কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০৩:০৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
তিস্তা ও যমুনায় পানি বৃদ্ধি

পানিবন্দি লাখো মানুষ ভাঙন আতঙ্ক

পানিবন্দি লাখো মানুষ ভাঙন আতঙ্ক

উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টির পানিতে দেশের উত্তরাঞ্চলের নদনদীগুলোতে পানি বেড়েছে। গতকাল রোববার বিভিন্ন স্থানের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। তিস্তা ও যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। তবে বড় কোনো বন্যার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে প্রশাসন। কালবেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

গাইবান্ধা: দফায় দফায় বৃষ্টি ও উজানের ঢলে গাইবান্ধায় সব কটি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তার পানিপ্রবাহ বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে তিস্তার চরাঞ্চল, তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসহ লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে এসব এলাকার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে। বেশ কিছু এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুর ১২টায় তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে শনিবারের চেয়ে সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে তিস্তার পানির উচ্চতা ১১ সেন্টিমিটার কমেছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নদনদীর পানি বেড়েছে। তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও পানি কমতে শুরু করেছে।

লালমনিরহাট: উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে পানি কমলেও পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তি কমেনি। রোববার সকাল ৯টা থেকে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। তিস্তার বাঁ তীরে সদর উপজেলার চর গোকুণ্ডা, খুনিয়াছ, বাগডোরা, আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড়, চণ্ডীমারি, বালাপাড়া এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উজান থেকে পাহাড়ি ঢল কম আসায় দ্রুত কমেছে তিস্তা নদীর পানি। প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে নদীর পানি নামতে শুরু করেছে। এখনো বেশ কিছু এলাকার ঘরবাড়িতে নদীর পানি রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক বন্যার খোঁজ রাখছি। জেলায় দুর্যোগকালীন চাল ও টাকা বরাদ্দ আছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা ইউএনও এবং পিআইওর মাধ্যমে শিগগির এসব বিতরণ শুরু হবে।

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বুড়িরহাটে তিস্তা নদীর প্রবল পানির তোড়ে দেবে গেছে আরসিসি অংশের ৩০ মিটার স্পার। গতকাল রোববার সকালে কনক্রিটের আরসিসি স্পারটি দেবে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ্ আল মামুন। তিনি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানির তীব্র স্রোতের আঘাতে স্পারটির মাথার অংশে ৩০ মিটার দেবে গেছে। বাকি ৩০ মিটার রক্ষায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। ১৯৯৫ সালে নির্মিত আরসিসি স্পারটির দৈর্ঘ্য ৬০ মিটার। এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিস্তা নদীর অংশের ওই স্পারটিতে এ ঘটনা ঘটে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ১৫০ মিটার বাঁধ ও আরসিসি স্পারের বাকি ৩০ মিটার রক্ষায় রাতদিন কাজ চলমান থাকবে। আশা করছি বাঁধ ও বাকি আরসিসি স্পার রক্ষা করা সম্ভব হবে।

সাতক্ষীরা: টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে চিংড়ি ঘের ও রাস্তাঘাট। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে চিংড়ি ঘের, রোপা আমন ক্ষেত ও বীজতলা। বিশেষ করে শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও তালা উপজেলার অধিকাংশ চিংড়ি ঘের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে সাতক্ষীরা পৌরসভার নিচু এলাকাও এখন পানির নিচে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এবং একই সঙ্গে বৃষ্টি না কমায় জলাবদ্ধতার কবলে থাকা এলাকাগুলোতে নতুন করে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ।

সিরাজগঞ্জ: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে দ্রুত বাড়তে থাকায় আবারও প্লাবিত হচ্ছে যমুনা অভ্যন্তরে চরাঞ্চল। দফায় দফায় আবাদি জমি প্লাবিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চরের কৃষকরা। শনিবার সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৬১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা: ১২ দশমিক ৯০ মিটার)।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে আবারও যমুনার পানি বাড়ছে। আগামী তিন দিন পানি বাড়বে, বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এবারও ভারি কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই।

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট): তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে গেছে। এজন্য দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের সব জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার সকাল ৬টায় হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের সর্ব বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এদিকে রোববার সকাল ৯টায় তা কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

জানা গেছে, ওই পানিতে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের বড়বাড়ি, মানিকের চড়, সরদার পাড়া, কাতিপাড়া গ্রামসহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় লোকালয়ের ঢুকে পড়েছে পানি। শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে এ যাত্রায় আর পানির বিপৎসীমা অতিক্রম করার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা।

পাউবো তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানির প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। সব জলকপাট খুলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে আপাতত আর বিপৎসীমা অতিক্রম করার কোনো শঙ্কা নেই।

চিলমারী (কুড়িগ্রাম): কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন আমন চাষিরা। চলমান আমন মৌসুমে খরায় ধকল পুষে ওঠে আমন ধানের চারা রোপণ করেছেন কৃষকরা। তবে খরার পর এবার চতুর্থ দফায় সৃষ্ট বন্যায় তলিয়ে গেছে আমন ধানের চারা। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক।

উপজেলা কৃষি অফিসার কুমার প্রণয় বিষাণ দাস জানিয়েছেন, চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে চতুর্থ দফার বন্যায় ৪৫০ হেক্টর আমন ধান পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়া ৪৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে কৃষকদের খোঁজ নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মইলাকান্দা ইউনিয়নের শ্যামগঞ্জে বৃষ্টির পানি জমে ৪০টি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। পানি নিষ্কাশনের ড্রেন ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবেশ করেছে পরিবারগুলোর বসতবাড়িতে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ওই পরিবারগুলোর বাড়ির উঠান পানিতে ডুবে গেছে। পানি উঠে গেছে তাদের বসতবাড়িতে।

গতকাল রোববার পানিবন্দি ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আফরোজা আফসানা বলেন, শ্যামগঞ্জে পানিবন্দি পরিবারগুলো জলাবদ্ধতা নিরসন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য লিখিত দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে খোঁজ নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

থানা ব্যারাকে এএসআইয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

প্রশাসন আমাদের কথায় উঠবে-বসবে গ্রেপ্তার করবে : শাহজাহান চৌধুরী

মারা গেলেন বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখ নজরুল ইসলাম

আপনি কি জানেন, কেন তালার নিচে ছোট্ট ছিদ্র থাকে?

কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের আকস্মিক মৃত্যু

‘নেপাল ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন রাবির সাবেক শিক্ষার্থী

পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতি : শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের রায় ২৭ নভেম্বর

২৪ ঘণ্টায় ৯১ ভূমিকম্প

গুমের দুই মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি ৩ ও ৭ ডিসেম্বর

১০

ছেলেটাকে খুব ছুঁয়ে দেখতে মন চায়: মাহিয়া মাহি

১১

হাওর থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

১২

আসবাবের যেসব রং ঘরকে সুন্দর ও আরামদায়ক দেখাবে

১৩

বাউল শিল্পী আবুল সরকারের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ

১৪

বড় জয়ে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ

১৫

রাত হলেই শিশুপার্কটি হয়ে ওঠে মাদকের আড্ডাখানা

১৬

অপেক্ষা বাড়ছে বাংলাদেশের, দরকার ২ উইকেট

১৭

আয়ারল্যান্ড সিরিজে থাকছেন না তাসকিন, বদলি কে

১৮

নদীগর্ভে বিলীন সড়ক, ৩ জেলার যোগাযোগে দুর্ভোগ

১৯

অসৎ লোককে নির্বাচিত করলে কপালে ভোগান্তিই আসবে : দুদক চেয়ারম্যান

২০
X