হাসান আজাদ
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৩, ০৯:০৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গ্যাস অনুসন্ধান

বিল পরিশোধে বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদ-ব্যয়

বিল পরিশোধে বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদ-ব্যয়

নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষের এক মাস আগেই প্রকল্পের সব কাজ শেষ। তারপরও বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মার্কিন ডলারের অপ্রতুলতায় নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি ঠিকাদারের বিল। তাই বাড়ানো হচ্ছে মেয়াদ। আর ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে এর ব্যয়ও বাড়ছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

কাজ শেষেও মেয়াদ এবং ব্যয় বৃদ্ধির এ প্রকল্প ‘দুটি অনুসন্ধান কূপ (টগবী-১ ও ইলিশা-১) এবং একটি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (প্রথম সংশোধিত)’। এটি বাস্তবায়ন করছে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)।

ডলার সংকটের কারণে প্রকল্পের ইপিসি (ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন) ঠিকাদারি কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে পাওনা পরিশোধের জন্য এর মেয়াদ ৩০ জুনের পরিবর্তে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বাড়ায় কাজ শেষের পরও প্রকল্পের খরচ বাড়ছে ২৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বা ১৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। এরই মধ্যে বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) সভায় প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে জ্বালানি বিভাগে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) ও বাপেক্সের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকল্পটি। বাপেক্সের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান।

এ প্রকল্পের অধীনে গত মাসে দেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র ইলিশা আবিষ্কার করে বাপেক্স। এর আগে একই প্রকল্পের আওতায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের টগবী-১ কূপ খনন করে গ্যাস পাওয়ার কথা জানায় তারা। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভোলা নর্থ-২ উন্নয়ন কূপেও গ্যাস পাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব কালবেলাকে বলেন, ডলারের অভাবে ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করতে পারিনি। তাই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ব্যয়ও বাড়ছে।

প্রতিষ্ঠানের উপমহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক (টগবী-১, ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২ খনন প্রকল্প) মোহাম্মদ আহসানুল আমিন জানান, নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ। তারপরও মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে ডলার সংকটের কারণে। ঠিকাদারি কোম্পানির টাকা পরিশোধ হয়নি। এ ছাড়া যখন প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, তখন ডলারের যে মূল্য ছিল, তা থেকে এখন অনেক বেড়েছে। এ কারণে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাপেক্সের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, গত ১৭ মে প্রকল্পটির মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর জন্য সংশোধিত ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবণা) ওপর ডিপিইসির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব। সভায় প্রকল্পটির মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপরই তা জ্বালানি বিভাগের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৯৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয় ১৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৮৭৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি যখন নেওয়া হয়েছিল, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়ম হার তখন এক মার্কিন ডলার সমান ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা ধরে হিসাব করা হয়েছিল। এই হিসাবে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ২১৮ মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়। কিন্তু গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর মোবিলাইজেশন খাতে প্রথম বিল পরিশোধ করা হয়। এ সময় এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিয়ম মূল্য ছিল ১০৭ দশমিক ৯০ টাকা। এ ছাড়া সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি টগবী-১ কুপ খনন খাতের বিপরীতে আরেকটি বিল পরিশোধ করা হয়। এ সময় এক ডলারের বিপরীতে ১০৭ দশমিক ৩০ পয়সা করে পরিশোধ করতে হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলে এক ডলারের বিপরীতে ১০৭ দশমিক ৫০ টাকা করে পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা ক্রমবর্ধনশীল। এ কারণে ঠিকাদারি কোম্পানির বিল পরিশোধে অতিরিক্তি অর্থের প্রয়োজন। এজন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সবোর্চ্চ ২ শতাংশ বৃদ্ধি হতে পারে, এমনটা ধরে এক মার্কিন ডলার সমান ১০৯ দশমিক ৬৫ টাকা হিসাবে করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের অধীনে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে। এ অবস্থায় বাপেক্সের অধীনে জমি অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত তা সম্পন্ন হয়নি। জমি অধিগ্রহণে শস্য ক্ষতিপূরণের টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের দিতে হবে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রায় প্রকল্পের কাজের ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর দিতে হবে। ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এ খাতেও ব্যয় বাড়ছে।

মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, এরই মধ্যে প্রকল্পের আওতায় নির্দিষ্ট সময়ের আগে তিনটি কূপ খনন করা হয়েছে। এর বিপরীতে দুটি অনুমোদিত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যেমে বিল পরিশোধ করতে দু-তিন মাস সময় প্রয়োজন হচ্ছে। এজন্য মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস 

ওমরাহ পালনে ইচ্ছুকদের জন্য বিশেষ সেবা চালু

সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন, মরদেহ মিলল প্রতিবেশীর পরিত্যক্ত টয়লেটে

সুয়ারেজের দুই পেনাল্টিতে মেসিবিহীন মায়ামির রোমাঞ্চকর জয়

গাজায় নতুন ধাপে ‘গণহত্যা’ শুরু করল ইসরায়েলের সেনাবাহিনী

ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স  / ওষুধ-চিকিৎসকের সংকটে ভোগান্তিতে রোগীরা

পাকিস্তানের হুমকির পর ‘অগ্নি ৫’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ভারত

সরকারি সফরে চীন গেলেন সেনাপ্রধান 

সাগরে ভাসমান ১৩ জেলে উদ্ধার, নিখোঁজ ৬

হবিগঞ্জে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনে ভয়াবহ আগুন

১০

অ্যাপলের আগে সারপ্রাইজ ‍দিল গুগল

১১

ভয়াবহ আগুনে তুলার মিল পুড়ে ছাই

১২

২১ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৩

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১৪

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকার উল্টে নিহত ৩

১৫

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৬

২১ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৭

৪ দিনের সফরে ঢাকায় পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী

১৮

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাড়ল বাস ভাড়া

১৯

পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হবে ক্লিন সিটি : চসিক মেয়র

২০
X