আধুনিক উন্নয়নের সংজ্ঞায় বলা হয় যে, প্রাণ-প্রকৃতিকে রক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে। কিন্তু এর উল্টোটা দেখা যাচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালিতে। সেখানে উপকূলীয় বন (প্যারাবন) নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতি করে কোনো উন্নয়ন করা যাবে না। যে উন্নয়ন প্রকৃতি ধ্বংস করে সেই উন্নয়ন আমরা চাই না।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ভয়াল ২৯ এপ্রিল ১৯৯১ স্মরণ ও প্যারাবন নিধন প্রতিরোধ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ছোটকাগজ ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’ ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘এডুসেন্ট্রিক’ এর আয়োজনে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিন ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের স্মৃতিচারণ করেন।
তিনি বলেন, শুধু মহেশখালি নয়, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তবে শুধু মহেশখালির সমস্যা বলে একে এড়িয়ে যাওয়াও যাবে না। কোনো একটি এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ তা কেবল সেই এলাকার সমস্যা নয়। বরং সারাদেশের সমস্যা। যখন আমরা এখন দাবদাহের কারণে টিকতে পারছি না, ঠিক সেই সময় আমরা প্যারাবন ধ্বংস করছি। পরিবেশ নষ্ট করছি। এই অমানবিকতা যারা করেন, তারা মানুষ না।
দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক কবি সোহরাব হাসান বলেন, আমরা যদি ভাবি যে, এটা মহেশখালি কিংবা কক্সবাজার অথবা অন্য কোনো জায়গার সমস্যা, তাহলে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। কোনো একটি এলাকার সমস্যা শুধু সেই এলাকার মনে না করে সবাইকেই তা নিজেদের সমস্যা হিসেবে ভাবতে হবে, প্রতিকারের চেষ্টা করতে হবে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময়ই একমাত্র রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতার বিষয়টা দেখা গিয়েছিল। তখন দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই জন সেনাকর্মকর্তা বরখাস্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে অনেক ভয়াবহ দুর্যোগ হয়েছে। কিন্তু কাউকে সরিয়ে দেওয়া কিংবা স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘটনা ঘটেনি। আমরা বর্তমান সময়েও একটা দাবদাহের মতো দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই দুর্যোগকে মোকাবেলা করতে হবে।
সাংবাদিক মাহবুব কামাল বলেন, বর্তমান সময়ের পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রকৃতির বিরূপ আচরণ করছে। আধুনিক উন্নয়নের ধারণায় বলা আছে যে, জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতিকে রক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে। উপকূলীয় বেড়িবাধ নিয়ে এখন ভাবতে হবে। বর্তমান বেড়িবাধগুলো ভঙ্গুর। এগুলো সংস্কারের বিষয়ে জোর দিতে হবে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে আশ্রয় গ্রহণকারীদের সকল সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। উপকূলীয় প্যারাবন রক্ষা করতে হবে। একইসঙ্গে নতুন নতুন স্থানে সবুজায়ন করতে হবে। দুর্যোগ সম্পর্কে স্থানীয় লোকজনদের সচেতন করতে হবে। দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সেই অঞ্চলে তখন ল্যান্ডলাইনের পরিবর্তে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে দুর্যোগের সময় আক্রান্তদের খাদ্য সরবরাহ করা যায়।
সভাপতির বক্তব্যে প্রতিবুদ্ধিজীবীর সম্পাদক সাদাত উল্লাহ খান বলেন, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিলো। তখন মানুষের লাশ ভাসতেও দেখেছি। গত ৩৫ বছর ধরে মহেশখালীতে প্যারাবন সৃষ্টি করা হয়েছে, সেগুলো নির্বিচারে ধ্বংস করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫ হাজার একর ম্যানগ্রোভ প্যারাবন দুর্বৃত্তরা ফিলিস্তিনের গাজার মতো ধ্বংস করে ফেলেছে। ফলে পরবর্তীতে আবার ঘূর্ণিঝড় আসলে মহেশখালী ধ্বংস হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ভাষাবিদ ড. মোহাম্মদ আবদুল হাই, লেখক ও গবেষক শাওয়াল খান, কবি ইউসুফ রেজা, সমাজ গবেষক নির্বাণ পাল, রাজনীতিবিদ মার্শাল পাভেল, এডুসেন্ট্রিকের প্রকাশক মিনহাজ উদ্দিন মিরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. জসীম উদ্দিন, ফাতিমা তাসনিম ঝুমা, ইমরান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন