সরকারি কালভার্ট বন্ধ করে মাছ চাষ, পানিবন্দি ৪০০ পরিবার
কিশোরগঞ্জে পানি সঞ্চালনের জন্য সরকারের দেওয়া কালভার্টের মুখ বন্ধ করে মাছ চাষ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই গ্রামের প্রায় চারশ পরিবার। সদর উপজেলার ১১নং দানপাটুলি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মহিষবেড় ও পাইকপাড়া গ্রামের ৪০০ পরিবারের প্রায় সাত ৬ হাজার মানুষ চার দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে। সোমবার (৯ অক্টোবর) সকালে দ্রুত কালভার্টের মুখ খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে মহিষবেড় গ্রামে মানববন্ধন করেছে দুই গ্রামের শতাধিক লোকজন। প্রতিকার চেয়ে গত ৮ অক্টোবর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মানববন্ধনে ১নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘গত ছয় বছর ধরে কিছু অসাধু মাছ চাষি মহিষবেড় ও পাইকপাড়া গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে গ্রামের চারদিকে মাছ চাষের ফিসারি দিয়েছে। ফিসারির পাড় তৈরি করার জন্য সরকারের দেওয়া পানি সঞ্চালনের কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে অল্প বৃষ্টিতে এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়।’ সাবেক ইউপি সদস্য দিলীপ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘অসাধু মাছ ব্যবসায়ীদের চক্রের কারণে এলাকাবাসী পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এই ওয়ার্ডে তিনটি মসজিদ, একটি মন্দির, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে। পানির সঞ্চালন বন্ধ থাকায় রাস্তা তলিয়ে গেছে। যার কারণে মসজিদে নামাজ আদায় করা, মন্দিরে প্রার্থনা করা, বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’ তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘কালভার্ট বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার শিশুদের পানিতে পড়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। পানির নিচে থাকায় রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। বেশ কয়েকবার স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেও সমাধান হয়নি। ছোট-বড় পাঁচটি সরকারি কালভার্ট মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে মাছ চাষিরা। শুধু তাই নয়, রেলওয়ের ব্রিজ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে তারা।’ স্থানীয় বাসিন্দা মো. মজলু মিয়া বলেন, ‘ফিসারির কারণে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সাবেক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ফিসারির মালিকদের নিয়ে ৪টি সালিশি বৈঠক হয়েছে। সালিশ বৈঠক করা হলেও এর সমাধান হয়নি। এখন অবস্থা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করা যাচ্ছে না। রান্নার চুলায় পানি প্রবেশ করেছে। নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভয় হয়। মাঝে মাঝে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে এলাকার অনেক মানুষ। স্কুল মাদ্রাসায় যেতে না পারায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বন্ধ রয়েছে।’ পানি নিষ্কাশনের কালভার্ট বন্ধের অভিযোগ অস্বীকার করে মৎস্য চাষি নজরুল মিয়া বলেন, ‘আমি চার বছর ধরে মাছ চাষ করে আসছি। এর আগে যারা মাছ চাষের দায়িত্বে ছিলেন তারা পানি নিষ্কাশনের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। খোলার প্রয়োজন হলে এখনই খুলে দেব।’ মৎস্য চাষি হুমায়ুনও কালভার্ট বন্ধের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আরজু মিয়া বলেন, ‘এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে ফিসারিগুলো করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় মাছ চাষিদের নিয়ে বসে সমাধান করার চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। বর্তমানে ভারী বৃষ্টি হওয়াতে সমস্যাটা বড় আকার ধারণ করেছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’ ১১নং দানাপাটুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাসুদ মিয়া বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের বিষয়টি প্রশাসনের মাসিক সভায় উত্থাপন করেছি। শুধু মহিষবেড় ও পাইকপাড়া নয়, অনেক স্থানে এমন অবস্থা বিরাজ করছে। আমি অনেকবার কালভার্ট ও খাল খনন করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পানিবন্দির বিষয়টি জানানোর পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটির কোনো দেখা মিলেনি। স্থানীয় লোকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমি ফিসারির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধনের চেষ্টা করব।’ এদিকে অভিযোগের বিষয়টি জানা নেই বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মর্কতা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়া ও পানি নিষ্কাশনে যেন কোনো অসুবিধা না হয় সেই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। মহিষবেড় ও পাইকপাড়া গ্রামের পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’  
০৯ অক্টোবর, ২০২৩

বগুড়ায় বৃষ্টিতে পানিবন্দি মানুষ, ডুবেছে মরিচের ক্ষেত
বগুড়ার নন্দীগ্রামে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বসতবাড়িতে হাঁটুপানি থাকায় কয়েকটি ঘর ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে প্রায় শতবিঘা মরিচের ক্ষেত এবং পুকুর ডুবে ভেসে গেছে মাছ।  স্থানীয়দের অভিযোগ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজো থাকায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না, ফলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এদিকে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে পানি নেমে আসায় গুলিয়া হাইস্কুল সংলগ্ন নদীর বাঁধ ধসের আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার কৈগাড়ী, রিধইল, সিংড়া খালাস, কামুল্যা, পারশুন, পারঘাটা, গুলিয়া কৃষ্ণপুর, জামালপুর, জোঁকা বনগ্রাম, গোপালপুর, তৈয়বপুর, কমলাগাড়ি, নাগরকান্দি, দমদমা, রুস্তমপুর, পৌরসভার পূর্বপাড়া, দক্ষিণপাড়া, কলেজপাড়া, নামুইট, বৈলগ্রাম, দামগাড়া, ওমরপুর, কালিকাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বসতবাড়িতে হাঁটুপানি দেখা গেছে।  পানিবন্দি থাকায় অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। বাড়ির আঙিনা, ঘরে মেঝেসহ ডুবে গেছে চুলা। ফসলি জমিগুলোও হাবুডুবু অবস্থা। শিমলা কচুগাড়ী হিন্দুপাড়ায় বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতায় থাকা মাটির ঘর-বাড়ি ও দেয়াল ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই গ্রামের দুলাল চন্দ্র, নলি বালা, পরেশ চন্দ্র এবং নিরেন চন্দ্র। কল্যাণনগর গ্রামে পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েলের খামারের ৭০০ মুরগি মারা গেছে। উপজেলা ও পৌর এলাকার বিভিন্ন গ্রামের অর্ধশতাধিক পুকুর ডুবে মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা।  এ ছাড়া বৃহস্পতিবার ভোরে ওমরপুর মাঠে মাছ ধরতে গিয়ে হঠাতই অসুস্থ হয়ে বৃদ্ধ একাব্বর আলী বেপত্তা (৭০) নামের বৃদ্ধ মারা গেছেন বলেও জানা গেছে। স্থানীয়রা মাঠ থেকে ওই বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি বিষ্ণপুরের মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে।  থালতা-মাঝগ্রাম ইউপি সদস্য মুকুল হোসেন জানান, টানা বৃষ্টিতে বেশকয়েকটি গ্রামের বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে। ইউনিয়নের প্রায় ৫০ বিঘা মরিচ ক্ষেত ডুবে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে মাটির ঘরবাড়িগুলো ভেঙে পরতে পারে। নাগর নদীর পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গুলিয়া হাইস্কুল সংলগ্ন নদীর বাঁধ যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে। স্কুল ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।  এ ব্যাপারে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) নন্দীগ্রাম শাখা কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফ সরকার বলেন, পানির ঢেউয়ের কারণে বাঁধের মাটি কিছুটা সরে গেছে। বিষয়টি নজরদারিতে রয়েছে। জরুরি প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক সংস্কারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
০৭ অক্টোবর, ২০২৩

কিশোরগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩৪ পরিবার পানিবন্দি
টানা দুই দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে কিশোরগঞ্জ গুচ্ছগ্রামের ৩৪ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের কাশোরারচর গ্রামের সড়কের পাশের ৩৪টি পরিবার পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। জানা গেছে, ২০২২ সালের শেষ দিকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের কাশোরারচর গ্রামের ৩৪টি পরিবারের কাছে মুজিব শতবর্ষ উপহারের ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়। রাস্তা থেকে এই ঘরগুলো নিচু জমিতে হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। টানা দুই দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের কারণে ৩৪টি উপহারের ঘরে হাঁটুর উপরে পানি জমেছে। এতে ঘর ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে ৩৪টি পরিবার। শুকনো খাবার খেয়েই পার করছেন দিন। জাহাঙ্গীর মিয়া নামের একজন জানান, আমাদের ঘরগুলো যদি রাস্তার লেভেল করে হতো তাহলে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যেত না। এখন বৃষ্টিতে আমাদের ঘরের খাট পানিতে তলিয়ে গেছে। এখানের অনেক পরিবারই পানির কারণে অন্য জায়গায় চলে গেছে। আমরা খুবই কষ্টের মধ্যে রয়েছি। অলকা রানী সরকার নামে এক বাসিন্দা জানান, ঘরের যত জিনিসপত্র রয়েছে সব পানিতে ভিজে গেছে। আমাদের অনেক মুরগি মারা গেছে। গরু-ছাগল নিয়ে বিপদে আছি। মহিনন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী জানান, যেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে স্বাভাবিকভাবে এখানে পানি ওঠার কথা না। গত রাত থেকে একটানা ভারী বর্ষণের কারণে এলাকা ও মেইন রোডের মধ্যে পানি চলে এসেছে। এ ছাড়াও নিম্ন অঞ্চলগুলো সব ডুবে গেছে। এ কারণে হয়তো আশ্রয়ণ প্রকল্পেও পানি উঠেছে। বৃষ্টি কমলে পানি নেমে যাবে। পানি কমে গেলে ইউএনও এবং জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে তাদের সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
০৬ অক্টোবর, ২০২৩

নওগাঁয় আত্রাই নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন, পানিবন্দি ১৮ হাজার মানুষ
নওগাঁর মান্দায় বন্যায় আত্রাই নদীর ৬টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে ১৩শ বিঘা জমির আউশ ও আমন ধানের খেত। ফলে নদী পাড়ের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দিন অবিরাম বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের বেশকিছু এলাকা চরম ঝঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষরা। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বস্তায় বালু ভরে মেরামতের জন্য একটানা কাজ করছে শ্রমিকরা। এ ছাড়া  উপজেলা প্রশাসন থেকে স্থানীয় পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরজমিনে দেখা গেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এ ইউনিয়নের নুরুল্লাবাদ, পশ্চিম নুরল্যাবাদ, শাহপাড়া, মণ্ডলপাড়া, ও পারনুরুল্লাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ফকিন্নি নদীর তীরবর্তী এলাকায় আরও অন্তত ৭০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। এদিকে কশব ইউনিয়নে পাঁজরভাঙ্গা, প্রসাদপুর ইউনিয়নে বাইবুল্যা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ি এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এসব এলাকায় আরও অন্তত ৫০০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। পাঁজরভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মো. মামুন বলেন, প্রায় চার বছর পূর্বে এই বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। তারপর থেকে এ বাঁধটি আর সংস্কার করা হয়নি। ফলে প্রতিবছর বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা। বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তাই আমরা এই বেড়িবাঁধটির সংস্কার করার জন্য প্রশাসনের কাছ দাবি জানাচ্ছি। বিষ্ণুপু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম গোলাম আজম বলেন, এ গ্রামের পানিবন্দি মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমরা তাদের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। তবে কয়লাবাড়ি বেড়িবাঁধের ভাঙন স্থানটি মেরামত না করায় ওই স্থান দিয়ে পানি অনায়াসে গ্রামে ঢুকে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০০ পরিবার। একই সঙ্গে তলিয়ে গেছে অন্তত ৩০০ বিঘা জমির আমন ধানের ক্ষেত। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গত মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এ নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এ বিষয়ে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, আত্রাই নদীর বন্যার পানিতে ফসলের জমি তলিয়ে গেছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বন্যাকবলিত এলাকায় ঘুরে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করছেন। এতে কী পরিমাণ ফসল ক্ষতির হতে পারে তা দুএক দিনের মধ্য তথ্য জানা যাবে। মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, নৌকাযোগে বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। বন্যায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতির কী পরিমাণ হতে পারে তা কাজ করছে কৃষি বিভাগ। তবে প্লাবিত এলাকা সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।  
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

রাঙ্গামাটিতে পানিবন্দি ১০ হাজার পরিবার
রাঙ্গামাটিতে কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বেড়েছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। এতে জেলার লংগদু, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, নানিয়চার ও সদর উপজেলার নিন্মাঞ্চল হ্রদের পানিতে ডুবে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার।  এদিকে পানি বাড়ায় দুর্গত এলাকার মানুষ গবাদি পশু নিয়ে পড়েছে বিপাকে।  জানা গেছে, পানিবন্দি এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। সংকট নিরসনে প্রশাসন পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। উপজেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন সূত্র থেকে জানা যায়, জেলায় ৪টি উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তাদের জন্য ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এদিকে ৪ উপজেলার ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ওঠায়, শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাত হোসেন।  তবে উপজেলাগুলোতে স্থানীয় ভাবে খবর নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়গুলোতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা স্থগিত করা না হলেও সেখানে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার পরিবেশ না থাকা ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসার পথ পানিবন্দি হয়ে পড়ায় সেখানে কোনো শিক্ষাকার্যক্রম চলছে না। এ ছাড়া বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্যদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণে কাপ্তাই বাধের ১৬টি জলকপাট আড়াই ফুট খুলে দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে অপসারণ করা হচ্ছে ৪০ হাজার কিউসেক পানি। এ ছাড়াও বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মাধ্যমে আরও প্রায় ২৫ হাজার কিউসেক পানি অপসরণ হচ্ছে। এতে প্রতি সেকেন্ডে মোট ৬৫ হাজার কিউসেক পানি অপসারণ হচ্ছে। বর্তমানে হ্রদে পানি রয়েছে ১০৮ দশমিক ৪৮ এমএসএল। রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, জেলার সবচেয়ে বেশি পানবন্দি অবস্থায় রয়েছে বাঘাইছড়িতে। সব নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ত্রাণ সহায়তা এবং আশ্রয়কেন্দ্র খোলার জন্য। প্রতি সেকেন্ডে মোট ৪৩ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হলেও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার পানি বেশি ছাড়া হলে ভাটির অঞ্চলে বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। সব কিছু বিবেচনা করে পানি ছাড়া অব্যাহত রয়েছে।
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত / পানিবন্দি হাজারো পরিবার
যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে। প্লাবিত হয়েছে জেলার ৫ উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের কয়েকশ গ্রাম। জামালপুরের ইসলামপুরের ৮টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের নিচু এলাকা ডুবে গেছে। এ ছাড়া দেওয়ানগঞ্জে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে তীরবর্তী মানুষের মধ্যে। এদিকে রাজবাড়ী গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপরে বইছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে ৪২টি ইউনিয়নের কয়েকশ গ্রাম। সেইসঙ্গে বেড়ে চলেছে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা। গতকাল শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ মিটার। আগের ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে কাজীপুরের মেঘাই পয়েন্টে বুধবার সকালে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৯১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এদিকে যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় ৪২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে এসব অঞ্চলের আবাদি জমি। প্রতিদিনই শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। জামালপুর: গত সপ্তাহ থেকে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শনিবার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ইসলামপুর সদর, পাথর্শী, বেলগাছা, সাপধরী, নোয়ারপাড়া, চিনাডুলী, কুলকান্দি ও পলবান্ধা ইউনিয়নের ১০ হাজারের অধিক পরিবার। বাড়িঘরে পানি ওঠায় এবং পানিবন্দি হয়ে পড়ায় সংকট দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গো-খাদ্যের। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় ৬৫০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অবশিষ্ট ফসল নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ উপজেলায় এরই মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৭০০ পরিবার বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে তৃতীয় দফায় বাড়ছে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও অন্যান্য নদীর পানি। এতে তীব্র হয়েছে নদনদীর ভাঙন। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সমীক্ষা চলমান রয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজবাড়ী: গোয়ালন্দে চার দিনে পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। গোয়ালন্দ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার সালমা খাতুন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বর্তমান পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ম্যানেজার মো. সালাউদ্দিন জানান, পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে প্রবল স্রোত। এতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলাচলকারী ফেরিগুলোর চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সিরাজগঞ্জে যমুনায় পানি বাড়ছেই, পানিবন্দি কয়েকশ গ্রাম
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। প্লাবিত হয়েছে জেলার ৫ উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের কয়েকশ গ্রাম। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কাজিপুরের মেঘাই পয়েন্টে বুধবার সকালে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৯১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার বন্যা সতর্কীকরণ পূর্ভাবাসে বলা হয়েছে জেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। পরবর্তীতে উন্নতি লাভ করবে।  এদিকে যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় ৪২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে এসব অঞ্চলের আবাদি জমি। প্রতিদিনই শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ছে।  সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত তিন উপজেলার প্রায় ১৬৪২টি পরিবার পানিবন্দি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। ৭৪০ টন জিআর চাল, ১৭ লাখ নগদ টাকা, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, গোখাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

তিস্তা ও যমুনায় পানি বৃদ্ধি / পানিবন্দি লাখো মানুষ ভাঙন আতঙ্ক
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টির পানিতে দেশের উত্তরাঞ্চলের নদনদীগুলোতে পানি বেড়েছে। গতকাল রোববার বিভিন্ন স্থানের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। তিস্তা ও যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। তবে বড় কোনো বন্যার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে প্রশাসন। কালবেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— গাইবান্ধা: দফায় দফায় বৃষ্টি ও উজানের ঢলে গাইবান্ধায় সব কটি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তার পানিপ্রবাহ বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে তিস্তার চরাঞ্চল, তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসহ লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে এসব এলাকার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে। বেশ কিছু এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুর ১২টায় তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে শনিবারের চেয়ে সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে তিস্তার পানির উচ্চতা ১১ সেন্টিমিটার কমেছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নদনদীর পানি বেড়েছে। তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও পানি কমতে শুরু করেছে। লালমনিরহাট: উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে পানি কমলেও পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তি কমেনি। রোববার সকাল ৯টা থেকে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। তিস্তার বাঁ তীরে সদর উপজেলার চর গোকুণ্ডা, খুনিয়াছ, বাগডোরা, আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড়, চণ্ডীমারি, বালাপাড়া এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উজান থেকে পাহাড়ি ঢল কম আসায় দ্রুত কমেছে তিস্তা নদীর পানি। প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে নদীর পানি নামতে শুরু করেছে। এখনো বেশ কিছু এলাকার ঘরবাড়িতে নদীর পানি রয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক বন্যার খোঁজ রাখছি। জেলায় দুর্যোগকালীন চাল ও টাকা বরাদ্দ আছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা ইউএনও এবং পিআইওর মাধ্যমে শিগগির এসব বিতরণ শুরু হবে। কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বুড়িরহাটে তিস্তা নদীর প্রবল পানির তোড়ে দেবে গেছে আরসিসি অংশের ৩০ মিটার স্পার। গতকাল রোববার সকালে কনক্রিটের আরসিসি স্পারটি দেবে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ্ আল মামুন। তিনি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানির তীব্র স্রোতের আঘাতে স্পারটির মাথার অংশে ৩০ মিটার দেবে গেছে। বাকি ৩০ মিটার রক্ষায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। ১৯৯৫ সালে নির্মিত আরসিসি স্পারটির দৈর্ঘ্য ৬০ মিটার। এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিস্তা নদীর অংশের ওই স্পারটিতে এ ঘটনা ঘটে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ১৫০ মিটার বাঁধ ও আরসিসি স্পারের বাকি ৩০ মিটার রক্ষায় রাতদিন কাজ চলমান থাকবে। আশা করছি বাঁধ ও বাকি আরসিসি স্পার রক্ষা করা সম্ভব হবে। সাতক্ষীরা: টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে চিংড়ি ঘের ও রাস্তাঘাট। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে চিংড়ি ঘের, রোপা আমন ক্ষেত ও বীজতলা। বিশেষ করে শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও তালা উপজেলার অধিকাংশ চিংড়ি ঘের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে সাতক্ষীরা পৌরসভার নিচু এলাকাও এখন পানির নিচে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এবং একই সঙ্গে বৃষ্টি না কমায় জলাবদ্ধতার কবলে থাকা এলাকাগুলোতে নতুন করে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। সিরাজগঞ্জ: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে দ্রুত বাড়তে থাকায় আবারও প্লাবিত হচ্ছে যমুনা অভ্যন্তরে চরাঞ্চল। দফায় দফায় আবাদি জমি প্লাবিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চরের কৃষকরা। শনিবার সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৬১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা: ১২ দশমিক ৯০ মিটার)। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে আবারও যমুনার পানি বাড়ছে। আগামী তিন দিন পানি বাড়বে, বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এবারও ভারি কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই। পাটগ্রাম (লালমনিরহাট): তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে গেছে। এজন্য দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের সব জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার সকাল ৬টায় হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের সর্ব বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এদিকে রোববার সকাল ৯টায় তা কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জানা গেছে, ওই পানিতে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের বড়বাড়ি, মানিকের চড়, সরদার পাড়া, কাতিপাড়া গ্রামসহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় লোকালয়ের ঢুকে পড়েছে পানি। শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে এ যাত্রায় আর পানির বিপৎসীমা অতিক্রম করার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা। পাউবো তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানির প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। সব জলকপাট খুলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে আপাতত আর বিপৎসীমা অতিক্রম করার কোনো শঙ্কা নেই। চিলমারী (কুড়িগ্রাম): কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন আমন চাষিরা। চলমান আমন মৌসুমে খরায় ধকল পুষে ওঠে আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন কৃষকরা। তবে খরার পর এবার চতুর্থ দফায় সৃষ্ট বন্যায় তলিয়ে গেছে আমন ধানের চারা। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। উপজেলা কৃষি অফিসার কুমার প্রণয় বিষাণ দাস জানিয়েছেন, চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে চতুর্থ দফার বন্যায় ৪৫০ হেক্টর আমন ধান পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়া ৪৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে কৃষকদের খোঁজ নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা। গৌরীপুর (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মইলাকান্দা ইউনিয়নের শ্যামগঞ্জে বৃষ্টির পানি জমে ৪০টি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। পানি নিষ্কাশনের ড্রেন ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবেশ করেছে পরিবারগুলোর বসতবাড়িতে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ওই পরিবারগুলোর বাড়ির উঠান পানিতে ডুবে গেছে। পানি উঠে গেছে তাদের বসতবাড়িতে। গতকাল রোববার পানিবন্দি ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত দাবি জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আফরোজা আফসানা বলেন, শ্যামগঞ্জে পানিবন্দি পরিবারগুলো জলাবদ্ধতা নিরসন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য লিখিত দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে খোঁজ নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৮ আগস্ট, ২০২৩

ফেনীতে চার মাস ধরে পানিবন্দি ৪০ জেলে পরিবার
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরমজলিশপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মজলিশপুর গ্রামের জয় মঙ্গল জেলে বাড়ির ৪০টির বেশি জেলে পরিবারের ৩ শতাধিক মানুষ দীর্ঘ চার মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।  ওই বাড়ির স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়ার সময় বাড়ি থেকে যে জামা-কাপড় পরে বের হয় বাড়ির রাস্তায় কোমর পরিমাণ পানি পার হতেই সেটা ভিজে যায়। ভেজা কাপড় পরে প্রতিদিন স্কুলে যায়। শিক্ষার্থীদের মতো নারী-পুরুষ সবার একই অবস্থা। শনিবার (২৬ আগস্ট) সরেজমিনে জয় মঙ্গল জেলে বাড়ির সামনে গেলে দেখা যায়, বাড়ির চারদিকে পানি জমে আছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বাড়ির রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কোমর পরিমাণ পানি পার হয়ে বৃদ্ধ-শিশুসহ বাড়ির লোকজন আসা যাওয়া করছে। কালবেলার প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মজলিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জয়ন্ত জলদাস, ওসমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির তুহিন চন্দ্র জলদাস ও নবম শ্রেণির মুক্তা রানী জলদাসের সাথে।  তারা জানায়, বাড়ির রাস্তায় পানি জমে থাকায় প্রায় সময় বাড়ি রাস্তা পার হতে গিয়ে বইসহ তারা পড়ে যায়। কোমর পরিমাণ পানি পার হয়ে একটা স্কুল ড্রেস পরে বিদ্যালয়ে যেতে জামা-কাপড় ভিজে যায়। ভেজা জামা-কাপড় নিয়ে স্কুলে যেতে হয়। ভেজা কাপড় নিয়েই ক্লাস করতে হয়।  বাড়ির বাসিন্দা রুহি জলদাস বলেন, ১৫ বছর ধরে আমরা এ সমস্যা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়ির রাস্তা ডুবে যায়। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। গত ৪ মাস আমাদের বাড়ির ৪০টির বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। এ সমস্যার সমাধানে সবার সহযোগিতা চাই। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিকট পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে আমাদের বাড়ির রাস্তাটি তৈরি করে দেওয়ার অনুরোধ করছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহজাহান কবির সাজু বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবের নির্দেশে এবং সহযোগিতায় আজ থেকে এই এলাকার খালগুলো পরিষ্কার করা হবে। খাল পরিষ্কার হলে আশাকরি পানি দ্রুত নদীতে চলে যাবে। চরমজলিশপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম এ হোসেন বলেন, আমি গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। রোববার (২৭ আগস্ট) থেকে খাল পরিষ্কারের কাজ শুরু হবে। পানিগুলো যেন দ্রুত নদীতে চলে যায় সেজন্য ব্যবস্থা করা হবে। পানি নিষ্কাশন ঠিকমতো হলে মানুষের কষ্ট কমে যাবে। পানিবন্দি থাকতে হবে না। জেলে বাড়ির রাস্তা নতুন করে করার ব্যাপারে কী করা যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব। গত কয়েক বছর ধরে গ্রামের মানুষ অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন ও নিজ নিজ বাড়িতে মাটি ভরাটের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বর্ষার মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম অনীক চৌধুরী বলেন, আমি জেলে বাড়িতে যাব। সরেজমিন পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে কী করা যায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।  উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, আগামী সোমবার (২৮ আগস্ট) বিকালে আমি ওই বাড়ি দেখতে যাব। জেলে পরিবারের সাথে কথা বলব। পানি নিষ্কাশন সহ রাস্তা তৈরিতে সহযোগিতা করা হবে।
২৭ আগস্ট, ২০২৩
X