নয়নাভিরাম শিরীষ ফুলে সেজেছে প্রকৃতি
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে ফুটে আছে শিরীষ ফুল। শিরীষ ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমীসহ নানা বয়সী পথচারী। ছোট ছোট পাতা ছাপিয়ে গাছের শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে থোকায় থোকায় শিরীষ ফুটে থাকার সৌন্দর্যে প্রকৃতিতেও যেন এক নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে। হোক বসন্ত বা গ্রীষ্ম, ফুলের সৌন্দর্য সবসময়ই মানুষকে আকৃষ্ট করে এবং পরিবেশকে মনোরম করে তোলে। শিরীষ ফুলের মনমাতানো সৌন্দর্যে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে। কিশোরী ও তরুণীরা এ ফুল সৌন্দর্য বাড়াতে খোঁপায় ও চুলের বেনিতে পড়ছে। কোমলমতি শিশুরাও ঝরা এ ফুল নিয়ে খেলা করছে। এ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন সৌন্দর্য প্রেমীরা। এ ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য নজর কাড়ছে মানুষসহ পাখিদেরও। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি তীব্র রোদ এড়াতে পথিক ও শ্রমজীবীরা শিরীষের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ও বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।  বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি সাহিত্যিকের কলমেও উঠে এসেছে শিরীষ ফুলের সৌন্দর্য। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় শিরীষ ফুলকে তুলে এনেছেন এভাবে, ‘প্রাঙ্গণে মোর শিরীষ শাখায় ফাগুন মাসে কী উচ্ছ্বাসে, ক্লান্তিবিহীন ফুল ফোটানোর খেলা।’ প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, ‘শিরীষ-গাছে পেঁচা ডাকছে বুঝি-/অন্ধকারের ভিতর কেমন শিরশির মধুরতা।’ জানা গেছে, আকারে বটগাছ সদৃশ্য শিরীষ এর বৈজ্ঞানিক নাম Albizia lebbeck । এটি Albizia গণের একটি প্রজাতি। এদের কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে। এর ফুল দেখতে খুব সুন্দর হয়। এই গাছের আদি নিবাস ইন্দোনেশিয়া, উত্তর অস্ট্রেলিয়া ও নিউগিনিতে। এ ছাড়াও মালেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান ও চীনেও এই গাছ জন্মে। অ্যামেরিকা ও আফ্রিকায়ও এই গাছের কদর বেড়েছে। এ দেশে শিরীষকে কড়ই, সৃষ্টি কড়ই, রেইনট্রি বা এন্ডিকড়ই নামেও চেনে অনেকে। শিরীষগাছ বট গাছের মতো অনেক জায়গা দখল করে। এই গাছ লম্বায় ১৮ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এর পাতাগুলো ছোট ছোট আকারের সবুজ রঙের হয়। এর ফুল গোলাপি ও সাদার মিশেল, সাদা ও হলুদ রঙের মিশেলে চিকন চিকন কেশরযুক্ত নজরকাড়া হয়ে থাকে। এদের কয়েকটি প্রজাতি হওয়ায় অন্য রঙের ফুল হয় শিরীষের। ফুল শেষে এই গাছে ফল ধরে। ফলের বীজের মাধ্যমে এ গাছ বংশবিস্তার করে থাকে। এ গাছের কাঠ শক্ত ও মজবুত হয়।  আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, শরীষের রয়েছে ঔষধি গুণ। এই গাছের মূলের ছাল চূর্ণ করে নিয়মানুযায়ী ব্যবহার করলে একজিমা নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং হাঁপানি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বিষাক্ত পোকামাকড়ের বিষক্রিয়া নষ্ট করতে এই গাছের ছাল ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও চোখ ওঠা রোগে এই গাছের ফলের বীজ চোখে কাজলের মতো ঘষলে আরোগ্য পাওয়া যায়।  ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, শিরীষ কাঠ গাছ হলেও এর ঔষধি গুণ রয়েছে। এই গাছের মূলের ছাল ও গাছটির ফলের বীজ নানা রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। উপজেলার বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক, গ্রামীণ সড়কসহ বাড়ির পাশে এই গাছ দেখা যায়। এ ছাড়াও এটি প্রকৃতিবান্ধব গাছ। এটি ঝড়ের কবল থেকেও রক্ষা করে থাকে।
০৫ মে, ২০২৪

প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তির পথে চোখ ধাঁধানো পারিজাত ফুল
বসন্তে যে ফুলগুলো প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে তাদের মধ্যে মান্দার বা পারিজাত অন্যতম। কথিত স্বর্গীয় ফুল মান্দারের অগ্নিসদৃশ লাল রং মানুষকে যেমন মুগ্ধ করে তেমনি মুগ্ধ করে বিভিন্ন পাখ-পাখালিকেও। তাই বৃক্ষ জাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ মান্দার বা পারিজাত গাছে বসন্তে যেন বসে পাখিদের মিলনমেলা। পারিজাত ফুল নিয়ে কবি লেখকরা লিখেছেন অনেক গান ও কবিতা। সাহিত্যে ঠাঁই হলেও কাঁটাযুক্ত মাঝারি আকৃতির দেশি মান্দারের ঠাঁই হচ্ছে না আমাদের দেশে। পারিজাতের আদি নিবাস গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল ও মিয়ানমারে। বাংলাদেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল ছাড়াও অনেক এলাকায় কম বেশি মান্দার গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তবে, ক্রমশই কমছে এ গাছের সংখ্যা। সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে চোখ ধাঁধানো পারিজাত বা মান্দার ফুল। ইরিথ্রিনা গণভুক্ত মান্দার বা পারিজাত ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Erythrina variegata। ইরিথ্রিনা গণভুক্ত উদ্ভিদগুলো মাদার বা মান্দার নামে পরিচিত। বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিন্ন ভিন্ন নামে এ ফুলকে চেনেন। এলাকা ভেদে কেউ এ ফুলকে মাদার, কেউ মান্দার, কেউবা কাঁটা মান্দারও বলে থাকেন। কেউ ডাকেন ভিন্ন নামে। ধুসর রঙের শাখা বিশিষ্ট মান্দার গাছ প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচু হতে পারে। শীতকাল শুরুর দিকে এ গাছের পাতা ঝরে যায়। এ সময় গাড় লাল রঙের গন্ধহীন ফুলে ছেয়ে যায় মাদার গাছ। শাখার অগ্রভাগে ফুলের মঞ্জরি হয়। এক একটি মঞ্জরিতে কয়েকটি ফুল হয়। মার্চ-এপ্রিলে গাছে নতুন পাতা গজায়। গ্রাম এলাকায় এখন খুব কমসংখ্যক মান্দার গাছ চোখে পড়ে। বহু বছর বেঁচে থাকে বলে কেউ কেউ জমির আইল চিহ্নিত করে রাখার জন্য মান্দার গাছের শাখা লাগান। কেউ কেউ বাড়ির চার পাশের বেড়া দিতে খুঁটি হিসেবে মান্দার গাছ লাগিয়ে থাকেন। কেউ কেউ মাছ ধরার উদ্দেশ্যে নদী জলাশয়ের স্বল্প পানিতে মান্দার গাছ ফেলে রাখেন। নিরাপদ আবাস ভেবে পানিতে ফেলে রাখা মান্দার গাছের মধ্যে মাছ বসবাস করতে শুরু করে। কয়েক দিন পর পর মানুষ পানিতে ফেলে রাখা মান্দার গাছের চারপাশ জাল দিয়ে ঘিরে মাছ ধরেন। অন্যান্য কাঠের মতো দামি না হওয়ায় অনেকে মান্দার গাছ লাগাতে উৎসাহী হন না। অল্প কিছু শোখিন মানুষ ফুলের প্রতি ভালোবাসার স্মারক হিসেবে এবং সৌন্দর্য বাড়াতে বাড়ির সামনে মান্দার গাছ লাগান। পারিজাতের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সী মানুষ। হিন্দু পুরাণ মতে, অমৃতের সন্ধানে দেবতা ও অসুররা সমুদ্র থেকে অনেক আশ্চর্য বস্তু তুলে এনেছিলেন। সমুদ্র মন্থনে উঠে আসা সেই আশ্চর্য বৃক্ষের নাম পারিজাত। তাই স্বর্গের বর্ণনায় এ বৃক্ষের নাম উঠে এসেছে বার বার। ইন্দ্রের বাগানেরও প্রধান গাছ ছিল এই পারিজাত। পুরাণে পারিজাতকে কল্পতরু হিসেবে অভিহিত করা হয়। চাটমোহর পৌর সদরের উদ্ভিদপ্রেমী বায়েজীদ বোস্তামী জানান, ভেষজ গুণসম্পন্ন মান্দার নামক এ উদ্ভিদ কেউ চাষ করে না। বন জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে এবং অযত্ন অবহেলায় বেড়ে ওঠে। উপকূলীয় যেসব এলাকায় জোয়ার-ভাটা আসা যাওয়া করে সেসব এলাকায় মান্দার গাছের আধিক্য দেখা যায়। দেশের অন্যান্য এলাকায় এ গাছ খুব একটা চোখে পড়ে না।    পরিণত বয়সের মান্দার গাছ চিরে দেশলাইয়ের শলাকা তৈরি ও ইট ভাটার জ্বালানি কাঠ হিসেবে মান্দার গাছ ব্যবহার করায় পরিণত বয়স্ক মান্দার গাছ এখন আর প্রায় চোখে পড়ে না বললেই চলে। সময়ের বিবর্তনে মূল্যের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সাহিত্য, পুরাণে স্থান পাওয়া পারিজাত বা মান্দার হয়ে উঠছে দুর্লভ বৃক্ষ ও ফুল।
০৩ মে, ২০২৪

প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়ন নয়
আধুনিক উন্নয়নের সংজ্ঞায় বলা হয় যে, প্রাণ-প্রকৃতিকে রক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে। কিন্তু এর উল্টোটা দেখা যাচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালীতে। সেখানে উপকূলীয় বন (প্যারাবন) নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতি করে কোনো উন্নয়ন করা যাবে না। যে উন্নয়ন প্রকৃতি ধ্বংস করে, সে উন্নয়ন আমরা চাই না। গতকাল শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ভয়াল ২৯ এপ্রিল ১৯৯১ স্মরণ ও প্যারাবন নিধন প্রতিরোধ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ছোটকাগজ ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’ ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘এডুসেন্ট্রিক’-এর আয়োজনে এ বৈঠক হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিন বলেন, শুধু মহেশখালী নয়, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। শুধু মহেশখালীর সমস্যা বলে একে এড়িয়ে যাওয়াও যাবে না। কোনো একটি এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ তা কেবল সে এলাকার সমস্যা নয় বরং সারা দেশের সমস্যা। আমরা যখন তাপপ্রবাহের কারণে টিকতে পারছি না, ঠিক সেই সময় প্যারাবন ধ্বংস করছি। পরিবেশ নষ্ট করছি। এই অমানবিকতা যারা করেন, তারা মানুষ না। প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক কবি সোহরাব হাসান বলেন, আমরা যদি ভাবি যে, এটা মহেশখালী কিংবা কক্সবাজার অথবা অন্য কোনো জায়গার সমস্যা, তাহলে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। কোনো একটি এলাকার সমস্যা শুধু সেই এলাকার মনে না করে সবাইকেই তা নিজেদের সমস্যা হিসেবে ভাবতে হবে, প্রতিকারের চেষ্টা করতে হবে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময়ই একমাত্র রাষ্ট্রীয় জবাবদিহির বিষয়টা দেখা গিয়েছিল। তখন দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুজন সেনা কর্মকর্তা বরখাস্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে অনেক ভয়াবহ দুর্যোগ হয়েছে; কিন্তু কাউকে সরিয়ে দেওয়া কিংবা স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘটনা ঘটেনি। আমরা বর্তমান সময়েও একটা তাপপ্রবাহের মতো দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই দুর্যোগকে মোকাবিলা করতে হবে। সাংবাদিক মাহবুব কামাল বলেন, বর্তমান সময়ের পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রকৃতি বিরূপ আচরণ করছে। আধুনিক উন্নয়নের ধারণায় বলা আছে যে, জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতিকে রক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নিয়ে এখন ভাবতে হবে। বর্তমান বেড়িবাঁধগুলো ভঙ্গুর। এগুলো সংস্কারের বিষয়ে জোর দিতে হবে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে আশ্রয় গ্রহণকারীদের সব সুযোগ-সুবিধা থাকে। উপকূলীয় প্যারাবন রক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে নতুন নতুন স্থানে সবুজায়ন করতে হবে। দুর্যোগ সম্পর্কে স্থানীয় লোকজনদের সচেতন করতে হবে। তিনি বলেন, দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সেই অঞ্চলে তখন ল্যান্ডলাইনের পরিবর্তে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে দুর্যোগের সময় আক্রান্তদের খাদ্য সরবরাহ করা যায়। সভাপতির বক্তব্যে প্রতিবুদ্ধিজীবীর সম্পাদক সাদাত উল্লাহ খান বলেন, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। তখন লাশ ভাসতেও দেখেছি। ৩৫ বছর ধরে মহেশখালীতে প্যারাবন সৃষ্টি করা হয়েছে, সেগুলো নির্বিচারে ধ্বংস করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১৫ হাজার একর ম্যানগ্রোভ প্যারাবন দুর্বৃত্তরা ফিলিস্তিনের গাজার মতো ধ্বংস করে ফেলেছে। ফলে পরবর্তী সময়ে ফের ঘূর্ণিঝড় হলে মহেশখালী ধ্বংস হয়ে যাবে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ভাষাবিদ ড. মোহাম্মদ আবদুল হাই, লেখক ও গবেষক শাওয়াল খান, কবি ইউসুফ রেজা, ঢাকাস্থ মহেশখালী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, সমাজ গবেষক নির্বাণ পাল, রাজনীতিবিদ মার্শাল পাভেল, এডুসেন্ট্রিকের প্রকাশক মিনহাজ উদ্দিন মিরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. জসীম উদ্দিন, ফাতিমা তাসনিম ঝুমা, ইমরান প্রমুখ।
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা / প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়ন নয়
আধুনিক উন্নয়নের সংজ্ঞায় বলা হয় যে, প্রাণ-প্রকৃতিকে রক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে। কিন্তু এর উল্টোটা দেখা যাচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালিতে। সেখানে উপকূলীয় বন (প্যারাবন) নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতি করে কোনো উন্নয়ন করা যাবে না। যে উন্নয়ন প্রকৃতি ধ্বংস করে সেই উন্নয়ন আমরা চাই না। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ভয়াল ২৯ এপ্রিল ১৯৯১ স্মরণ ও প্যারাবন নিধন প্রতিরোধ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ছোটকাগজ ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’ ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘এডুসেন্ট্রিক’ এর আয়োজনে এটি অনুষ্ঠিত হয়।  অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিন ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের স্মৃতিচারণ করেন।  তিনি বলেন, শুধু মহেশখালি নয়, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তবে শুধু মহেশখালির সমস্যা বলে একে এড়িয়ে যাওয়াও যাবে না। কোনো একটি এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ তা কেবল সেই এলাকার সমস্যা নয়। বরং সারাদেশের সমস্যা। যখন আমরা এখন দাবদাহের কারণে টিকতে পারছি না, ঠিক সেই সময় আমরা প্যারাবন ধ্বংস করছি। পরিবেশ নষ্ট করছি। এই অমানবিকতা যারা করেন, তারা মানুষ না। দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক কবি সোহরাব হাসান বলেন, আমরা যদি ভাবি যে, এটা মহেশখালি কিংবা কক্সবাজার অথবা অন্য কোনো জায়গার সমস্যা, তাহলে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। কোনো একটি এলাকার সমস্যা শুধু সেই এলাকার মনে না করে সবাইকেই তা নিজেদের সমস্যা হিসেবে ভাবতে হবে, প্রতিকারের চেষ্টা করতে হবে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময়ই একমাত্র রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতার বিষয়টা দেখা গিয়েছিল। তখন দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই জন সেনাকর্মকর্তা বরখাস্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে অনেক ভয়াবহ দুর্যোগ হয়েছে। কিন্তু কাউকে সরিয়ে দেওয়া কিংবা স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘটনা ঘটেনি। আমরা বর্তমান সময়েও একটা দাবদাহের মতো দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই দুর্যোগকে মোকাবেলা করতে হবে। সাংবাদিক মাহবুব কামাল বলেন, বর্তমান সময়ের পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রকৃতির বিরূপ আচরণ করছে। আধুনিক উন্নয়নের ধারণায় বলা আছে যে, জীববৈচিত্র্য ও  প্রকৃতিকে রক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে। উপকূলীয় বেড়িবাধ নিয়ে এখন ভাবতে হবে। বর্তমান বেড়িবাধগুলো ভঙ্গুর। এগুলো সংস্কারের বিষয়ে জোর দিতে হবে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে আশ্রয় গ্রহণকারীদের সকল সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। উপকূলীয় প্যারাবন রক্ষা করতে হবে। একইসঙ্গে নতুন নতুন স্থানে সবুজায়ন করতে হবে। দুর্যোগ সম্পর্কে স্থানীয় লোকজনদের সচেতন করতে হবে। দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সেই অঞ্চলে তখন ল্যান্ডলাইনের পরিবর্তে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে দুর্যোগের সময় আক্রান্তদের খাদ্য সরবরাহ করা যায়। সভাপতির বক্তব্যে প্রতিবুদ্ধিজীবীর সম্পাদক সাদাত উল্লাহ খান বলেন, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিলো। তখন মানুষের লাশ ভাসতেও দেখেছি। গত ৩৫ বছর ধরে মহেশখালীতে প্যারাবন সৃষ্টি করা হয়েছে, সেগুলো নির্বিচারে ধ্বংস করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫ হাজার একর ম্যানগ্রোভ প্যারাবন দুর্বৃত্তরা ফিলিস্তিনের গাজার মতো ধ্বংস করে ফেলেছে। ফলে পরবর্তীতে আবার ঘূর্ণিঝড় আসলে মহেশখালী ধ্বংস হয়ে যাবে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ভাষাবিদ ড. মোহাম্মদ আবদুল হাই, লেখক ও গবেষক শাওয়াল খান, কবি ইউসুফ রেজা, সমাজ গবেষক নির্বাণ পাল, রাজনীতিবিদ মার্শাল পাভেল, এডুসেন্ট্রিকের প্রকাশক মিনহাজ উদ্দিন মিরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. জসীম উদ্দিন, ফাতিমা তাসনিম ঝুমা, ইমরান প্রমুখ।
২৬ এপ্রিল, ২০২৪

প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তির পথে স্বর্ণলতা
আমাদের গ্রামীণ প্রকৃতিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছ, উদ্ভিদ ও লতাপাতা। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এসব প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এদের মধ্যে অন্যতম উপকারী ও ঔষধিগুণসমৃদ্ধ ভেষজ পরজীবী স্বর্ণলতা। গ্রামীণ প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে নানা ঔষধি গুণে ভরা উপকারী এ স্বর্ণলতা। একসময় ভেষজ ঔষধ হিসেবে লতাটি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার অঞ্চলে মানুষের নানা রোগে ব্যবহার করা হলেও এখন তা খুব একটা দেখা যায় না। বন-জঙ্গল ও ঝোঁপঝাড় কমে যাওয়ায় আর এলোপ্যাথি চিকিৎসা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছার কারণেই উপকারী এই লতাটি বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।  জানা গেছে, স্বর্ণলতা একটি পরজীবী উদ্ভিদ। এটি পাতাবিহীন সোনালি বর্ণের এক ধরনের নরম সরু লতা। লতাটিই এর শরীর, মূল ও কাণ্ড। এটি একবর্ষজীবী ঔষধি উদ্ভিদ। ছোট-বড় গাছ ও ঝোঁপঝাড়ে জড়িয়ে থাকে। স্বর্ণলতার হস্টেরিয়া নামক চোষক অঙ্গ থাকে, যার মাধ্যমে লতাটি পোষক উদ্ভিদ থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে এ উদ্ভিদের। খুব কম সময়েই বেড়ে উঠতে সক্ষম। ফুল থেকে এক ধরনের ফল জন্মে, ফলের বীজ থেকে এরা বংশবৃদ্ধি করে থাকে। এটি প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের নানা রোগে ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, স্বর্ণলতায় রয়েছে বিস্ময়কর ঔষধি গুণ। আদিকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় স্বর্ণলতা ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটিকে কফনাশক, কৃমিনাশক, খোসপাঁচড়া নিবারণকারী, রক্তদুষ্টিনাশক, পিত্তনাশক ও বায়ুনাশক হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া চুলকানি, রক্তচাপ, হাড়ের চিকিৎসা, ডায়াবেটিস, জন্ডিস, যকৃতের রোগ, শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সার ইত্যাদি জটিল রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়েও এর ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। এটি মানবদেহে এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। স্বর্ণলতা সেদ্ধ করে পানি নিয়মানুযায়ী সেবন করলে মুখের অরুচি ভাব কেটে যায়। শরীরের ক্ষত সারাতে ক্ষতস্থানে স্বর্ণলতা পিষে প্রলেপ দিলে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে যায়। এটি পেটের ব্যথা উপশমে দারুণ কার্যকর, এটি জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং অ্যানথেলমিন্টিক হিসেবে কাজ করে। মুখের ঘা সারাতে এই লতা সেদ্ধ করা জল দিয়ে কুলকুচি করলে মুখের ঘা অল্প সময়েই সেরে যায়। এই লতার নির্যাস পেট ফাঁপা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে অত্যন্ত উপকারী। মানবদেহের ক্ষতস্থানের ব্যাকটেরিয়া দমনে তুলনা নেই এই লতার। স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা প্রাক্তন স্কুলশিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, একসময় দেখেছি আমাদের মা-চাচিরা এই লতাটিকে নানা রোগে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করত। শুধু ঔষধই নয়, বিছানায় ছারপোকা হলে এই লতা এনে বিছানার নিচে বিছিয়ে দিত, এতে ছারপোকা পালিয়ে যেত। তিনি বলেন, এই সময়ে এসে আধুনিক চিকিৎসা আর নতুন প্রজন্মের অনাগ্রহের কারণে স্বর্ণলতার মতো মূল্যবান আরও অনেক ঔষধি উদ্ভিদ ও গাছ পরিবেশে থেকে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (ইউনানি) সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতে অযত্নে থাকা গাছগাছালির যে কতো ঔষধি গুণ রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানি না। শুধু ঔষধি গুণই নয়, এসব গাছগাছালি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করে থাকে। এসব গাছগাছালি আমাদের জন্য অনেক উপকারী। এগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি এই স্বর্ণলতা। তিনি বলেন, স্বর্ণলতা একটি পরজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। এটির অসামান্য ঔষধি গুণ রয়েছে। অথচ অতিমূল্যবান ভেষজ এই উদ্ভিদটি আধুনিক সময়ে এসে খুব একটা দেখা যায় না। সৃষ্টির সব ধরনের গাছ, উদ্ভিদ ও লতা আমাদের কল্যাণের জন্যই টিকিয়ে রাখা জরুরি।
০৩ এপ্রিল, ২০২৪

মৌলভীবাজারের লোকালয়ে মায়া হরিণ, তরুণদের সহযোগিতায় বনে অবমুক্ত
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে লোকালয়ে চলে আসে একটি মায়া হরিণ। এটি ধরে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে স্থানীয় কয়েক তরুণ। শনিবার (৯ মার্চ ) দুপুরে উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের কালীপুর এলাকায় হরিণটি ধরা পড়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করে আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিয়াজ মোর্শেদ রাজু জানান, ধানক্ষেত থেকে হরিণটি ধরে তাকে জানানো হয়। তিনি কমলগঞ্জ রাজকান্দি বন রেঞ্জ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মায়া হরিণটিকে রাজকান্দি রেঞ্জ বনে নিয়ে যান। সেখান থেকে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ হরিণকে নিয়ে যায়। রাজকান্দি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খবর পেয়ে মায়া হরিণটি উদ্ধার করে রেঞ্জ অফিসে নিয়ে আসি। পরে মৌলভীবাবাজর প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করি। লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘হরিণটি সুস্থ থাকায় বিকেলে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাজকান্দি রেঞ্জের কামারছড়া বন বিট এলাকা থেকে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসে হরিণটি।’
১০ মার্চ, ২০২৪

প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তির পথে উপকারী লতাগুল্ম রিফুজি
আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতে রয়েছে নানা রকম গাছ, উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি এসব প্রাকৃতিক সম্পদগুলো আমাদের শারীরিক বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে ইউনানি চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এমনই এক ঔষধি গুণসমৃদ্ধ ভেষজ লতাগুল্ম রিফুজি লতা। এই উপকারী লতাটি একসময় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার এই জনপদের ঝোপঝাড়, বনবাদাড় ও বাড়ির পাশের গাছে উল্লেখযোগ্য হারে জড়িয়ে থাকতে দেখা যেত। তবে সময়ের পরিক্রমায় নানা রোগের চিকিৎসায় আধুনিকায়নের ফলে আর ভেষজ ওষুধের প্রতি মানুষের অনাগ্রহের কারণে ও বনানী স্বল্পতায় এই জনপদের প্রকৃতি থেকে  এই ঔষধি লতাটির উপস্থিতি দিন দিন কমে আসছে। এতে করে এই ঔষধি লতাগুল্মটি বিলুপ্তির হুমকিতে পড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।  রিফুজি লতার বৈজ্ঞানিক নাম Mikania micantha। এটি এমনি এমনিই যেখানে সেখানে জন্মায়। এই লতা অন্য গাছ বা ঝোপঝাড়ে বেড়ে ওঠে। এটি অতি বৃদ্ধিপ্রবল জাতীয় একটি লতাগুল্ম। জানা গেছে, এলোপ্যাথি চিকিৎসা এই জনপদের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছার আগে এই অঞ্চলের মানুষ নানা রোগে এই লতাটি ব্যবহার করতেন। দিন দিন আধুনিক চিকিৎসার উৎকর্ষের ফলে রিফুজি লতাসহ অন্যান্য ভেষজ উদ্ভিদ ও গাছ পরিবেশ থেকে কমতে শুরু করে। এতে করে এসব প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ কমতে থাকার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষ হারাচ্ছে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা আয়ুর্বেদ চিকিৎসার উপকরণ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে রিফুজি লতার অসামান্য ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। উপকারী এই লতা ও তার পাতা প্রাচীনকাল থেকেই মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে এসেছে। রিফুজি লতার পাতার রস নিয়মানুযায়ী খেলে প্রস্রাবের ইনফেকশন রোধ হয় এবং প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ভালো হয়।  মানবদেহের লিভারের সমস্যায় এই পাতার রস উপকারে আসে। চোখ লাল হওয়া রোগে এই পাতার রস পরিমাণ মতো খেলে অল্প সময়েই আরোগ্য মেলে। পাকস্থলী প্রদাহ হলে আদার সাথে তিনটি পাতা চিবিয়ে খেলে প্রতিকার পাওয়া যায়। শরীরের কাটাছেঁড়ায় এই লতার পাতা পিষে ক্ষতস্থানে লাগালে রক্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং ক্ষতস্থানে একই নিয়মে ব্যবহার করলে তা ভালো হয়ে যায়।  এ পাতার রস নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে। চিকেন পক্স বা হাম হলে এ পাতার রস পানির সাথে মিশিয়ে পুরো শরীরে মাখলে এ রোগ থেকে আরোগ্য পাওয়া যায়। রক্তে ইনফেকশন দেখা দিলে পাতার রস সপ্তাহ ধরে খালি পেটে আধা কাপ পরিমাণ এক চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। পেটের এসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিক সারাতে রিফুজি পাতার রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  বিষাক্ত পোকামাকড় কামড় দিলে রিফুজি পাতার রস দিয়ে ধুয়ে ফেললে উপশম পাওয়া যায়। চুলকানি, একজিমা, দাদ হলে এই পাতার রস দিয়ে ধুয়ে রস লাগাতে থাকলে এসব রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া যায়। মুখের মেছতা দূর করতে হলুদের সাথে লেবুর রস হয়ে পাতার রস মিশিয়ে লাগালে মুখের মেছতা ভালো হয়ে যায়। এ পাতার রস কাঁচা হলুদের সাথে মিশিয়ে শরীরে লাগালে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং শরীরের কালচে দাগ দূর হয়। খোসপাঁচড়ার চিকিৎসায় ফলপ্রসূ ওষুধ রিফুজি লতার পাতা। স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা আছমত মিয়া বলেন, ছোটবেলায় হাত-পা বা শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে রিফুজি পাতা পিষে কাপড় দিয়ে বেধে দিলে রক্ত বন্ধ হয়ে যেত। এতে ব্যথানাশক ওষুধও খেতে হতো না। এই আধুনিক সময়ে এসে এখন আর এভাবে কাউকেই চিকিৎসা নিতে দেখা যায় না। এখন আধুনিক চিকিৎসার প্রতি মানুষজন ঝুঁকে গেছে। যার ফলে রিফুজি লতার গুরুত্ব কমে গেছে।  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (ইউনানি) ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, প্রাকৃতিক গাছগাছালির মাধ্যমে দেওয়া আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থা দিন দিন হ্রাস পাওয়ার কারণে প্রকৃতি থেকে ভেষজ উদ্ভিদ, লতা ও গাছ বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী ইউনানি চিকিৎসাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউনানি চিকিৎসক ও ওষুধ সরবরাহ করেছেন। আমাদের সকলের দায়িত্ব ভেষজ উদ্ভিদ, লতা ও গাছ লাগানো। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেষজ বাগানে নানা ধরনের ঔষধি গাছ সংরক্ষিত আছে। 
০৫ মার্চ, ২০২৪

পাখি রক্ষার বার্তা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দিনব্যাপী পাখি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ মেলা শুরু হয়। বার্ড কনজারভেশন ক্লাব বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ মেলার আয়োজন করে। আয়োজক সূত্রে জানা যায়, মেলায় বিভিন্ন পাখির শতাধিক ফটোফ্রেম এবং স্টাফিং করা ৩০টি পাখি দেখানো হচ্ছে। মূলত পাখি সম্পর্কে জানানো এবং পরিবেশে পাখির গুরুত্ব তুলে ধরতে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া শিশুদের মধ্যে পাখির চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়।  বার্ড কনজারভেশন ক্লাবের সদস্য ও রাজী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ডিজিএম হাসনাত রনি বলেন, প্রকৃতি থেকে পাখি কমে যাচ্ছে। শিশুরা পাখি চিনতে পারছে না, পাখি সম্পর্কে জানতে পারছে না তাই পাখি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পাখি, তাদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তিনি আরও বলেন, আমাদের পাঁচটি টিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যারা যত বেশি পাখি চিনতে পারবে তাদের মধ্যে পুরস্কার দেওয়া হবে। মেলার সার্বিক আয়োজনের ব্যাপারে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও মেলায় আয়োজকদের একজন ড. সালেহ রেজা বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে পাখি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা ২০১০ সালে বার্ড কনজারভেশন ক্লাব প্রতিষ্ঠা করি। তারপর থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন পাখির ছবি দিয়ে আলোকচিত্রী প্রদর্শনী করে থাকতাম। গত দুই বছর ধরে এমন মেলার আয়োজন করে আসছি। এতে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের মধ্যে আমরা পাখির রক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বাকেরগঞ্জে বসন্তের শুরুতেই প্রকৃতি সেজেছে শিমুল ফুলে
বাকেরগঞ্জে ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই গ্রাম বাংলার প্রকৃতিতে ফুটছে বাংলার চির চেনা রক্ত লাল শিমুল ফুল। শীত বিদায় নিচ্ছে। সবুজে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ। মৃদু হাওয়ায় নাকে ভেসে আসছে শিমুল ফুলের ঘ্রাণ। প্রকৃতিতে এখন এমনি রুপ। প্রকৃতিতে বইছে দখিনা বাতাস। কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতানে ফাগুনের উত্তাল হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা। গাছে গাছে সবুজ পাতা, মুকুল, ফুল আর কোকিলের ডাক মনে করিয়ে দেয় বসন্তের আগমনী বার্তা। আম, লিচু, লেবুসহ বিভিন্ন গাছের পাতা ও মুকুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এলো ফাগুন, এলো বসন্ত। কিন্তু কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তির পথে মূল্যবান শিমুল গাছ। এখন আর আগের মতো খুব একটা চোখে পড়ে না ফাগুনের রঙে রাঙানো রক্তলাল শিমুল গাছ। বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা মিললো বেশ কয়েকটি ফুটন্ত ফুলের রক্তলাল শিমুল গাছ। গ্রামে শিমুল গাছ ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিষ ফোঁড়া ও কোষ্ঠ কাঠিন্য নিরাময়ে এ গাছের মূলকে ব্যবহার করতো। এখন আর শিমুল গাছ কেউ রোপণ করে না। শিমুল গাছ এমনিতেই জন্মায় তা দিনে দিনে বড় হয়ে একদিন বিশাল আকৃতি ধারণ করে। বসন্তে শিমুল গাছে রক্ত কবরী লাল রঙে ফোটে, দৃষ্টি কেড়ে নেয় সবার মনে। কিছুদিন পরে রক্তলাল থেকে সাদা ধুসর হয়ে তুলা তৈরি হয়। গ্রাম বাংলার এই শিমুল গাছ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দিতো। গ্রামের মানুষেরা এই শিমুলের তুলা কুড়িয়ে বিক্রি করতো। অনেকে নিজের গাছের তুলা দিয়ে বানাতো লেপ, তোষক, বালিশ। শিমুলের তুলা বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে, এমন নজিরও আছে। কিন্তু বর্তমানে শিমুল তুলা গাছ কারণে-অকারণে কেটে ফেলছে মানুষ। অতীতে নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি, দিয়াশলাইয়ের কাঠি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় গাছ রোপণ করা হয়না। বর্তমানে শিমুল তুলা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, আর গার্মেন্টসের ঝুট দিয়ে তৈরি তুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাপাশ তুলা ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কালের বিবর্তন আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাকেরগঞ্জে আগের মতো তেমন চোখে পড়ে না শিমুল গাছ। প্রতিনিয়ত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এ গাছ। যার কারণে গ্রাম বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে, অতি চিরচেনা শিমুল গাছ। এ ব্যাপারে উপজেলা বন কর্মকর্তা মনিন্দ্র হালদার বলেন, বাণিজ্যিকভাবে এখন দেশের কোথাও এই শিমুলগাছ বা তুলা চাষ করা হয় না। এটি প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। ফলে শিমুলগাছ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে মানুষ আসল তুলার মর্ম বুঝতে সক্ষম হতো।
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বিশেষ সাক্ষাৎকারে এম জাকির হোসেন খান / প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো আবশ্যক
এম জাকির হোসেন খান আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী। সদ্য শেষ হওয়া কপ-২৮ সম্মেলন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও তা মোকাবিলায় করণীয়সহ নানা বিষয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কালবেলা: বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৮) শেষ হয়েছে। কেমন হলো এবারের সম্মেলন? এম জাকির হোসেন খান: ২৮তম আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন শেষ হয়েছে। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের প্রধান টার্গেটগুলো অর্জনের জন্য আমাদের হাতে সময় খুব বেশি নেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে এবারের সম্মেলন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান টার্গেট হলো, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নামিয়ে রাখা। সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, আমরা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের যুগ থেকে গ্লোবাল বয়েলিংয়ের যুগে প্রবেশ করেছি। অর্থাৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হবে কি না, সেটা প্রশ্নের সম্মুখীন। ১৮৬০ সালের পর গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রথম বিশ্বে এত বেশি তাপমাত্রা দেখা গেছে। সুতরাং প্যারিস চুক্তির আলোকে প্রতিটি স্বাক্ষরকারী দেশ ও প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী কোম্পানিদের কার্যকর অবদান নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট জবাবদিহিতা পদ্ধতি থাকা দরকার। যার মাধ্যমে বৈশ্বিকভাবে প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশ, তারা কে কতটুকু কার্বন নিঃসরণ এবং তা কী অনুপাতে ২০৩০ সাল নাগাদ কমাবে; ক্ষতিপূরণ হিসেবে জলবায়ু তহবিল কী পরিমাণে প্রদান করবে, সেটা ২০২৪ সালের মধ্যে নির্দিষ্ট করা দরকার। শুধু প্রতিশ্রুতি দিলে হবে না, বরং জলবায়ু তহবিল হিসেবে ক্ষতিপূরণের প্রয়োজনীয় অনুদানভিত্তিক অর্থ কখন প্রদান করা হবে এবং একই সঙ্গে সেই অর্থ কীভাবে, কোথায় কতটুকু ব্যয় করা হবে, সেটা নির্ধারণ করাও জরুরি। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুরো পৃথিবীতে কার্বন নিঃসরণ কতটুকু কখন কমাবে সেটা স্পষ্ট করার পাশাপাশি কীভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন গোল নির্ধারণ করতে হবে। এটা এমন হওয়া উচিত যাতে পুরো বিশ্বের মানুষের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে। প্যারিস চুক্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি দেশের অভিযোজন হতে হবে সেই দেশের চাহিদা অনুযায়ী এবং সেটা স্থানীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা, প্রকৃতি ও প্রতিবেশের সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। নৃতাত্ত্বিক ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে অবশ্যই অভিযোজন বা এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এসব কার্যক্রমে স্থানীয় ইকোসিস্টেমকে মূল্যায়ন করতে হবে। প্রশ্ন হলো, বাস্তবে কোন দেশ কতখানি তা নিশ্চিত করছে, কিংবা যথাযথ ঝুঁকি যাচাই করে কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত না করলে দুর্বল বা খারাপ অভিযোজনের কারণে অর্থের অপচয় হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি দেশ প্রয়োজনীয় অভিযোজন তহবিলের দাবিদার। বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি করেছে, এটা বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের প্রতিবছর কমপক্ষে ৮.৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। যে দেশগুলো অভিযোজন করছে সেই অভিযোজনের জন্য যেরকম তহবিল প্রয়োজন, বাস্তবে তার মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ পাচ্ছে, তাও অধিকাংশ ঋণ। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতিবছর যে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে, সেটা রিকভার করতে বছরে কমপক্ষে ১৫০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। সেখানে জলবায়ু চুক্তির অ্যাডাপটেশন ফান্ডে রয়েছে মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলার। সামনে যত দুর্যোগ বাড়বে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তত বাড়বে। একটা পর্যায়ে অভিযোজন তহবিলের চাহিদা প্রগতিশীল হারে বাড়বে। সুতরাং বৈশ্বিক অভিযোজনের লক্ষ্যমাত্রা বিশেষ করে প্রতিটি পরিবার বা কমিউনিটিতে টেকসই অভিযোজন কতটুকু অর্জিত হলো এবং তা ২০৩০-এর মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা, সেটা কপ-২৯-এ সুনির্দিষ্টভাবে আসা উচিত। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বছরে কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদান করতে হবে। জি২০-ভুক্ত দেশগুলো যদি জীবাশ্ম জ্বালানিবাবদ প্রদত্ত ভর্তুকির মাত্র ১০ শতাংশ কমালে প্রায় বছরে ১৩০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন জলবায়ু অভিযোজন বা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ব্যয় করা যায়। একই সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ কমবে এবং জলবায়ু তহবিলের ঘাটতি পূরণ হবে। বৈশ্বিক জলবায়ু ফান্ড ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেশগুলোর জন্য যে অর্থ ধার্য করা হয় তা দেশভিত্তিক না হয়ে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কার্বন নিঃসরণের হারের ভিত্তিতে ধার্য করা উচিত। শিল্পোন্নত দেশের নেতাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়, যুদ্ধ অর্থায়নের ন্যায় অগ্রাধিকার প্রদান করলেই বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষা পেতে পারে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কোন দেশ কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত সেই অনুযায়ী অর্থ বিতরণ করতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অ্যাডাপটেশনের অর্থ অনুদানভিত্তিক না দিয়ে ঋণ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা এটা চাই না। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে এরই মধ্যে ঋণভারে জর্জরিত, সেটা মাফ করে দিয়ে অনুদান হিসেবে জলবায়ু অর্থায়ন না করলে অদূর ভবিষ্যতে ক্রয়ক্ষমতা কমে বৈশ্বিকভাবে মন্দা ব্যাপক আকারে দেখা দিতে পারে। কালবেলা: বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে এবারের জলবায়ু সম্মেলনে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি? এম জাকির হোসেন খান: বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমাতেই হবে। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের মাত্রা এখন বিপজ্জনক মাত্রার থেকেও দ্বিগুণ বেশি। এরই মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ তা বৃদ্ধি পেয়ে ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছলে যেমনটা বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করেছেন, তার ফলে পৃথিবী অবধারিতভাবে ধ্বংস হতে বাধ্য। বর্তমানে যেভাবে ভোগ করছে পৃথিবীর মানুষ তাতে এরকম তিনটি পৃথিবী দরকার, যেটা আদতেই অসম্ভব। সুতরাং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আগামী সাত বছরের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতেই হবে। যদি কোনো ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, তাহলে এটা সম্ভব নয়। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মানুষ এবং প্রকৃতির সুরক্ষা প্রদানে সামনে শুধু একটাই রাস্তা খোলা। হয়তো জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ী দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে অথবা আমাদের নিজেদের বাঁচার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পৃথিবীতে যে ঝুঁকির পরিমাণ বাড়ছে, সেটা কমাতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ প্রদানে শিল্পোন্নত দেশগুলো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে, উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশগুলোর উচিত ধনী দেশগুলোর জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ওপর সম্মিলিতভাবে দূষণ করারোপ করা। কালবেলা: আমাদের বিদ্যুৎ দরকার এবং তার জন্য আমরা না চাইলেও কয়লা, গ্যাস বা জ্বালানি তেল ব্যবহার করতে বাধ্য হই। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কী করণীয়? এম জাকির হোসেন: কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিতে হইবে কী যে বিশ খাওয়া ভূল ছিলো, এটা কোনো যুক্তিবাদী দেশগুলোর অবস্থান হতে পারেনা। আমরা সকলেই জানি যে শিল্পবিপ্লবের কারণেই সারা পৃথিবী উত্তপ্ত হয়েছে, যার ফলে উন্নয়নের মডেল ভূল ছিলো এবং সে কারণেই টেকসি উন্নয়ন সামনে এসেছে। উন্নয়নের এই রাস্তাটি সঠিক ছিল না। সেই ভুল রাস্তাটি অবলম্বন করে কেনসামনে এগোতে চাইবো, এটা এক ধরনের আত্মহূতি। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের মূল কথা হলো—প্রকৃতি ও পরিবেশকে সুরক্ষা দিয়ে অবকাঠামোভিত্তিক উন্নয়ন। বন ধ্বংস, নদী দূষণ ও খাল-বিল দখল চালিয়ে তো এনভায়রনমেন্টাল বা ক্লাইমেট জাস্টিস অর্জন হতে পারে না। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে দূষণ বা প্রকৃতি ও পরিবেশবিরোধী কার্যক্রমের পেছনে শিল্পোন্নত দেশগুলোরও দায় রয়েছে, যেমন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ি চাষ হয়। সেই চিংড়ির প্রধান ভোক্তা ইউরোপের দেশগুলো। চিংড়ি রপ্তানি করে বছরে মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রকৃতি ও পরিবেশের বা কৃষির যে ক্ষতি হয়, তার পরিমাণ কত হাজার কোটি টাকা সে হিসাব করতে হবে। আমরা এই অর্থনৈতিক অপরচুনিটি কস্টগুলো হিসাব করি না। আমরা এখন যে জিডিপির ভিত্তিতে উন্নয়নের মাপকাঠি নির্ধারণ করি, এটা টেকসই উন্নয়ন পরিমাপের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সুস্থভাবে বাঁচতে হলে আমাদের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পাথওয়েতে যেতে হবে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যখন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়, সেটা সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বা টেকসই জীবিকা অর্জনে তেমন ভূমিকা রাখে না। আমরা যদি নিজেরাই পরিবেশ প্রকৃতি সুরক্ষার শর্তগুলো না মানি তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিবেশ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়ার যৌক্তিকতা হারাবে। আমরা যে তহবিল পাই সেটা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না করি বা দুর্নীতি হয় তাহলে সেটা খারাপ অভিযোজনের উদাহরণ হবে, যা বেড়ে গেলে জলবায়ু দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি বাবদ প্রস্তাবিত অর্থ পাওয়ার যৌক্তিক অবস্থান হারায়। কালবেলা: জলবায়ু দুর্যোগের পরিমাণ বাড়ছে, ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় আন্তর্জাতিক অনুদানভিত্তিক তহবিলের বরাদ্দ অনেক কম, এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কী করণীয়? এম জাকির হোসেন খান: আগে যখন ডিজিটাল প্রযুক্তি ছিল না, স্যাটেলাইট ইমেজ ছিল না তখন যতটা সহজে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স পাওয়া যেত এখন দিনে দিনে সেটা আরও জটিল প্রক্রিয়ায় ঢুকছে। এখন আমাদেরকে আগে প্রমাণ করতে হবে যে আমরা সত্যিকারার্থে ভুক্তভোগী,  দেশের পরিবেশ প্রকৃতির বিপর্যয়ে আমাদের নিজেদের কোন অবদান নেই, বাস্তবে যা কঠিন। যেমন দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণ কতটুকু, এটা প্রশমনযোগ্য কিনা, কতটুকু প্রাকৃতিক কারণে হয়েছে আর কতটুকু চিংড়ি ঘেরের কারণে নিজেদের সৃষ্টি সেটা প্রমাণ করতে হবে, আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ পাওয়ার এখতিয়ার বলবৎ রাখতে হলে।  বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মানুষকে সুরক্ষায় সুনির্দিষ্টভাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আমি সর্বশেষ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলনে সাউথ এশিয়ান রেসিলিয়েন্স ফান্ডের (সার্ফ) ফ্রেমওয়ার্ক উপস্থাপন করেছি। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষের জন্য আমাদের নিজস্ব তহবিল ব্যবস্থাপনা দাঁড় করাতে হবে। প্রতিনিয়ত আমাদের এ অঞ্চলে দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালে সৃষ্টি হয়েছে আটটি ঘূর্ণিঝড়, অর্থাৎ আমাদের এ অঞ্চল আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। অনিশ্চিত আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তা কখন আসবে তার জন্য তো আমরা বসে থাকতে পারি না। জলবায়ুতাড়িত মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে অর্থাৎ খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, নিরাপদ পানির জন্য যাতে আমরা তাৎক্ষণিক কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারি তার জন্য সাউথ এশিয়ান রেসিলিয়েন্স ফান্ড (সার্ফ) দরকার। দক্ষিণ এশিয়ার দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় সেখানেই এ অর্থ কাজে লাগাতে হবে। বিভিন্নভাবে এই ফান্ড এর অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে। যেমন- কর্পোরেট সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটি, কার্বন ট্যাক্স, যাকাত এর পাশাপাশি আমরা দূষণ কর বসাতে পারি। ব্যাক্তিগত অনুদান সহ নানাভাবে অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ থেকে যারা দেশের বাইরে অবস্থান করেন অন্তত এক কোটি মানুষের কাছ থেকে বছরে কমপক্ষে ১০০ ডলারের বন্ড দিয়ে এক বিলিয়ন ডলার জলবায়ু ফান্ড তহবিল সংগ্রহ করা সম্ভব। দক্ষিণ এশিয়ার প্রত্যেকটা রাষ্ট্র এই ফান্ড গঠন করতে পারে।  আমাদের যথার্থ পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করতে হবে। ঢাকায় বসবাসরত একজন ব্যক্তি তার গ্রামের জন্য কোন উদ্যোগে অর্থ সহায়তা করবেন। এরকম অর্থ সহায়তা সব সময় দেখা যায়। এলাকাভিত্তিক বা গ্রাম ভিত্তিক জলবায়ু রেজিলিয়েন্স এর জন্য তারা  সহায়তা করতে পারেন। তেমনি দিল্লি বা কাঠমুন্ডু তে যারা বসবাস করেন তারাও সেসব দেশের গ্রামাঞ্চলে জলবায়ু ফান্ডে অর্থ প্রদান করতে পারেন, শুধু দরকার বিশ্বাসযোগ্য পাবিলিক ফাইন্যান্স ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি পার্টনারশীপ পদ্ধতিতে বিনিয়োগ এবং সবুজ উদ্যোক্তার মাধ্যমে পরিবেশ দূষন ও জলবায়ু দুর্যোগের টেকসই সমাধান সম্ভব। বাংলাদেশে যাকাতের পরিমাণ মোট জিডিপির প্রায় তিন-চার শতাংশ। এই অর্থটি এলোমেলোভাবে খরচ হয়। পাবলিক ফান্ড হিসেবে এই অর্থটি আমরা ব্যায় করতে পারিনি। সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় নয় বরং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে যেখানে যেটা প্রয়োজন সেখানেই এই অর্থটি খরচ করা যেতে পারে। যেকোনো ধরনের দুর্যোগ ঝুঁকিতে বা দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্য বা দুর্যোগ বা অন্যান্য খাতে আমরা ভর্তুকি-ভিত্তিক বীমা সেবা চালু করতে পারি। সেই ফান্ডের অর্থ যাকাত থেকেও যেতে পারে। অর্থাৎ এখানে এক হাজার টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে লক্ষ টাকার চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যাবস্থা করা যেতে পারে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এভাবে প্রত্যেকটা মানুষকে আমরা ঝুঁকির বাইরে নিয়ে আসতে পারি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রয়োজন নিয়ে আলোচনা বেশি হওয়া উচিত, যাতে প্রত্যেকটা দেশ এই ইনোভেশনের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।  কপ-২৮ এ ক্লাইমেট এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ নামে বাংলাদেশে ৮ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড তৈরি করা হবে, মূলতঃ আগেই প্রতিশ্রুত তহবিল প্রধান ভূমিকা রাখবে। কিন্তু তহবিল তৈরি করাটাই বড় বিষয় নয়, এর সঠিক ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। ৭ম পঞ্চবার্ষিকীতে বলা হলেও  এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন জলবায়ু তহবিল কৌশল প্রণ্যন করা হয়নি, জরুরী ভিত্তিতে এটা প্রণয়ন করা উচিত।  কপ-২৮ এ লস এন্ড ড্যামেজ ফাইন্যান্সের কথা বলা হচ্ছে তা নির্দিষ্টভাবে উন্নয়নশীল দেশের অভিযোজন এবং ক্ষয়-ক্ষতি বাবদ প্রতিবছর নির্ধারিত হারে প্রদান করতে হবে। চাহিদাভিত্তিক নয় বরং দেশ ভিত্তিক যে পরিকল্পিত কার্যক্রম অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন দেশগুলোকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। এর বাইরে যে দেশের গভর্ননেন্স  পারফরম্যান্স ভালো থাকবে তারা চাইলেই ঋণ হিসেবে নিতে পারবে। এই ফান্ড থেকে কেনন্দ্রীয়  সরকার সরাসরি নিতে না পারলেও ভালো পারফরমেন্স করা স্থানীয় সরকার নিতে পারে। এনজিও এবং কম্যুনিটিভিত্তিক সংস্থাগুলো তহবিল নিয়ে কম্যুনিটি সবুজ উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই সহনীয়তা নিশ্চিত করতে পারে। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা এই বিষয়কে এনসিওর করতে না পারব ততক্ষণ পর্যন্ত ক্লাইমেট ভালনারেবিলিটি কমবে না বরং বিভিন্ন কর্পোরেটদের বিজনেস অপরচুনিটি তৈরি হবে। আমরা যদি সত্যিই মনে করি মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমানো উচিত তাহলে আমাদেরকে এভাবেই এগোতে হবে।  প্রতি কপ সম্মেলনের আগে সরকারের একটি অবস্থানপত্র তৈরি করা হয়। । প্রত্যেক দেশেই কপ শুরু হওয়ার কমপক্ষে দুই মাস আগে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই অবস্থানপত্র তৈরি করা হয়। প্রত্যেক দেশ এই অবস্থানপত্র জনগণের সামনে উন্মুক্ত করে এবং পরামর্শ গ্রহণ করে। পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি,কারণ যত বেশি মানুষ মতামত প্রদান করবে জাতীয় অবস্থান তত বেশি সমৃদ্ধ হবে, গণতান্ত্রিক চ্ররচা শক্তিশালী হবে। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যায় জনপরামর্শ গ্রহণে সরকারের নীতিনির্ধারকদের একধরনের অনিহা।  বাংলাদেশের যারা এই অবস্থানপত্র তৈরি করেন তারা এটা মিডিয়াতে বা জনসমক্ষে শেয়ার করেন না। অথচ প্যারিস চুক্তিতে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে ভুক্তভোগী স্থানীয় জনগণের মতামতকে গ্রহণ ও তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। জেন্ডার রেস্পন্সিভ হতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে সেগুলোর কোনোটিই যথাযথভাবে করা হয় না।  আমরা যখন জলবায়ু তহবিল নিচ্ছি, যখন জলবায়ু অভিযোজন এর প্রকল্প নিচ্ছি তখন চুক্তির প্রত্যেকটা ধারা ইমপ্লিমেন্ট করার বাধ্যবাধকতা আমাদের রয়েছে। প্যারিস চুক্তি মানা আন্তর্জাতিকভাবে যতটুকু বাধ্যতামূলক তার চেয়ে বেশি বাধ্যতামূলক রাষ্ট্রীয়ভাবে। ক্লাইমেট জাস্টিস এর জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই জায়গায় এসে আমরা গুরুত্ব কম দিচ্ছি। নীতিনির্ধারকরা নির্দেশনা দেয়ার পর অধিদপ্তর থেকে উদ্যোগ কম।   যেকোনো ধরনের পরিবেশ দূষণ বা কার্বন নিঃসরণ এর সমাধান হতে হবে ক্রস বাউন্ডারি। অর্থাৎ আন্তঃদেশীয় সমাধান হতে হবে। কিন্তু পানি, বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে আমরা এ অঞ্চলের জন্য কোন ক্রস বর্ডার এগ্রিমেন্ট করতে পারিনা। ভারতের গঙ্গা নদীতে যখন দূষণ হয় বাংলাদেশ তার ভুক্তভোগী হয়, জাপান বা চীন যখন কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরি করে তখন বাংলাদেশের জনগন দূষণের শিকার বা ভুক্তভোগী হলেও  দেশগুলো আর্থিক সুবিধা নিলেও দূষনের দায় দায় নিচ্ছে না। ক্রস বর্ডার সমাধানের সিদ্ধান্ত ছাড়া এককভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাবস্থাপনা বিজ্ঞানভিত্তিক বা প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ অবস্থান। সুতরাং এলডিসি দেশগুলোকে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের সমন্বিত ব্যাবহার করে টেকসই অগ্রগতি নিশ্চিতে একটি সুনির্দিষ্ট অবস্থান গ্রহণ করতে হবে যে, ক্রস বর্ডার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেমন ব্রাজিল দাবি করতে পারে আমাজন জঙ্গল তাদের অংশ তারাই একক সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু প্ররথিবীর ফুস্ফুস আমাজন বনের কোন ক্ষতি হলে তার নেতিবাচক প্রভাব সারা পৃথিবীর উপরেই পড়বে। চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের বন শুধুমাত্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য না, বরং সমগ্র বাংলাদেশের এবং এই অঞ্চলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।  নীতিনির্ধারকরা যখন বলেন জীবাশ্ম জ্বালানি সস্তা‌ তখন তারা এখানে অর্থনীতির কথা এড়িয়ে যান। অপরচুনিটি কস্ট বিচার করলে জীবাশ্ম জ্বালানি সবচেয়ে বেশি খরচ বয়ে নিয়ে আসে। তেমনি অভিযোজন এর ক্ষেত্রেও একই রকম। অভিযোজনের অর্থ সময়মতো না পেয়ে পাঁচ বছর পরে পেলে অর্থনৈতিক ব্যায় বেড়েজলবায়ু সহনশীলতা অনেক বেশি কস্ট বার্ডেন হয়ে যাচ্ছে।  দেখা গেছে দুর্যোগের পরে সারা পৃথিবীতে যেকোনো দেশের ঋণ গ্রহণের হার বেড়ে যায় ১০০%-২০০% পর্যন্ত। সুতরাং লস অ্যান্ড ড্যামেজ ও এডাপটেশন বাবদ অনুদানের অর্থ সঠিক সময়ে দেওয়া না হলে দেশটি আলটিমেটলি ঋণ-ফাদের দিকে আগাবে। একবার এই ঋণ ফাঁদে পড়লে তা থেকে দেশটি আর বেরোতে পারবে না। ফলে আমরা তো সেটা চাচ্ছি না, আমরা চাই জলবায়ু তহবিল দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে জলবায়ু এবং ঋণ উভয় ফাঁদ থেকে বের করতে।  আমরা যদি ব্যক্তিগতভাবে সচেতন না হই, যদি ব্যক্তিগতভাবে কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে সচেতন না হই তাহলে অন্যকে বলার নৈতিক অধিকার থাকে না। কপ-২৮ আমাদেরকে পুনরায় সুযোগ এনে দিয়েছিলো - হয়তো আমরা এনার্জি ট্রানজিশনের দিকে যাব, জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় অর্থ দেওয়া হবে এবং একই সময়ে মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে। প্যারাডাইম শিফট এর দিকে যেতে হবে অন্যথায় আমরা একটি বৈশ্বিক বিপর্যয়ের দিকে এগুতে থাকবে  আমরা এখন একটি টিপিং পয়েন্টের কাছে রয়েছি। একবার তাতে পৌঁছে গেলে আমরা চাইলেও পৃথিবীর সার্বিক ধ্বংশ থেকে কেউ ফিরতে পারবো না। আমরা যদি যুদ্ধবাজ আর মুনাফাখোরদের কবল থেকে পৃথিবীটাকে সুরক্ষা দিতে পারি তাহলেই পৃথিবী টিকবে এবং এর মানুষ ও প্রকৃতি বাঁচতে পারবে।    
২৫ জানুয়ারি, ২০২৪
X