

সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের দেশত্যাগ এবং বিদ্রোহী নেতা মোহাম্মদ শারার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ, দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার পর দেশকে স্থিতিশীল করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় আসেন এ বিদ্রোহী নেতা। তবে এক বছর পরও দেশটির সামনে পুনর্গঠনের বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট আসাদের পতনের পর স্থিতিশীলতা ফিরেছে, তবে এর পর দেশটি আর নতুন করে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েনি, যা আরব বিশ্বে সরকার পরিবর্তনের পর অনেক দেশে দেখা গেছে। একই সঙ্গে নতুন সরকার নাগরিক জীবনে কঠোর ধর্মীয় বিধিনিষেধও আরোপ করেনি। রাজধানী দামেস্কে বার ও রেস্তোরাঁ খোলা আছে, নারীদের পোশাক বা বাইরে বেরোনোর ওপর নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এ কারণে মোহাম্মদ শারাকে অনেকেই বাস্তববাদী নেতা হিসেবে দেখছেন।
অর্থনীতি এখনো ধ্বংসস্তূপে: যুদ্ধ ও দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞায় সিরিয়ার অর্থনীতি এখনো চরম সংকটে। ২০১১ সাল থেকে দেশটির জিডিপি কমেছে ৯১ শতাংশ। চাকরি, বাসস্থান, চিকিৎসা—সব ক্ষেত্রেই বড় ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় মাত্র এক বছরে সব সংকট কাটানো সম্ভব নয়—তবুও শারার নীতি ও পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ক্ষমতা কাঠামো নিয়ে সমালোচনা: সমালোচকদের অভিযোগ, শারা রাষ্ট্রযন্ত্র পুনর্গঠনের বদলে নিজের ঘনিষ্ঠদের নিয়ে নতুন ক্ষমতা কাঠামো তৈরি করছেন। গত মাসে তিনি একটি নতুন শুল্ক কর্তৃপক্ষ গঠন করে সেটির দায়িত্ব দেন তার এক সাবেক যোদ্ধাকে। এতে কর আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ রাষ্ট্রের প্রচলিত ব্যবস্থার বদলে প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ: চলতি বছরে আলাউইত ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের ওপর দুটি বড় হামলার পর সংখ্যালঘুদের উদ্বেগ বেড়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট শারা এসব হামলার নিন্দা করেছেন, তবুও সংখ্যালঘুরা মনে করছেন—বিদ্রোহী আন্দোলন থেকে উঠে আসা শারার নেতৃত্বে সুন্নিপ্রধান রাষ্ট্রে তারা নতুন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন।
ক্ষমতার কেন্দ্র এখনো সীমিত পরিসর: দেশ পরিচালনার ক্ষমতা এখনো প্রেসিডেন্টের অল্প কয়েকজন আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীর হাতে কেন্দ্রীভূত। বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রের মন্ত্রণালয়গুলোকে পাশ কাটিয়ে নয়, বরং শক্তিশালী করে তোলাই জরুরি।
আগামী পার্লামেন্ট অধিবেশন বড় পরীক্ষা: আগামী জানুয়ারিতে বসতে যাওয়া নতুন পার্লামেন্ট শারার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিরোধী নেতাদের মত, যদি পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা বা সংশোধনে সক্ষম হয়, তবে দেশটি গণতান্ত্রিক পথে এগোতে পারে। অন্যথায় সংসদ আগের মতোই আনুষ্ঠানিকতা হয়ে থাকবে।
মন্তব্য করুন