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার তাপমাত্রা কম থাকায় বোরো জমিতে কাজ করতে প্রচুর কষ্ট হয়েছে। একদিকে বাতাস আর অন্যদিকে সূর্য না থাকায় আমাদের সারাদিন কষ্ট করতে হয়েছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে খড় দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শরীরটা গরম করি। ঠান্ডায় হাত-পা ব্যাথা করে। ভাঙ্গারি ক্রয়ের হকার নুরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার ঠান্ডার কারণে ঘর থেকে বের হতে পারিনি। আজকেও শনিবার (১৩ জানুয়ারি) ঠান্ডার জন্য বেলা ১১টায় বের হয়েছি। ভাঙ্গারি ব্যবসার কারণে হকারি করতে সকালে পাড়া মহল্লায় ঘুরতে হয়। চারদিকে কুয়াশা আর ঠান্ডার জন্য ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। মানুষজন ঘুম থেকে সকাল সকাল না উঠতে পারায় ভাঙ্গারি কিনতে পারছি না। নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সজীব ঘোষ জানান, গত ৩ দিনে গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন রোগী শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ডে-কেয়ার ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা নিতে আসছেন, যাদের অধিকাংশই শিশু। এ মাসে ভর্তি হয়ে ১২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ঠান্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি রয়েছে।
১৪ জানুয়ারি, ২০২৪

বিএনপির চলমান আন্দোলন রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির চলমান আন্দোলন রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।  রোববার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির চলমান আন্দোলন রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। শুরু থেকেই তারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। এখন যে প্রচার চালাচ্ছে, তার ওপর নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বড় আকারে হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, অতীতেও দেখা গেছে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের সত্যতা নেই। এ ক্ষেত্রে দেশের মানবাধিকার কমিশনের তথ্যই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন ঘিরে একাধিক মন্ত্রীর ওপর হামলার আশঙ্কার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এসব বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি আছে। এ ধরনের কিছু করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগেভাগেই ব্যবস্থা নেবে। বর্তমানে কারা বিরোধী দল- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি গত ১৫ বছর ধরে রাজনীতিতে নেই, তাই তারা অপজিশনেও নেই। অপজিশন দল জাতীয় পার্টি, এখনো তাই।
৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩
X