বছরের পর বছর ধরে চলছে নির্মাণকাজ আর প্রতিবছরই ভেঙে যাচ্ছে নাটোর-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়ক। নাটোর থেকে নওগাঁ পর্যন্ত ৫৩ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ১৮ বছর আগে। এই দীর্ঘ সময়ে নানামুখী জটিলতায় সড়কটির নির্মাণকাজ বেশ কয়েকবার থেমে থেমে শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। বর্তমানে সড়কের কাজ প্রায় শেষের পথে। তবে হস্তান্তরের আগেই নানা ত্রুটি দেখা দিয়েছে। কোথাও সড়কের কিছু অংশ দেবে গেছে, কোনো অংশ ধসে গেছে, আবার কোথাও ধরেছে ফাটল। এতে প্রশ্ন উঠেছে মহাসড়কের টেকসই যোগ্যতা নিয়ে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নাটোর-আত্রাই-নওগাঁ সড়কটি নির্মাণে ২০০৫ সালে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এ সড়কে ২০০৭ সালে মাটি কাটা শেষে নানা জটিলতা ও হাইড্রোলজি সমীক্ষার পর বন্ধ হয় সড়কের নির্মাণকাজ। পরে বর্তমান সরকারের সময় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ মহাসড়কের কাজ আবার শুরু হয়। এর নির্মাণ ব্যয় ২০০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ সড়কের কাজ শেষ করার কথা ছিল। এর মধ্যে নওগাঁ জেলা অংশের ২৯ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হয়। এদিকে নাটোর অংশের কাজ শেষ না হলেও সেতুগুলোর নির্মাণকাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে সেতু ও সড়কের বিভিন্ন অংশ ধসে যাচ্ছে, দেবে গেছে এবং কোথাও কোথাও ফাটলও ধরেছে। কয়েকটি জায়গায় মাটি ফেলে ধস রক্ষার চেষ্টা করা হলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানান, নলডাঙ্গার উপজেলার বীরকুৎসার কুচামারী সেতুর উত্তরে ৩ ফুট গভীর হয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। এখানে ১০০ ফুট অংশ ধসে যাচ্ছে। সড়কের ভাঙা অংশের একটি সেতুর ঢাল দেবে গেছে। মধ্যপুল সেতুর গাইডওয়ালের ঢালেও ফাটল ধরেছে। মধ্যনগর এলাকা অংশে সড়কের কয়েকটি ঢাল ধসে গেছে। ফাটলের পর ধস শুরু হয়েছে বীরকুৎসা বাজারের পশ্চিমের প্রায় ৫০ ফুট অংশে। একই স্থানে রেলস্টেশনের পশ্চিমেও সড়কের ঢাল ধসে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়কের নিচের গোড়া থেকে মাটি তুলে সড়কে দেওয়ায় এ পরিস্থিতি হয়েছে। নাটোর-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে অনেক স্থাপনা নির্মাণ করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। যার ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। আঞ্চলিক মহাসড়কের ৩৩ ফুট জায়গার ভেতর কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না করার বিধান থাকলেও তা মানছেন না এসব দখলদার। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে এবং মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে।
নাটোর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান সরকার বলেন, এই সড়কের যে স্লোপ আছে তার উচ্চতা অনেক বেশি। পানি প্রবাহের কারণে কিছুটা নষ্ট হচ্ছে, সেটি টেকসই করার জন্য আমাদের কয়েকটি টিম ভিজিট করে সয়েল টেস্টের ভিত্তিতে একটি ডিজাইন আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠিয়েছি। স্লোপগুলোতে সেই কাজগুলো করতে পারলে, এই রাস্তাটি যে মাঝে মাঝে ভেঙে যায় তা রোধ করা সম্ভব হবে।