দীর্ঘদিন ধরে ফুটবলে প্রত্যাশা আর বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান থাকলেও, সম্প্রতি কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় দলে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসছে নতুন প্রবাসী ফুটবলারদের অন্তর্ভুক্তি—বিশেষ করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হামজা চৌধুরীর আগমন।
৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে অভিষেকেই গোল করে নজর কাড়েন এই মিডফিল্ডার। ম্যাচ শেষে তার মুখেই ফুটে ওঠে আত্মবিশ্বাস আর পরিকল্পনার ছাপ—'আমরা আগ্রাসী ফুটবল খেলতে চাই সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। আমরা জানি আমাদের সামনে বড় সুযোগ রয়েছে। দেশের মাঠে খেলছি, দলের উন্নতি স্পষ্ট, এবার ফল আনতেই হবে।'
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এই ম্যাচ শুধু একটি বাছাইপর্বের খেলা নয়, বরং অনেকদিক থেকে বাংলাদেশের ফুটবলের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে। কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা এবং পুরো দল এই ম্যাচকে ঘিরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। হামজার ভাষায়, 'আমরা এখন দলের প্রতি মনোযোগী, উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। আমরা আগ্রাসী খেলব, ইনশাআল্লাহ জয়ও আসবে।'
ফুটবলে নতুন জোয়ার আনার ক্ষেত্রে সামিত সোম ও ফাহমিদুল ইসলামের মতো ফুটবলারদের যুক্ত হওয়াও বড় ভূমিকা রাখছে। ফাহমিদুল ইতোমধ্যে অভিষেক সেরে ফেলেছেন, আর সিঙ্গাপুর ম্যাচে অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন সামিত। বিদেশের ঘরানায় খেলা এই তিন তরুণ এখন লাল-সবুজের জার্সিতে বাংলাদেশকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।
ভুটানের বিপক্ষে করা গোলকে নিজের ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি বলে মনে করছেন হামজা। 'আমার স্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করেছিলাম, হয়তো এটা আমার ক্যারিয়ারের শীর্ষ দুই গর্বিত মুহূর্তের একটি। ম্যাচটা ছিল ঘরের মাঠে, গ্যালারিতে ছিলো প্রচুর মানুষ, যারা আমাকে সমর্থন করেছিল।'
প্রস্তুতির ফাঁকে ঈদের নামাজেও অংশ নিয়েছেন হামজা। তবে ব্যস্ত ট্রেনিং সেশন ও মিটিংয়ের কারণে এখনও পুরোপুরি বাংলাদেশ ঘুরে দেখা হয়ে ওঠেনি তার। 'আমি আসলে বেশি বের হতে পারি না, ট্রেনিং আর মিটিংয়ে ব্যস্ত। তবে ঈদের দিনে নামাজে গিয়েছিলাম, ভালোই লেগেছে।'
প্রায় এক দশক পর আবারও সিঙ্গাপুরের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ১০ জুন অনুষ্ঠিতব্য এই ম্যাচে শুধু ফুটবলীয় দক্ষতাই নয়, আত্মবিশ্বাস, মনোযোগ ও আক্রমণাত্মক মনোভাবই হতে যাচ্ছে মূল হাতিয়ার। আর সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত হামজা চৌধুরী।
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এই ম্যাচে জয় পেলে নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে বাংলাদেশের ফুটবলে। হামজাদের আত্মবিশ্বাস ও কৌশল যদি মাঠে বাস্তবায়ন হয়, তাহলে হয়তো বহুদিন পর বাংলাদেশের ফুটবল আবারও আশার আলো দেখতে পারে।
মন্তব্য করুন