নুর মোহাম্মদ
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সমাজকর্মে পড়ে বিজ্ঞানের শিক্ষক স্নাতকের আগেই স্নাতকোত্তর

অধিদপ্তরে অনিয়মের মহোৎসব
সমাজকর্মে পড়ে বিজ্ঞানের শিক্ষক স্নাতকের আগেই স্নাতকোত্তর

যশোর সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে রুদ্রপুর গ্রামের মাহিদিয়া সম্মিলনী মহিলা আলিম মাদ্রাসা। এ মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে ভয়াবহ জালিয়াতি রোমাঞ্চকর গল্পকেও হার মানাবে। তিনজন শিক্ষক স্নাতকোত্তর করেছেন সমাজকর্মে, আর প্রভাষক হয়েছেন রসায়ন, পদার্থবিদ্যা ও উদ্ভিদবিজ্ঞানে। তাদের একজন আবার স্নাতক পাসের দুই বছর আগেই স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। আরেকজন নিজের বাল্যবন্ধুর নাম-পরিচয় ও সব সনদপত্র চুরি করে হয়েছেন গণিতের প্রভাষক। নামের মিলে এক নারী শিক্ষক চাকরি করছেন আরেক নামে। পুরুষের নিবন্ধন সনদে শিক্ষক হয়েছেন একজন নারী।

সব ছাড়িয়ে বড় কেলেঙ্কারিটি ঘটিয়েছে খোদ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। কালবেলার অনুসন্ধান ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদ্রাসাটি আলিম (একাদশ) স্তরের অনুমতি পাওয়ার পর ১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ আসার পর মাদ্রাসা অধিদপ্তর তদন্ত শুরু করে। তদন্তে ৯ জনের নিয়োগ সঠিক পায়। বাকি ছয়জনের ব্যাপারে ভয়াবহ জালিয়াতির প্রমাণ মেলে। এরপর তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয় অধিদপ্তর। এর মধ্যে গণিতের প্রভাষক তরিকুল ইসলামের জালিয়াতির ঘটনাটি বড় হওয়ায় তার ইনডেক্স (ব্যক্তিগত নম্বর) বাতিল করে ফৌজদারি মামলার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর অধিদপ্তরে কর্মকর্তা পর্যায়ে রদবদল হয়। এরপর রহস্যজনকভাবে একই দপ্তর অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে চারজনের নিয়োগকে ‘বৈধ’ ঘোষণা দিয়ে ফের তাদের বেতন-ভাতা চালু করে। পুরো প্রক্রিয়াটিতে অর্ধকোটি টাকা লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে কালবেলা। বাকি দুজনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের সমঝোতা না হওয়ায় আটকে যায় তাদের বন্ধ বেতন-ভাতা ছাড়।

বড় জালিয়াতির নাম মুস্তাক আহমেদ: মাদ্রাসাটিতে তিনজন শিক্ষক রয়েছেন, যারা সমাজকর্ম বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। অথচ তারা প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রসায়ন, পদার্থবিদ্যা ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় জালিয়াতিতে জড়িয়েছেন রসায়নের প্রভাষক মুস্তাক আহমেদ। তিনি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে যেসব সনদ জমা দিয়েছেন, সেগুলো মূলত তার নিজের নয়। তার নামের সঙ্গে মিল আছে এমন এক ব্যক্তির সনদ শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে জমা দেন তিনি। ভয়াবহ জালিয়াতিটি করেন স্নাতকোত্তরের সনদে। মাসুম পারভেজ নামে এক ব্যক্তির সমাজকর্মের সনদপত্র সম্পাদনা করে রসায়ন বিষয় করে জমা দিয়ে হন এমপিওভুক্ত। কালবেলার পক্ষ থেকে সনদটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাচাই করে দেখা যায়, ওই সনদের প্রকৃত ব্যক্তির নাম মাসুম পারভেজ এবং সনদপত্রটি ‘সমাজকর্ম’ বিষয়ের।

শুধু একাডেমিক সনদই নয়, শিক্ষক নিবন্ধনের (এনটিআরসিএ) যে সনদ মুস্তাক আহমেদ জমা দিয়েছেন, সেটিও ভুয়া। তিনি স্কুল পর্যায়ের নিবন্ধন সনদকে ঘষামাজা (টেম্পারিং) করে কলেজ পর্যায়ের নিবন্ধন সনদ বানিয়ে জমা দেন।

তার এমপিও আবেদনে দেওয়া তথ্যেও রয়েছে গরমিল। বিএসসি পাসের আগেই তিনি এমএসসি পাস করেছেন! জমা দেওয়া সনদে স্নাতকের ফল প্রকাশের সাল ২০১৫। আর স্নাতকোত্তর করেছেন ২০১৩ সালে! তার ব্যক্তিগত তথ্যেও গরমিল পাওয়া গেছে। নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির আবেদনের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যের কোনো মিল নেই। ঠিকানা উল্লেখ করেছেন, ‘বলিয়ানপুর, বোয়ালিয়া ঘাট, মনিরামপুর’। অথচ জমা দেওয়া এনআইডিতে ঠিকানা ‘গোপালপুর, খানপুর, মনিরামপুর’। আবেদনে বাবার নাম হাসেম আলী উল্লেখ করলেও এনআইডিতে আছে ‘হাসেম আলী সরদার’।

জানতে চাইলে মুস্তাক আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘আমি রসায়নেই পড়াশোনা করেছি, কারও সনদও জালিয়াতি করিনি।’ তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভারে তার জমা দেওয়া সনদে অন্যজনের নাম আসার বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে মুস্তাক বলেন, ‘একসময় (নিয়োগকালে) কিছু লেনদেন হয়েছিল, কিন্তু এবার (তদন্তের পর) সেরকম হয়নি।’

সমাজকর্মে পড়ে বিজ্ঞানের শিক্ষক হয়েছেন আরও দুজন: মুস্তাক আহমেদের মতো আরও দুজন শিক্ষকের তথ্য মিলেছে, যারা সমাজকর্মে পড়াশোনা করে পদার্থ ও উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষক হয়েছেন। এমন একজন হলেন আব্দুল কাইয়ুম, যার ইনডেক্স নম্বর এম-০০৭৭০৮। তিনি ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ থেকে সমাজকর্মে পড়াশোনা করে যশোরের মাহিদিয়া সম্মিলনী মহিলা আলিম মাদ্রাসার উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষক হয়েছেন। অন্যজনের নাম মাসুম পারভেজ, যার ইনডেক্স নম্বর-এম-০০০০৭৭১০। তিনিও ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে সমাজকর্মে পড়াশোনা করেছেন। অথচ হয়েছেন মাদ্রাসার পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। তবে তদন্তের পর এই দুজনের বেতন-ভাতা বন্ধ রেখেছে মাদ্রাসা অধিদপ্তর। অন্যদের বেতন-ভাতা ছাড় হলেও এই দুজনের না হওয়ার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের বনিবনা না হওয়া।

এক তরিকুলের সনদে আরেক তরিকুলের চাকরি: ২০১৫ সালে মাদ্রাসাটিতে গণিতের প্রভাষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর সে পদের জন্য আবেদন করেন চারজন। তাদের মধ্যে দুজনের নামই মো. তরিকুল ইসলাম। নামের বানান ও ঠিকানাও এক। পার্থক্য শুধু বাবার নামে। একজনের বাবা ওহেদ আলী, অন্যজনের রুস্তম আলী বিশ্বাস। দুজনই একই গ্রামের এবং বাল্যবন্ধু। কলেজেও একসঙ্গে পড়েছেন। নিয়োগ পরীক্ষায় ওহেদ আলীর ছেলে তরিকুল ২৭ দশমিক ৪ নম্বর পেয়ে প্রথম হন। রুস্তম আলী বিশ্বাসের ছেলে তরিকুল ২২ দশমিক ৬ নম্বর পেয়ে হন চতুর্থ। নিয়ম অনুযায়ী, মেধাক্রমে প্রথম জনকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করে ম্যানেজিং কমিটি। অথচ চতুর্থ হওয়া তরিকুল প্রথম হওয়া তরিকুলের সনদপত্র ব্যবহার করে মাদ্রাসাটিতে নিয়োগ পান।

নিয়োগ কমিটির একজন সদস্য কালবেলাকে বলেন, ‘এই দুজনের নামের মিল দেখে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে চতুর্থ হওয়া তরিকুলকে চাকরি দেন অধ্যক্ষ ফারুক হোসাইন।’

কালবেলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রথম হওয়া তরিকুলের জমা দেওয়া এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্স ও শিক্ষক নিবন্ধনের সব সনদ ব্যবহার করে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নিয়োগ পান চতুর্থ হওয়া তরিকুল। তিনি ২০২০ সালের জুনে এমপিওভুক্ত হন। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল, গোল বাধে যখন প্রকৃত তরিকুল অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করতে যান। তিনি জানতে পারেন, অন্য একজন তার নিবন্ধন সনদে শিক্ষকতা করছেন। তিনি আর কেউ নন, তারই বাল্যবন্ধু তরিকুল। এরপর মাদ্রাসা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন প্রকৃত তরিকুল। পরে দুজনকেই শুনানির জন্য ডাকে অধিদপ্তর। কিন্তু ‘নকল’ তরিকুল সেই শুনাতিতে হাজির হননি। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে তার নিয়োগ বাতিল করে তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসা অধ্যক্ষকে ফৌজদারি মামলা করতে নির্দেশ দেয় অধিদপ্তর।

এ ব্যাপারে প্রকৃত তরিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘আমার সনদ ব্যবহার করে অন্যজন চাকরি করছেন, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। আমার আবেদনের পর তার ইনডেক্স বাতিল করলেও এখন শুনছি অধিদপ্তর ছেড়ে দিয়েছে। অন্যদিকে অভিযুক্ত তরিকুল ইসলাম দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বোর্ডসহ শিক্ষা অফিস এবং অধিদপ্তর তার সনদ যাচাই করেই এমপিওভুক্ত করেছে। তিনি কোনো জালিয়াতি করেননি।

পুরুষের সনদে নারী শিক্ষক: মাদ্রাসার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শারমিন আক্তারের শিক্ষক নিবন্ধন সনদটিই ভুয়া। তিনি ২০০৯ সালের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার পাসের যে সনদটি জমা দিয়েছেন সেটি মূলত মো. শিমুল হোসেন নামে একজন পুরুষ প্রার্থীর। অনুসন্ধানে তার নিবন্ধন নম্বরটি (৪০০...১১০৯৬) শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) থেকে যাচাই করা হলে দেখা যায়, এটি মো. শিমুল হোসেনের নামে সংরক্ষিত আছে। জানতে চাইলে শারমিন আক্তার তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনো জালিয়াতি করিনি।’

আসমা চাকরি করছেন আমেনা নামে: মাদ্রাসার সহকারী মৌলভি আমেনা খাতুনের বিরুদ্ধে তরিকুলের মতো জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। আমেনা খাতুনের আসল নাম আসমা খাতুন। তিনি মূলত আলিম পাস হলেও নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী অন্য এক আসমা খাতুনের সব কাগজপত্র জালিয়াতি করে ‘আমেনা খাতুন’ নামে চাকরি করছেন। অভিযুক্ত আমেনা খাতুন মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ ফারুক হোসাইনের স্ত্রী।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আমেনা খাতুন অষ্টম শিক্ষক নিবন্ধনের যে সনদটি (নম্বর ৪২৯১৮৭…) ব্যবহার করেছেন, সেটি জাল ও ভুয়া। কালবেলা যাচাই করে সনদটি ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ ছাড়া তিনি বিএড ডিগ্রি হিসেবে যে সনদ ব্যবহার করেছেন, সেটিও অন্য একজন আমেনা খাতুনের নামে। তার নিজের নামের সঙ্গে ওই বিএড সনদের নামের মিল পাওয়া যায়নি। এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আমেনা খাতুনের সঙ্গে একাধিকবার ফোন করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।

অধিদপ্তরে ঘুষ লেনদেন: তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের শাস্তি তো দূরের কথা, উল্টো বড় জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ে মাদ্রাসা অধিদপ্তরই। গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অধিদপ্তরে অনেক কর্মকর্তার রদবদল ঘটে। সংযুক্ত হন নতুন কর্মকর্তা। এরপর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষকদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে ১২ লাখ টাকা ঘুষ দেন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ছাড় করতে অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অর্থ) কে এম শফিকুল ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক (অডিট ও আইন) ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি শিক্ষকদের ব্যক্তিগত শুনানি করে গত ১৫ জুলাই চারজনের বেতন-ভাতা ছাড় করার সুপারিশ করেন। সেই বৈঠকের রেজল্যুশন পেয়েছে কালবেলা। সেখানে কমিটি বলছে, তরিকুলের নিয়োগপত্র, যোগদান, পরীক্ষার মূল্যায়ন শিট, সনদপত্র ও অন্যান্য তথ্য সঠিক বলে প্রতীয়মান হওয়ায় তার বেতন-ভাতা ছাড়ের সুপারিশ করা হলো। অন্যদিকে যে অধিদপ্তর তদন্ত করে তরিকুলের ইনডেক্স বাতিল করছিল, সেই একই অধিদপ্তর তার ইনডেক্স পুনর্বহালের প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে। নতুন তদন্ত কমিটি সব কাগজ ‘সঠিক’ বলার কারণ খুঁজতে গিয়ে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের সন্ধান পেয়েছে কালবেলা। যেখানে দুজন শিক্ষকের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা নিয়েছে ওই কমিটি। অন্যদের কাছে থেকে ২১ লাখে রফাদফা হয়। প্রত্যেকের কাছ থেকে অগ্রিম ৫ লাখ টাকা, আর বাকি টাকা কিস্তিতে নেওয়া হবে—এমন শর্তে তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়। তবে সমাজকর্মে পড়ে শিক্ষক হওয়া বাকি দুজনের সঙ্গে লেনদেন ‘সন্তোষজনক’ না হওয়ায় আপাতত তাদের বেতন-ভাতা ছাড় হয়নি।

যা বলছে মাদ্রাসা ও অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ: মাহিদিয়া সম্মিলনী মহিলা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ফারুক হোসাইন অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অর্থ) ড. কে এম শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘এখানে কিছু হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। কমিটির অন্য সদস্যরা সবকিছু যাচাই-বাছাই করে আমার কাছে উপস্থাপন করেছেন, আমি শুধু স্বাক্ষর করেছি। এর বাইরে এখানে কোনো লেনদেন হয়ে থাকলে তা আমার জানা নেই।’

তৃতীয় কোনো পক্ষ এখানে আর্থিক লেনদেন করে থাকলে সেটি আমি কীভাবে বুঝব—এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। এও বলেন, ‘কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়ে থাকলে আমি দায় এড়াতে পারি না। তবে যাদের দীর্ঘদিন ধরে বেতন বন্ধ, এসব শিক্ষকের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ একটু সহানুভূতিশীল থাকে।’

কমিটির অন্য সদস্য ও সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত করেছি। তদন্তের সময় যে কারণে তাদের এমপিও বাতিল হয়েছিল, সেই ফাইলটি ছিল না। তরিকুলের ইনডেস্ক বাতিল হয়েছে, সেটাও আমার জানা ছিল না।’ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কিছু হয়ে থাকলে আমরা জানা নেই।’

সার্বিক বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘এত গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও এসব শিক্ষকের বিগত ফাইলপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়া বেতন-ভাতা ছাড় দেওয়া ঠিক হয়নি। আমি বিষয়টি নিয়ে নতুন করে তদন্ত করাব। প্রমাণ মিললে তারা অবশ্যই শাস্তি পাবেন।’

‘শিক্ষার জন্য ভয়ংকর’: এমন জালিয়াতি শিক্ষার জন্য ভয়ংকর উল্লেখ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘শিক্ষার প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতির কারণে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় দিন দিন এমন জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। সমাজকর্মে পড়ে বিজ্ঞানের বিষয়ে শিক্ষকতা করছে, আর সরকারি দপ্তরগুলো তা ধরতে পারছে না। এতেই বোঝা যায়, এখানে অন্য কিছু হচ্ছে। এটা (জালিয়াতি-অনিয়ম) ধরতেই হবে, না হয় শিক্ষার মান আরও তলানিতে যাবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজ থেকে নতুন দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ

পারভেজ মল্লিকের ওপর হামলার ঘটনায় লন্ডনে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ 

টঙ্গীতে পঞ্চাশ দশকের সংবাদপত্র এজেন্ট আনোয়ার হোসেনের ইন্তেকাল

ফের সাভারে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ

১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ‘ড্র’ আজ

নির্বাচনের পর তানজানিয়ায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে

ম্যানেজার পদে নিয়োগ দিচ্ছে সুলতান’স ডাইন

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

তাইওয়ানে ক্ষমতায় ‘চীনপন্থি’ বিরোধী নেত্রী চেং লি-উন

প্রকৃতি রাঙিয়ে ফোটা চোখজুড়ানো ফুল পটপটি

১০

মেঘনা গ্রুপে রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার পদে চাকরি, দ্রুত আবেদন করুন

১১

২ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১২

নির্বাচনের আগে গণভোট দিতে হবে : মামুনুল হক

১৩

লিড আর্কিটেক্ট পদে নিয়োগ দিচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

১৪

বিএনপির বিবৃতি / মির্জা ফখরুলের কণ্ঠ নকল করে অসত্য ভিডিও প্রচার

১৫

রোববার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৬

এনসিপি থেকে সরে দাঁড়ালেন মাহিম

১৭

বৃন্দাবন কলেজের কনসার্টে হট্টগোল, আহত ২০

১৮

সুরমার প্রেমে চীনা যুবক এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়

১৯

একটি মহল নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে : মাহবুবুর রহমান

২০
X