শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যেও মাঠে সক্রিয় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে এ ক্ষেত্রে কৌশলী অবস্থান নেবে দলটি। গ্রেপ্তার এড়াতে আপাতত দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি পালন করবে না। তবে দল সমর্থক বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী সংগঠন এবং যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত শরিক দলগুলোর কর্মসূচিতে দলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি।
গতকাল বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর এটিই ছিল বিএনপির প্রথম বৈঠক।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়ে কার্যত বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। ওই আন্দোলন ঘিরে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সহিংসতার জন্য এই দলটিকে দায়ী করছে সরকার। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েক শীর্ষ নেতাসহ সারা দেশে দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার এড়াতে অন্যরা আত্মগোপনে রয়েছেন। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলোও বন্ধ রয়েছে। এর ফলে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির নেতারা সংক্ষিপ্তভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেন। গ্রেপ্তার এবং আত্মগোপনে থাকায় কমিটির সব সদস্য বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।
বৈঠকে নেতারা বলেন, সরকারের অব্যাহত দমন-পীড়ন ও গ্রেপ্তারে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা একে অন্যের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। এমন অবস্থায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাঠে নামানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ। নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য কালবেলাকে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে প্রাণহানির ঘটনায় সরকারের পদত্যাগের দাবি আরও জোরালো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে ও পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করেছে। তবে কারফিউ তো একটা সময় গিয়ে প্রত্যাহার করতে হবে। পুলিশের ধরপাকড়ও বন্ধ হবে। তখন বিএনপি দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। আপাতত ভিন্ন ব্যানারে মাঠে থাকবে। তা ছাড়া যুগপতের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। তারাও কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তাদের কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন।
বৈঠকে সরকারের জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিষয়টিও আলোচনায় ওঠে। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে বিএনপি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে কমিটির সদস্যরা পরামর্শ দেন।