রেললাইনে ফাটল, ট্রেন থামালেন স্থানীয়রা
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় রেললাইনে ফাটল দেখে হাত দিয়ে সিগন্যাল দিয়ে আব্দুলপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী কমিউটার ট্রেন থামিয়ে দেন স্থানীয়রা। এতে অল্পের জন্য দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা পায় ট্রেন এবং যাত্রীরা।  বুধবার (৮ মে) সকালে উপজেলার লোকমানপুর এলাকার রেললাইনে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, ঘটনার দিন সকাল অনুমানিক ৯টার দিকে ওই পথ দিয়ে গরু ছাগলের জন্য ঘাস কেটে ফেরার সময় রেললাইনে ফাটল দেখতে পান কয়েকজন। আস্তে আস্তে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সেখানে অনেক লোক জড়ো হয়। পরে আব্দুলপুর থেকে কমিউটার ট্রেন আসতে দেখে সবাই মিলে হাত দিয়ে সিগন্যাল দিলে ট্রেনটি থামিয়ে দেন চালক। একপর্যায়ে খুব ধীরগতিতে ওই ট্রেনটি সেখান থেকে পার হয়। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জিএম অসীম কুমার তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অতিমাত্রায় তাপের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আপাতত বস্তা ফেলে ধীরগতিতে ট্রেন পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খবর পেয়ে সেখানে লোক পাঠিয়ে লাইন মেরামত করা হয়েছে। সাড়ে ৩টার দিক থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। 
০৮ মে, ২০২৪

ত্রুটির কারণে অধিকাংশ দুর্ঘটনা / পুরোনো সিগন্যালে চলে তিন শতাধিক ট্রেন
যাত্রী নিরাপত্তায় প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি ও রেলের স্বয়ংক্রিয় বা ডিজিটাল সিগন্যাল ব্যবস্থায় নজর নেই রেল কর্তৃপক্ষের। ব্রিটিশ আমলের ৮০ শতাংশের বেশি অ্যানালগ সিগন্যাল ব্যবস্থায় চলছে নিরাপদ যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে পরিচিত রেলপথ। একদিকে জনবল সংকট, অন্যদিকে দক্ষ জনবল হিসেবে যারা কাজ করছেন, তারাও করছেন ভুল। বারবার সিগন্যাল ভুলে ঘটছে বড় দুর্ঘটনা। টাকা বাঁচাতে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগ করছে রেলওয়ে। স্বল্প টাকায় নিয়োগকৃত অদক্ষ জনবল রেলের বোঝায় পরিণত হচ্ছে। সংকটও বাড়াচ্ছে। সব মিলিয়ে ডিজিটাল দেশে অ্যানালগ পদ্ধতিতে চলছে রেল। অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থায় উল্টোপথে হাঁটছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ট্রেন দুর্ঘটনা কমাতে কম্পিউটারভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে সিগন্যাল ভুলের কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা হওয়ায় গতকাল রোববার পর্যন্ত ঢাকা থেকে জয়দেবপুর হয়ে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে অনেক ট্রেন বিলম্বে ছেড়ে যায়। রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম কালবেলাকে বলেন, সম্প্রতি সিগন্যাল ভুলের কারণে বেশ কয়েকটি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির আমলে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে রেলের জনবল বিদায় করা হয়েছে। অনেকে অবসরে গেছেন। এখন চুক্তিতে চালক, গার্ড, স্টেশন মাস্টার নিয়োগ দিয়ে আমাদের রেল পরিচালনা করতে হয়। মূলত দক্ষ জনবলের অভাবে ট্রেন দুর্ঘটনা বাড়ছে। রেল সংশ্লিষ্টরা জানান, নামমাত্র স্বয়ংক্রিয় বা ডিজিটাল সিগন্যাল পয়েন্ট থাকলেও পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল রেলের অধিকাংশ সেকশনে এখনো চালু রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ‘ম্যানুয়ালি’ সিগন্যাল ব্যবস্থা। ত্রুটিপূর্ণ সিগন্যাল, ভুল সিগন্যাল বা সিগন্যাল অমান্য করা এবং রেলওয়ের চালক ও কর্মীদের অবহেলায় দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় বলে মনে করেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ত্রুটিপূর্ণ সিগন্যাল ব্যবস্থা দিয়ে দেশে প্রতিদিন তিন শতাধিক যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ও একটি মালবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২২ জন নিহত ও বহু যাত্রী আহত হন। মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করে স্টেশনে প্রবেশ করায় দুর্ঘটনা ঘটে। এতে চালকসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি তদন্তে উঠে আসে । গত ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের পটিয়া রেলস্টেশনে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ননস্টপেজ সার্ভিসের দুটি ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার এক্সপ্রেস মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে বেঁচে যায়। সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে মালবাহী দুই ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। সর্বশেষ গত ৩ মে সিগন্যাল ভুলে গাজীপুরে তেলবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া শনিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশনে স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যানের ভুলে একই লাইনে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন প্রবেশের ঘটনা ঘটে। কলকাতা থেকে ঢাকাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশনের ৫ নম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যানের ভুল সিগন্যালের কারণে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি একই লাইনে প্রবেশ করে । তবে এ সময় চালক একই লাইনে আরেকটি ট্রেন দেখতে পেয়ে ট্রেনটি দ্রুত থামিয়ে দেওয়ায় মুখোমুখি সংঘর্ষের হাত থেকে ট্রেনটি অল্পের জন্য রক্ষা পায়। একের পর এক সিগন্যাল ভুলে ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় রেল ভবনজুড়ে তোলপাড় চলছে। এ নিয়ে শনিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রেলের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী। রেলওয়ের প্রকৌশলীরা বলছেন, কয়েকটি কারণে মূলত ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। একটা কারণ হলো সিগন্যাল ওভারসুট করা অর্থাৎ ট্রেনকে থামার সিগন্যাল দেওয়া হলেও না থেমে চলে যাওয়া। আরেকটা কারণ হলো, ভুল সিগন্যাল। স্টেশন মাস্টার ভুল সিগন্যাল দিলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, সিগন্যাল দিয়েছে একরকম আর লাইন সেটিং করেছে অন্যরকম। এ ছাড়া পয়েন্ট সেট করে লক করতে হয়। অনেক সময় লক না করলেও কিন্তু ট্রেন চলে যায়। এ ধরনের অনেক গাফিলতির কারণে ট্রেনে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এসব দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বলছে, সিগন্যাল ব্যবস্থা ত্রুটির কারণে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে । জানা গেছে, রেলে কম্পিউটারভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা তথা কম্পিউটারবেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) নেই। সনাতন পদ্ধতির নন-ইন্টারলিঙ্ক ব্যবস্থায় সংকেত দেওয়া হয়। তাছাড়া পুরোনো সংকেত (ম্যানুয়াল) পদ্ধতিতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি নতুন নিয়োগ পাওয়া জনবল। আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে ঠিকাদারের সরবরাহ করা পয়েন্টসম্যান রেলের বিশেষায়িত কাজ জানেন না। রেলের মহাপরিচালক বলেছেন, অর্ধেক জনবল দিয়েছে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সিবিআইএসে দুজন কর্মী লাগলে সনাতনে লাগে পাঁচজন। যারা নতুন আসছেন, তারাও দক্ষ নন। শিখিয়ে-পড়িয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। সিগন্যালের ভুল রোধে এখন থেকে কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। এতে ট্রেন চলাচলে বিলম্ব হলে কিছু করার নেই । এদিকে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, ভারতসহ অন্যান্য দেশে রেল দুর্ঘটনা হলেও বাংলাদেশে রেল দুর্ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যাবে না, বলতে হবে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড । কারণ এখানে রেললাইনের অবকাঠামো ঠিক নেই, চালকের খামখেয়ালি ও ত্রুটিপূর্ণ সিগন্যালের কারণে দুর্ঘটনা হয়। রেলের ছোট-বড় দুর্ঘটনার ৯০ শতাংশই ঘটে সিগন্যাল ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে। রেলওয়ে পশ্চিমের প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী মিজানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনা কমাতে উন্নত সিগন্যাল পদ্ধতির বিকল্প নেই । রেলওয়ে পূর্বের প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী সুশীল কুমার হালদার বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত সিগন্যাল ব্যবস্থার চিন্তা রেল কর্তৃপক্ষের রয়েছে। এজন্য কাজও চলছে বলে জানান তিনি। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে রেলওয়ের সিগন্যাল ব্যবস্থা পরিচালনা করা হয় আধুনিক প্রযুক্তিতে। দেশটির প্রায় ২ লাখ কিলোমিটার রেলপথ পরিচালনা করা হয় টেলিকম সিস্টেমে । তবে বাংলাদেশ রেলওয়েতে পিএলসি (পেপার লাইন ক্লিয়ার) ব্যবস্থার মাধ্যমে ম্যানুয়ালি সিগন্যাল ব্যবস্থায় ট্রেন পরিচালনা করা হয় । রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমাদের রেললাইনের অবকাঠামো ঠিক নেই। সিগন্যাল অমান্য করা হয় এবং রেলকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে দুর্ঘটনা হয়। তাই বাংলাদেশের রেল দুর্ঘটনাটা মূলত কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক কালবেলাকে বলেন, রেলের নিজস্ব অবকাঠামো উন্নয়ন বা রেললাইন, পুরোনো রেল ব্রিজ বা কালভার্ট মেরামত, পুরোনো সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন দরকার। সেদিকে নজর না দিয়ে রেল একের পর এক নতুন প্রকল্প নিচ্ছে। দুর্ঘটনা রোধে রেলের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়নে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সিগন্যাল বিভাগে সবচেয়ে কম জনবল জানিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী কালবেলাকে বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে সারা দেশে ১৬০টি নতুন ট্রেন চালু করেছে। নানা কারণে সিগন্যাল ব্যবস্থার উন্নয়ন উপেক্ষিত রয়েছে। পুরো সিগন্যাল ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা সম্ভব হয়নি। আবদুল্লাপুর-পার্বতীপুর, দর্শনা-খুলনা এবং আখাউড়া-সিলেটসহ অধিকাংশ সেকশনে ম্যানুয়ালি সিগন্যাল ব্যবস্থায় ট্রেন চালানো হয়। তবে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে সিবিআইএস ও সিটিসি সিগন্যাল ব্যবস্থা স্থাপনের একটি প্রকল্পের কাজ চলমান। এ ছাড়া আখাউড়া-ভৈরব সেকশনসহ পদ্মা সেতু লিঙ্ক লাইন স্থাপন প্রকল্পে আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ চলছে বলে জানান তিনি। রেলের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া জনবলের দক্ষতায় ঘাটতি রয়েছে। আবার নিয়মিত লোক বদল হয়। ফলে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণে সমস্যা লেগেই আছে।
০৬ মে, ২০২৪

স্টপেজ দাবিতে ফরিদপুরে ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ
‘এক দফা এক দাবি, ফরিদপুরে স্টপেজ চাই, দিতে হবে দিতে হবে’ এমন স্লোগানে ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। ফরিদপুর রেলস্টেশনে স্টপেজের দাবিতে রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ‘চন্দনা কমিউটার ট্রেন’র সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল রোববার ভোর ৫টা থেকে ফরিদপুর রেলস্টেশনে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। রাজবাড়ী থেকে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে ফরিদপুর এসে পৌঁছালে বিক্ষুব্ধরা ট্রেনটির সামনে অবস্থান নেন এবং গতিরোধ করেন। এ সময় তারা ফুল দিয়ে ট্রেনের পরিচালকসহ অন্যদের শুভেচ্ছা জানান। বিক্ষোভের মুখে এ সময় প্রায় ১০ মিনিট ট্রেনটি সেখানে অবস্থান করে। পরে অবস্থানকারীরা সরে গেলে ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেন। এর আগে বক্তব্য দেন রেল আন্দোলন কর্মী আবরার নাদিম ইতু, শরিফ খান, তুহিন বিন আলমগীর, আশিষ কুমার কুণ্ডু, সেলিম মিয়া, আলী মকিম, ইকবাল হোসেন, সোহান, আরিফ শেখ, ইকবাল মাহমুদ ইমন প্রমুখ। রেল যোগাযোগ চালু করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকারের সাফল্যের আরেকটি নতুন অধ্যায় রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকার সঙ্গে নতুন দুটি কমিউটার ট্রেন চালু হওয়া। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, ফরিদপুরের ওপর দিয়ে ট্রেন গেলেও ফরিদপুর রেলস্টেশনে কোনো স্টপেজ রাখা হয়নি। এতে ফরিদপুরের যাত্রীরা সুলভে ঢাকার সঙ্গে যাতায়াতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। অনতিবিলম্বে ফরিদপুর রেলস্টেশনে এ চন্দনা কমিউটার ট্রেনের স্টপেজ দাবি জানান বক্তারা। এদিকে চন্দনা কমিউটার ট্রেনের পরিচালক মহিবুল ইসলাম বিক্ষুব্ধদের অবস্থানের মুখে ট্রেন থেকে নেমে আসেন। এ সময় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মহিবুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত বিক্ষোভকারীদের বলেন, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা হয়তো আজই (গতকাল) এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাবেন। প্রসঙ্গত, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা পথে রোববার থেকে বাণিজ্যিকভাবে নতুন করে এক জোড়া কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এর আগে গত শনিবার মাদারীপুরের শিবচরে ‘চন্দনা কমিউটার’র রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-রাজবাড়ী ও ভাঙ্গা-ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে দুই জোড়া ট্রেন চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
০৬ মে, ২০২৪

দুর্ঘটনার সাড়ে ৩১ ঘণ্টা পর ঢাকা-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল শুরু
গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনের এক কিলোমিটার দূরে ছোট দেওড়া এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা তেলবাহী ওয়াগন ও যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সংঘর্ষের সাড়ে ৩১ ঘণ্টা পর সমাপ্ত হলো উদ্ধার অভিযান। এতে ঢাকার সঙ্গে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় রেল রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে বিভিন্ন স্টেশনে সিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে স্টেশনের দক্ষিণে আউটার সিগন্যালে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সঙ্গে তেলবাহী ওয়াগনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুটি ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়। আহত হন লোকোমাস্টারসহ চারজন। এর পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রুটের ট্রেন চলাচল ২ ঘণ্টা বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকল্প আপলাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বিকেলে রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর উদ্ধার তৎপরতা শুরু  হয়। রাত দিন উদ্ধার অভিযানে তেলবাহী ওয়াগনের লাইনচ্যুত ৪টি  বগির অপসারণ করে পার্শ্ববর্তী স্টেশনে সরিয়ে নেয়া হয়। এছাড়া যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত ৪ টি বগি রেল লাইনের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। শনিবার (৪ মে) দুপুর ২ টার দিকে ডাবল লাইন চালুর লক্ষ্যে আপ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেল বিভাগ। সেখানে ক্রেন রেখে দুটি ইঞ্জিন গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে আলাদা করা হয়। এর সাড়ে তিন ঘণ্টা পর আপ লাইনে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপর শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ডাউন  লাইন থেকে দুটি ইঞ্জিন ও ওয়াগনের বগি সরিয়ে ফেলে রেলওয়ে বিভাগের উদ্ধারকারী দল। স্থানীয়রা বলেন, রেলকর্মীদের গাফিলতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ভয়াবহ সিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। এছাড়া উদ্ধার অভিযান বিলম্বের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, রেলওয়ের যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি আধুনিক করা প্রয়োজন। উদ্ধার কর্মীদের ঢিলাঢালা ভাবের কারণে উদ্ধার অভিযান দেরি হয়েছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষের  দাবি, বিকল্প রেলরুটে ট্রেন চলাচল করার কারণে তাদের উদ্ধার অভিযান বিলম্বিত হয়েছে। তবে রাত দিন কাজ করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত বগি ও ইঞ্জিন সরিয়ে নেওয়া হলে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় রেল রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। পায় সাড়ে ৩১ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে নিশ্চিত করে জয়দেবপুর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সেতাবুর রহমান জানান, দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনের সব বগি উদ্ধার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত বগি ও তেলের ওয়াগন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আপ লাইন ক্লিয়ার আছে। জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. হানিফ আলী জানান, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা টাঙ্গাইল কম্পিউটার ট্রেনটি সকাল ১১টায় জয়দেবপুর স্টেশনে যাত্রা বিরতি শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে আউটার সিগনালে পৌঁছানোর পর লাইন ক্রসিং করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা জয়দেবপুর আউটার সিগন্যালের কাজীবাড়ি ছোট দেওড়া এলাকায় একটি মালবাহী ট্রেনের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর যাত্রী বাহী ট্রেনে ও তেলবাহী ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হয়। লাইনচ্যুত হওয়া বগিগুলো সন্ধ্যা ৬টার দিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন রেলের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু করা হবে। এদিকে, দুর্ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলার কারণে জয়দেবপুর রেলওয়ের আপঘুন্টি স্টেশন মাস্টার মো. হাশেম, পয়েন্টম্যান সাদ্দাম হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও গাজীপুর জেলা প্রশাসন ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
০৫ মে, ২০২৪

বৃহত্তর ফরিদপুরের জন্য দুটি কমিউটার ট্রেন চালু
বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল থেকে স্বল্প আয়ের মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে উদ্বোধন করা হয়েছে দুটি কমিউটার ট্রেন। আজ রোববার থেকে ট্রেনগুলো আনুষ্ঠানিক যাত্রী পরিবহন করবে। ভাঙ্গা ও চন্দনা কমিউটার নামে ট্রেন দুটি চালু করলেও এর ভাড়া নির্ধারণ করার পরে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে। মূলত পদ্মা সেতুর টোলের কারণে স্বল্প দূরত্বে বেশি ভাড়া হয়ে গেছে বলছেন অনেকেই। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, মাদারীপুরের শিবচরে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে ‘ভাঙ্গা কমিউটার’ ট্রেন ও ভাঙ্গা-রাজবাড়ী রুটে ‘চন্দনা কমিউটার’ নামে ট্রেন চলবে। গতকাল শনিবার মাদারীপুরের শিবচর রেল স্টেশনে এক অনুষ্ঠানে ট্রেন দুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। এরপর পরীক্ষামূলক ট্রেনটি ঢাকায় আসে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে এই ট্রেন কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। এ রুটে দেওয়া হবে নতুন ট্রেন। সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে শুক্রবার। ভাড়া যে কারণে বেশি: ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচলকারী ভাঙ্গা কমিউটার ট্রেনটির ভাড়া যাত্রীপ্রতি ২২৫ টাকা। ট্রেনটি মাঝের তিন স্টেশন মাওয়া, পদ্মা (জাজিরা) ও শিবচর স্টেশনে থামবে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ৪৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও ১০ কিলোমিটার পরের স্টেশন পদ্মা সেতুর অন্য প্রান্তের জাজিরা এলাকার পদ্মা স্টেশনের ভাড়া ১৯৫ টাকা। অর্থাৎ সেতু পার হতে গেলেই গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ১৫০ টাকা। এরপর পরের স্টেশন শিবচর ২০৫ টাকা আর সর্বশেষ ভাঙ্গা স্টেশনে ২২৫ টাকা। অন্যদিকে ভাঙ্গা থেকে রাজবাড়ী রুটে চলাচলকারী চন্দনা কমিউটার ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ টাকা। অর্থাৎ রাজবাড়ী থেকে এই দুই ট্রেনে ঢাকা ফিরতে ২৯০ টাকা খরচ হবে যাত্রীদের। রেলসূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা রুটে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস ও মধুমতী এক্সপ্রেস চলাচল করে। এই ট্রেন তিনটিতে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা যেতে শোভন চেয়ারে লাগে ৩০৫ টাকা, ট্রেনগুলো ভাঙ্গার ননস্টপ যাত্রীদের ঢাকায় পৌঁছে দেয়; কিন্তু একাধিক স্টপেজের কমিউটার ট্রেনের নিচের সারির শোভন কোচে যেতে নির্ধারণ করা হয়েছে ২২৫ টাকা ভাড়া। ভাঙ্গা ও চন্দনা কমিউটার ট্রেন যে রেক দিয়ে চলছে তার ইঞ্জিন ও কোচ নিম্নমানের, যেটা দিয়ে ঢাকা আসতে ২২৫ টাকা ভাড়াকে অতিরিক্ত বলছেন যাত্রীরা। উদ্বোধনী ট্রেনে সাংবাদিকদের বহন করা বগিতে ঢাকা ঘুরতে আসছিলেন সবুজ হোসেন। ট্রেনে নিয়মিত ঢাকা যেতে পেরে খুশি হলেও ভাড়ার কথা শুনে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাসে ঢাকা যেতে ৩০০ টাকা লাগে; কিন্তু ট্রেনে যদি কম লাগতো তাহলে ভালো হতো। অনেকে ট্রেনে করে বাড়ি থেকেই অফিসে যাতায়াত করতে পারতেন। লোকাল ট্রেনে এত ভাড়া রাখা ঠিক হয়নি। বাসের সঙ্গে পদ্মা সেতুর টোলের তুলনামূলক রেখা টেনে দেখা যায়, বাসের চেয়ে ট্রেনের যাত্রীদের টোল দিতে হচ্ছে বেশি। ৩১ সিটের একটি বাসের যেখানে ১৪০০ টাকা ভাড়া দিতে হয় সেখানে জনপ্রতি টোল পড়ে ৪৫ টাকা কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে নিম্নবিত্তের শোভন শ্রেণির যাত্রীদের থেকেই নিচ্ছে ১৫০ টাকা। এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরন শিশির বলেন, পদ্মা সেতুর টোলের কারণে ভাড়া বেড়েছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে খুলনা, যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত আরেকটি ট্রেন চালু হবে। ওই ট্রেন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রেল মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী।
০৫ মে, ২০২৪

পর্যটক এক্সপ্রেস / দেরিতে ট্রেন ছাড়ায় ভোগান্তিতে যাত্রীরা
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস চট্টগ্রামে পৌঁছায় তিন ঘণ্টা দেরিতে। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন কক্সবাজারগামী শতাধিক যাত্রী। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে বেশিরভাগ যাত্রীকে বারবার পানির দোকানে ভিড় করতে দেখা গেছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা ১০ মিনিটে ছাড়ে টেনট্রি। কিন্তু শনিবার ঢাকা থেকেই ট্রেনটি ছাড়েগ প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে। চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে বেলা দুইটায় কথা হয় ইরফান উল্লাহ নামে এক পর্যটকের সঙ্গে। তিনি বলেন, কক্সবাজার যাওয়ার জন্য বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে আসি। এই ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশ্য ছাড়ার কথা ছিল ১১টা ৪০ মিনিটে। কিন্তু ট্রেন এখনও আসেনি। একই কথা জানান চকরিয়ার কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ট্রেনটি ছাড়ে আড়াইটার পর। গরমের মধ্যে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বসে ছিলাম। ট্রেনটি এসেছে দেরিতে, ছেড়েছেও দেরিতে। শুধু কামরুল হাসান কিংবা ইরফান উল্লাহ নন, তাদের মতো আরও এক শ’ কক্সবাজারগামী যাত্রীকে তিন ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।  মোহাম্মদ ইউনুস নামের এক যাত্রী বলেন, ঢাকা থেকে দেরিতে ছাড়ার বিষয়টি জেনে তিনি বেলা দেড়টার দিকে স্টেশনে এসেছেন। তা-ও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, পর্যটক এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানোর কথা বেলা ১১টা ২০ মিনিটে। চট্টগ্রাম থেকে ছাড়ার কথা বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে। কিন্তু ট্রেনটি চট্টগ্রামে প্রবেশ করেছে বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে। এরপর বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে ট্রেনটি কক্সবাজারের উদ্দেশে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে।
০৫ মে, ২০২৪

আগামী দুই মাসের মধ্যে ভাঙ্গা-খুলনা-যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে : রেলমন্ত্রী
রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে খুলনা, যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ট্রেনের উদ্বোধন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রেলপথমন্ত্রী। শনিবার (৪ মে) রাজবাড়ীর সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করতে এই পথে দুটি কমিউটার ট্রেন উদ্বোধনকালে রেলপথমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মাদারীপুরের শিবচরে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে ভাঙ্গা কমিউটার ট্রেন ও ভাঙ্গা-রাজবাড়ী রুটে চন্দ্রনা কমিউটার ট্রেনের উদ্বোধন করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছানোর জন্য পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। ভবিষ্যতে এই পথে আরেকটি ট্রেন আমরা চালু করব। আবার আগামী দুই মাসের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে খুলনা, যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত আরেকটি ট্রেন চালু হবে। ওই ট্রেন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। রেলমন্ত্রী বলেন, ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত একটি রেললাইন বানানো হবে। সেটি আটটি জেলাকে যুক্ত করবে। কিন্তু এই অঞ্চলের মাটি ভালো না, তাই পুরো লাইনটি হবে এলিভেটেড (উড়াল)। তিনি আরও বলেন, আমরা চিন্তা করছি, রেলে বর্তমানে দুইটা জোন আছে, আরও দুইটা জোন তৈরি করা হবে। এর একটা হবে ভাঙ্গা-ফরিদপুর, এটির জোনাল অফিস হবে ভাঙ্গায়। এতে করে ভাঙ্গায় রেলের সেবা আরও বাড়বে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা উপহার হিসেবে রেল সংযোগে ভাঙা-ফরিদপুরকে যুক্ত করেছেন। ভাঙ্গা-ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে এক জোড়া এবং অপারেশনাল সুবিধার্থে একই রেক দ্বারা রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-রাজবাড়ী রুটে এক জোড়া কমিউটার ট্রেন পরিচালনা করা হবে। উভয় পথে ভাঙ্গা জাংশন, শিবচর, পদ্মা ও মাওয়া স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক বন্ধ শুক্রবার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রেল মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী।
০৪ মে, ২০২৪

সিগন্যালম্যানের ভুলে গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা
গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশনে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে স্টেশনের দক্ষিণে আউটার সিগন্যালে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ৯টি বগি লাইনচ্যুত ও চারজন আহত হন। এতে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম রুটের ট্রেন চলাচল দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর স্বাভাবিক হয়। সিগন্যালম্যানের ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন জয়দেবপুরের স্টেশন মাস্টার হানিফ আলী মিয়া। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই আপঘুন্টি স্টেশন মাস্টার হাশেম, পয়েন্টসম্যান সাদ্দাম হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। হানিফ আলী মিয়া জানান, সিগন্যালম্যানের ভুলের কারণে টাঙ্গাইল কমিউটার ও মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে মালবাহী ট্রেনের পাঁচটি এবং যাত্রীবাহী ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। কমিউটার ট্রেনের লোকোমাস্টারসহ চারজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। এ ছাড়া তিনজনকে বরখাস্তের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পরে রিলিফ ট্রেন এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এ ছাড়া টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের পেছনের অংশের অক্ষত বগিগুলো বিকল্প ইঞ্জিনের মাধ্যমে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। দুই ঘণ্টা পর অন্য রেললাইনের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুস সামাদ বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। এতে ট্রেনের চালক ও সহকারী চালকসহ চারজন আহত হয়েছেন। তাদের তিনজনকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। সিগন্যাল ভুল, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আহতদের অবস্থা স্থিতিশীল: দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে তিনজনকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। তারা হলেন, টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের চালক হাবিবুর রহমান, সহকারী চালক সবুজ হাসান ও যাত্রী শরীফ মাহমুদ। এ ছাড়া অন্যজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, ভর্তি তিনজনের কেউ মাথায়, কেউ বুকে আঘাত পেয়েছেন। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আহতদের অবস্থা স্থিতিশীল ও শঙ্কামুক্ত। নিরাপত্তা জোরদার: দুর্ঘটনার পর অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যরা কাজ করছেন। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গাজীপুরের ৬৩ ব্যাটালিয়নের বিজিবি সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
০৪ মে, ২০২৪

হঠাৎ কেন বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনা?
যুগের পর যুগ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ট্রেন। অথচ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গত একযুগে রেলের উন্নয়নে খরচ হয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকা। এত খরচের পরও বাংলাদেশের রেলপথ কেন রয়ে গেছে প্রাগৈতিহাসিক যুগে? দিনের পর দিন কেন অনিরাপদ হয়ে উঠছে এই পথ? অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে নানা অব্যবস্থাপনার তথ্য। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে কেন হঠাৎ দেশে বেড়ে গেছে ট্রেন দুর্ঘটনার পরিমাণ। সবশেষ শুক্রবার (৩ মে) ঢাকার অদূরে গাজীপুরের জয়দেবপুরে দুট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনার পর গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় হঠাৎ কেন বেড়েছে ট্রেন দুর্ঘটনা। রেলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ দিনের রেল পথ আর মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন-কোচই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এ ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন খাতে প্রচুর খরচ হলেও তা রেলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক যুগে রেলের উন্নয়নে খরচ হয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকা, অথচ এখনো অনিরাপদ থেকে গেছে রেলপথ। তিন হাজার কিলোমিটার রেলপথের ৬৩ শতাংশই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে ৭০ শতাংশ রেল ইঞ্জিন ও কোচ। এখনো সিগন্যাল চলছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। আর তাই বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনা। রেলের তথ্য বলছে, লোকবল সংকটের কারণে ভাড়া করা অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে করানো হচ্ছে অপারেশনাল কাজ। দুর্ঘটনা বাড়ার এটিও একটি কারণ। যাত্রীরা বলছেন, সড়কে বাসগুলো চলাচলের সময় প্রতিযোগিতা করে। তাই ট্রেনকেই নিরাপদ মনে করেন তারা। কিন্তু এখন ট্রেনও দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে। অব্যবস্থপনার কারণেই দুটি ট্রেনের মুখোমুখি একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বিগত বছরগুলোতে বিনিয়োগ যতটা বেড়েছে ততটা বাড়েনি ট্রেনের গতি। বরং কমেছে অনেক রুটেই। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় কোথাও কোথাও ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার গতিতে চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চালকদের। ১০ বছরেও কমেনি যাত্রীদের অভিযোগ। এখনো টিকিট সংকট আর শিডিউল বিপর্যয় নিত্যসঙ্গী রেলপথের যাত্রীদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যা দরকার তা না করে বিলাসী প্রকল্পে ঝুঁকছে রেল। ফলে অপরিকল্পিত অর্থ খরচের খেসারত দিচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, মূলত অবকাঠামোর পেছনে একটা বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু দক্ষ জনবল তৈরি করা হয়নি। বলা যায়, দেশের রেল পরিচালনা এখনো অনেকটা প্রাগৈতিহাসিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
০৩ মে, ২০২৪

ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন পুলিশ কর্মকর্তা
কুষ্টিয়ার মিরপুরে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় সাইদুর রহমান নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ মে) দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার কাটদহচর রেলগেটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ছেড়ে আসা দর্শনাগামী মালবাহী ট্রেন ঘটনাস্থল কাটদহ রেলগেট অতিক্রম করার সময় মিরপুর উপজেলার মাজিহাট পুলিশ ক্যাম্পের আইসি এসআই সাইদুর রহমান মোটরসাইকেলযোগে রেলগেট অতিক্রম করতে গেলে দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। দুমড়েমুচড়ে যায় মোটরসাইকেলটিও। মিরপুর থানার ওসি মোস্তফা হাবিবুল্লাহ জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোটরসাইকেলযোগে ক্যাম্পে ফিরছিলেন সাইদুর রহমান। কাটদহ রেলগেট পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনা শিকার হন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এসআই সাইদুর রহমানের বাড়ি নড়াইল জেলায় বলে তিনি জানান। 
০৩ মে, ২০২৪
X