সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২
আজহার ইমাম, বিরামপুর (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৩, ১১:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাঁশের খাঁচা বুনে চলে সংসার

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার হরেকৃষ্টপুর ইসলামপাড়ার বাড়িতে বাঁশের খাঁচা বুনছেন জোছনা বেগম। ছবি : কালবেলা
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার হরেকৃষ্টপুর ইসলামপাড়ার বাড়িতে বাঁশের খাঁচা বুনছেন জোছনা বেগম। ছবি : কালবেলা

পাঁচ বছর ধরে বুকে টিউমার নিয়ে চলছেন জোছনা বেগমের (৪৭) স্বামী বাবু মিয়া। ভারী কাজ করতে পারেন না। এ দম্পতির বড় ছেলে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে থাকছেন। বাধ্য হয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে জোছনা বেগমকে। ছোট ছেলে আলমগীর হোসেন বাঁশ কেটে বাতা তোলেন। বাবু মিয়া ধারালো দা দিয়ে সেই বাতা চেঁছে নিখুঁতভাবে চ্যাপ্টা ও সরু কাঠি তৈরি করেন। সেই কাঠি দিয়ে খাঁচা (টোপা) বোনেন জোছনা বেগম। সেই খাঁচা বিক্রি করে চলে জোছনা বেগমের সংসার।

এসব খাঁচা গ্রামের গৃহিণীরা হাঁস-মুরগি পালনে ব্যবহার করেন। আবার কেউ কেউ খাঁচায় রান্নার খড় বা গাছের শুকনা পাতা সংগ্রহ করেন। সংগ্রামী এ নারী দৈনিক কালবেলাকে জানান, প্রতিদিন সকালে ঘরের কাজ শেষ করে বাড়ির সামনে শুরু করেন খাঁচা তৈরির কাজ। পাশে বসে বাঁশের কাঠির জোগান দেন স্বামী ও ছেলে। মাঝেমধ্যে তাদের সঙ্গে কাজে যোগ দেন তার ভাগনে আবুল হোসেন (৪৫) ও আবদুর রহিম (৪১)।

পাঁচজনের গল্পের তালে জোছনা বেগম খাঁচার ফ্রেমে একটার পর একটা বাঁশের কাঠি গাঁথেন। মাঝে মাঝে সেখানে আসেন পাড়ার অন্য নারীরা। একদিকে চলে গল্প, অন্যদিকে জোছনা বেগমের হাত ঘুরে বেড়ায় বাঁশের কাঠির ফ্রেমে। গল্পে গল্পে এভাবেই ১৪-১৫টি গোলাকৃতির খাঁচা বোনেন তিনি।

জোছনা বেগমের বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার হরেকৃষ্টপুর ইসলামপাড়ায়। অসুস্থ স্বামী, ছেলে, ছেলের স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে অভাবের সংসার তার। তিন শতক জমিতে টিনের বেড়া ও ছাউনির নড়বড়ে ঘর। দিনশেষে খাঁচা বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে জোছনা বেগমের সংসার। সরকারি সহযোগিতা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে মনে করেন জোছনা বেগম।

সারা দিনে ২০টি করে টোপা তৈরি করেন জানিয়ে সংগ্রামী এ নারী বলেন, কখনো গ্রাম থেকে আবার কখনো স্থানীয় বাজার থেকে বাঁশ কিনে আনেন ছেলে আলমগীর। প্রতিটি বাঁশ ২০০ থেকে ২১০ টাকা। একটি ভালোমানের বাঁশ থেকে পাঁচ-সাতটি খাঁচা তৈরি হয়। বিরামপুরের চাঁদপুর, পলিখাপুর, কেটরা, আয়ড়া, দেশমা, হাকিমপুরের ডাঙাপাড়া, ফুলবাড়ী, পার্বতীপুরের আমবাড়ী থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে ৯০ থেকে ১১০ টাকা দরে এসব খাঁচা কিনে নিয়ে যান। আর এগুলো বিভিন্ন হাটে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

জোছনা বেগমকে অন্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা বলে মনে করেন মুকুন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। তিনি কালবেলাকে জানান, ‘একজন পিছিয়ে পড়া নারী হয়েও জোছনা বেগম সংসারের হাল ধরছেন, নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলছেন। ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো সহযোগিতার সুযোগ থাকলে তাকে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মোশাররত জাহান কালবেলাকে জানান, ‘তার দপ্তর থেকে জোছনা বেগমের বিভিন্ন প্রশিকক্ষণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তারা যদি একটি সমিতি গঠন করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তাহলে সেই সমিতিকে নিবন্ধনের বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে। সমিতির নিবন্ধন হলে প্রতিবছর একটি আর্থিক অনুদান পাওয়ার সুযোগ থাকবে।’

খাঁচা বোনার ফাঁকে কথা হয় জোছনা বেগমের সঙ্গে। তিনি আরও বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে ৩০ বছর ধরে স্বামীকে খাঁচা বোনার কাজে সহযোগিতা করেছি। অসুস্থতার কারণে তিনি আর আগের মতো খাঁচা বুনতে পারেন না। তারা বাপ-বেটা আমাকে কাঠি তুলে দেন। আর আমি এখন খাঁচা বুনি। খাঁচা বেচে যা আয় হয়, তা দিয়েই আমাদের কষ্টে সংসার চলে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার কালবেলাকে জানান, উপজেলা সমাজসেবা দপ্তর, উপজেলা মহিলাবিষয়ক দপ্তর ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। জোছনা বেগম উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নতুন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন / মাত্র ১০০ টাকায় করা যাবে দক্ষতা, চাকরি কিংবা ভর্তি প্রস্তুতির কোর্স

সড়কের মাঝখানে গাছ রেখেই ঢালাই সম্পন্ন 

বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

টানা ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ জবির ভিসি

৬৪ জেলার নেতাকর্মীদের নতুন বার্তা দিল এনসিপি

ম্যানইউর জয়হীন ধারা অব্যাহত, এবার ফুলহামের মাঠে ড্র

ব্র্যাক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা-পেশাজীবীদের নিয়ে ‘আগামীর পথ’ অনুষ্ঠিত

প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের অনন্য কীর্তি

জুলাই যোদ্ধা শহীদ তানভীরের চাচা খুন

ভরা জোয়ারে ডুবে যায় বিদ্যালয়, শঙ্কায় অভিভাবক-শিক্ষার্থী

১০

যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন তৌহিদ আফ্রিদি

১১

তারের পর এবার চুরি হলো সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট

১২

‘এবার আমাদের পালা’ স্বরূপ আচরণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে : টিআইবি

১৩

ভূমি অধিগ্রহণে আটকে আছে ইউলুপ, ইউটার্নে মরছে মানুষ!

১৪

কনে দেখতে যাওয়ার পথে নৌকাডুবি : নিখোঁজ দুজনের মরদেহ উদ্ধার

১৫

থাইল্যান্ডের ক্লাবে আবার ভাইরাল ‘কাঁচা বাদাম গার্ল’ অঞ্জলি

১৬

চাকসুতে সমকামিতা সমর্থক ও মাদকাসক্তদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি

১৭

ঠাকুরগাঁওয়ের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১

১৮

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১০ শয্যার এইচডিইউ উদ্বোধন

১৯

এবার তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেপ্তার

২০
X