ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরমজলিশপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মজলিশপুর গ্রামের জয় মঙ্গল জেলে বাড়ির ৪০টির বেশি জেলে পরিবারের ৩ শতাধিক মানুষ দীর্ঘ চার মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ওই বাড়ির স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়ার সময় বাড়ি থেকে যে জামা-কাপড় পরে বের হয় বাড়ির রাস্তায় কোমর পরিমাণ পানি পার হতেই সেটা ভিজে যায়। ভেজা কাপড় পরে প্রতিদিন স্কুলে যায়। শিক্ষার্থীদের মতো নারী-পুরুষ সবার একই অবস্থা।
শনিবার (২৬ আগস্ট) সরেজমিনে জয় মঙ্গল জেলে বাড়ির সামনে গেলে দেখা যায়, বাড়ির চারদিকে পানি জমে আছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বাড়ির রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কোমর পরিমাণ পানি পার হয়ে বৃদ্ধ-শিশুসহ বাড়ির লোকজন আসা যাওয়া করছে।
কালবেলার প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মজলিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জয়ন্ত জলদাস, ওসমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির তুহিন চন্দ্র জলদাস ও নবম শ্রেণির মুক্তা রানী জলদাসের সাথে।
তারা জানায়, বাড়ির রাস্তায় পানি জমে থাকায় প্রায় সময় বাড়ি রাস্তা পার হতে গিয়ে বইসহ তারা পড়ে যায়। কোমর পরিমাণ পানি পার হয়ে একটা স্কুল ড্রেস পরে বিদ্যালয়ে যেতে জামা-কাপড় ভিজে যায়। ভেজা জামা-কাপড় নিয়ে স্কুলে যেতে হয়। ভেজা কাপড় নিয়েই ক্লাস করতে হয়।
বাড়ির বাসিন্দা রুহি জলদাস বলেন, ১৫ বছর ধরে আমরা এ সমস্যা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়ির রাস্তা ডুবে যায়। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। গত ৪ মাস আমাদের বাড়ির ৪০টির বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। এ সমস্যার সমাধানে সবার সহযোগিতা চাই। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিকট পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে আমাদের বাড়ির রাস্তাটি তৈরি করে দেওয়ার অনুরোধ করছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহজাহান কবির সাজু বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবের নির্দেশে এবং সহযোগিতায় আজ থেকে এই এলাকার খালগুলো পরিষ্কার করা হবে। খাল পরিষ্কার হলে আশাকরি পানি দ্রুত নদীতে চলে যাবে।
চরমজলিশপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম এ হোসেন বলেন, আমি গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। রোববার (২৭ আগস্ট) থেকে খাল পরিষ্কারের কাজ শুরু হবে। পানিগুলো যেন দ্রুত নদীতে চলে যায় সেজন্য ব্যবস্থা করা হবে। পানি নিষ্কাশন ঠিকমতো হলে মানুষের কষ্ট কমে যাবে। পানিবন্দি থাকতে হবে না। জেলে বাড়ির রাস্তা নতুন করে করার ব্যাপারে কী করা যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব। গত কয়েক বছর ধরে গ্রামের মানুষ অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন ও নিজ নিজ বাড়িতে মাটি ভরাটের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বর্ষার মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম অনীক চৌধুরী বলেন, আমি জেলে বাড়িতে যাব। সরেজমিন পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে কী করা যায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, আগামী সোমবার (২৮ আগস্ট) বিকালে আমি ওই বাড়ি দেখতে যাব। জেলে পরিবারের সাথে কথা বলব। পানি নিষ্কাশন সহ রাস্তা তৈরিতে সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন