যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে। প্লাবিত হয়েছে জেলার ৫ উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের কয়েকশ গ্রাম। জামালপুরের ইসলামপুরের ৮টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের নিচু এলাকা ডুবে গেছে। এ ছাড়া দেওয়ানগঞ্জে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে তীরবর্তী মানুষের মধ্যে। এদিকে রাজবাড়ী গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপরে বইছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে ৪২টি ইউনিয়নের কয়েকশ গ্রাম। সেইসঙ্গে বেড়ে চলেছে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা। গতকাল শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ মিটার। আগের ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে কাজীপুরের মেঘাই পয়েন্টে বুধবার সকালে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৯১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এদিকে যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় ৪২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে এসব অঞ্চলের আবাদি জমি। প্রতিদিনই শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ছে।
জামালপুর: গত সপ্তাহ থেকে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শনিবার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ইসলামপুর সদর, পাথর্শী, বেলগাছা, সাপধরী, নোয়ারপাড়া, চিনাডুলী, কুলকান্দি ও পলবান্ধা ইউনিয়নের ১০ হাজারের অধিক পরিবার। বাড়িঘরে পানি ওঠায় এবং পানিবন্দি হয়ে পড়ায় সংকট দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গো-খাদ্যের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় ৬৫০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অবশিষ্ট ফসল নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ উপজেলায় এরই মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৭০০ পরিবার বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে তৃতীয় দফায় বাড়ছে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও অন্যান্য নদীর পানি। এতে তীব্র হয়েছে নদনদীর ভাঙন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সমীক্ষা চলমান রয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজবাড়ী: গোয়ালন্দে চার দিনে পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। গোয়ালন্দ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার সালমা খাতুন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বর্তমান পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ম্যানেজার মো. সালাউদ্দিন জানান, পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে প্রবল স্রোত। এতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলাচলকারী ফেরিগুলোর চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
মন্তব্য করুন