বাংলাদেশের প্রিমিয়াম ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এবারের আসর জানুয়ারির ১৯ তারিখ শুরু হয়ে পর্দা নামছে আজ। বরিশাল ও কুমিল্লার মধ্যকার ফাইনালের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৪৬ ম্যাচের এই আসর। সাত দলের এই টুর্নামেন্টে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হাতে গিয়েছে সর্বোচ্চ চার বারের শিরোপা। তার মধ্যে সর্বশেষ দুই আসরে টানা শিরোপা জয় কুমিল্লার ফ্রাঞ্চাইজিটির। এবার তাই তাদের সামনে হ্যাটট্রিক শিরোপার হাতছানি। তবে তাদেরকে টক্কর জানাতে প্রস্তুত এখন পর্যন্ত শিরোপা ছুঁয়ে না দেখা বরিশাল। সবমিলিয়ে তিনবার ফাইনাল খেললেও চ্যাম্পিয়ন তকমা পাওয়া হয়নি দলটির। তাই ফরচুন বরিশালের সামনে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নের স্বাদ পাবার সুযোগ।
বিপিএলের দশম আসরের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার। আসরের প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে হেরে যায় লিটন দাসের দল। প্রথম ৪ ম্যাচে তাদের নামের পাশে ছিল ৪ পয়েন্ট। তখন প্লে-অফ খেলা নিয়েই শঙ্কা থাকা লিটন দাসের দল অবশ্য এরপর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। টানা ৫ জয়ে ৯ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে পরের রাউন্ডে এক পা দিয়ে রাখে কুমিল্লা।
শেষ পর্যন্ত ১২ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থেকে কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করে তারা। প্রথম কোয়ালিফায়ারে টেবিল টপার রংপুর রাইডার্সকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে প্রথম সুযোগেই ফাইনাল নিশ্চিত করে গত আসরের শিরোপাজয়ী কুমিল্লা।
এর আগে চারবার ফাইনাল খেলে চারবারই শিরোপা জেতা কুমিল্লার এখন পর্যন্ত ফাইনালে হারের রেকর্ড নেই। অতীত পরিসংখ্যান মতো খেলা হলে এবারের ফাইনালেও প্রতিপক্ষের বড় পরীক্ষা নিতে পারে কুমিল্লা।
দলটার প্রধান শক্তি অবশ্য তাদের হার্ডহিটার ব্যাটাররা। আজকেও ওপেনিংয়ে লিটন দাসের সঙ্গী হিসেবে দেখা যেতে পারে সুনীল নারিনকে। মূলত লিটনের ওপরই থাকবে দলকে ভালো শুরু এনে দেবার দায়িত্ব। এই অভিজ্ঞ ওপেনারের সাম্প্রতিক ফর্মও অবশ্য তার পক্ষেই কথা বলছে। সবমিলিয়ে অধিনায়ককে ব্যাট হাতেও দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তার সঙ্গী নারিন অনেকটা 'ফ্রি' উইকেট। তিনি কিছু রান করে দিলে সেটা হবে বোনাস।
তিনে খেলবেন ইনফর্ম তাওহীদ হৃদয়। এই তরুণ ব্যাটার হতে পারেন লিটনের ট্রাম্পকার্ড। মিডল অর্ডারে দেখা যেতে পারে জনসন চার্লস, মঈন আলী আন্দ্রে রাসেলদের। এই তিনজনই হার্ডহিটার। নিজেদের দিনে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। লোয়ার মিডল অর্ডারে দেখা যাবে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও জাকের আলী অনিককে।
স্পিনে দলটার নেতৃত্ব দেবেন তানভীর ইসলাম। এই অফ স্পিনারকে প্রয়োজনে সঙ্গ দেবেন মঈন আলী। পেস বোলিংয়ে দলটার কিছুটা ঘাটতি আছে। চোট থেকে ফিরে খেলতে পারেন মুস্তাফিজ। তার সঙ্গে দেখা যেতে পারে মুশফিক হাসানকে। আর রাসেলের মিডিয়াম পেসেরও সার্ভিস পাবে ভিক্টোরিয়ান্সরা।
অন্যদিকে প্রথমবার শিরোপা জয়ের মিশনে থাকা বরিশালের ফাইনালে আসার রাস্তাটা ছিল কঠিন। গ্রুপ পর্বে ১২ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়ে কোয়ালিফাই করে তারা। এলিমিনেটরে চট্টগ্রামকে উড়িয়ে তাদের নতুন যাত্রা শুরু হয়। এরপর কোয়ালিফায়ারেও রংপুরের বিপক্ষে সহজেই জয় পায় তামিম ইকবালের দল।
ফাইনালে দলটার সবচেয়ে বড় পুঁজি অভিজ্ঞতা। জাতীয় দলের একাধিক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন বরিশাল শিবিরে। ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গে দেখা যেতে পারে কাইল মেয়ার্সকে। দুজনই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। তিনে খেলবেন সৌম্য সরকার। এই বাঁহাতি ব্যাটারও আসরজুড়ে দলের প্রয়োজন বুঝে ঠান্ডা মাথায় খেলেছেন। সবমিলিয়ে দলটার টপ অর্ডার নিশ্চিতভাবেই স্বস্তি দিচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
চারে দেখা যাবে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে। পাঁচে আছেন ডেভিড মিলার। এই প্রোটিয়া ব্যাটার হতে পারেন ট্রাম্পকার্ড। মিডল অর্ডারে আরেক ভরসার নাম মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই তিন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মিডল অর্ডারকে মজবুত করেছে।
ফিনিশিংয়ে মেহেদি হাসান মিরাজ কিংবা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনরা নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। তাছাড়া জেমস ফুলার ওবেদ ম্যাকয়রাও ব্যাট চালাতে পারেন। সবমিলিয়ে লম্বা ব্যাটিং লাইন আপ তাদের।
দলটার স্পিন বিভাগের নেতৃত্বে থাকবেন তাইজুল ইসলাম। তার সঙ্গে আছেন মেহেদি মিরাজ। আর পেস বিভাগে ওবেদ ম্যাকয়, ফুলার, সাইফুদ্দিনদের সঙ্গে আছেন মেয়ার্সও।
শুক্রবার (১ মার্চ) মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শিরোপার লড়াইয়ে ফরচুন বরিশালের প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ম্যাচটি মাঠে গড়াবে।
মন্তব্য করুন